যে সব কারণে বাংলাদেশি শ্রমিক সম্পর্কে মধ্যপ্রাচ্যে নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি
সৌদী আরবে বহুকাল পূর্বে বাংলাদেশী মুসলিমদেরকে অনেক কদর করত। তারা জানত এরা গরীব মুসলিম। ফলে তাদেরকে ভালোবাসত। সে দেশে যাওয়াও ছিল অনেক সহজ ও স্বল্প ব্যয়ে । শুধু তাই নয়, শিক্ষিত ও দক্ষ প্রফেশনালরা সেখানে গিয়ে খুব সুনাম করে। তারা অনেক অর্থ বিত্তের মালিকও হয়। কিন্তু যখন অশিক্ষিত, আনকালচারড, অপেশাদাররা মানুষগুলো যেতে শুরু করল, তারা বাংলাদেশি মানুষদের নিয়ে আরবীয় লোকদের মনে যে আবহ এতদিন বিদ্যমান ছিল, তা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়। ফলে স্থানীয় লোকেরা ভুল বুঝতে শুরু করে। নতুন এসব শ্রমিকরা মনে করতে থাকে, আরবরাও মুসলিম, আমরাও মুসলিম, ফলে যাই করি না কেন, ওরা ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবে। স্বভাবসুলভ খারাপ লোকেরা খারাপ কাজ করতে থাকে। ক্রমশই বাংলাদেশের দূর্নাম ছড়াতে থাকে। অনেক বাঙ্গালী মুসলিম মুখে দাড়ি,জুব্বা নিয়েও অসততার পরিচয় দেয়। এরপর এসব মুসলিমদের কারনে অন্য ভালো মুসলিমদেরকেও সন্দেহ করতে থাকে ও এক পাল্লায় মাপতে শুরু করে। বহু বাংলাদেশী নিজেদের ব্যক্তিত্বকে ধ্বংস করে এমন অবস্থার সৃষ্টি করে যে, বাংলাদেশীকে ওরা মিসকিন ভাবতে থাকে এবং ব্যক্তিত্বহীন সম্প্রদায় ভাবতে থাকে। কখনও উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদেরকেও আরবরা মিসকিন বলেছে,যেহেতু তাদের পূর্ব অভিজ্ঞতা খারাপ ছিলো।
অপরদিকে ভারত তাদের লোকদেরকে বেশ খানিকটা প্রশিক্ষিত করে পাঠাতে থাকে। ঐতিহাসিকভাবে তারা তেলবাজও আছে, ফলে আরব শেখদেরকে,সরকারকে তারা তেল মারে। আর তাদের জনগন জানে,যেহেতু তারা মুসলিম নয়, ফলে এই কড়া শরিয়তের দেশে তাদেরকে সর্বোচ্চ ভালো আচরণ করতে হবে, নইলে মরন। তারা পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়। সততার পরিচয় দেয়। সেটা তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের চাইতে বেশী হয়। ওরা আরব শেখদের মন জয় করে। এরপর অবস্থা এমন হয় যে, আরবরা ভারত থেকে বেশী শ্রমিক নিতে থাকে, যদিও প্রথমে এই রাস্তা বাংলাদেশের জন্যে বেশী খোলা ছিলো।
ওদের দূতাবাসগুলো বাইরের দেশে নিজেদের জনগনের পক্ষে ভালো কাজ করে। আর আমাদের দূতাবাসগুলো অন্তত আরবে শ্রমিকদের হেফাজতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়না। আমাদের সরকারগুলোও শ্রম শক্তিকে মূল্যায়ন করেনি,আন্তর্জাতিকভাবে বুদ্ধিমত্তার সাথে আচরণ করেনি। ফলে বাংলাদেশ বিশাল এক শ্রম বাজার হারিয়েছে এবং ভারত ওই স্থানটা কৌশলে দখল করেছে। ভারতের থেকে যদি কিছু শেখার থাকে, তবে সেটা কৌশল। ওরা খুবই কৌশুলী।