নারীর দেহ প্রদর্শনের প্রবণতা কিসের ইঙ্গিত?

December 24, 2017 11:22 am0 commentsViews: 415

তানিয়া ফারাজী ।। তারিখঃ ২৪ ডিসেম্বর ২০১৭।।

[জগতে সব মানুষের ভালবাসাপূর্ণ সুস্থ জীবনের জন্য মানবিক গুণাবলীর বিকাশ অনেক বেশি দরকার। তাই পুরুষদের উচিৎ, নারী’র বিদ্যা, বুদ্ধি ও মানবিক গুণাবলী বিকাশের দিকে বেশি যত্নবান হওয়া এবং তাদেরকে পণ্য না ভাবা। আবার অন্যদিকে নারীদেরও উচিৎ নিজেদের মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো ও সমাজকে উন্নত করার ক্ষেত্রে মগজকে শানিত করা। দেহ শানিত করে শুধুমাত্র পাশবিক সমাজ গঠন করা সম্ভব, সুস্থ সমাজ নয়।]

গুণাবলী মানুষকে বড় করে এবং সমাজকে সুস্থ, উন্নত করে। কিন্তু বর্তমানকালে নারী পুরুষরা নিজেদের গুণাবলীকে না বাড়িয়ে দেহ প্রদর্শনের দিকে বেশি ঝুঁকছে। যেটি সুস্থ, সভ্য সমাজের জন্য ভয়ানক বলে আমি মনে করি। তবে আমি লক্ষ্য করেছি এক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে নারীরাই দেহ প্রদর্শনের বিষয়টিকে দিনের পর দিন একেবারে স্বাভাবিক করে ফেলছে। আবার অনেক পুরুষরা পছন্দ করছে বলেই অনেক নারীরা বিষয়টিকে নিয়ে মজায় আছে। আমি এই বিষয়টিকে মানুষের সমাজে মানবিক গুণাবলী বিকাশের ক্ষেত্রে এবং মানবিক গুণাবলীর দ্বারা মানুষের মূল্যায়িত হওয়ার ক্ষেত্রে অন্তরায় হিসেবে দেখছি।

নারী পুরুষ যে পক্ষই অপ্রয়োজনে দেহ দেখিয়ে বেড়াতে ইচ্ছুক হয়- সে পক্ষকে আমি সমাজকে রুচিতে নিচে নামিয়ে ফেলার জন্য দায়ী করতে চাই।। আদিম কাল থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত মানুষের অনেক চেষ্টার ফলে বিশ্ব আজ জীবনযাপনে অনেক উন্নত হয়েছে এবং অনেজ কঠিন কাজ সহজ হয়ে গেছে। মানুষের জীবনযাপনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন তা লাভ করার জন্য প্রতিটি মানুষ অনেক পরিশ্রম করে। কিন্তু আমার হাসি পায় এই ভেবে যে, সামাজিক স্বাভাবিক ভদ্রতা বজায় বজায় রাখার মত সামান্য একটি পোশাকও শরীরে চাপাতে অনেকের অনেক কষ্ট হয়। সামান্য একটি পোশাককে অনেকের অনেক বড় বোঝা মনে হয়। আমি অক্সিজেন বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত আজব পোশাক বোরকার কথা বলছিনা। আমি একটি ভদ্র পোশাকের কথা বলছি যেটি আমাকে পুরুষের মতই স্বাভাবিক মানুষ বলে চিহ্নিত করবে।

নারী পুরুষের যৌন সম্পর্ক জাগতিক স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু যখন কেউ কার্যক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকে, তখন কি সেক্সি সাজার দরকার আছে? কিন্তু অনেক দেশে অনেক নারীরা কর্মক্ষেত্রসহ প্রতিটি জায়গায় সেক্সি সেজে থাকার জন্য দেহকে সেক্সিভাবে প্রদর্শন করে এমন সংক্ষিপ্ত কাটাছেঁড়া পোশাক পরে এবং এ বিষয়টিকে অনেকে নারী স্বাধীনতার ক্ষেত্রে ভাল একটি দিক বলে মনে করে।

