কুরআন এর প্রথম বাংলা অনুবাদক নিয়ে একটি ভুল প্রচারণা’র নিরসন হউক।।

September 7, 2018 10:55 pm0 commentsViews: 4178

 

নিউইয়র্ক থেকে ড ওমর ফারুক সম্পাদিত।। তারিখঃ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮।।

মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়া ১৮০৮ সালে সর্বপ্রথম বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফের আংশিক অনুবাদ করেন। এরপর ১৮৩৬ সালে বাংলা ভাষায় কুরআন শরীফের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ করেন মৌলভী নাঈমুদ্দীন। গিরীশ চন্দ্র সেন শুধু উক্ত অনুবাদকে পুস্তক আকারে সন্নিবেশ করেন, গিরীশ চন্দ্র হচ্ছেন প্রকাশক। তাও সে সময়টা ছিল অনেক পরে, ১৮৮৬ সালে। সুতরাং কুরআন শরীফের প্রথম বাংলা অনুবাদক হিসেবে মুখস্থ বিদ্যায় এতদিন যা জেনে আসছি, তা ঠিক নয়। অর্থাৎ গিরীশ চন্দ্র নন, বরং মৌলভী নাঈমুদ্দীনই পূর্ণাঙ্গ কুরআন শরীফের প্রথম বাংলা অনুবাদক। আর মাওলানা আমীরুদ্দীন বসুনিয়া হলেন বাংলা ভাষায় প্রথম কুরআন শরীফের আংশিক অনুবাদক।

আরও বুঝুন, গিরীশ চন্দ্র সেনের জন্ম ১৮৩৫ সালে এবং মৃত্যু ১৯১০ সালে। গিরিশ চন্দ্রের জন্মেরও আগে অর্থাৎ ১৮০৮ সালে কুরআন শরীফের বাংলায় অনুবাদের কাজ শুরু করেন মাওলানা আমীর উদ্দীন বসুনিয়া। এরপর গিরীশ চন্দ্র সেনের জন্মের এক বছর পরই অর্থাৎ ১৮৩৬ সনে মৌলভী নাঈমুদ্দীন পূর্ণাঙ্গ কুরআন শরীফের বাংলা অনুবাদ সম্পন্ন করেন। আরবি জানে না আরবি ব্যাকরণ ব্যাকরণ সম্পর্কে অবহিত নন, এমন ব্যাক্তি কুরআন অনুবাদ করেছে এমন প্রচার মূর্খতা বৈ কিছুই নয়। দুঃখজনক হল, অনেক ইসলামিক স্কলারও গিরীশ চন্দ্র’কে কোরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক হিসেবে জেনে অনেক সুউচ্চ কণ্ঠে বয়ান পেশ করে থাকে।

গিরীশ চন্দ্র সেন আল কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক হিসেবে প্রচারণার কারণঃ

বাংলা ভাষাভাষীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত আছে যে, গিরীশ চন্দ্র সেন আল কুরআনের প্রথম বাংলা অনুবাদক। এ প্রচারণার কিছু কারণ কি ছিল তা নিয়ে এখন একটু আলোকপাত করা যাক। ব্রিটিশ আমলে এদেশে ব্রাহ্ম ধর্মে-এর মত একটি নতুন ধর্মের আবির্ভাব ঘটে এবং এর একটা জোয়ার এসেছিল। গোঁড়া হিন্দু গিরীশ চন্দ্র সেন এক পর্যায়ে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে ব্রহ্ম ধর্মগ্রহণ করেন। ব্রাহ্মধর্ম এ দেশে যেহেতু  একটি নতুন ধর্ম মত। তাই এ ধর্ম মত আপামর জন সাধারণের মধ্যে প্রচারের জন্য গিরীশ চন্দ্র সেন নিজে উদ্যোগী হলেন। কিন্তু অর্থকড়ির তো প্রয়োজন। সেটা আসবে কোথা থেকে! তিনি ফারসী ভাষায় পণ্ডিত ছিলেন এবং অগ্নিপূজক পার্সীদের সাথে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। সে সময়কার কিছু অগ্নি পূজক পণ্ডিত মুসলমানদের পকেট থেকে টাকা বের করার জন্য বেশ কিছু ইসলামি বই রচনার পরামর্শ দিলেন। সে সময়টার কথা আরেকটু বলি। এ উপমাহেদেশে বলতে গেলে তখন ইসলামের আলো ও জ্ঞানের বিকীরণ এখনকার মত ছিল না। এখন ত মৌলভী পরিচয়ে ইসলামের সোল এজেন্ট হয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ নেই। সে সময় ছিল। এখন অনেক সেকুলার শিক্ষিত নারী পুরুষও ইসলাম সম্পর্কে ব্যাপক অধ্যায়ন ও জ্ঞান লাভে প্রয়াসী। শুধু প্রয়াসীই নয়, ইসলামি অনুশাসন মেনে চলতে ও জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তা বাস্তবায়নে ততপর। সে সময়টা তেমন ছিল না। যেমন ধরুনঃ বেগম রোকেয়ার সাহিত্য পড়লে পাবেন, রেল গাড়িতে আটার বস্তা, আলুর বস্তা কিংবা ধানের বস্ত এবং পর্দানশীন নারী- এ সবের মাঝে পার্থক্য নিরুপণে অনেক সময় সমস্যাই হয়ে যেত। অর্থাৎ নারীকে এমন জুবুথুবু মোটা চটের মত কিছুতে ঢেকে রাখা হত, তখন কুলিরা বগিতে উঠে অনেক সময় নারী’সমেত বস্তাকে অন্য মালের বস্তা মনে করে নিচেও ফেলে দিয়েছে। এমন ঘটনাও নাকি হরহামেশা হত। রেল গাড়ি স্টেশনে এসে থামার পরই বেশ কিছু লাল বা গেরুয়া পোশাক পরিহিত রেল বিভাগের কুলিরা বগিগুলোতে উঠে বহনের জন্য মালের বস্তা খুঁজত। সে সময় নাকি অনেক সময় ভুল ক্রমে এমনটি হত।

