‘বুড়োদের ঐক্যে’ বিচলিত নয় আ’লীগ।

নির্বাচন এলেই বিশেষ শ্রেণি তৎপর হয়ে ওঠে। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরেও সে তৎপরতা শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ‘রাজনৈতিক সংসার পরিত্যক্ত’ কয়েকজন ষাটোর্ধ নেতা একজোট হয়ে ‘জাতির ক্রান্তিলগ্নে’ কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তাদের এই তৎপরতায় দেশের রাজনৈতিক মহলের বিরোধী শক্তি বিএনপি খুশি হলেও থোড়াই কেয়ার করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এসব রাজনৈতিক সংসারে পরিত্যক্ত এবং বয়স্করা যৌবনেই কিছু করতে পারে নি, বা করে নি। এখন কী করবে? জাতি তাদের কাছে কিছু আশা করে না। তবে, যে কোন নির্বাচনী ও নিয়মতান্ত্রিক অহিংস আন্দোলন করার অধিকার আছে, করতে পারবে। সহিংস আন্দোলন হলে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
সম্প্রতি সাবেক রাষ্ট্রপতি বি. চৌধুরীর বিকল্পধারা, ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য ও আসম রবের জেএসডির সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে সরকার বিরোধী আন্দোলনের হাকডাক দেয়া হয়। বস্তুত সেটি বাস্তবতার রূপ দেখে নি।
২৮ আগস্ট রাতে এই যুক্তফ্রন্টের নেতারা ও জাতীয় ঐক্য প্রত্যাশী কয়েকজন মিলে ড. কামাল হোসেনের বাসায় বৈঠকে মিলিত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার বৈঠক শেষে বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী জানিয়েছেন, জাতির ক্রান্তিলগ্নে তারা একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ লক্ষ্য এবং পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচির বিষয়ে চার সদস্যের একটি সাব-কমিটি করা হয়েছে।
তাদের এই জোট রাজনৈতিক মহলে আলোচনা খোরাক হয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপি নেতারা এতে খুশি হয়ে স্বাগত জানিয়েছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত খুশি ও আনন্দিত যে আমাদের বাইরেও জাতীয় ঐক্যের প্রক্রিয়ায় অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট রয়েছে, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গণফোরাম রয়েছেন, মান্নার নেতৃত্বে নাগরিক ঐক্য রয়েছে, আসম আবদুর রবের নেতৃত্বে জেএসডি রয়েছে।’ দলটির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল পরিবর্তন ডটকম বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছে। আমরা একে সাধুবাদ জানাই।’
তবে জাতীয় ঐক্যের এই ডাক বা আন্দোলনের কর্মসূচির প্রস্তুতিকে কেয়ার করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তারা এদিকে কর্ণপাতই করছে না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বুধবার সকালে নবগঠিত জাতীয় ঐক্যের নেতাদের উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনাদের প্রতি অনুরোধ থাকবে আন্দোলন করার দরকার নেই, আগামী নির্বাচন হবে সবার কাছে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আর আন্দোলন করলে অহিংস আন্দোলন করবেন, যাতে জনগণের জানমালের কোনো ক্ষতি না হয়। সহিংস আন্দোলন করলে জনগণের জানমাল রক্ষা করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিবে।’
নতুন এ জোটের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, রাজনৈতিক এতিমরা এক হয়েছে, হোক। তাদের এই ঐক্যে আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা জনগণের সঙ্গে আছি।’
তিনি বলেন, ‘যৌবন যার, যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার। এই কামাল হোসেনের বয়স যখন ৩০ এর মধ্যে ছিল, তখন স্বাধীনতা যুদ্ধেও অংশ নেননি। বরং ওই সময় শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে চলে গেছেন। এখন বুড়ো বয়সে এসে একটি গণতান্ত্রিক দেশের নির্বাচিত সরকার হটানোর জন্য আরও কয়েকজন মিলে এক হচ্ছেন। এই সরকারকে হটিয়ে তারা কি স্বাধীনতাবিরোধী জঙ্গিগোষ্ঠীকে ক্ষমতায় আনতে চায়?’
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী পরিবর্তন ডটকমকে বলেছেন, ‘ড. কামাল হোসেন, বি চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্না— এদের একটা চক্র আছে। এদের অতীত ইতিহাস কী বলে? এরা কোথাও ঘরসংসার করতে পারে নি। এরা রাজনৈতিক সংসার থেকে পরিত্যক্ত। তারা আবার সংঘবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করছে। এটা হচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির সবচে বড় হিউমার।’
‘তাদের কাছে বাংলাদেশের জনগণের কোনো প্রত্যাশা নেই। কিছু কুশীলব তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে ঠিক, কিন্তু জাতির কোনো প্রত্যাশা নেই,’ যোগ করেন তিনি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে ড. কামাল হোসেনের বাসার বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্পধারার সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, যুগ্ম-মহাসচিব মাহী বি. চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ওমর ফারুক, জেএসডি সভাপতি আসম রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, দলটির নেতা আওম শফিক উল্লাহ, জগলুল হায়দার আফ্রিক, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সদস্য সচিব আ ব ম মোস্তফা আমিন, সাবেক ছাত্রনেতা সুলতান মনসুর, মোশতাক আহমেদ প্রমুখ।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, এই জোটের অধিকাংশই আশি বছর পেরিয়েছেন। নিজের শরীরের নিয়ন্ত্রণ নেই নিজেদের কাছে। তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ছেড়ে আসা। অতীত ইতিহাসে কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে সফলতা বা কোনো সরকার হটানোর নজির নেই। যার কারণে এই জোটকে কেয়ার না করার সঙ্গত কারণ আছে। সূত্রঃ পরিবর্তন।