বিএসএফ ৮৭জন রোহিঙ্গা মুসলিমকে ‘পুশব্যাক’ করেছে
-
দিল্লিতে বাহিনীর পরিচালক কে কে শর্মা বলেছেন, বাংলাদেশের দিকে বিজিবি সেটা টের পাওয়ার পর যথারীতি খুশি হয়নি এবং পাল্টা তাদের ভারতে ঢুকিয়ে দিতে চেয়েছে – যদিও সেই চেষ্টা সফল হয়নি বলে তিনি দাবি করেছেন।
বিবিসি এ বিষয়ে বিজিবি-র প্রতিক্রিয়া জানার জন্য অনেক চেষ্টা করেও সফল হয়নি, তবে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়মিত নজর রাখে, পশ্চিমবঙ্গের এমন একটি মানবাধিকার সংগঠন বলছে রোহিঙ্গাদের ‘পুশব্যাক’ করা হচ্ছে বলে তাদের কাছে অন্তত কোনও খবর নেই।
বিএসএফ বলছে গত আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ থেকে বাংলাদেশে নতুন করে যে রোহিঙ্গাদের ঢল নামা শুরুর পর থেকে তারা বাংলাদেশ সীমান্তে নজরদারি বাড়িয়েছে।
এমন কী অন্ধকারে সন্দেহভাজন রোহিঙ্গাদের গতিবিধি শনাক্ত করতে পাকিস্তান সীমান্ত থেকে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা আনানো হয়েছে – সীমান্ত এলাকার রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডগুলোতে পর্যন্ত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
বিএসএফের প্রধান মি: শর্মা বলছেন, “আমার কাছে যা পরিসংখ্যান আছে তার ভিত্তিতে বলতে পারি গত কয়েক মাসে আমরা অন্তত ৮৭জন রোহিঙ্গাকে আটক করে বাংলাদেশে পুশব্যাক করেছি। তবে সত্যি কথা বলতে কী, সীমান্তের অন্য পারে বিজিবি যখনই টের পায় আমরা পুশব্যাক করেছি তারা মোটেও খুশি হয় না।”
“তবে যেহেতু দুই বাহিনীর মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে, তাই একে কেন্দ্র করে এখনও কোনও সংঘাত বা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। দু-একটা ঘটনায় তারা আবার অন্য জায়গা দিয়ে তাদের ভারতে ঠেলে দিতে চেষ্টা করেছে ঠিকই – কিন্তু আমরা সেগুলো ঠেকিয়ে দিতে পেরেছি। আপাতত এভাবেই চলছে।”
তবে যে রোহিঙ্গাদের ভারত বাংলাদেশে পুশব্যাক করেছে বলে দাবি করছে, তারা ভারতে সদ্য পা-রাখা রোহিঙ্গা না কি বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই এ দেশে ছিলেন, বিএসএফ প্রধান তা স্পষ্ট করেননি।
এদিকে এ বিষয়ে বিজিবি-র বক্তব্য জানতে বাহিনীর পরিচালক থেকে শুরু করে মুখপাত্র পর্যায়ে এদিন বিকেলে বিবিসি বারবার ফোন করেছিল, কিন্তু ফোনে তাদের পাওয়া যায় নি।
অন্য দিকে বিএসএফের দাবি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংগঠন মাসুম, গোটা সীমান্ত এলাকা জুড়ে যাদের খুব ভাল নেটওয়ার্ক আছে।
সংস্থার কর্ণধার কিরীটি রায় বিবিসিকে বলছিলেন রোহিঙ্গাদের বিএসএফ পুশব্যাক করছে বলে তাদের অন্তত কিছু জানা নেই।
তার কথায়, “রোহিঙ্গারা ভারতে আসছেন তাতে কোনও ভুল নেই। গ্রেপ্তারও হচ্ছেন, কোর্টের দলিলে তাদের শতকরা ৮০ ভাগকে রোহিঙ্গা বলেই অভিহিত করা হচ্ছে। আমরা অন্তত একজন রোহিঙ্গাকে কোর্টের নির্দেশেই জাতিসংঘের হাতে তুলেও দিয়েছি।”
“কিন্তু সীমান্তবর্তী অন্তত ছ-সাতটা জেলায় আমাদের লোকজন আছে, বিএসএফ যে পুশব্যাকের কথা বলছে আমরা অন্তত তার কোনও প্রমাণ পাইনি”, জানাচ্ছেন তিনি।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে বলেছে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য রোহিঙ্গাদের সরকার হুমকি বলে মনে করে।
সেই মামলাতেই রোহিঙ্গাদের ভারত থেকে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন।
সেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরই অধীন বিএসএফ বলেছে, ভারতে রোহিঙ্গাদের কোনওভাবেই ঢুকতে না-দিতে তারা বদ্ধপরিকর।