এবার দিনে-দুপুরে অস্ত্র ঠেকিয়ে কিশোরীকে গণধর্ষণের ভিডিও ভাইরাল, আতঙ্কে মেয়েরা!
সম্প্রতি একটি গণধর্ষণের ভিডিওচিত্র ভাইরালের মধ্য দিয়ে এ চক্রের অন্তত ছয় সদস্যের চেহারা দেখা গেছে। কিন্তু পরিচয় মেলে নি। ধর্ষণে এরা এমনটা নৃশংস ও বর্বরতা ঘটাচ্ছে যে যা দেখে সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়ে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং সামাজিক নিরাপত্তাকে শঙ্কিত করে মানুষের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে পড়ছে। এমনসব অসামাজিক বর্বর ধর্ষণের মতো ঘটনায় নানা নেতিবাচক প্রচার চলছে। এচক্রটি নির্দিষ্ট কোন মিশন নিয়ে এমনতর জঘন্য অথচ সমাজকে অস্থির করে তুলতে এসব করছে কিনা তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। স্কুল-কলেজগামী ছাত্রীরা একারণে ভয়ে আতঙ্কিত রয়েছে। গোটা বিষয়টি নিয়ে মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে আছে।
পর্যটন এলাকার মহিপুর, লতাচাপলীসহ সর্বত্র এসব ঘটনায় এখন আতঙ্ক রয়েছে মানুষের মধ্যে। এমনকি রাত জেগে মানুষ পাহারা পর্যন্ত দিচ্ছে। এদের কিছু ছবি সংগ্রহ করা গেছে। নামও পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে সুমন, স্বপন, ইমরান, লাপনা- এ চারজনের নাম শোনা গেছে। তবে কেউ এদের ঠিকানা কিংবা সঠিক পরিচয় শণাক্ত করতে পারেনি।
ধারনা করা হচ্ছে, এ চক্র ধর্ষণসহ খুনের মতো ঘটনা ঘটাতে পারে। সবশেষ চক্রটি দিনে-দুপুরে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে এক কিশোরীকে রাস্তার পাশে জাপটে ধরে আধা ঘন্টাকাল গণধর্ষণের একটি ভিডিওচিত্র ভাইরাল করে দেয়ায় এলাকাজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীরা এ প্রতিনিধিকে বলেছেন, সংসদ নির্বাচনের আগ মুহুর্তে বরিশাল বিভাগে পায়রা বন্দরসহ সরকারের চলমান বিস্ময়কর উন্নয়নের সংসদীয় আসন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় হঠাৎ করে এমনভাবে জঘন্যতম কর্মকান্ডে তারাও বিব্রতবোধ করছেন। সেরাজপুরে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ইভাকে ধর্ষণ শেষে হত্যা। নবম শ্রেণির ছাত্রী তুলিকে দিনের বেলা ছুরিকাঘাতে হত্যা চেষ্টা।
এছাড়া পুলিশি থানা মহিপুরে গণ-চুরি-ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ এখনও সঠিক এবং স্বচ্ছ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। গ্রেফতার হয়নি প্রকৃত অপরাধীচক্র। তুলিকে হত্যা চেষ্টাকারী নাঈমকে স্থানীয় লোকজন পাকড়াও করে পুলিশে দেয়। সহযোগী রনি গাজী ১২ দিনেও গ্রেফতার নেই। ইভা ধর্ষন হত্যা মামলায় পুলিশ এখনও অন্ধকারে। এরপরে ফের স্কুল ছাত্রীকে দিনের বেলা খোলা জায়গায় গণধর্ষণের ভিডিও চিত্র ভাইরাল। বিষয়গুলো নিয়ে গ্রামীণ জনপদে তোলপাড় চলছে। চলছে মানুষের মুখে মুখে নেতিবাচক প্রচার। এ চক্রকে শণাক্ত করে জনসম্মুখে উপস্থাপন করতে না পারলে আগামী নির্বাচনে এটি একটি বড় ইস্যু হিসেবে সামনে চলে আসবে বলে সচেতন মহলের স্পষ্ট মন্তব্য। পুলিশের প্রতি মানুষ আস্থাহীন হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র মতে বাবলাতলা বাজার এলাকায় ধুলাসারে ১২/১৩ জনের একটি তরুন-কিশোর রামদা পার্টি রয়েছে। এরা কোন কিছু ঘটলেই প্রকাশ্যে রামদা নিয়ে মহড়া চালায়। এ চক্র এসব কাজে জড়িত থাকতে পারে বলে আভাস মিলেছে।
বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম হুমায়ুন কবির জানান, বিষয়টি তিনি জেনে অনেকটা হতবাক বনে গেছেন। তিনি তড়িৎ এটি উৎঘাটনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। ধুলাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল জলিল আকন জানান, কিছুদিন আগে তার এলাকায় ব্যাপকভাবে গঙ্গামতিসহ আশপাশে চুরি ডাকাতি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাত জেগে মানুষ পাহারা বসায়। কুয়াকাটা পৌর এলাকাসহ আলীপুর-মহীপুরে অন্তত ১৫টি চুরি সংগঠিত হয়। যেখানে নারীদের লাঞ্ছিতের অভিযোগ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী জানান, আমরা কেউ এখন আর দিনেও একা বের হইনা। স্কুল থেকে না ফেরা পর্যন্ত বাবা-মা উদ্বিগ্ন থাকেন।
অথচ টানা তিন/চার মাস এমন অসংখ্য অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রকৃত জড়িত কাউকে পুলিশ শণাক্ত করতে পারেনি। ফলে এনিয়ে নানা ধরনের প্রচার-অপ্রচার রয়েছে। যা আগামী সংসদ নির্বাচনে একটি নেতিবাচক প্রভাবের শঙ্কায় ফেলবে আওয়ামীলীগকে। তাই এখনই পুলিশসহ প্রশাসনের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পদক্ষেপে প্রকৃত অপরাধীকে শণাক্ত করে আইনের আওতায় এনে সাধারণ মানুষকে আশ^স্থ করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন গণজাগরণ মঞ্চ কলাপাড়ার আহ্বায়ক কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম।
মহিপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাহবুব হোসেন জানান, চুরিসহ সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্তণে রয়েছে। রাতের বেলা সার্বক্ষণিক টহল টিম কাজ করছে। অপরাধীকে শণাক্ত করতে সকল চেষ্টা চলছে। কলাপাড়া থানার পরিদর্শ (তদন্ত) মো. আলী আহম্মেদ জানান, এসব সন্ত্রাসী অপরাধীদের গ্রেফতারে তাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আর পরিকল্পিতভাবে কেউ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলে রেহাই পাবেনা। তারা খুবই সচেষ্ট রয়েছেন।
সূত্রঃ সময়ের কণ্ঠস্বর।