অজুর প্রয়োজনীয়তা, নিয়ম ও ভঙ্গের কারণ।

November 26, 2017 11:44 pm0 commentsViews: 119

।। সানজিদা আহমদ, ঢাকা।। তারিখঃ ২৭ নভেম্বর ২০১৭।

পবিত্র হয়ে নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে অবশ্যই অজু করতে হয়। অজু ব্যতীত সলাত আদায় হয় না। তাই আমাদের উচিত ভাল করে অজু করেই সলাতে শরিক হওয়া।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহপাক বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাজের জন্য ওঠ, তখন স্বীয় মুখমণ্ডল, হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত, সম্পূর্ণ মাথা এবং পদযুগল গীটসহ ধৌত করে নাও’। সুরা মায়েদাঃ ৬

অজু করার নিয়মঃ
প্রথমে অজুর নিয়ত (নাওয়াইতুআন আতা ওয়াজ্জায়া লিরাফয়িল হাদাছি, ওয়াসতি বাহাতাললিচ্ছলাতি ওয়া তাকারবান ইল্লাল্লাহি তায়ালা।) অর্থঃ আমি পবিত্রতা অর্জন, নামাজ আদায় এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য অজু করছি। নিয়্যত সম্পর্কে কেউ কেউ বলছেন,ম মনে মনে নিয়্যত করলেই যথেষ্ট। আবার অনেক ইসলামিক স্কলার মুখে উচ্চারণের কথাও বলেছেন।
দোয়াটি পড়ে কিবলার দিকে মুখ করে বসে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে অজু শুরু করতে হবে। তারপর প্রথমে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত তিনবার ধুতে হবে। তারপর মুখে পানি দিয়ে কুলি করতে হবে এবং মেছওয়াক করতে হবে। রোজা না থাকলে গড়গড়াসহ কুলি করতে হবে। তারপর তিনবার নাকে পানি দিয়ে ভাল করে ধুতে হবে অর্থাৎ বাম হাতের অঙ্গুল দিয়ে নাক পরিস্কার করে নিতে হবে। তারপর সম্পূর্ণ মুখমণ্ডল তিনবার ধুতে হবে। তারপর প্রথমে ডান হাত এবং পরে বাম হাত কনুইসহ তিনবার করে ধুতে হবে। তারপর সমস্ত মাথা একবার মসেহ করতে হবে। তারপর দুই হাতের পিঠ দিয়ে ঘাড় মসেহ করতে হবে এবং সবশেষে প্রথমে ডান পা, পরে বাম পা টাখনুসহ তিনবার করে ধুতে হবে।
অজুর প্রকারভেদঃ
অজু পাঁচ প্রকার। যথাঃ ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মাকরূহ ও হারাম অজুু।

১. নামাজ আদায়, কুরআন শরিফ তেলাওয়াত এবং সেজদার তেলাওয়াতের জন্য অজু করা ফরজ।

২. কাবা শরিফ তওয়াফ করার জন্য অজু করা ওয়াজিব।

৩. মোস্তাহাব বা সুন্নত অজুু হল, যা শরীর পাক রাখার জন্য করা হয় অর্থাৎ সব সময় ওজু রাখা সুন্নত।

৪. অজু করে কোন ইবাদত না করে সেই অজু থাকা অবস্থায় নতুন অজু করা মাকরূহ।

৫. আর হারাম অজু হল কারও মালিকাধীন পানি জোরপূর্বক নিয়ে কিংবা এতিমের সংরক্ষিত পানি দিয়ে অজু করা।

অজুর ফরজঃ
১. সমস্ত মুখমণ্ডল একবার ধোয়া; ২. কনুইসহ উভয় হাত একবার ধোয়া; ৩. মাথা মাসেহ করা ও ৪. টাখনুসহ উভয় পা একবার ধোয়া। মনে রাখা চাই, কোন ফরজ বাদ পড়লে অজু হবে না।

অজুর সুন্নতঃ
১. বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে অজু শুরু করা;

২. কবজিসহ উভয় হাত তিনবার ধোয়া;

৩. কুলি করা;

৪. নাকে পানি দেওয়া;

৫. মেসওয়াক করা;

৬. সমস্ত মাথা একবার মসেহ করা;

৭. প্রত্যেক অঙ্গ তিনবার করে ধোয়া;

৮. কান মসেহ করা;

৯. হাতের আঙ্গুলসমূহ খেলাল করা;

১০. পায়ের আঙ্গুলসমূহ খেলাল করা;

১১. ডান দিক থেকে অজু শুরু করা;

১২. কুরআনে বর্ণিত ধারাবাহিকতা রক্ষা করা;

১৩. গর্দান মসেহ করা;

১৪. অজুর শুরুতে মেসওয়াক করা;

১৫. দুই কান মসেহ করা ও

১৬. এক অঙ্গের পানি শুকানোর আগেই অন্য অঙ্গ ধৌত করা।

অজুর মাকরূহঃ
১. অজুর সুন্নতসমূহের যে কোন একটি ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেয়া;

২. প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যয় করা;

৩. মুখমণ্ডল ধৌত করার সময় সজোরে মুখে পানি নিক্ষেপ করা;

৪. বিনা ওজরে বাম হাত দ্বারা কুলি করা ও নাকে পানি দেয়ার এবং ডান হাতে নাক পরিস্কার করা;

৫. অপবিত্র স্থানে অজু করা;

৬. মসজিদের মধ্যে অজু করা, তবে কোন পাত্রের মধ্যে অজু করা জায়েয;

