নারায়ণগঞ্জের একই পরিবারের ৮ জনের ইসলাম ধর্মগ্রহণ
৮ জনের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ- নারায়ণগঞ্জ ফতুল্লায় একই পরিবারের আট সদস্য হিন্দুধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট কেএম মহিউদ্দীনের আদালতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের জন্য তারা আবেদন করেন।
আদালত তিনজনের আবেদন গ্রহণ করেন। বাকি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ায় তাদের আবেদন গ্রহণ করেনি। তবে আদালত জানিয়েছেন পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক তিনজন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাদের সন্তানরাও ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়ে যায়।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীরা ফতুল্লার দক্ষিণ শিয়াচর এলাকার সাফল্য সরকার নাম পরিবর্তন করে মোহাম্মদ ওসমান গনি (৫৪) ও তার মেয়ে রিয়া রানী সরকার বর্তমান নাম মোসাম্মদ হালিমা আক্তার (২১), প্রিয়া রানী সরকার বর্তমান নাম আয়েশা আক্তার (১৮), প্রীতি রানী সরকার বর্তমান নাম মোসাম্মদ ফাতেমা আক্তার (১৩) প্রীয়ন্তী রানী সরকার বর্তমান নাম মোসাম্মদ খাদিজা আক্তার (১০), জুই রানী সরকার বর্তমান নাম মোসাম্মদ আমেনা আক্তার (৮)।
এদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের পক্ষে আবেদন করেন বাবা ওসমান গনি। এছাড়াও শ্রাবন সরকার বর্তমান নাম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির (৪) রাকি রানী সরকার বর্তমান নাম উম্মে হাবিবা (২)। এ দুই জনের পক্ষে আবেদন করেন তাদের মা হালিমা আক্তার।
অ্যাড. আজিজুর রহমান মোল্লা জাগো নিউজকে জানান, একই পরিবারের আটজন আবেদন করলে আদালত তিনজনের আবেদন গ্রহণ করেছেন।
আর বাকিরা অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ায় আদালত তাদের আবেদন গ্রহণ করেনি। তবে অপ্রাপ্তরা পরিবারের সঙ্গে ইসলাম ধর্মে অনুসারী হলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। হিন্দু ধর্ম থেকে তারা সজ্ঞানে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে।-জাগো নিউজ
বাংলাদেশের মালালা, জানুন এই মেয়ে কি করেছে দেশের জন্য
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ১০৭টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছিলেন বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের মাইঠা গ্রামের দরিদ্র রিকশাচালকের মেয়ে সাজেদা আক্তার। এ কাজ করতে গিয়ে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন, তারপরেও দমে যাননি সাজেদা। একাগ্রচিত্তে শিশু অধিকার রক্ষায় কাজ করে গেছেন।
শিশু অধিকার রক্ষায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০১৭ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স পিস প্রাইজ’ পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিলেন, যেটি শিশুদের নোবেল হিসেবে পরিচিত। ২০১৩ সালে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন পাকিস্তানের মালালা ইউসুফজাই।
বর্তমানে বরগুনা সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্রী সাজেদা। নিজের গ্রামের অল্প বয়সী মেয়েদের বিবাহিত জীবনের ভয়াবহ পরিণতি, বিশেষ করে মাতৃমৃত্যুর ঘটনা তাকে ব্যথিত করত।
ইউনিয়নের স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছ থেকে রেডিও শুনে এবং স্বাস্থ্য সহায়িকা পত্রিকা পড়ে তিনি জানতে পারেন, বাল্যবিবাহ কেন এতো ক্ষতিকর। এই বাল্যবিবাহের কারণে কিভাবে নাবালিকা মেয়েরা অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
