ছাত্রদের কাছে লাইসেন্সবিহীন অবস্থায় ধরা খেল মুন্নি সাহাও।
বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর প্রতিটি পয়েন্টে জড়ো হয়ে সড়কে চলাচলকারী সকল গাড়ির কাগজপত্র ও লাইসেন্স চেক করছে শিক্ষার্থীরা। বাদ যাচ্ছে না এমপি-মন্ত্রী, পুলিশ-বিজিবিসহ সরকারি গাড়ি এমনকি মিডিয়া কর্মীরাও।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কাগজপত্র না থাকায় সাংবাদিক মুন্নি সাহাকে মটরসাইকেল থেকে নামিয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তিনি তার এক সহকর্মীর মটরসাইকেলের পেছনে বসে ছিলেন। দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা মটরসাইকেলটি থামিয়ে কাগজপত্র দেখতে চাইলে তা দেখাতে পারছেন না চালক। এসময় পেছন সিট থেকে হেলমেট পড়া অবস্থায় নেমে আসেন মুন্নি সাহা। হেলমেট খুলে তিনি চলে যাওয়ার সময় এক শিক্ষার্থী তাকে সরি বলতে বলেন। একজন প্রশ্ন করেন , ছাত্রদের কাছে লাইসেন্সবিহীন অবস্থায় ধরা খেয়ে মুন্নি সাহার অনুভুতি কি ?
অন্যদিকে গাড়ির কাগজপত্র ছাড়া সংসদে ঢুকতে না পারার কারণে সংসদীয় কমিটির বৈঠক বাতিলের মতো ঘটনা ঘটেছে বৃহস্পতিবার। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পঞ্চম দিনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়া সংসদে গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করতে ও বের হতে পারেননি এমপি-মন্ত্রীরাও। সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির বিরুদ্ধে করা হয়েছে মামলা। অবস্থা বেগতিক দেখে সংসদ থেকে বের হয়ে আবারও তাড়াতাড়ি ঘুরিয়ে সংসদে প্রবেশ করেছে গাড়ি।
এদিন দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ছিল। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের ড্রাইভারের কাগজপত্র ছিল না। এজন্য আসাদগেটে তার গাড়ি আটকে দেয় শিক্ষার্থীরা। পরে বাধ্য হয়ে মন্ত্রী গাড়ি রেখে হেঁটে সংসদে প্রবেশ করেন। এই কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন (লালমনিরহাট-১) এর গাড়ির সব কিছু ঠিক থাকায় তিনি সংসদে প্রবেশ করতে পারেন। তবে কমিটির ১০ জন সদস্যের মধ্যে আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন (পটুয়াখালী-৩) আর কেউ সংসদে প্রবেশ করতে পারেননি। ছিলেন না মন্ত্রণালয়ের হর্তাকর্তারাও। তাই কমিটির বৈঠক বাতিল করা হয়।
এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গাড়িতেও বৈধ কাগজপত্র পাওয়া যায়নি। মামলা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবর রহমানের গাড়ির চালকের বিরুদ্ধে।বিষয়টি খুবই হতাশাজনক বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ।বৃহস্পতিবার ধানমণ্ডির ১৫ নম্বরে চালকের লাইসেন্স দেখাতে না পারায় গাড়ি ছেড়ে হেটে যেতে হয়েছে পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে।
চালকের লাইসেন্স না থাকায় রাজধানীর শনিরআখড়ায় সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথকে দুই ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সাংসদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তখন সাংসদকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসেন কদমতলী থানা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মমিনুল ইসলাম রাজীব। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে এক পর্যায়ে তাকে বেদম মারধর করা হয়।
এর আগে সোমবার বাংলামোটরে উল্টোপথে চলতে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের তোপের মুখে পড়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি। মন্ত্রীর সামনেই শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেয়- ‘আইন সবার জন্য সমান।
সংসদে এক মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসে ফেঁসে যান ঝিনাইদয়ের পৌর মেয়র সাইদুল কবির মিন্টু। তার গাড়ির (ঢাকা মেট্রো-ঠ, ১৬-০০৭৭) ড্রাইভারের লাইসেন্স নেই, ছিল না প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও। এজন্য তাকেও আটকে রাখা হয়। এমনকি সংসদের অনেক কর্মকর্তাও কাগজপত্র ছাড়া গাড়ি নিয়ে সংসদে যাতায়াত করতে পারেননি।
দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের ঢাকা মেট্রো-চ ৫১-৬২৬৪ নম্বর গাড়িটি আটকে চালকের লাইসেন্স দেখতে চায় আদ-দ্বীন ও ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা। ড্রাইভার লাইসেন্স দেখাতে না পারায় গাড়িতে মার্কার দিয়ে ‘লাইসেন্স নাই, সরকারি গাড়িতে লাইসেন্স লাগে না’ লিখেছে শিক্ষার্থীরা।
একই সময় স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের ঢাকা মেট্রো-চ ৫৩-৫১৯৬ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি গাড়ি আটকে চালকের লাইসেন্স না পেয়ে এতেও মার্কার দিয়ে ‘লাইসেন্স ছাড়া সরকারি গাড়ি রাস্তায়’ লিখে দেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় অর্ধশতাধিক গাড়ি আটকে দেয় তারা।
এছাড়াও উত্তরায় চালকের লাইসেন্স না থাকায় দু’টি বেসরকারি টেলিভিশনের তিনটি গাড়ির চাবি নিজেদের জিম্মায় নেয় শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি আইন সবার জন্য সমান। কে মন্ত্রী, কে এমপি আর কে বড় কর্মকর্তা তা আমরা দেখতে চাই না।