রাজ্যের স্কুলেই ‘হিন্দু-মুসলমান’ ভেদাভেদ শিখছে শিশুরা

December 8, 2017 11:03 pm0 commentsViews: 34

 ভারতের বর্ধমান থেকে মানব গুহঃ মানুষের শিক্ষার প্রথম পাঠ শুরু হয় বাবা-মায়ের হাত ধরেই৷ সেই বাবা মায়েরাই যদি সন্তানদের ‘কুশিক্ষা’ দেন, তাহলে কোন স্কুল বা শিক্ষকদের সাধ্য কি সেই ছেলেমেয়েদের সঠিক পথ দেখায়৷ অভিভাবকদের ভুল শিক্ষায় বর্ধমানের বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুলে জীবনের শুরু থেকেই ‘হিন্দু-মুসলমান’ ভেদাভেদ শিখছে শিশুরা৷ চেষ্টা করেও অসাম্প্রদায়িকতার শিক্ষা দিতে ব্যর্থ স্কুল ও প্রশাসন৷

পূর্ব বর্ধমানের পুর্বস্থলী ২ নং ব্লকের পিলা বিদ্যাসাগর উপজাতীয় বিদ্যালয়৷ নিতান্তই জেলার আর পাঁচটা সাধারণ প্রাথমিক স্কুলের মতই৷ তবে স্কুলের নামে ‘জাতীয়’ থাকলেও, কাজে জাতীয়তাবোধের লেশমাত্র নেই৷ গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করে প্রায় সব ধর্মের ছাত্র-ছাত্রীরাই৷ এখানে পড়াশোনা হয়, খেলাধূলাও হয়৷ ব্যবস্থা আছে মিড ডে মিলেরও৷ তবে, প্রতিদিন সবার খাওয়া হয় না মিড ডে মিলের একমুঠো ভাত৷

মিড ডে মিলের রাঁধুনী মুসলমান হলে খায় না হিন্দু ছেলেমেয়েরা৷ আর রাঁধুনীর ধর্ম হিন্দু হলে উল্টোটা, খায় না মুসলিম শিশুরা৷ রাঁধুনির ধর্ম যেদিন মুসলিম, সেদিন হিন্দু বাচ্চাদের বরাতে জোটে ভাতের বদলে বিস্কুট৷ রাঁধুনির ধর্ম পরিবর্তন হলে বিস্কুট খাবার শিশুদের ধর্মও পরিবর্তিত হয়৷ এক ধর্মের শিশুদের ভাত জুটলে অবধারিত ভাবে অন্য ধর্মের বাচ্চাদের বরাতে সেদিন শুধুই শুকনো খাবার৷

শিশু থেকেই কেন হিন্দু-মুসলমান আলাদা আলাদা খাওয়ার ব্যবস্থা? কেন স্কুলে ধর্মীয় ভেদাভেদের শিক্ষা? শিশু মনে কেন ধর্মের বীজ বপন করে দেওয়া হচ্ছে জীবনের শুরু থেকেই? নিষ্পাপ শিশুদের কেন্দ্র করে কেন বিদ্বেষের জিগির তোলা শিক্ষার শুরু থেকেই? স্কুলে কেন ‘ওরা-আমরা’ ভেদাভেদ? কি করছেন শিক্ষকরা? কি করছে প্রশাসন? অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্ন কিন্তু উঠে আসছে৷

পুর্বস্থলী ২ নং ব্লকের পিলা বিদ্যাসাগর উপজাতীয় বিদ্যালয় শুধু একটা উদাহরণ মাত্র৷ রাজ্যের কোনে কোনে মিড ডে মিলের খাবার নিয়ে ধর্মীয় ভেদাভেদ আজ চরম রূপ নিয়েছে৷ রাঁধুনীর ধর্মের উপর নির্ভর করে বাচ্চাদের পেটে ভাত জুটবে কি না৷ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্কুলগুলি? স্কুল শিক্ষা দফতর কি করছে? কি করছে স্থানীয় প্রশাসন? অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, সফল হয় নি৷ কিন্তু তারপরেই কেন হাল ছেড়ে দেওয়া হল? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে৷