২০০৭ সালে সিডরের পর বিদেশি সাহায্য সংস্থা প্লান ইন্টারন্যাশনাল কাজ করতে শুরু করে বরগুনায়। ২০০৯ সালে এই সংস্থার শিশু ইউনিটের সদস্য হন সাজেদা। তার সাংগঠনিক কর্মদক্ষতার কারণে এই সংগঠনের সভাপতি নির্বাচন করা হয় তাকে।
এরপর গ্রামের কিশোর-কিশোরী ক্লাবেরও সদস্য হন সাজেদা। এই সংগঠনের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে গান, নাটক, সভা ইত্যাদির মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, যৌন হয়রানি, মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড শুরু করে ওই সংগঠন।
তার কাজে উৎসাহিত হয়ে গ্রামের ১০০টি মেয়ে যোগ দেয় তার সাথে। ধীরে ধীরে আরও যোগ দেয় বুড়িরচর ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণির সচেতন মানুষ। এদের নিয়ে একের পর এক বাল্যবিবাহ রোধ করতে থাকেন সাজেদা।
সেই সঙ্গে নারী উত্যক্তকারী বখাটেদের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। এই কাজে নানা প্রতিবন্ধকতা আসে। তাকে পথে গুপ্ত হামলার শিকারও হতে হয়। তার বাড়িতেও হামলা হয়। তবু থেমে থাকেননি সাজেদা।
সাজেদার এই প্রয়াস সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ‘ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেন্স পিস প্রাইজ’-এর জন্য বাংলাদেশ থেকে তাকে মনোনীত করা হয়।
সাজেদার এই আন্দোলন সম্পর্কে বরগুনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘একটি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হয়ে তিনি সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধে যেভাবে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন, তা সমাজের জন্য এক বিরল দৃষ্টান্ত। তার কারণে অনেক ঝরে পড়া মেয়ে শিশু আবার স্কুলে ফিরে গেছে।’
ইউনিসেফের তথ্য মতে, বাংলাদেশে ১৮ বছরের নিচের ৬৬ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হচ্ছে, যা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ। শিশু মৃত্যুর ঘটনা রয়েই গেছে।
জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম সূত্রে জানা যায়, দেশে বাল্যবিবাহের হার ২০০৪ সালে ছিল ৬৮ এবং ২০০৯ সালে ছিল ৬৪ শতাংশ। ২০১১ সালে তা বেড়ে ৬৬ শতাংশে দাঁড়ায়। গ্রামাঞ্চলে এই হার ৬৯ শতাংশ।
বিবাহিত মেয়ে শিশু তার স্বাস্থ্য সম্পর্কে যেমন সচেতন নয়, তেমনি দাম্পত্য জীবন ও পারিবারিক জীবন সম্পর্কেও সচেতন নয়। সংসার সম্পর্কে কিছু বোঝার আগেই সংসারে প্রবেশ করায় শ্বশুরবাড়ি থেকে চাপ সৃষ্টি হয়।
শুরু হয় অশান্তি, পারিবারিক কলহ, সেই সঙ্গে পারিবারিক নির্যাতন। মায়ের ওপর এই নির্যাতনে শিশুরাও ভোগে মানসিক অশান্তিতে। তারা লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়।
নানা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। বাল্যবিবাহের কারণে ছেলে ও মেয়ে উভয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিনোদনের মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। বাল্যবিবাহ আইন ও সংবিধান পরিপন্থি। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘গভর্ন্যান্স ইনোভেশন ইউনিট’ সূত্রে জানা যায়, সাধারণত মসজিদের ইমাম, মাদরাসার শিক্ষক, ধর্মীয় শিক্ষক, মৌলভি, ঠাকুর, পুরোহিত, স্থানীয় মুরব্বি, বিবাহ নিবন্ধকের সহকারীরা বিয়ে পড়িয়ে থাকেন। এরা সবাই যদি উদ্যোগী হন তাহলে বাল্যবিবাহ রোধ করা সম্ভব।
সাজেদা আক্তার জানেন সরকারের এই পদক্ষেপের কথা। সাজেদা বলেন, ‘মোরা যদি প্রথম থাইক্যা সরকারি সহযোগিতা পাইতাম তা হইলে মোগো কাজ আরও নিরাপদ ও জোরদার হইতো। একলা ফাইট দেওয়া কডিন। তাও ভয় পাই নাই।’
সাজেদা তার এই কাজ আরও বৃহত্তর পরিসরে এগিয়ে নিতে চান। কারণ, এই সমস্যার অতল অন্ধকারে রয়েছে এখনো বাংলাদেশের বহু গ্রাম।