কে এই অভিজিৎ? আর কে তার পার্টনার রাফিদা আহমেদ বন্যা!
নিউইয়র্ক থেকে ড ওমর ফারুক। সর্বশেষ আপডেটঃ ৩১ আগস্ট ২০১৮।
আবার পুরানো কাসুন্দি কেনআনলাম, সে প্রশ্ন আমাকে অনেকই করবেন। কিন্তু ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ না হলে আমার সে সময় নেই যে, গুরুত্বহীন বা নিতান্ত কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লিখে সময় নষ্ট করব। ইউটিউবের বদৌলতে একদিকে যেমন সহজ ভাবে কোরান শিক্ষা, কোরানের জ্ঞান প্রসারের সুযোগ হয়েছে, তেমনি নষ্ট লোকদের জন্যও নষ্টামি ও ইসলামের বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডার সুযোগ হয়েছে। নব্য যে সব কথিত মুফতী নামধারী কি নাম যেন, নাম নিতেও আমার কুণ্ঠা হয়, তিনি অনবরত ইসলাম, ইসলামের নবী (সা) ও মহান আল্লাহর বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা ও অযৌক্তিক মিথ্যাচার করে, অন্যদিকে টুপি ও পাঞ্জাবিসহ আলখেল্লা পরে ইউটিউবে আসে। এরকম আরও অনেকই। কিন্তু এসবরে প্রথম সূচনা কে করেছে, সে কী জানেন? হ্যাঁ তাকে নিয়েই এবার আলাপ করব। তিনি হলেন অজয় রায়ের পুত্র অভিজিৎ রায়।
১৯৭২ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর, অভিজিৎ রায়ের জন্ম। তাঁর পিতা অজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক ছিলেন। শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর অবদানের জন্য ২০১২ সালে অজয় রায় একুশে পদকের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হন। অভিজিৎ রায় পড়াশোনায় একজন যন্ত্র প্রকৌশলী। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগ হতে তিনি ব্যাচেলরস ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ সিঙ্গাপুর (NUS) থেকে তিনি বায়োমেডিক্যালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশাগত জীবনে যন্ত্র-প্রকৌশলী অভিজিৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া প্রদেশের আটলান্টা শহরে বসবাস করতেন।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষের চিন্তা চেতনার বিরুদ্ধে লেখালেখিতে অভিজিৎ রায় ছিলেন অগ্রগণ্য। তার লেখার ভিত্তি ছিল বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ জ্ঞান, পর্যবেক্ষণ ও তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ।
পেশায় প্রকৌশলী হবার পাশাপাশি অভিজিৎ ছিলেন বিজ্ঞানের নামে নষ্টামির ওপর লেখালেখিতে পারদর্শী।তার লেখার মূল উপাদ্য বিষয় হল, স্রষ্টাকে অস্বীকার, স্রষ্টা, ইসলাম ও ইসলামের বিরুদ্ধে গালি ও বিষোদগার তার লেখার মূল উপাদান। ইসলাম বিদ্বেষী ও আল্লাহ বা স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকারকারী অভিজিৎ মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে লিখলেন এক কাল্পনিক ও নিজস্ব বানানো তত্ত্ব ও উপাত্ত নিয়ে “আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী” নামে একটি চটি বই। এ বইটি ২০০৫ সালে প্রকাশিত হয়। এর দু’বছর পর ২০০৭ সালে “মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে” শীর্ষক বইতে তিনি ও সহলেখক ফরিদ আহমেদ পৃথিবীতে প্রাণের উৎস কীভাবে হল, তার কাল্পনিক বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিয়ে লিখেছেন। আমাদের