পাকিস্তানি আর্মিদের নামে ভারতীয় আর্মিও বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে।।
[১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ পাকিস্তান অবজার্ভারে প্রকাশিত প্রতিবেদন অবলম্বেনে ]
১৬ ডিসেম্বর চিহ্নিত হয়েছে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের বিভাজনের দিন হিসেবে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ শুরু করে, যার ফলে জন্ম হয় স্বাধীন বাংলাদেশের। পাকিস্তানের জন্ম থেকেই ভারত সরকার পাকিস্তানকে পছন্দ করছিল না এবং এটাকে ভাঙার জন্য প্রতি মুহূর্তেই চেষ্টা করছিল। ইতিহাস জানে ১৯৭১ সালের পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ ছিল আসলে একটা রাজনৈতিক যুদ্ধ। ভাষাগত অজুহাতের হাত ধরে শেখ মুজিবুর রহমানের মতো অন্যান্য বাঙালি জাতিয়তাবাদীদের রাজনৈতিক দলের মাধ্যমে বাঙালি জাতি আলাদা হয়ে যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়েছে। পাকিস্তানে এখনো প্রায় ২০ লাখ অবৈধ বাঙালি রয়ে গেছে। তবে তাদের কখনো বলির পাঁঠা হতে হয়নি। অথচ বাংলাদেশ সরকার প্রতি মুহূর্তে ব্যস্ত কীভাবে পাকিস্তানি পরিদর্শক ও কর্মীদের নাজেহাল করা যায়।
অন্যদিকে বাংলাদেশে উগ্র মৌলবাদ জেগে উঠছে, তার সঙ্গে মুখোশধারী ধর্মনিরপেক্ষতাবাদও। ইসলাম অবমাননার দায়ে কয়েকজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলার জন্য শেখ হাসিনা নিষেধ করেছেন। এর আগে হজ সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করার জন্য তিনি একজন সাংসদকে বহিঃষ্কার করেছেন।
১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানের আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য পাকিস্তানি আর্মি অপারেশন সার্চ লাইট চালায়। যদি পাকিস্তানি আর্মি বাঙালিদের দখলে রাখতো তাহলে পূর্ব পাকিস্তানি আর্মি দুই ভাগে ভাগ হতো না। এজন্য এখনো পাকিস্তানি আর্মি তাদের জাতীয় স্বার্থ সবচেয়ে আগে রাখে। পূর্বের মতো এখনো জারাব-ই-আজব-এর উপর অপারেশন সার্চ লাইট চালায়।
ওই সময় ভারত মুক্তিবাহিনী গঠন করে পুরো ব্যাপারটা নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নেয়। যা স্পষ্টভাবেই সম্পূর্ণ রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করে। ফলে ১৯৭১ সালে ভারতে বাংলাদেশি উদ্বাস্তু গ্রহণ ছিল লোক দেখানো। তাদের সেই নীতি এখন আর আফগানিস্তানের গৃহত্যাগীদের জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে না। আফগানিস্তানের বাস্তুহারারা এখন ভারতে ঠাঁই না পেয়ে ইউরোপের দিকে ছুটছে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ মারা গেছে এও এক অদ্ভুত কথা। ১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান ভিত্তিহীনভাবেই এ দাবি করেন। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের এ দাবির কোনো সরকারি প্রতিবেদন নেই। যদি এই গণহত্যা সঠিক হয় তাহলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫৭ দিনে প্রতিদিন হত্যা হয়েছে ১১ হাজার। অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ এই বিশাল সংখ্যক নৃশংসতার যথার্থ পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।
নৃশংসকতা শুধু একদিকেই হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের, সাধারণ মানুষের, মুক্তি বাহিনীর এবং পাকিস্তানি বাহিনীর মোট কতজন ভারতীয় বাহিনীর হাতে মারা গেছে তারও কোনো পরিসংখ্যান হয়নি। পাকিস্তানি আর্মিদের নাম দিয়ে ভারতীয় আর্মিরাও অনেক গণহত্যা চালিয়েছে।
একটা ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে হবে, ভারত মুসলমানদের পছন্দ করে না। তাহলে তারা বাংলাদেশি মুসলমানদের কীভাবে পছন্দ করবে? ভারত এখনো বিএলএ, টিটিপি-এর মাধ্যমে শ্রীলংঙ্কা ও পাকিস্তানে নানারকম সমস্যা সৃষ্টি করছে। এমন কি ভারত তার নিজের দেশের মধ্যেই মানুষের মৌলিক মানবাধিকার অস্বীকার করছে।
পাঞ্জাব, মিজোরাম, মণিপুরসহ অনেক রাজ্যে তাদের নানারকম সমস্যা। মিডিয়ার প্রোপাগান্ডায় যা ঢাকা পড়ে থাকে। পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশ সব সময় সরাসরি পাকিস্তানকেই দোষারোপ করে থাকে। কিন্তু, এর আড়ালে ভারত কী রাজনৈতিক খেলা খেলেছে সেটা তারা ভুলে থাকতে চায়।
যেভাবেই হোক, ভারতও চায় না যে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সঙ্গে শত্রুতা ভুলে যাক। যেভাবেই পারে তারা সেটা বাংলাদেশকে সব সময় স্বরণ করিয়ে দেয়। পাকিস্তান ও বাংলাদেশ পরস্পরের বন্ধু অথবা শত্রু, কিন্তু এ ব্যাপারে ভারতের নাক গলানোটা ভালো নয়। তাদের নিজেদের মধ্যে পানি সমস্যা, সীমান্ত সন্ত্রাস এবং ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে যে চোরাকারবার হয় তার দিকেই তাদের বেশি নজর দেয়া উচিত।
সূত্রঃ পাকিস্তান অবজারভার