যাই হোক, যে কথা বুঝানোর জন্য সে প্রসঙ্গও টানলাম। তার মানে পিছিয়ে পড়া সমাজব্যবস্থা ছিল।  তিনি তাই করলেন এবং সেই সাথে পবিত্র আল কুরআনের প্রকাশ করল প্রকাশক হয়ে। মুসলমানরা এ বই কিনলও প্রচুর। ফলে বাংলা ভাষাভাষী যারাই কুরআন শরীফের বঙ্গানুবাদ হাতে পেতে চাইলো তাদের হাতে পৌঁছে গেল তার অনূদিত কুরআন শরীফ। এ ব্যাপারে তাঁকে ব্রাহ্মসমাজ হিন্দু ব্যক্তিবর্গ এমন কি ব্রিটিশরাও যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। ফলে মানুষ মনে করেছে পবিত্র কুরআন শরীফের প্রথম বঙ্গানুবাদকারী হচ্ছেন গিরীশ চন্দ্র সেন। আসলে পবিত্র কুরআনের প্রথম বঙ্গানুবাদকারী যে মৌলভী মোহাম্মদ নঈমউদ্দীন সে কথা অল্প কিছু লোক জানলেও ব্যাপকভাবে প্রচার করার সুযোগ আসেনি।

গিরীশ চন্দ্র কুরআনের অনুবাদ বিক্রি করে যে অর্থ লাভ করতেন তা ব্যয় করতেন ব্রহ্মধর্ম প্রচার কাজে। ফলে ব্রাহ্মধর্ম প্রচারের মিশনের সাথে কুরআন বিক্রয়ের একটা গভীর সম্পর্ক ছিল। মৌলবী মোহাম্মদ নঈমউদ্দীন ছিলেন একজন মুসলমান। তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আল কুরআনের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন। তা প্রচারের জন্য গিরীশ চন্দ্র সেনের মতো কোনো মিশন ছিল না। যার কারণে তার প্রচার প্রসার ছিল সীমিত। এমনি করেই আল কুরআনের প্রথম বঙ্গানুবাদকারী হয়েও মৌলবী মোহাম্মদ নঈমউদ্দীন ভাই গিরীশ চন্দ্র সেনের মতো প্রচার পেতে পারেন নাই।”
সূত্রঃ সংগৃহিত

প্রশ্নঃ ‘হায়াতে তাইয়্যিবাহ’/পবিত্র জীবন/ নেক হায়্যাত পাওয়ার উপায় কি ?

উত্তরঃ মহান আল্লাহ্ তাআ’লা বলেন, “যে ব্যক্তি নেক আমল করে এবং এমন অবস্থায় যে সে একজন ঈমানদার, চাই সে পুরুষ হোক কিংবা নারী, আমি তাকে ‘হায়াতে তাইয়্যিবাহ’ (পবিত্র জীবন) দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।” [সুরা আন-নাহলঃ ৯৭]
হায়াতে তাইয়্যিবাহ’ পেতে হলে ———-
১।‘ঈমান’ সঠিক করতে হবে
২। ‘নেক আমল’ করতে হবে।
=> ঈমান সঠিক কথাটির অর্থ হচ্ছে ইখলাস, ছোট-বড় যেকোন ধরণের শির্ক ও কুফুরী মুক্ত থাকতে হবে, যেকোন আমল করতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।
=> আর নেক আমল অর্থ হচ্ছে, যেকোন ইবাদত একমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ বা আদর্শ অনুযায়ী করা, যাবতীয় বিদআ’ত কুসংষ্কার মুক্ত থাকা।
কোন ইবাদত বা আমলে ইখলাস না থাকলে অর্থাৎ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য না করে অন্য কারো জন্য করলে অথবা ছোট অথবা বড় শিরক মিশ্রিত করলে সেই আমল আল্লাহ্ কবুল করবেন না। আবার কোন আমল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ অনুযায়ী নাহলে সেটাও বাতিল।
### শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদি বিন আব্দুল জলীল

No Comments

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 1366 White Plains Road, Apt. 1J, The Bronx, New York-10462

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com