হঠাৎ সতর্ক কেন আওয়ামী লীগ?
কোটা সংস্কার এবং নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু নির্বাচনী বছরের শেষ মুহূর্তে এসে এখন যে কোনো সময় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আসতে পারে; এমন আশঙ্কা ক্ষমাতাসীন আওয়ামী লীগের। আর সেটা মোকাবিলায় এখন থেকে আরো সজাগ ও সতর্ক দলটি। নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনী প্রচার প্রচারণার পাশাপাশি যে কোনো পরিস্থিতি ঠাণ্ডা মাথায় মোকাবিলার কৌশলে এগুচ্ছে তারা।
এ লক্ষ্যে দলের তৃণমূলেও দেয়া হচ্ছে বিশেষ দিক নির্দেশনা। একই সঙ্গে ১৪ দলের শরিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সমমনা শক্তিগুলোকেও পাশে রাখতে চায় ক্ষমতাসীনরা। পাশাপাশি প্রশাসনিকভাবেও জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে ও দলীয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের মতে, আওয়ামী লীগকে সব সময়ই ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করেই পথ চলতে হয়। নির্বাচন এলে সেই ষড়যন্ত্রকারীরা আরো তৎপর হয়ে ওঠে। সামনে নির্বাচন। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। ষড়যন্ত্রকারীরা নতুন করে সক্রিয় হয়েছে। যে কোনো ইস্যু পেলেই তারা তার মধ্যে ঢুকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির খেলায় মেতে ওঠে। বিগত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও আমরা সেই দৃশ্য দেখেছি। কিন্তু এবার আর সেই সুযোগ দেয়া হবে না। সতর্ক এবং যে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা প্রস্তুত রয়েছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ১/১১-এর কুশীলবসহ ষড়যন্ত্রকারীরা আবার ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অসম্ভব খেলায় মেতে উঠেছে। সবকিছু জেনেও আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাইনি। ব্যবস্থা নিলে অনেকের জেলের বাইরে থাকা সম্ভব হতো না। আমরা ধৈর্য ধরছি। আমরা সবার ষড়যন্ত্রকে সরকারের উন্নয়ন ও সফলতা দিয়ে মোকাবিলা করছি।
আর বিপরীত দল হিসেবে ধৈর্য ধারণ করছি। দলীয় নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধরার করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে যে কোনো প্রকার কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, সেজন্য সবাইকে সর্তকভাবে অপেক্ষা করার জন্য আবেদন জানাচ্ছি। আমরা আক্রমণকারী হিসেবে চিহ্নিত হতে চাই না। আমরা ধৈর্য সহনশীলতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে যাব। আমাদের নির্দেশনার বাইরে কেউ যেন কোনো প্রকার তাদের প্রভোকেশনের (উসকানি) মধ্যে না পড়ে সে ব্যাপারেও সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।
এর আগে গত ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের বছরে যে কোনো ধরনের নৈরাজ্য ঠেকাতে দলের তৃণমূলকে নির্দেশ দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচন নিয়ে তৃণমূলকে সতর্ক করার পাশাপাশি ওই চিঠিতে চার দফা নির্দেশনা ছিল। ডাকযোগে সাংগঠনিক জেলা ও উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে এসব নির্দেশনার প্রথমটিতে বলা হয়েছে; সংবিধান ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং সন্ত্রাস-নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। একই চিঠিতে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে, সে পরামর্শও ছিল।
এরপর কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। আওয়ামী লীগের অভিযোগ- এই দুই আন্দোলনেই বিএনপি জামায়াত অনুপ্রবেশ করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করেছে। এই আন্দোলন ঘিরে ষড়যন্ত্রের ছিল এমন আশঙ্কা করে তারা বলছেন- সামনে যদি কোনো প্রকার প্রতিকূল পরিস্থিতি আসে সেই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
বিএনপি জামায়াত পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা তৈরি করেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকলে এই ঐক্যবদ্ধ শক্তির কাছে কোনো ষড়যন্ত্র কোনো চক্রান্ত সফল হবে না বলেও তাদের বিশ্বাস। তাই নির্বাচনী বছরে দলের প্রাণশক্তি তৃণমূলের নেতাদের সতর্ক সজাগ ও এক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানবকণ্ঠকে বলেন, দশম জাতীয় সংসদের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকেই বিএনপি জামায়াতের নির্বাচন বানচালসহ অন্য ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে মাঠে আছে আওয়ামী লীগ। আগামীতে বিএনপি জামায়াত যাতে কোনো রকম সহিংস কর্মকাণ্ডসহ ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করতে না পারে সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রয়েছে তাদের সকল কর্মকাণ্ডের ওপর।
তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরও সতর্ক করা হচ্ছে। আমাদের দলের প্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিয়মিত জেলা উপজেলাসহ তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন ধরনের দিক নির্দেশনাও দিচ্ছেন। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে দিক নির্দেশনা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পার্টি অফিসে বসে দলের সাধারণ সম্পাদক যখন কোনো জেলা উপজেলার সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে কোনো নির্দেশনা দেন তাতে আর অন্য আনুষ্ঠানিকতার দরকার পড়ে না।
এদিকে নির্বাচনের আগে ১৪ দলীয় জোটের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তিদেরও পাশে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এতে এক সঙ্গে দুটো কাজ হবে। গত নির্বাচনে বেশ কিছু দল অংশ নেয়নি; সেই ‘একতরফা’ বদনাম কাটবে এবং যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতে মিত্রদের পাশে পাওয়া যাবে। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকও করছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ইতিমধ্যে সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিএনএ জোটের প্রধান সাবেক বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা এবং বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া ফোনে কথা বলেন এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদের সঙ্গেও।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতেই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত যে কোনোভাবেই হোক সারাদেশের মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কোথাও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা হলে দলীয় নেতাকর্মীর পাশাপাশি শরিক, মিত্র এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তা সতর্কতার সঙ্গে প্রতিহত করবে দলটি।
একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের আগে আন্দোলনের নামে পরিবেশ ঘোলাটে হতে না পারে সেদিকে কঠোর নজর রাখবে প্রশাসন। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখতে সহনশীলতার পাশাপাশি প্রয়োজনে হার্ডলাইনেও যাবে তারা।
মানবকণ্ঠ