এ পৃথিবীর বাইরেও অন্য গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কিনা, কিংবা এর সম্ভাবনা কতটুকু তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে এ বইতে। তার লেখার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল নাস্তিকতা এবং ধর্ম বিরোধী লেখালেখি। তবে অন্য ধর্ম নিয়ে তেমন বেশি লেখা নয়, মূলতঃ ইসলাম বিরোধী লেখাই তার লেখালেখির মূল বিষয়। এ বিষয়ের ওপর অসংখ্য ব্লগ লিখেছেন তিনি। এছাড়াও ২০১০ সালে “সমকামিতা” শীর্ষক বইয়ে সমকামিতার সমর্থনে জীববৈজ্ঞানিক প্রেক্ষাপটের পাশাপাশি আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়েও তার নিজস্ব মতামত সম্বলিত বিশ্লেষণ করেছেন। ২০১১ সালে তিনি ও সহলেখক রায়হান আবীর মিলে লিখেছেন ” অবিশ্বাসের দর্শন”। তাদের মতে, সে বইটি স্রষ্টাবিশ্বাসী থেকে শুরু করে সংশয়বাদী, অজ্ঞেয়বাদী, নিরীশ্বরবাদী, বা মানবতাবাদী, সর্বোপরি বিজ্ঞানমনস্ক প্রতিটি বাংলাভাষী পাঠকের জন্য বইটি একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজনা। ধর্মান্ধতা এবং কুসংস্কার মুক্তির আন্দোলনের নামে সে বইটি। একই সাথে যেমন এখানে ধর্মবিশ্বাসের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে, তেমনি আলোচনা করা হয়েছে চলমান কুসংস্কার নিয়ে, প্রসঙ্গক্রমেই এসেছে বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদের স্বরূপ নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা। প্রকাশের সাথে সাথেই নষ্টামিতে উৎসাহী পাঠকদের মাঝে অভূতপূর্ব সাড়া ফেলেছিল সে বইটি। সে বইটির পরবর্তীতে তৃতীয় সংস্করণও প্রকাশিত হয়েছিল। নষ্টামিতে বহুমুখী চিন্তার অধিকারী অভিজিৎ এরপর প্রকাশ করেন “ভালবাসা কারে কয়” বইটি। এই বইয়ে তিনি বিবর্তনীয় মনোবিজ্ঞানের ভিত্তিতে প্রেম, ভালবাসা, যৌনতার আদিম উল্লাস ইত্যাদি শয়তানি ও নষ্টামির অনুভূতির ব্যাখ্যা দিয়েছেন। মানব-অনুভূতির বিবর্তনীয় ব্যাখ্যার এ অভূতপূর্ব বইটিও নষ্ট পাঠক-সমাদর পেয়েছিল। তার লেখা অন্যান্য বইগুলো হচ্ছে – স্বতন্ত্র ভাবনাঃ মুক্তচিন্তা ও বুদ্ধির মুক্তি, বিশ্বাস ও বিজ্ঞান, শূন্য থেকে মহাবিশ্ব, ভিক্টোরিয়া ওকাম্পো: এক রবি-বিদেশিনীর খোঁজে।
২০০১ সালে বুদ্ধিতে বিকারগ্রস্ততা ও নষ্টচিন্তার প্রসারের লক্ষ্যে, আরও কিছু কুপ্রবৃত্তিমনা মানুষদের নিয়ে তিনি একটি ব্লগ ওয়েবসাইট চালু করেন, নাম – মুক্তমনা। বিজ্ঞান চর্চায় [নষ্টামিচর্চা] অসাধারণ অবদানের জন্য এটি শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি পদক অর্জন করেছে। ইসলামি শক্তির বিরুদ্ধে তার ছিল তীব্র অবস্থান।
২০১৫ সালের বইমেলায় তার নতুন বইয়ের প্রকাশ উপলক্ষে বাংলাদেশে যান। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ রাত সাড়ে নয়টায় কে বা কারা তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। তার স্ত্রী বন্যা আহমেদও এই আক্রমণে গুরুতরভাবে আহত হন। তার মৃত্যুসংক্রান্ত তদন্তে এ সরকার কেন জানি কোন কুলকিনারা করতে পারে নি। তার বাবা বারবার অভিযোগ করেন যে, সরকার তার ছেলের মৃত্যু তদন্তে তেমন কোন অগ্রগতি দেখাতে পারছেন না। অথচ এ সরকার ভারত বান্ধব সরকার। তার বৌ রাফিদা বন্যা আহমেদ ( বন্যা আহমেদ এবং রাফিদা আহমেদ নামেও পরিচিত; জন্ম ১৯৬৯)। একজন বাংলাদেশি- আমেরিকান। অভিজিত স্টাইলেরই লেখক, ব্লগার ও কথিত মানবতাবাদী কর্মী।
