পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্য
মোবায়েদুর রহমান
গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর পরই চীন এবং ভারতের ভূমিকা নিয়ে হঠাৎ করে একটি শ্রেণির মধ্যে আলোচনা এবং জল্পনা কল্পনা শুরু হয়েছে। এসব আলোচনা এবং জল্পনা-কল্পনায় কেউ কেউ বুঝাতে চাচ্ছেন যে, বর্তমান সরকার ভারতের খপ্পর থেকে আংশিকভাবে হলেও বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করছে এবং আংশিকভাবে হলেও চীনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আমার কাছে অবাক লাগে যে, এই ধরনের সু² প্রচারণা চালাচ্ছে দক্ষিণপন্থী পলিটিক্যাল পার্টির হাতে গোনা কয়েকজন নেতা এবং তাদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া কয়েকজন রাজনৈতিক ভাষ্যকার ও কলামিস্ট। তাদের বক্তব্যের সপক্ষে তারা বলছেন, চীন বাংলাদেশকে বিশাল অংকের টাকা দেওয়ার ওয়াদা করেছে। অংকটি ২৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারতের এত টাকা তো দূরের কথা এর অর্ধেকের অর্ধেক টাকা দেওয়ার ক্ষমতাও নাই, ইচ্ছাও নাই। তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বর্তমান সরকার চীনের দিকে হেলে পড়ছে।
আমার মনে হয়, যে মহলটি এই সু² প্রচারণা চালাচ্ছে তারা সম্ভবত বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের গভীরতা বুঝতে পারেনি। কেউ একজন এসে বেশি করে টাকা দিল, আর বাংলাদেশকে ভারতের প্রভাববলয় থেকে ছিনিয়ে নিলো, ব্যাপারটা এত সহজ-সরল নয়। তবে ৩০ ডিসেম্বরের পর থেকেই এই ধরণের প্রচারণা যারা শুরু করেছিলেন তারা ইতোমধ্যেই দুই চারটি খবর দেখে সম্ভবত খামোশ মেরে গেছেন। এসব খবরের মধ্যে সর্বশেষ খবর হলো ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকাকে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কে নব নিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের অদ্ভুত উক্তি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসাবে জার্মানি যাওয়ার প্রাক্কালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন কলকাতার দৈনিক আজকাল পত্রিকাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। ১৫ ফেব্রæয়ারি আজকালে প্রকাশিত তরুণ চক্রবর্তীর ঐ রিপোর্টে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য রয়েছে। তরুণ চক্রবর্তীর রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, তিস্তার পানি বা আসামের পরিস্থিতি নিয়ে মোটেই চিন্তায় নেই বাংলাদেশ। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, উভয় দেশের সম্পর্ক আরও ভাল করতেই তিনি মন্ত্রী হয়ে প্রথমেই উড়ে গিয়েছিলেন ভারতে। দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গে খুবই ভাল বৈঠক হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। আজকালের রিপোর্ট অনুযায়ী শুধুমাত্র শেখ হাসিনার সাথে নয়, তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আব্দুল মোমেনের।
অতঃপর আজকালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, শপথ নিয়ে মোমেন জানিয়েছিলেন, ভারত দিয়েই শুরু করবেন তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। কথা রেখেছেন। গত সপ্তাহেই দিল্লি গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, বিরোধী দলের মল্লিকার্জুন খাড়গে প্রমুখের সঙ্গে বৈঠক করে বুঝিয়ে দেন, প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখাই তাঁর প্রধান লক্ষ্য।
এরপর ভারত বাংলাদেশ সম্পর্ক এবং তিস্তার পানি নিয়ে যে কথাটি আব্দুল মোমেন বলেছেন, তাতে মনে হয়েছে তিনি যেন বোমা ফাটিয়েছেন। দৈনিকটির ঐ রিপোর্টে ভারত সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উভয় দেশের সম্পর্ক খুবই ভাল। অনেকটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের মতো। টুকটাক মতানৈক্য থাকলেও মিটে যায়।’ তিস্তার জল নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টিকে তিনি গুরুত্ব দিতেই রাজি হননি। তাঁর মতে, এটি সামান্য বিষয়। উভয় দেশই বিষয়টি মিটিয়ে নিতে সক্ষম।
দু’দেশের সম্পর্কের বিষয়ে দু’জনে ঐকমত্য প্রকাশ করে বলেন, সম্পর্কের সূত্রপাত মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে। আজ ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি উভয়ের বিশ্বাস এবং উন্নয়ন আঁকড়ে এই সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে।
পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ইত্যাদি রাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ– ব্যবস্থার উন্নয়ন চায়। বিশেষ করে উত্তর– পূর্বাঞ্চলের রাজ্য গুলি বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে চায়। এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘এখন যোগাযোগের যুগ। বাংলাদেশ এর থেকে দূরে থাকতে পারে না। তাই ভারতের প্রান্তিক রাজ্যগুলির জন্য যোগাযোগের রাস্তা খুলে দিতে বাংলাদেশ সরকারের কোনও সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি না।’
দুই
কূটনীতির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের গভীরতা এবং উষ্ণতা সম্পর্কে বর্ণনা করার একাধিক পরিভাষা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্পর্কের গভীরতা বর্ণনা করতে গিয়ে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের গভীরতা এবং উষ্ণতার সাথে তুলনা করার কোনো নজীর কূটনীতির ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না। সেটিও করলেন নব নিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন। তিস্তার পানি প্রাপ্তি বাংলাদেশের জন্য জীবনমরণ সমস্যা। এক সময় এমনও কথা উঠেছিলো যে, তিস্তার পানির নায্য হিস্যা না দিলে বাংলাদেশ ভারতকে ট্রানজিট এবং সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দেবে না। তিস্তার পানি বন্টন ইস্যু এতটাই গুরুত্বপূর্ণ এবং গভীর। অথচ নতুন পররাষ্ট্র মন্ত্রী, কলকাতার দৈনিকটির মতে, তিস্তার পানি ইস্যুকে কোনো গুরুত্বই দিতে চাননি। তার মতে, এটি নাকি একটি সামান্য বিষয়। অথচ শেখ হাসিনার আমলেই কংগ্রেস সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ড. মনমোহন সিং যখন ঢাকায় এসেছিলেন তখন তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার চূড়ান্ত প্রস্তুতি হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও সেই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহুর্তে মমতা ব্যানার্জি বেঁকে বসেন এবং ঢাকা আগমন থেকে বিরত থাকেন। ৪ বছর আগে সেই যে বিষয়টি ঝুলে গেল তার পর থেকে এ নিয়ে আর কোনো অগ্রগতি নাই এবং বাংলাদেশ সরকারও এই বিষয়টিতে একেবারে স্পিকটি নট। তখন বলা হয়েছিল ভারতে ইলেকশনের আগে তিস্তার পানির কোনো সুরাহা হবে না। তারপর ভারতীয় নির্বাচন চলে গেছে। বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। সেই নির্বাচনের মেয়াদও শেষ হতে চলেছে। আগামী এপ্রিল মাসে ভারতীয় পার্লামেন্টের পরবর্তী ইলেকশন হতে যাচ্ছে। কিন্তু তিস্তার পানি সমস্যা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই রয়ে গেছে।
তাই বলছি, যেসব ব্যক্তি বলতে চান যে, বাংলাদেশ চীনের দিকে হেলছে এবং ভারতীয় আধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে, তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের ভাষায় স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কটি একটু ভেবে দেখবেন।
৩০ ডিসেম্বরের পর গঠিত সরকারের আমলে বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কে অপর যে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে সেটি হলো, বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের মধ্যম লেভেলের ১ হাজার ৮০০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেবে ভারত। এ ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। দিল্লিতে দুই দেশের পঞ্চম যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকের পর শুক্রবার এক যুক্ত বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন। ভারতের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসের মধ্যম লেভেলের ১ হাজার ৮০০ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেবে ভারত। এ ব্যাপারে দু’দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। দিল্লিতে দুই দেশের পঞ্চম যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকের পর শুক্রবার এক যুক্ত বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়।
