রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা লোপাট হচ্ছে, দুদক যাচ্ছে প্রাইমারি স্কুলে!
সরকারের অনুগত দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দিনদিন ব্যাপক সফলতা দেখিয়ে যাচ্ছেন। দুর্নীতির অনুসন্ধানে তিনি সারাদেশ চষে বেড়াচ্ছেন। ছুটে চলছেন এক জেলা থেকে আরেক জেলা। তিনি এখন এমন ব্যক্তিদের পেছনে লাগছেন, যাদের কাজে ফাঁকি দেয়ার কিছু সুযোগ আছে, কিন্তু দুর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক চাইলেও কোনো টাকা-পয়সা আত্মসাত করতে পারবেন না। কারণ, বেতন ছাড়াতো তাদের কাছে আর কোন টাকা আসে না। তবে ক্লাস ফাঁকি দেয়ার একটা সুযোগ তাদের আছে। কিন্তু দুদক চেয়ারম্যান বিষয়টিকে এমন ভাবে তুলে ধরছেন যেন রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম-দুর্নীতি শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই হচ্ছে।
গত ২৭ জানুয়ারি ২০১৯ রোববার চট্টগ্রামের ৩টি স্কুলে আকস্মিক পরিদর্শন করেছেন দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। একটি স্কুলে ৮ জন শিক্ষকের মধ্যে ৭ জনই অনুপস্থিত ছিল। এটা অবশ্যই বড় ধরণের অন্যায় ও শিক্ষার জন্য খুবই ভয়ঙ্কর বিষয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসলে শিক্ষার নামে কি হচ্ছে সেটা বেরিয়ে এসেছে।
এখন প্রশ্ন হল, শুধু প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের পেছনে দৌড়ানোই কি দুদকের মূল কাজ?
বিগত কয়েক বছরে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের লাখ লাখ কোটি টাকা লোপাট হয়ে গেছে। শেয়ারবাজার থেকে এক লাখ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া দরবেশ নামে খ্যাত সেই সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ লুটকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নির্দেশেই ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি হয়েছে। ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান সরাসরি এই রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িত। অথচ এনিয়ে দুদক নীরব ভুমিকা পালন করছে।
রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় দুর্নীতির আখড়া হিসেবে খ্যাত। টিআইবির পক্ষ থেকে কয়েক মাস পর পরই রাষ্ট্রের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমেও বিভিন্ন অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজদের নিয়ে সিরিজ প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি দুদককে।
এছাড়া, প্রতিবছর দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইন্টেগ্রিটির মতে, শুধু ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ২০১৬ সালেও সংস্থাটি এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। তারপর পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতেও বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের নাম এসেছিল। কিন্তু এসব বিষয়েও দুদকের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেলেও এসবের তদন্ত করার কোনো প্রয়োজনীয়তা মনে করছে না দুদক।
তবে, বিরোধীদলের কোনো নেতার বিরুদ্ধে কোনো তথ্য পেলে সেটা নিয়ে আবার ডাকঢোল পিটিয়ে মাঠে নামে।
রাজনীতিক বিশ্লেষকসহ সচেতন মানুষ মনে করছে, সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের দুর্নীতি চাপা দিতেই দুদক চেয়ারম্যান এখন প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের পেছনে লেগেছেন। প্রাইমারি স্কুলের তদারকির জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসই যথেষ্ট। দুর্নীতিবাজদের ধরার নামে দুদক চেয়ারম্যান আইওয়াশ করছেন।
কেউ কেউ বলছেন, দুদক চেয়ারম্যান এখন সরকারের দাসে পরিণত হয়েছেন। দাস যেমন মনিবের অন্যায়-অপকর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না, ইকবাল মাহমুদও ঠিক দাসের মতো সরকারের দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারছে না। সূত্রঃ অ্যানালাইসিস বিডি