।।ভালবেসে পাহাড় কেটে ছয় হাজার সিঁড়ি নির্মাণের এক অভূতপূর্ব গল্প।।

June 20, 2018 12:08 am0 commentsViews: 126

।। ভালবেসে পাহাড় কেটে ছয় হাজার সিঁড়ি নির্মাণ, যে কোন রোমান্টিক গল্পকেও হার মানাবে এ জীবনের কাহিনীটি ।।

লিউ জুজিয়াং তখন ১৯ বছরের টগবগে সুদর্শন এক তরুণ। খোশমেজাজি, সদালাপী। হুট করে প্রেমে পড়লেন তাঁর চেয়ে ১০ বছরের বড় স্বামীহারা এক সন্তানের জননী সু চাওকিনের।
সে আজ থেকে ৫০ বছর আগের কথা। আজকের তুলনায় তখনকার চীন ছিল আরও রক্ষণশীল। প্রথমতঃ বয়সে বড় কোন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়া ছিল অনৈতিক ও নিষিদ্ধ। সে নিষেধাজ্ঞার বেড়াজাল ডিঙ্গিয়ে জুজিয়াং হাত ধরলেন সু চাওকিনের।
জুজিয়াংয়ের ভালবাসা নিয়ে চারদিকে শুরু হল টিটকারি। স্ত্রীকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ আর সইতে পারছিলেন না। “নাহ, এখানে আর থাকা নয়।”-ভাবলেন জুজিয়াং। চলে গেলেন মনুষ্য সমাজের বাইরে, দূর পাহাড়ে।

জিয়াংজিন প্রদেশের অনেক গভীরে পাহাড়ের গায়ে এক চিলতে গুহাকে ঠিক করলে বাসস্থান হিসেবে। আশপাশের কয়েক মাইলের মধ্যে জনমানবের চিহ্ন নেই। মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলল, কিন্তু খাবার নেই, কাপড় নেই। আছে শুধু ভালবাসা, আর এর শান্তি। রাত হলেই নেমে আসে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তবে সব ছাপিয়ে ভালবাসা দিয়েই জয় করলেন সব।

সবকিছুর চেয়ে জুজিয়াং বেশি কষ্ট পাচ্ছিলেন স্ত্রীর কষ্ট দেখে। পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে উঠতে-নামতে কষ্ট হয় চাওকিনের। একদিন হাতে বানানো হাতুড়ি-বাটাল ও কোদাল নিয়ে চলে গেলেন বাড়ির কাছাকাছি ঢালটায়। নেমে পড়লেন পাহাড়ি ঝোপঝাঁড় পরিষ্কারের কাজে। একটু জায়গা পরিষ্কার করতেই অর্ধেক দিন চলে গেল। বাকি অর্ধেক দিনে দুটো সিঁড়ির ধাপ বানাতে পারলেন। সেই থেকে শুরু।

প্রতিদিন কাজের ফাঁকে সুযোগ পেলেই জুজিয়াং চলে যেতেন পাহাড়ের ঢালে। নিবিষ্টমনে সিঁড়ি বানাতেন। তবে কোনদিনই এটা প্রিয়তমাকে জানাতে দেন নি তিনি। স্ত্রী তাঁর কোমল পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নামবেন, আর তিনি মুগ্ধ নয়নে চেয়ে চেয়ে দেখবেন। এমন স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতেন মানুষটি। দিন যায়, মাস যায়, যায় বছরের পর বছর। জুজিয়াংয়ের সিঁড়ি বানানো তবু শেষ হয় না। স্ত্রী কতবার বারণ করেছেন। কিন্তু জুজিয়াংয়ের ওই এক পাগলামো। পাহাড়ের পাদদেশ অবধি সিঁড়ি তিনি বানিয়েই ছাড়বেন। সময় গড়িয়ে যায়, কিন্তু জুজিয়াংয়ের সিঁড়ি বানান শেষ হয় না। দীর্ঘ ৫০ বছর পর ২০০১ সালে শেষ হল জুজিয়াংয়ের সিঁড়ি বানানো। স্ত্রীকে ডেকে এনে অবাক করে দেন লিউ। নিজেকে তাঁর মনে হয় দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ। গুণে দেখা গেল, পাহাড়ের পাদদেশ থেকে চূড়া পর্যন্ত ছয় হাজারের বেশি ধাপ হয়ে গেছে।

সে বছরই একদল অভিযাত্রী বেড়াতে এলেন ওই এলাকায়। গহীন অরণ্যে মানুষের হাতে গড়া সিঁড়িটা তাঁদের নজর এড়াল না। খোঁজ করতে গিয়ে বেরিয়ে এল সব তথ্য। লিউ দম্পতির সাত সন্তানের একজন জানালেন, ‘বাবা-মা একটি দিনের জন্য একে অন্যকে চোখের আড়াল হতে দেন নি। মা খুব একটা নিচে না নামলেও বাবা নিজ হাতে তৈরি করেছেন সিঁড়িটির প্রতিটি ধাপ।’ জানাজানি হওয়ার পর তাঁদের নিয়ে তৈরি হল প্রামাণ্যচিত্র। স্থানীয় সরকার সিঁড়িটি সংরক্ষণ করার ঘোষণা দিল। ২০০৬ সালে চায়নিজ উইমেন উইকলির সেরা ১০ ভালবাসার গল্পে স্থান পেল লিউ-জুর কাহিনী। প্রকাশ করে এক বছর পরের কথা। জুজিয়াংয়ের বয়স তখন ৭২। হঠাৎ একদিন বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়লেন। স্ত্রীকে কাছে ডাকলেন। হাতখানা মুঠোয় পুরে গাঢ় দৃষ্টিতে স্ত্রীর চোখে চোখ রাখলেন। বললেন, ‘চললাম। ভাল থেকো।’ সূর্য তখন পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়েছে। চাওকিন অশ্রুসজল চোখে স্বামীর প্রতি অভিযোগ তোলেন, ‘তুমি বলেছিলে সব সময় আমার পাশে থাকবে। কিন্তু তুমি কথা রাখবে না কেন? এখন আমি একা একা কী করে থাকি?’

তাজমহল গড়তে সম্রাট শাহজাহানের হাত নয়, লেগেছে হাজার হাজার শ্রমিকের শত শত পেশীবহুল হাত। ঝরেছে ঘাম আর কত শত শ্রমিকের রক্ত।
জুজিয়াং কোন সম্রাট নন। কিন্তু ভালবাসার বিবেচনায় কী শাহজাহানের চেয়ে পিছিয়ে আছেন তিনি?? নেই বরং এগিয়েই থাকবেন। যে কোন আধুনিক ভালবাসার গল্পকেও হার মানায় এ গল্পটি। তাই নয় কী?

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 1366 White Plains Road, Apt. 1J, The Bronx, New York-10462

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com