ভারতে ১৮শ সরকারি আমলার প্রশিক্ষণ সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ঢাকার সুধী সমাজ। তত্ববধায়ক সরকারের প্রাক্তন উপদেষ্টা এম হাফিজুদ্দিন খান বলেন, ‘তাজমহল দেখা ও বউয়ের জন্য শাড়ি কেনা ছাড়া ভারতে আমলাদের প্রশিক্ষণে পাওয়ার কিছু নেই’। তিনি আরও বলেন, আমলাদের ভারতে প্রশিক্ষণের খবর শুনে আমি বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম। আমলাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার মতো যথেষ্ট ব্যবস্থা আমাদের আছে। পূর্বের তুলনায় আমাদের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা এখন যথেষ্ট উন্নত। বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আমাদের সামরিক বাহিনীতে বিশেষ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। যেখানে বিদেশিরা আসে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য। আমি ভারতে গিয়ে আমলাদের প্রশিক্ষণের কোনো প্রয়োজন আছে মনে করি না। তিনি প্রশ্ন করেন, আমাদের দেশে প্রশিক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা থাকা সত্বেও আজ আমলাদের বিপুল অংশে অদক্ষতার কারণেই বিদেশ থেকে তাদেরকে ট্রেনিং দিয়ে আনতে হচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, কেন এই সব আমলা অদক্ষ হয়ে গেলেন? তার মতে বিগত দশ থেকে বার বছর আমলাদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি সবকিছুতে স্বচ্ছতার অভাব ছিলো। এগুলো হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। যার ফলে অদক্ষ লোক নিয়োগ পেয়েছে।
তিন
ভারতে বাংলাদেশি আমলাদের প্রশিক্ষণের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা এবং ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশের ১৮০০ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভারতে ট্রেনিং নেবেন। কী নেবেন? যে দেশে দুধের চেয়ে গোমূত্রের দাম বেশি, সে দেশ থেকে বাংলাদেশ কী শিখবে? ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, তারা তো আমার দেশের গণতন্ত্র মুক্তির কথা বলে না। আসলে দেশের গণতন্ত্রকে আমাদেরই ফিরিয়ে আনতে হবে। আর তা করতে হলে ভারতের যে চক্রান্ত, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। আর এটা কোনও সহজ কাজ নয়।
৩০ ডিসেম্বরের পর গঠিত সরকারের সময়ের তৃতীয় ঘটনা হলো, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং ভারতীয় বিমান বাহিনীর সহযোগিতা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ ও ভারতের বিমানবাহিনীর একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ভারতের বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চীফ মার্শাল বিরেন্দর সিং ধানোয়া ১১ ফেব্রুয়ারি সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবন কার্যালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আশা করি, দুই বিমান বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। দুই বাহিনী যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে একযোগে কাজ করতে পারে।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা দানকারী ভারতীয় সেনাদের প্রতি বছর বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমরা এতে খুবই আনন্দিত।’
অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সামনে রেখে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার হয়তো চীনের বিপুল অর্থনৈতিক সাহায্য গ্রহণের জন্য তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে জয়েন করেছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তারা ভারতীয় বলয় থেকে বেরিয়ে আসছে। ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের গভীরতা খুঁজতে গেলে একেবারে শিকড়ে যেতে হবে। এই সম্পর্ক শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধকালেই স্থাপিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের সমস্ত সিনিয়র নেতা গত কয়েক দশক ধরে বলে আসছেন যে, ভারতের সাথে তাদের সম্পর্ক স্বাধীনতা লাভের অনেক আগে থেকেই। সেই সম্পর্ক ছিল এবং আছে। এভাবে আওয়ামী লীগ সরকার এবং ভারতের মধ্যে যে বন্ধন গড়ে উঠেছে সেটি অন্যদের বিরোধীতা বা হস্তক্ষেপে বিনষ্ট হবে, এটা মনে হয় না।
journalist15@gmail.com