আমার মতে -যে নারী তার শরীরের বিভিন্ন অংশ অশ্লীলভাবে প্রদর্শন করছে- সে তা পুরুষদের উত্তেজিত করে তার প্রতি মনোযোগ আনার জন্যই করছে। এমন অবস্থায় যার মধ্যে মানবিক বোধ সৃষ্টি হয় নি- এমন কোন খারাপ পুরুষ যদি উত্তেজিত হয়ে উক্ত নারীর সাথে জোর করে যৌন সম্পর্ক করে ফেলে- তবে পুরুষটিকে দায়ী করার তেমন কিছু থাকে না, আর মেয়েটাকে নিষ্পাপ ভাবারও কিছু নেই। তাই এই ধরনের মেয়েদের প্রতি আমার সব সময় সমবেদনা কম। হ্যাঁ, তবে আমাদের বর্তমান পুরুষতান্ত্রিক সমাজই মেয়েদেরকে পণ্য বানাতে ব্যস্ত। তাই উগ্র উচ্ছৃঙ্খল মেয়েদের প্রতি একটু দয়া আমার হয়। কারণ তারা নিজেদের পণ্য না ভাবার মত পরিবেশ পাচ্ছে না। তাই তারা ইচ্ছেমত শত সহস্রভাবে দেহ প্রদর্শনে ব্যস্ত।

অনেক পুরুষ আছে যারা মানসিকভাবে অসুস্থ। এ ধরনের পুরুষদের সামাজিক, পারিবারিক শিক্ষার কথা মনে থাকে না। তারা সহজেই নারীদের সাথে যৌন আচরণের ক্ষেত্রে বিকৃত রুচির পরিচয় দেয়। শিশু ধর্ষণ পুরুষদের বিকৃত মানসিক অবস্থার ফলাফল। এ ধরনের পুরুষদের ক্ষেত্রে সকল সামাজিক শিক্ষা মিথ্যে হয়ে যায়। এদের শাস্তি অনেক কঠিন হওয়া উচিৎ। কিন্তু অনেক পূর্ণ বয়ষ্ক নারীরা বর্তমানকালে কতক্ষণ স্তনের অর্ধেক বের করে বা স্তনের ভাঁজ বের করে দেখায়, কতক্ষণ অর্ধ পা বের করে মিনি স্কার্ট পরে দেখায়, কতক্ষণ স্তন বের করে দেখায়, কতক্ষণ ব্রা, পেন্টি পরে দেখায়, কতক্ষণ শরীরের বিভিন্ন অংশগুলো কাটা ছেঁড়া পোশাক পরে দেখায়, আবার কখনও আঁটসাট পোশাক পরে শরীরের যৌন উত্তেজক ভাঁজগুলো পুরুষদের দেখাতে ব্যাকুল হয়ে যায়। এটা কি কোন সভ্য মানুষের সভ্য স্বাধীনতার বিষয় হতে পারে?

যারা যৌন কর্মী তাদের কাজ হচ্ছে পৃথিবীর যে কোনো ব্যক্তিকে দেহের বিভিন্ন নগ্ন অংশ দেখিয়ে উত্তেজিত করে তাদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। কিন্তু যারা যৌন কর্মী নয় তাদের অপ্রয়োজনে দেহ প্রদর্শনের কি প্রয়োজন?

আমি মনে করি, এ ধরনের মেয়েরা পুরুষদের যৌন রুচিকে নিচে নামিয়ে পুরুষদেরকে ধর্ষক বানাতে, আর নারীদেরকে মূল্যহীন বানাতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজকে সহায়তা করছে। অশ্লীল পোশাক এবং আচরণ পছন্দ করে যেসব নারীরা সেসব নারীদের জন্যই পুরুষরা নারীদেরকে স্তন, যৌনাঙ্গ ও সামগ্রিকভাবে যৌন যন্ত্র হিসেবে ভাবতে শিখে। এর ফলাফল স্বরূপ যেসব নারীরা শিক্ষিত, সভ্য হয়ে উঠেছে, তারা অনেকক্ষেত্রে অবমূল্যায়িত হতে থাকে এবং পুরুষদের দ্বারা সহজেই যৌন আক্রমণের শিকার হয়।