৭. কফ কাশি বা নাকের ময়লা অজুর পানির মধ্যে নিক্ষেপ করা ও

৮. বিনা কারণে অন্যের সাহায্য নেয়ার কারণে অজু মাকরূহ হয়।

জরুরী কিছু মাসয়ালাঃ
১. মুখমণ্ডল ধোয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন মাথার চুলের গোড়া থেকে থুতনি পর্যন্ত এবং এক কানের লতি থেকে অন্য কানের লতি পর্যন্ত ধোয়া হয়। দুই হাতের সাহায্যে ভালভাবে মুখমণ্ডল ধোয়া হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন দুই ভ্রুর পশমের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছে। যদি মুখ এবং চোখ এরকম জোর করে বন্ধ করে রাখা হয়, যাতে চোখের পাতা অথবা ঠোটের কিছু অংশ শুকনা থাকে তবে অজু হবে না।

২. পুরুষগণ মুখমণ্ডল ধোয়ার পর ভিজা হাতের অঙ্গুল দিয়ে দাঁড়ি খিলাল করবে। তবে তা তিনবারের বেশি খিলাল করবে না।

৩. অজুর মধ্যে থুতুনি ধোয়া ফরজ। থুতুনিতে দাড়ি থাকুক বা না থাকুক।

৪. মুখ বন্ধ করলে ঠোটের যে অংশ স্বাভাবিকভাবে দেখা যায় সে অংশ ধোয়া ফরজ।

৫. হাতে আংটি থাকলে, মেয়েদের চুড়ি থাকলে এর নিচে পানি পৌঁছাতে হবে। নাকের নথের নিচের চামড়াও পানি পৌঁছাতে হবে।

৬. নখের ভিতর আটা বা চুন ঢুকে শক্ত হয়ে থাকার কারণে যদি নখের ভিতরে পানি না যায় তবে আটা বা চুন বের করে সেখানে পানি পৌঁছাতে হবে।

৭. এক অঙ্গ ধোয়ার পর আর এক অঙ্গ ধুতে এত দেরি করা ঠিক হবে না যাতে ইতোমধ্যে প্রথম অঙ্গ শুকিয়ে যায়।

৮. প্রত্যেক অঙ্গ ধোয়ার সময় ভাল করে ঘঁষে মেজে ধোয়া জরুরী।

৯. হাতের পায়ের নখে পালিশ থাকলে তা প্রথমে তুলে ফেলতে হবে।

১০. অজুু করার পর যদি দেখা যায় হাতের বা পায়ের কোন অংশ শুকনা রয়ে গেছে, তাহলে সেখানে পানি প্রবাহিত করে দিতে হবে। শুধু ভিজা হাতে মুছলে হবে না।

১১.প্রত্যেক অঙ্গ-প্রতঙ্গ সর্বোচ্চ তিনবার করে ধোয়ার নিয়ম, এর চেয়ে বেশি ধোয়ার নিয়ম নেই এবং একবার করে ধৌত করলেও অজু হয়ে যাবে।

১২. অ-পবিত্র হয়ে গেলে মোজার উপর মসেহ করা চলবে না।

১৩. এক অজুুতে একের অধিক নামাজ পড়া জায়েজ।

১৪. অজুু করার সময় দুনিয়াবী কথাবার্তা বলা মাকরুহ।

অজু ভাঙ্গার কারণঃ
০১.প্রসাব-পায়খানা করলে;

২. পায়ুপথে বায়ু নির্গত হলে;

৩. শরীরের কোন অংশ থেকে রক্ত বা পুঁজ বের হয়ে গড়িয়ে পড়লে;

৪. নিদ্রামগ্ন হলে;

৫. মুখ ভরে বমি করলে;

৬. নামাযের মধ্যে সশব্দে হাসলে;

৭. পাগল বা মাতাল হলে।

৮. কারো নাক দিয়ে কোন কিছু ঢুকে মুখ দিয়ে বের হলে;

৯. যদি মুখ দিয়ে থুথুর সাথে রক্ত বের হয় এবং থুথুর চেয়ে রক্তের পরিমাণ বেশি বা সমান হয়

১০. স্ত্রীকে কামভাব সহকারে স্পর্শ করলে ও

১১. লজ্জা স্থানে বিনা আবরণে হাত পড়লে অজুু ভঙ্গ হয়ে যাবে।

উল্লেখ্য, অনেকে বলে থাকেন, পান বা সিগারেট খেলে বা হাঁটুর উপর কাপড় উঠে গেলে অজু ভেঙে যাবে। এটি ভুল ধারণা, অজু ভাঙার কারণ হিসেবে যা উপরে বর্ণনা করা হল, এর বাইরে অন্য কোন কারণে অজু ভাঙবে না।

অজুু শেষের দোয়া
উমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজুু সম্পন্নের পর নিম্নলিখিত দোয়া করে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেয়া হবে। সে যে কোন দরজা দিয়েই ইচ্ছা বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে। (সহিহ মুসলিম ও জামে আত-তিরমিজি)

দোয়াটি হলঃ আশহাদ আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শরিকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুল্লাহু। আল্লাহুম্মাজ’আলনি মিনাত তাওয়াবিনা ওয়াজ’আলনি মিনাল মুতাত্বহেহরিন। অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই। তিনি এক, তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি, হজরত মুহাম্মদ সা. আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। হে আল্লাহ! আমাকে তাওবাকারী ও পবিত্রতা অর্জনকারী লোকদের মধ্যে শামিল করুন। [সহিহ মুসলিম ও জামে আত-তিরমিজি]

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com