অ্যান্টার্কটিকায় হদিস মিলল সুবিশাল গর্তের।

October 15, 2017 10:21 pm0 commentsViews: 59

।।ড. ওমর ফারুক।। নিউইয়র্ক, তারিখঃ ১৫ অক্টোবর ২০১৭ঃ

আমাদের  বাংলাদেশের আয়তন যতটা, এরও  প্রায় দু’তৃতীয়াংশ আয়তন হবে, ততটা জায়গা জুড়েই সুবিশাল একটা গর্তের হদিস মিলেছে এবার অ্যান্টার্কটিকায়। এর আগে এত বড় গর্তের হদিস আর মেলেনি সেখানে।

দক্ষিণ মেরুর পুরু বরফের চাদরের তলায় প্রায় ৪০ বছর লুকিয়ে থাকার পর আবার উপগ্রহের ক্যামেরায় ধরা দিয়েছে সেই সুবিশাল গর্ত। যার মধ্যে অনায়াসেই ঢুকে যেতে পারে গোটা পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় দু’তৃতীয়াংশ। বাংলাদেশের আয়তন প্রায় ৫৬ হাজার বর্গমাইল এবং পশ্চিমবঙ্গের আয়তন ৩৪,২৬৭! তবে ৩০ হাজার বর্গ মাইলেরও বেশি এলাকা জুড়ে থাকা সেই গর্তের গভীরতা কতটা, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেন নি বিজ্ঞানীরা। তবে সেই গর্তটির হদিস মিলেছে যে জায়গাটাতে, সেই জায়গাতেই রয়েছে অ্যান্টার্কটিকার গভীর ওয়েডেল সমুদ্র। তাই গর্তটির গভীরতা খুব কম নয়।

বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, সেই গর্তের গভীরে বয়ে চলেছে তরল পানির উত্তাল সমুদ্র। যার নিচের পানি দক্ষিণ মেরুর হাঁড়জমানো ঠাণ্ডাতেও সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির চেয়ে অনেক বেশি গরম। সে যেমন ‍উত্তপ্ত ফুটন্ত পানি। উনুনে যেন পানি ফুটছে! আর সাধারণ সমুদ্রের পানি তো নোনতা হয়, সুবিশাল সেই গর্তের ভেতরের পানি তার চেয়েও অনেক অনেক বেশি লবণাক্ত।

টরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক কেন্ট মুর বলেছেন, ‘‘অ্যান্টার্কটিকার পুরু বরফের চাদরের তলায় লুকোনো এ গর্তের নাম ‘পলিনিয়া’। এখনও পর্যন্ত যতগুলো পলিনিয়ার সন্ধান মিলেছে, এটি তার মধ্যে বৃহত্তম। যেটা আমাদের চমকে দিয়েছে, তা হল ৪০ বছর আগে অ্যান্টার্কটিকার পুরু বরফের চাদরের তলায় এমন একটা গর্ত দেখা দিয়ে আবার হারিয়েও গিয়েছিল। ৪ দশক পর আবার বরফের চাদর ফাটিয়ে সেটা মুখ দেখিয়েছে।’’

সমুদ্রের জলের স্রোত গর্তের ভেতরের অনেক বেশি গরম পানিকে ঠেলে সমুদ্রপৃষ্ঠে তুলে দেয়। যে ভাবে কেটলিতে পানি ফুটলে তা ওপরের দিকে উঠে আসে। গরম পানি ঠেলেঠুলে সমুদ্রপৃষ্ঠে উঠে আসায় সেই ফুটন্ত পানির তাপে ওপরে জমে থাকা অ্যান্টর্কটিকার পুরু বরফের চাদর গলিয়ে দিতে শুরু করে। ফলে, সেই বরফের চাদরে ফুটো হয়। আর ফুটো হতেই বেরিয়ে পড়ে তার তলায় লুকিয়ে থাকা সুবিশাল গর্তের ‘জ্বালামুখ’। এটাকেই বলে ‘পলিনিয়া’।

বিজ্ঞানীরা এত বড় পলিনিয়া দেখে অবাক হয়েছেন কেন?

পলিনিয়া তৈরি হলে সেই গর্তের ওপরে উঠে আসা অত্যন্ত গরম পানি যেহেতু সব সময় থাকে সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরের বায়ুমণ্ডলের সংস্পর্শে, তাই খুব অল্প সময়ে সেখানে আবার বরফটা জমে উঠতে পারে না। বরফের চাদরটা ঠিকমত তৈরি হয়ে উঠতে পারে না। তা পুরুও হয়ে উঠতে পারে না। তাই একবার পলিনিয়া দেখা দিলে তা দীর্ঘ দিন ধরে দেখতে পাওয়ার কথা। তা চট করে হারিয়ে যেতে পারে না।

পলিনিয়া হারিয়ে যায় কখন?

যখন গরম জলটা অ্যান্টার্কটিকার হাঁড়জমানো ঠাণ্ডায় ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে জমতে শুরু করে। আর তা হলেই যেহেতু সেটা খুব ভারী হয়ে যায়, তাই সেটা ঝুপ করে গর্তের গভীরে ঢুকে যায়। যেখানকার পানি প্রায় ফুটছে। সেই গরমে আবার গরম হয়ে উঠলে তা ফের উঠে আসে সমুদ্রপৃষ্ঠে। এভাবেই পলিনিয়া জন্মায় আর হারিয়ে যায়।

এ বার পলিনিয়া হল কি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য?

নিশ্চিত নন বিজ্ঞানীরা। অধ্যাপক মুর বলছেন, ‘‘আমরা বুঝতে পারছি না, গত বছরের পর ওই একই এলাকায় এ বার আরও অনেক বড় চেহারার ওই গর্তের হদিশ মিলল কী ভাবে! ৪০ বছর পর কেন অত বড় চেহারার পলিনিয়া ওয়েডেল সমুদ্রের একই জায়গায় দেখা গেল, সে ব্যাপারেও কোনও স্পষ্ট ধারণা নেই আমাদের এখনও পর্যন্ত। হতে পারে তা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য। যদিও এ ব্যাপারে আমাদের সংশয় কাটেনি এখনও।’’

বিজ্ঞানীদের এমনও ধারণা, ওয়েডেল সমুদ্রের তলায় যে স্তন্যপায়ী প্রাণীরা রয়েছে, হতে পারে শ্বাসের বাতাস পাওয়ার জন্য তাদের কোনও শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া ঘটেছে, যার পরিণতিতে জন্ম হয়েছে এই পলিনিয়ার।

অধ্যাপক মুরের কথায়, ‘‘আগামী দিনে অ্যান্টার্কটিকার জলবায়ু পরিবর্তনে এই পলিনিয়া কোনও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে কি না, তা নিয়েও সংশয় কাটেনি আমাদের।’’ [জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে]

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 1366 White Plains Road, Apt. 1J, The Bronx, New York-10462

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com