যে পুরুষরা পরিবার থেকে, সমাজ থেকে সুশিক্ষা গ্রহণ করে মানুষকে সম্মান করতে শিখেছে, তারা নারীদের সাথে কখনও অশালীন আচরণ করে না। সুশিক্ষিত, সভ্য পুরুষরা কোন নারীকে একা কিংবা উলঙ্গ পেলেও ধর্ষণ করবে না; বরং লজ্জিত হবে। কিন্তু সুস্থ, সভ্য পুরুষদের মধ্যে সুস্থ যৌন রুচি সৃষ্টি এবং তা ধরে রাখার ক্ষেত্রে নারীদের মুখ্য ভুমিকার কথা আজকাল আমরা অনেক নারীরাই ভুলে যাচ্ছি। আমরা নারীরা আজকাল প্রায়ই যৌন আচরণের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছি। ফলে পুরুষরা আরও কয়েকধাপ বেশি অসভ্য হয়ে যাচ্ছে। কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজের প্রশ্রয় পুরুষদেরকে অনেকটা নিরাপদে রাখে। তাই পুরুষদের বেশি বেশি খারাপ হতে দোষ নেই। তবে সভ্য সমাজের ক্ষতির কথা আমাদের ভাবা দরকার।
অতি পর্দাপ্রথা নারীদের জন্য যেমন অপমানজনক, তেমনি অতি বেপর্দা হওয়াও নারীদের মান সম্মান ধ্বংসের একটি কারণ। আমাদের দেশেও অনেক বাঙালি মুসলিম মেয়েরা বর্তমানকালে হলিউডের তারকাদের মত পোশাক আশাকে “সেক্সি সেক্সি” ভাব আনার চেষ্টা করতে গিয়ে ক্লিভেজ বের করছে, ব্রেস্ট, পেটের সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছে নির্লজ্জভাবে। যৌন জীবনের ক্ষেত্রে পুরুষদের সুস্থ রুচিবোধকে সমাজ অসভ্য নারীদের সহযোগিতা নিয়ে ধ্বংস করে দিচ্ছে বলেই পুরুষরাও সে সুযোগ নিচ্ছে।

পুরুষরা সমাজে অনেক নিরাপদ, কিন্তু তারপরও তারা প্রায়ই শালীন পোশাক পরে। নারীরা সমাজে নিরাপদ নয়, অথচ তারাই বেশি উচ্ছৃঙ্খল হচ্ছে নিজের শরীর প্রদর্শনের ব্যাপারে।
একটি বিষয় আমাকে অবাক করে। সেটি হল- নারীরাও পুরুষের সুঠাম শরীরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করে। পুরুষদের মধ্যেও কাউকে কাউকে সেক্সি বলা হয়, সবাইকে সেক্সি বলা হয় না। কিন্তু তাই বলে বেশিরভাগ পুরুষরাই নিজেকে সেক্সি বানানোর জন্য খালি গায়ে, বুক পিঠ, পেশী দেখিয়ে সমাজে বা নারীদের নিকট সেক্সি ইমেজ তৈরির চেষ্টা করেনা। ফ্রি সেক্সের দেশেও বেশির ভাগ পুরুষ ভদ্র পোশাক পরে বাইরে বের হয়। কারণ পুরুষরা নিজেদের গুণাবলীকে সবসময় বাড়িয়ে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু বর্তমানে মুসলিম দেশগুলোতেও নারীরা নিজের সেক্সি ইমেজ সৃষ্টির জন্য নানারকম অশ্লীল পোশাকের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। এটা শুধু পুরুষতান্ত্রিক সমাজের ষড়যন্ত্রের ফল নয় ; বরং নারীদের নিজেদের সস্তা মানসিকতার ফল, নারীর আত্মমর্যাদাহীন হয়ে পড়ার ফল। আমরা অনেকে নারীরাই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের মধ্যে অনেক ফালতু নিয়ম কানুনের চাপাচাপির মধ্যে আছি, কিন্তু পণ্য হচ্ছিনা। কেউ বাড়িতে এসে আমাদেরকে পণ্য হতে বাধ্যও করছেনা। ভাল, সভ্য পুরুষরা আমাদেরকে দেখে প্রেমেও পড়ছে। ভালভাবে পুরুষের প্রেম নিয়ে সমাজে বেঁচে থাকার জন্য অশ্লীল পোশাকের সহযোগিতা আমাদের অনেকেরই প্রয়োজন হয়নি এবং হবে না। তাহলে সব নারীদের ভদ্র হতে দোষ কোথায়?

