জানুনঃ কি কারণে দেশজুড়ে বেশিরভাগ চিকিৎসকই সিজার অপারেশনে বেশি আগ্রহী।।
।।ঢাকা থেকে সানজিদা আহমেদ।।
আমি ডাক্তার নই। নার্সও নই। কিন্তু আমি তো নারী। আর নারী বলেই সিজারের মুখোমুখি যে আমাকেও হতে হয় নি, তা কি আর বলা চলবে? পড়াশোনা করেছি সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার নিয়েই। স্বাভাবিক কারণে সমাজ ও সামজে বিদ্যমান মানুষ নিয়েও তো আমাকে ভাবতে হয়। এবার আমি মনে করে নিয়েছি, মহিলাদের সিজার অপারেশন নিয়ে কিছু লিখব। আমি মূলতঃ এ প্রতিবেদন ৈতৈরি করতে বেশ কিছু সিজার অপারেশনের শিকার নারীর সাথে কথা বলেছি। উপরি নিজের অভিজ্ঞতা তো একটু আধটু আছেই। থাক, বেশি বর্ণনা ও ব্যাখ্যায় না গিয়ে আসল বিষয়ে ফিরে যাই। প্রথ কথা হল, বাংলাদেশে গর্ভধারিনী মহিলাদের কপাল পোড়া। তারা বাংলাদেশের মত একটি দেশে বসবাস করে, যেখানে স্বাস্থনীতি কাগজে কলমে একটা আছে ঠিকই। কিন্তু সে নিয়ম ও নীতি কাগজের বালাম বইতেই আছে। বাস্তবে কোন প্রয়োগ নেই। ব্যাপারটি হল সে রকমঃ গরু কাগজে আছে, গোয়ালে নেই। অন্যান্য পেশার মত চিকিৎসকদের পেশাও কিন্তু একটা পেশাই। অনেকই হয়ত বলবে, সেবামূলক। কিন্তু না, তার পরও তো কথা আছে। ডাক্তারদের কি পরিবার পরিজন নেই। তাদের কি পরিবারের খরচা মেটাতে হয় না? শুধু বাংলাদেশেই নয়, সব দেশেই একই চিত্র। শুধু বাংলািদেশের সাথে ফারাকটা হল এদেশে পেশী শক্তি আইনকে নিজের গতিতে চলতে দিতে বাধা দিতে সক্ষম। আর অন্যদেশে আইনের শাসন থাকায় তা পারে না। এদেশে ডাক্তারদের কোন অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তাদের কোন পেশাগত সংগঠন শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে সরকার ও জনগণ তাদের অন্যায় দাবীর কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়।এ সব পেটশাগত সংগঠন রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে ক্ষমতাশীন দলের প্রভাব থাকে।
বাংলাদেশে অধিকাংশ গর্ভধারীনির সন্তান ভূমিষ্ঠ হবার কেসই এখথন দেখা যায় ‘সিজারিয়ান অপারেশন’। কারণ কী? এক কথায় কারণ হলঃ ডাক্তারদের অধিক অর্থ কামাইর পথ সুগম করা। এরপর আরও কিছু কারণও আছে, তা নিচে উল্লেখ করছিঃ
০১. মেডিকেল ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারিক বা ইন্টার্নি করার জন্য অধিক সিজারি রোগী দরকার।
০২. প্রাইভেট মেডিকেলে গাইনি ডাক্তাররা সিজার না করালে কর্তৃপক্ষ তাদের হাসপাতালে রাখে না। একজন নারী জানালেন, তাঁর সন্তান ধারণের পর মা ও শিশু ক্লিনিকের একজন অধ্যাপকের চিকিৎসা ও পরামর্শ গ্রহণ করেছিলেন। প্রসবের সময় হওয়ার পর হঠাৎ একদিন তিনি সে নারীর সিজারের
তারিখ দিয়ে দিলেন। উক্ত নারীর স্বামী বেচারা ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলঃ বাচ্চার কোন সমস্যা আছে কিনা? ডাক্তার ‘না’ সূচক জবাব দেয়। এরপর উক্ত নারীর স্বামী তাঁর এক সহকর্মীর স্ত্রী, যিনি পেশায় একজন ডাক্তার, তাকে দেখালেন। তিনি জানালেনঃ বাচ্চার পজিশন খুবই ভাল। অপেক্ষা করুন। সহকর্মীর স্ত্রীর চেম্বার অনেক দূরে হওয়ায় তিনি সে নারীকে তাদের বাড়ির কাছাকাছি মেডিকেল কলেজের একজন সহযোগী অধ্যাপকের কাছে নিয়ে গেলেন। ৪-৫ দিন দেখার পর তিনিও সিজারের তারিখ পছন্দ করতে বললেন। সে সময় আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট দেখিয়ে তাকে বলা হলঃ কোন সমস্যা?
