খালেদা জিয়ার মুক্তি কোন পথে!
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কারাগারে যাওয়ার ২৫ দিনের মাথায় এই মামলায় জামিন পান তিনি। কিন্তু একের পর এক আইনি জটিলতায় আটকে আছে তার মুক্তি। ইতোমধ্যে পেরিয়ে গেছে সাড়ে ছয় মাস। ৩৬টি মামলার মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া ৩৪টিতে জামিনে রয়েছেন। বাকি দু’টি মামলা নিম্ন আদালতে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
বিএনপি প্রধানের আইনজীবীরা আদালতের বারান্দায় এসব মামলা নিয়ে ছয় মাস ধরেই হন্যে হয়ে দৌড়াচ্ছেন। কিন্তু শেষ সীমা তারা যেন খুঁজে পাচ্ছেন না। একটি মামলায় জামিন হলে, উচ্চ আদালতে তা আটকে যাচ্ছে কিংবা অন্য মামলা মুক্তির পথে বাদ সাধছে। আইনি পথে খালেদা জিয়া শিগগির মুক্তি পাবেন কি না তাও নিশ্চিত না। দলটির সিনিয়র নেতারা অভিযোগ করে বলেছেন, যে মামলায় বেগম জিয়া কারাভোগ করছেন, সেই মামলায় তিনি জামিন পাওয়া সত্ত্বেও কেবলমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলার জটিলতায় ফেলে তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে না। আগামী নির্বাচন থেকে বেগম খালেদা জিয়াকে দূরে সরিয়ে রাখতেই সরকার এই পথ বেছে নিয়েছে। বিএনপির নেতারা এখন এও বলছেন, কেবল আইনি প্রক্রিয়ায় নয়, রাজপথের আন্দোলনে খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা হবে।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী এবং দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার বিএনপি প্রধানের মামলার সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলা রয়েছে। ৩৪টিতে তিনি জামিনে রয়েছেন। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের যে মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে, সেটিতেও তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন। অন্য ৩৩টি মামলায় হাইকোর্ট, সিএমএম কোর্ট ও জজকোর্ট থেকে বিভিন্ন সময়ে তিনি জামিন লাভ করেছেন।
মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, কুমিল্লায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে তিনটি মামলার মধ্যে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। নাশকতা ও হত্যার অভিযোগে করা বাকি দু’টি মামলায় এখনো জামিন পাননি। এ দু’টি মামলা প্রসঙ্গে তিনি জানান, হত্যা মামলাটিতে হাইকোর্টে বেগম খালেদা জিয়া জামিন পেয়েছিলেন; কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টকে শুনানি করে রুল নিষ্পত্তি করার আদেশ দেন। কিন্তু বিএনপির আইনজীবীরা ওই শুনানিতে অংশ নেননি। কারণ তারা মনে করেছেন, নিম্ন আদালতে এই মামলার আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেই তাদের উচ্চ আদালতে আসতে হবে। উচ্চ আদালতও নিম্ন আদালতকে এই দু’টি মামলা একটি যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে শুনানি করতে বলেছেন।
খালেদা জিয়ার এই আইনজীবী বলেন, কুমিল্লার দু’টি মামলায় তারা জামিন আবেদন করেছেন। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলার নথি পাওয়া সাপেক্ষে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। আর ৩০ আগস্ট শুনানি হবে নাশকতা মামলার। এ দু’টি মামলায় নিম্ন আদালতের আদেশ দেখে তারা প্রয়োজনে উচ্চ আদালতে যাবেন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিশেষ আদালত। ওই দিন থেকেই কারাগারে আছেন বেগম জিয়া। বিএনপির আইনজীবীরা প্রথম দিকে দলীয় প্রধানের দ্রুত মুক্তি নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু এখন না। পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত জীর্ণ কারাগারে একমাত্র বন্দী হিসেবে দিন কাটছে খালেদা জিয়ার। এরই মধ্যে গত জুন মাসের শুরুর দিকে দাঁড়ানো অবস্থায় হঠাৎ মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যান সত্তরোর্ধ্ব সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। তার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হয়নি বলে গত শনিবার কারাগারে খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরিবারের সদস্য, ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক সহকর্মীরা তার অসুস্থতা নিয়ে রয়েছেন দুশ্চিন্তায়।
বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল নয়া দিগন্তকে বলেন, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বেগম খালেদা জিয়া সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। এ মামলায় জামিন পাওয়ার অর্থই হচ্ছে তিনি মুক্তি পেয়ে বেরিয়ে আসবেন। কিন্তু সরকারের অবৈধ হস্তক্ষেপে কারামুক্ত হতে পারছেন না। তাকে অন্যায়ভাবে আটকে রাখা হয়েছে।
বিএনপির নেতারা বলেছেন, আইনি মারপ্যাচে ফেলে সরকার বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আটকে রেখেছে। এখন পর্যন্ত বিএনপি চরম ধৈর্যের সাথে চেয়ারপারসনের বন্দী পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্তু রাজপথেই এর সমাধান করতে হবে। একই সাথে দলের নেতাকর্মী ও জনমতকে সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে কিভাবে আরো সক্রিয় করা যায়, সেই পরিকল্পনাও দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে।
জানা গেছে, দলটির নীতিনির্ধারকেরা খালেদা জিয়ার মুক্তিকে এক নম্বর এজেন্ডা করে আন্দোলনে নামার ছক কষছেন। সে ক্ষেত্রে মধ্য সেপ্টেম্বরের পর বিএনপির কর্মসূচি আরো জোরালো হতে পারে; যা নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের আগে ও পরে এক দফা আন্দোলনে রূপ নিতে পারে।
সূত্র: নয়াদিগন্ত