ভারতে ওয়াই-ফাই আছে, শৌচাগার নেই। খোদ মোদির নিজ গ্রামের অবস্থাই ভয়াবহ।
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।। ২৪ নভেম্বর ২০১৭।। স্থানীয় সময়ঃ রাত নয়টা।
২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরই শুরু হয় ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’। এই অভিযানের ছোঁয়া গুজরাটে মোদির নিজ এলাকায় কতটুকু লেগেছে, তা সম্প্রতি দেখতে যান বিবিসির এক সাংবাদিক।
গুজরাটের মেহসানা এলাকার ভাদনগরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ঐতিহাসিক গুরুত্বের জন্য এই এলাকাকে পর্যটনকেন্দ্রে উন্নয়নের কাজ চলছে।
সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, গুজরাটের ভাদগরে ওয়াই-ফাই সুবিধা থাকলেও বেশির ভাগ বাড়িতেই কোন শৌচাগার নেই।
বিবিসির ওই সাংবাদিকের নাম প্রিয়াঙ্কা দোবে। ভাদগরে তিনি স্থানীয় নারীদের সঙ্গে কথা বলেন। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘গ্রামে ঢোকা মাত্র আমার স্মার্টফোনে একটি বার্তা আসে। তাতে লেখা—আপনি ভাদগর ওয়াই-ফাই জোনে প্রবেশ করেছেন। ’ পরে তিনি জানতে পারেন, সরকারিভাবে সেখানে ওয়াই-ফাই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।
এরপর ওই সাংবাদিক শৌচাগারের খোঁজ করেন। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘শৌচাগারের কথা জিজ্ঞাসা করা মাত্রই ভিন্ন রূপ সামনে চলে আসে। আমাকে কয়েক স্কুলছাত্রী পাশের একটি খোলা জায়গায় নিয়ে যায়। এছাড়া অন্য বাসিন্দারাও জানান, রোহিত ভাস গ্রামে নারী ও পুরুষের প্রাকৃতিক কাজ সারার জন্য আলাদা দুটি খোলা জায়গা রয়েছে। সেখানেই রোজ সকালে এই কাজ সারতে হয় তাঁদের।
’বিবিসির ওই সাংবাদিক বলেন, ‘ওই গ্রামের একটা বাস্তবতা হল, প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করার জন্য সেখানকার নারী ও পুরুষরা এখনো দুটি খোলা মাঠের ওপর নির্ভরশীল। আর এর মানে হল, প্রত্যন্ত অঞ্চলে শৌচাগার নির্মাণের জন্য সরকার যে অর্থ বরাদ্দ করেছে, তা এখনো ওই গ্রামে পৌঁছায়নি। ’ সেখানকার নারীদের সবচেয়ে বড় চাওয়া হলো ‘আমরা শৌচাগার চাই’।
অভিযোগ করেন, পয়োনিষ্কাশনের নালাটিও খোলা থাকে। ছোট শিশু ও কিশোরীদেরও মাঠে গিয়ে কাজ সারতে হয়।
দলিত সম্প্রদায়ের আরেক নারী নির্মলা বেন বলেন, ‘মোদির সরকার আমাদের জন্য ঘর ও শৌচাগার নির্মাণ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু আমরা কিছুই পাইনি।’
৭০ বছরের মানি বেন মরচে ধরা টিনের কৌটা নিয়ে যাচ্ছিলেন। বললেন, খুব সকালে এই টিন নিয়েই খোলা মাঠে যেতে হয় তাঁকে।
এসব নারীর কাছে প্রিয়াঙ্কা জানতে চান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তাঁরা কী চান? একবাক্যে উত্তর আসে, শৌচাগার। খোলা জায়গায় অনাবৃত হওয়ার লজ্জা থেকে বাঁচতে চান এই নারীরা।
২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর গত ৮ অক্টোবর প্রথমবার নিজ গ্রাম ভাদনগরে যান মোদি। দলিত সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, নির্বাচন সামনে আসায় তাদের কথা সবার মনে পড়েছে। এ ছাড়া কেউ তাদের কথা ভাবে না।
বাসিন্দারা বলছেন, রোহিত ভাস এলাকায় কমপক্ষে ৫০০ বাড়িতে শৌচাগার নেই। এসবের মধ্যে বেশির ভাগ বাড়িতে দলিত ও নিম্নবর্ণের লোকজন বাস করে।
ভাদনগরকে ঐতিহাসিক পর্যটনকেন্দ্রে উন্নত করতে মোদির সরকার ৫০০ কোটি রুপির পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এতে আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্র ও প্রযুক্তিগত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
[বিবিসি’ প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বনে]