আমাদের দেশে পূর্বের দিনে শাবানা, ববিতা, কবরীসহ বেশিরভাগ নায়িকারা সুন্দর করে শাড়ি চুড়ি পরে অভিনয় করত এবং তাই দেখে নারী পুরুষ সবাই পাগল হয়ে যেত। তাহলে সে সময়ের নায়ক, নায়িকা, দর্শকরা কি কুরুচিপূর্ণ অশিক্ষিত ছিল -নাকি বর্তমানকালের নগ্ন, অর্ধনগ্ন নায়িকা আর দর্শকরা কুরুচিপূর্ণ, অশিক্ষিত? মানুষের রুচি যত নিচে নামবে, তত তাদেরকে নিয়ে অশিক্ষিত কুরুচিপূর্ণ একটা শ্রেণি সমাজে খেলতে থাকবে। আর এ খেলার মাঝে ভদ্র শ্রেণির নারী পুরুষ অসভ্যতা, বর্বরতার শিকার হবে- যার বিচার করে শেষ করা যাবে না।

যে নারীরা গরীব বা দারিদ্র্যের কারণে খারাপ পেশায় চলে যায়, তাদের কথা আলাদাভাবে বিচার্য। কিন্তু যারা টাকা পয়সা, সামাজিক সুস্থ অবস্থান থাকার পরও বিভিন্নভাবে দেহ প্রদর্শনে ব্যস্ত থাকে, তাদেরকে নারীজাতির অবনতির ক্ষেত্রে সহায়ক বলা যায়। এ শ্রেণির নারীদের ক্ষমা করা যায় না। আমাদের সমাজে অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে, যারা সুন্দর মত পোশাক পরিধান করে এবং সুস্থ পারিবারিক, সামাজিক অবস্থাকে সম্মান করে জীবনযাপন করে। যারা পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অনেক চাপাচাপির পরও নিজেদেরকে পণ্যে পরিণত করে না ; বরং কেউ পণ্যে পরিণত করতে চাইলে তা প্রতিহত করে। নারীদের মধ্যে এই শ্রেনিটাই জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, মূল্যবোধে বড়। যারা কাজী নজরুলের কবিতায় ঠাঁই পেয়েছিল “জ্ঞানের লক্ষ্মী, সুষমা লক্ষ্মী ” বলে। এরাই নিজেদেরকে এবং সমগ্র সমাজকে মর্যাদাপূর্ণ করে গড়ে তুলতে পারে। এরাই জন্ম দিতে পারে সেই শিশুদের যারা সকল পাশবিক প্রবৃত্তিকে হার মানিয়ে মানুষের জন্য সুস্থ সমাজ গড়ে তুলতে পারে। গড়ে তুলতে পারে নারী পুরুষের সম্মানজনক মিলিত সমাজ।

বর্তমানকালের নায়ক নায়িকা এবং অতি আধুনিক নারী পুরুষরা সমাজকে ভেতর ও বাইরে যৌন কারখানা
বানানোর প্রচেষ্টায় লিপ্ত। সুস্থ, স্বাভাবিক নারী পুরুষের উচিৎ এ ধরনের নারী পুরুষদের বিষয়ে সচেতন থাকা এবং তাদের কুপ্রবৃত্তি প্রতিহত করা- যাতে তনুদের মত সকল ভদ্র, পরিশ্রমী নারীরা হেসে খেলে বেঁচে থাকতে পারে ও ভদ্রভাবে পুরুষের দ্বারা মূল্যায়িত হতে পারে। জগতে সব মানুষের ভালবাসাপূর্ণ সুস্থ জীবনের জন্য মানবিক গুণাবলীর বিকাশ অনেক বেশি দরকার। তাই পুরুষদের উচিৎ, নারী’র বিদ্যা, বুদ্ধি ও মানবিক গুণাবলী বিকাশের দিকে বেশি যত্নবান হওয়া এবং তাদেরকে পণ্য না ভাবা। আবার অন্যদিকে নারীদেরও উচিৎ নিজেদের মানবিক গুণাবলীর বিকাশ ঘটানো ও সমাজকে উন্নত করার ক্ষেত্রে মগজকে শানিত করা। দেহ শানিত করে শুধুমাত্র পাশবিক সমাজ গঠন করা সম্ভব, সুস্থ সমাজ নয়।

[মতামত লেখিকার একান্ত নিজস্ব। এর কিছু বিষয়ের সাথে নিউজ পোর্টালের সম্পাদকীয় নীতির দ্বিমত থাকতেই পারে। বিশেষ করে লেখিকার ’অতি পর্দা’ কথাটা যথার্থ নয় বলেই মনে করা হচ্ছে। – সম্পাদক]

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com