তিনি বললেনঃ বাচ্চার ওজন অনেক বেশি হয়ে গেছে, প্রায় ৪ কেজির ওপর। বাচ্চা মুভমেন্ট করতে পারছে না; সিজার করতে হবে।
তখন মহিলার স্বামী ডাক্তারকে বললেনঃ নরমাল ডেলিভারি যাতে হয়, সেজন্য একটু চেষ্টা যেন করে। ডাক্তার বললঃ ওজন ৩.৫ কেজি পর্যন্ত হলে চেষ্টা
করতাম, কিন্তু ৩.৫ কেজির বেশি বাচ্চাদের নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করা হয় না।
ডাক্তারের কথায় আমরা বাধ্য হয়ে সিজার করানোর ব্যাপারে সম্মত হলাম, বললেন উক্ত নারী। কিন্তু অপারেশনের পর দেখা গেল, আমার বাচ্চার ওজন
মাত্র ২ কেজি ৪০০ গ্রাম। অনেক খোঁজ নিয়ে পরে জানা গেছে, মূলত ৩টি কারণে সিজার করাতে মানুষজনকে বাধ্য করা হয়। এগুলো হলঃ
১. টাকার জন্য।
২. মেডিকেল ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারিক বা ইন্টার্নি করার জন্য। এখানেও ডাক্তাররা ইন্টার্নি ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কমিশন পেয়ে থাকে। (তার মানে কী এটাই যে, এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ব্যবহারিক ক্লাসে ছাত্রছাত্রীরা ব্যাঙের পেট কেটে আবার ছেড়ে দেয়, তেমনি আমাদের নারীদের পেট কেটে মেডিকেলের ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহারিক করানো হচ্ছে?
৩. প্রাইভেট মেডিকেলে গাইনি ডাক্তাররা সিজার না করালে কর্তৃপক্ষ তাদের হাসপাতালে রাখেন না। ইউরোপ ও আমেরিকায় সবচেয়ে কম সংখ্যক
সিজার অপারেশনের ঘটনা ঘটে। প্রথমত তারা স্বাভাবিক ডেলিভারির সর্বাত্মক চেষ্টা করে। কেউ একেবারে মৃত্যুঝুঁকির দিকে না গেলে তারা সিজার অপারেশনে যায় না। ইতালিসহ ইউরোপের অনেক দেশে ইচ্ছাকৃত সিজার অপারেশনকে বেআইনি হিসেবে গণ্য করা হয়।
নারী বললঃ চরম ভোগান্তির পর তাঁর স্বামী তাঁর এক ডাক্তার বন্ধুকে সব কথা বলল। তিনি তখন বললেন, দেখ, একটা নরমাল ডেলিভারির জন্য একজন
ডাক্তারকে ২ থেকে ১৮ ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। এর বিনিময়ে সে পায় মাত্র ৮০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। আর সিজার করলে ২৫-৩৫ মিনিটে পেয়ে যায় ৬ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা। তাই এ রকম হয়।
কিছুদিন আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘টাকা কামাইয়ের জন্য চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারে সন্তান প্রসব করাচ্ছে।’ সর্বশেষ বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক হেলথ
সার্ভে-এর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ২৩% সিজার অপারেশন হয় এবং এর ৮০% হয় বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে।
ডাক্তারদের তো দমে দমে টাকার আমদানি। তারপরও তারা যদি আমাদের সামনে মিথ্যে অজুহাত দাঁড় করিয়ে টাকা কামানোর ধান্ধা করেন- বলুন তো, আমরা তাহলে কাদের ওপর নির্ভর করব ???
[অনলাইনের কিছু তথ্যও এ লেখায় ব্রবহার করেছি। ]