১০ ভাগ মানুষের হাতে বিশ্বের ৮৮ ভাগ সম্পদ। বুঝ হে সুজন!
ক্রেডিট সুইসের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ এক শতাংশ ধনীর হাতে রয়েছে বিশ্বের অর্ধেকের বেশি (৫০.১%) সম্পদ। বিশ্বের পূর্ণবয়স্ক অর্ধেক মানুষের হাতে রয়েছে মোট সম্পদের মাত্র ১ শতাংশ। শীর্ষ ১০ শতাংশ ধনীর হাতে রয়েছে ৮৮ ভাগ সম্পদ।
সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইস রিসার্চ ইন্সটিটিউট (সিএসআরআই) এর গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্ট অনুযায়ী বিশ্বে মোট সম্পদের আকার রেকর্ড ২৮০ ট্রিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। এক দশকে বিশ্বের সম্পদের আকার বেড়েছে প্রায় ২৭ ভাগ। অবশ্য বিশ্বে যে সম্পদ বেড়েছে তার অর্ধেক বেড়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। জনসংখ্যার চেয়ে সম্পদ বেড়েছে বেশি হারে। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মাথাপিছু সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ হাজার ৫৪০ ডলার।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমপক্ষে ১০ লাখ ডলার আছে এমন ব্যক্তি বা মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা সারা বিশ্বে এখন ৩ কোটি ৬০ লাখ, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৩৭ লাখ। এক বছরের ব্যবধানে বিশ্বে মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা বেড়েছে ২৩ লাখ ৪৩ হাজার। একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ১ কোটি ৫৩ লাখ মিলিয়নিয়ার রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরে সবচেয়ে মিলিয়নিয়ার আছে যথাক্রমে জাপান ও যুক্তরাজ্যে। শীর্ষ দশে থাকা অন্য দেশগুলো হলো জার্মানি, চীন, ফ্রান্স, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও দক্ষিণ কোরিয়া।
‘পৃথিবীর অর্ধেক সম্পদ ১ শতাংশ মানুষের হাতে’
অধ্যাপক ড. আবুল বারকাতের অর্থনীতিশাস্ত্রে দর্শনের দারিদ্র্য শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে পিকেএসএফের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, এ পৃথিবীর ১ শতাংশ মানুষের হাতে বিশ্বের অর্ধেক সম্পদ রয়েছে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১ শতাংশ মানুষের হাতে রয়েছে সেই দেশের ৪০ শতাংশ সম্পদ। সম্পদের বৈষম্য বাংলাদেশেও বাড়ছে।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গতকাল বিকেলে অর্থনীতিশাস্ত্রে দর্শনের দারিদ্র্য শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো: মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবু জাফর মো: সফিউল আলম ভূঁইয়া, অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শফিক উজ জামান, অধ্যাপক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী ও অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক ওয়াহিদউািদ্দন মাহমুদ বলেন, আজকাল সভা-সেমিনারে যাই না। কারণ ওসবে ভাড়া করা লোক আনা হয়। তিনি বলেন, পৃথিবীর অর্থনীতি যে বাঁকে এসে পৌঁছেছে সেই অর্থনীতিশাস্ত্রের একটা পরিবর্তন হওয়া আবশ্যক।
বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে তিন ধরনের শিক্ষা রয়েছে। মাদরাসা, সাধারণ ও ইংরেজি। পৃথিবীর কোনো দেশে এমন শিক্ষা কাঠামো নেই। এ দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি করা সম্ভব নয়।
তেল সম্পদে সমৃদ্ধ ধনী রাষ্ট্র ব্রুনাই
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম ধনী দেশ ব্রুনাইয়ের মাথাপিছু বার্ষিক আয় প্রায় ৩৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস দেশটির আয়ের প্রধান উৎস। দেশটির জিডিপির ৯০ শতাংশের জোগান দেয় পেট্রোলিয়াম রপ্তানি করে। পাঁচ লাখের কম জনসংখ্যার দেশটি বিশ্বে সবচেয়ে কম জনবহুল দেশগুলোর একটি।
ব্রুনাই একটি রাজতান্ত্রিক ইসলামী দেশ। দেশটি বোর্নিও দ্বীপের উত্তর উপকূলে অবস্থিত। এর উত্তরে দক্ষিণ চীন সাগর এবং বাকী সব দিকে মালয়শিয়া। ব্রুনাই তেল সম্পদে সমৃদ্ধ একটি ধনী রাষ্ট্র। ১৯৬০-এর দশকের শেষ দিকে এটি এই অঞ্চলের একমাত্র দেশ হিসেবে ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৮৪ সালে এসে দেশটি স্বাধীন হয়।
ব্রুনাই দু’টি আলাদা এলাকা নিয়ে গঠিত। এদের মধ্যে পশ্চিমেরটি বৃহত্তর। দু’ এলাকাতেই সমুদ্র বন্দর আছে। তবে দু’টিকেই মালয়শিয়ার সারাওয়াক প্রদেশ ঘিরে রেখেছে। বন্দর সেরি বেগাওয়ান ব্রুনাইয়ের রাজধানী। ব্রুনাইয়ের আয়তন মাত্র ৫,৭৬৫ বর্গকিলোমিটার।
ব্রুনাইয়ের রাজনীতি একটি পরম রাজতন্ত্র কাঠামোতে সংঘটিত হয়। ব্রুনাইয়ের সুলতান হলেন একাধারে রাষ্ট্র ও সরকারের প্রধান। সরকারের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত। ব্রুনাইয়ে ২০ সদস্যবিশিষ্ট একটি আইন প্রণয়ন কাউন্সিল আছে, তবে এর সদস্যেরা আইন প্রণয়নে কেবল পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন। ব্রুনাইয়ের সংস্কৃতি দৃঢ়ভাবে মালে সংস্কৃতির এবং ইসলামী ধর্ম দ্বারা প্রভাবিত হয়। ইসলাম ব্রুনাইয়ের সরকারি ধর্ম।
মালয় ভাষা ও ইংরেজি ভাষা ব্রুনাইয়ের সরকারি ভাষা। ব্রুনাইয়ের অর্ধেকেরও বেশি লোকের মাতৃভাষা মালয় ভাষা। অন্যদিকে ইংরেজি মাতৃভাষী লোকের সংখ্যা হাজার দশেক। এখানকার প্রায় ১২% লোক চীনা ভাষার বিভিন্ন উপভাষাতে কথা বলেন। এছাড়াও বেশ কিছু সংখ্যালঘু ভাষা প্রচলিত। মালয় ভাষা দেশটির সার্বজনীন ভাষা বা লিঙ্গুয়া ফ্রাংকা, তবে ইদানীং পর্যটন ও বাণিজ্যে ইংরেজি ভাষার প্রসার বেড়েছে।
সূত্র : ফোর্বস ও উইকিপিডিয়া