ছবিতে বর্ণনা এমনঃ  যে উঠোনে তুলসীতলা, সেখানেই শৌচালয়! ছেলের প্রস্তাব শুনে খেপে উঠলেন বাবা। পুত্রবধূও পত্রপাঠের পর শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন। তাঁকে ফিরিয়ে আনতে শেষ পর্যন্ত সেই উঠোনেই শৌচালয় তৈরি করতে হয়েছিল ‘টয়লেটঃ এক প্রেম কথা’ নামে এ ছায়া ছবিতে।

অভাব অর্থের নয়। এমনকী, জমিরও নয়। বাধা মনের এবং রুচির। সৃজনশীল এবং সজ্জন মানুষরা টয়লেট ছাড়া বাড়ি করবে না।   সেই বাধা ভাঙতে গেলে নারীদের এগিয়ে আসতে হবে। মাস চারেক আগে ধানবাদের এক মহিলা একদিন দেখেন, বর তাঁর জন্য চকচকে স্মার্ট ফোন কিনে এনেছেন। কী করে তার টাকা জুটল? বর’টা একগাল হেসে উত্তর দিয়েছিলেন, বাড়িতে টয়লেট তৈরি করতে যে টাকা পেয়েছিলেন, তা দিয়েই সেই ফোন কিনেছেন। তাঁর অনেক দিনের শখ, গ্রামের আর সবার মত তাঁর  লাল টুকটুকে বৌয়েরও একটি ভাল ফোন থাকবে। সেই মহিলা ফোনটি মাটিতে আছড়ে ভেঙে বরকে বলেছিলেন, ফোন চাই না, শৌচালয়ই চাই। শেষ পর্যন্ত তা পেয়েছিলেনও।

পশ্চিবঙ্গের রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত  মুখোপাধ্যায় মঙ্গলবার মালদহে এক অনুষ্ঠানে সেই একই কথা বললেন। মালদহ নির্মল জেলা ঘোষিত হয়েছে এ দিন। কিন্তু এখনও এই জেলার কিছু বাড়িতে শৌচালয় নেই, বললেন মন্ত্রী। যাঁদের বাড়িতে শৌচালয় রয়েছে, তাঁদেরও অনেকে তা ব্যবহার করেন না। কিন্তু এটা শুধু মালদহের নয়। সারা ভারতেরই সমস্যা। সুব্রতবাবুর বক্তব্য, ‘‘তার প্রধান কারণ অভ্যাস। অভ্যাস বদলানো পরমাণু বোমা বানানোর চেয়েও শক্ত।’’ সেই অভ্যাসে যোগ হয় নানা সংস্কারও। যেমন, বাড়ির চৌহদ্দির মধ্যে শৌচালয় করতে রাজি হন না পরিবারের প্রবীণেরাই। অথচ, বাড়িতে শৌচালয় তাঁদেরই সব থেকে বেশি দরকার। নির্মল গ্রাম প্রকল্পের সঙ্গে জড়়িত এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, অনেক পরিবার মেয়েদের নানা কাজে বাড়ির বাইরে যেতে দিতে পর্যন্ত বাধা দেয়, তারাই বাড়িতে শৌচালয় তৈরি করতেও দিতে চায় না।

তাই নারীরাই এগিয়ে এলে কাজ কিছুটা সহজ হয়।  ‘টয়লেটঃ এক প্রেম কথা’ সিনেমার মতই, ঝাড়খণ্ডের গাঢ়বাতে এক নববধূ বিয়ের পর শৌচাগার নেই বলে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে এসেছিলেন, খবর ভারতীয় গণমাধ্যমের ।

সে বাড়িতেও সকলের কার্পণ্য ও  মনের বাধা কাটিয়ে শৌচালয় তৈরি করতে হয়েছিল। পাটনাতে সম্প্রতি নানা গ্রাম থেকে মহিলারা লোটা নিয়ে এসে শৌচালয় তৈরির দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন রাজ্যপালকে।

পশ্চিবঙ্গের রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত  মুখোপাধ্যায় তাই নারীদেরকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে পরামর্শ দিলেন। তিনি বললেন, মেয়েদেরই পণ করতে হবে, শৌচালয় না থাকলে সেই বাড়িতে বিয়ে নয়। নাবালিকা বিয়ে যদি অনেকটাই রোধ করা যায়, তা হলে এই পণেও বাংলা সফল হবে বলে তাঁর মত।