ছেলে-মেয়েদের স্কুলে শিক্ষার জন্য পাঠালেও অভিভাবকরা নিজেরাই কুশিক্ষার অন্ধকারে নিমজ্জিত৷ বাবা-মায়েদের কুশিক্ষার অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে পুরো একটা প্রজন্ম৷ পিলা বিদ্যাসাগর উপজাতীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দিলীপ মালিক জানিয়েছেন, ‘অনেক চেষ্টা হয়েছে কিন্তু অভিভাবকদের বোঝানো যায় নি’৷ শিশুদের নিয়ে জেদের লড়াই লড়ছে বাবা-মায়েরা৷ হিন্দু অভিভাবকরা চান রাঁধুনী প্রতিদিন হিন্দুই হবে৷ আবার এই জেদের পাল্টা জেদে মুসলিম বাবা-মায়েরা চান, কেন রাঁধুনী মুসলিম হবে না৷

জেদ পাল্টা জেদের বলি শুধুমাত্র শিশুরাই৷ তাদের মনেও হিন্দু-মুসলমানের ভেদাভেদ গড়ে উঠছে ছোট থেকেই৷ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক উজ্জ্বল রায় জানিয়েছেন, ‘যেসব স্কুলে এই সমস্যা রয়েছে সেখানকার অভিভাবকদের বহূবার বোঝানো হয়েছে, ভবিষ্যতেও আবার বোঝানো হবে’৷ BDO লেভেলেও বহূবার অভিভাবকদের বোঝানো হয়েছে৷ কিন্তু পেটের ভাতকে কেন্দ্র করে বাবা-মায়েদের ধর্মের লড়াই এখনও অব্যহত৷ হাল ছেড়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসনও৷ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি গোপা ঘোষ জানিয়েছেন, ‘এটা অনেকদিন ধরেই চলছে, সবাইকেই বোঝানোর চেষ্টা চলছে’৷

রাজ্যের শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অন্যন্যা চ্যাটার্জী চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘শিশু বয়স থেকেই এই ধর্মের ভেদাভেদ ঢুকিয়ে দেওয়া অপরাধের মধ্যে পড়ে, শিশু মনে এর যথেষ্ট প্রভাব থেকেই যাবে’৷ তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘এই বিভাজন অত্যন্ত নিন্দানীয়, মেনে নেওয়া যায় না৷ একুশ শতকে এসেও মানুষের এই মনোভাব খুব লজ্জাজনক, প্রশাসনকে কড়া ব্যবস্থা নিতে হবে’৷

কড়া পদক্ষেপ নিতেই হবে প্রশাসনকে৷ চুপ থাকলে এই ধর্মীয় উস্কানিকে আরও মদত দেওয়াই হবে৷ অবিলম্বে শিশুদের নিয়ে এই ধর্মীয় নষ্টামি বন্ধ হোক চান সবাই৷ কিন্তু প্রশাসনিক উদাসিনতায় সেটাই সম্ভব হচ্ছে না৷ একবার চেষ্টা করেই হাল ছেড়ে দিলে, ‘বাঙালি ধর্মীয় নিরেপক্ষ’ এই দাবিতেই কালি পড়ে যাবে৷

পুর্বস্থলীর পিলা বিদ্যাসাগর উপজাতীয় বিদ্যালয়ের ঘটনা কোন বিছিন্ন ঘটনা নয়, মিড ডে মিলকে কেন্দ্র করে যে ভাবে বাংলার স্কুলে স্কুলে হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার বিষ ছড়াচ্ছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে সোনার বাংলায় যে বড়সড় বিপদ বাসা বাঁধছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না৷ এর ভয়ংকর ভবিষ্যত যারা দেখতে পাচ্ছে না, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছে৷ আরও কড়া পদক্ষেপ নিতেই হবে জেলা ও রাজ্য প্রশাসনকে, যাতে এই বিদ্বেষের খেলা স্কুলেই শেষ হয়৷ পেটের ভাতে কবে বন্ধ হবে ধর্মের নাক গলানো? প্রশ্ন কিন্তু উঠছে৷

সূত্রঃ কোলকাতা২৪

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 1366 White Plains Road, Apt. 1J, The Bronx, New York-10462

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com