বন্যা আহমেদের জন্ম বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায়। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিনসোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার ইনফরমেশন সায়েন্সে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।
মূলতঃইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা তথাকথিত ’মুক্তমনা ব্লগ’ এ লেখালেখির সুবাধে অভিজিৎ রায়ের সাথে মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া বন্যা আহমেদের পরিচয় হয়। তারপর বন্যা ও অভিজিৎ এ নষ্টামির গদ্য রচনাবলীতে আরও ভাল ভাবে জড়িয়ে পড়েন। বন্যা আহমেদের একমাত্র মেয়ে তৃষা আহমেদ। অভিজিৎ রায় হল তৃষা আহমেদ এর সৎ-বাবা। তারপর অভিজিৎ রায়ের সাথে যুগপতভাবে বাংলাদেশের নাস্তিক্যবাদী মুক্তচিন্তার ব্লগার গ্রেফতারের উপর “ফ্রি ইনক্যুয়েরি” ম্যাগাজিনে নিবন্ধ লিখেছেন। ২০১১ সালের বন্যা আহমেদের থাইরয়েড ক্যান্সার ধরা পড়ে।
বাংলা অন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের সূতিকাগার হচ্ছে ‘মুক্তমনা’ ব্লগ, আর এর প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল অভিজিৎ রায়। ‘মুক্তমনা’ সদস্যদের সক্রিয় অংশগ্রহণেই গড়ে উঠেছে ‘ধর্মকারী’র মত ধর্ম [মূলত ইসলাম ও মুসলিম] নিয়ে রুচিবিকৃত কৌতুকের সাইট। অভিজিৎ রায় নিজে কিছুটা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে এই খেলায় লিপ্ত হলেও মুক্তমনায় তারই পৃষ্ঠপোষকতায় চলে ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষের মহোৎসব। অভিজিৎ রায় নিজে নিরপেক্ষতার চাদরে মুখ ঢাকতে গিয়ে নির্ভেজাল তথ্যের ভিত্তিতে অন্যান্য ধর্মের একটু-আধটু সমালোচনাও কখনো সখনো করেন বটে; কিন্তু সাথে সাথেই বিকৃত তথ্য আর মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ইসলাম সমালোচনার বাহানায় ইসলাম-বিদ্বেষের বিষবাষ্প ছড়াতে ভুল করেন নাই কখনই।
অভিজিৎ রায় সঙ্গত কারণে স্বনামে ‘মুক্তচিন্তার চর্চা’ বা ‘মুক্তবুদ্ধির চর্চা’ করেন না বললেই চলে। ‘মুক্তচিন্তার চর্চা’ করার জন্য তিনি মুখোশের আড়ালে মাথা গুঁজতেই বেশি পছন্দ করেন। অসংখ্য ছদ্মনামে ইসলামবিদ্বেষের অভিযোগে অভিযুক্ত অভিজিৎ রায় হাতেনাতে বেশ কয়েকবার ধরা খেয়ে প্রকাশ্যে নিজের ভণ্ডামীকে যথাসাধ্য লুকিয়ে রাখতে চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা যে হয় নি, তার পক্ষে মাত্র দুটি নমুনা নিচে দেওয়া হল।
নিচের ভিডিওতে ২০১৭ সালে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে তথাকথিত মুক্তচিন্তা ও বাকস্বাধীনতার উপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে মূলতঃ ইসলাম ও ইসলামের পর্দা বিধানকে কি রকম ভুল ভাবে পরিবেশন করল বন্যা আহমেদঃ
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A6%BE_%E0%A6%86%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6_%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE
আরও বিস্তারিতঃ http://shodalap.org/panjeri/18502/
[তথ্যসূত্রঃ অনলাইন থেকে বিশেষ করে অভিজিত ও বন্যা আহমদরে উইকিপিডিয়া ও সদালাপডটঅরগ]