ইক্বামাতে দ্বীন’র বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক প্রপাগান্ডার আসল রহস্য !

August 1, 2018 9:35 pm0 commentsViews: 38

সাকিব হেলাল

অর্থ্যাৎ এ দুটি ইসলামী শাসনের অর্ধেক। এই দুটিকে যখন একসাথে বলা হয়েছে তখনো বলা হয়েছে সালাত এবং জাকাত কায়েম করো। অর্থ্যাৎ যখন দ্বীনের অর্ধেক কায়েমের কথা বলা হচ্ছে তখনো দ্বীন শব্দটির ব্যবহার করা হয়নি- বরং তাদেরকে শুধু সালাত কায়েম করা এবং জাকাত কায়েম করা হিসেবেই বলা হয়েছে। এসব থেকে তো এটা পরিষ্কার হয় যে, দ্বীন কায়েম (ইক্বামাতে দ্বীন) করা মানে পরিপূর্ন দ্বীন (যে নবীর আমলে সময়বিশেষে যতটুকু ছিল) কেই বোঝানো হয়েছে। অন্যদিকে দ্বীনের যে কোন অংশবিশেষ বাস্তবায়নের কাজকে শুধু সেই অংশবিশেষ কায়েম (যেমন ইক্বামাতে সালাত বা ইক্বামাতে জাকাত) হিসেবেই দেখা হয়েছে- ইক্বামাতে দ্বীন হিসেবে নয়। তাই ইসলামের শুধুমাত্র কোন খণ্ডিত অংশ বাস্তবায়নের কাজ- তা যতই গুরুত্বপূর্ণ অংশ বা স্তম্ভ হোক না কেন- তাকে ইক্বামাতে দ্বীন বলা যাবে না, এবং ইসলামের ৯৯ শতাংশও যদি কায়েম হয়ে যায় তবুও দাবি করা যাবে না যে “দ্বীন” কায়েম হয়ে গেছে।

যারা শুধুমাত্র তাওহীদ বা আক্বিদা বা ঈমানের দিকে দাওয়াত দিবেন তারা সে কাজ কে বড়োজোর বলতে পারেন “ইক্বামাতে তাওহীদ বা ইক্বামাতে ঈমান বা ইক্বামাতে আক্বিদা”। যারা সালাত বা জাকাত এর দিকে মানুষকে ডাকবেন বা তালিম দিবেন তারা সে কর্মসূচিকে বড়োজোর “ইক্বামাতে সালাত বা ইক্বামাতে জাকাত” এর কাজ বলতে পারেন। অর্থ্যাৎ যে যতটুকু কাজ করছেন ততটুকুই দাবি করতে পারেন। আপনি পুরো দ্বীন কায়েমের কাজ করছেন না, বা পুরি দ্বীন কায়েমের প্রয়োজনীয়তাও স্বীকার করেন না, অনেক ক্ষেত্রে দ্বীনের পূর্ণতা সম্পর্কে ধারণাও নাই, সেখানে কিভাবে নিজের কাজ কে “ইক্বামাতে দ্বীনের” ব্যাপক অর্থে পরিচিত করবেন? তা করা মানুষকে বিভ্রান্ত বা মিসলিড করারই নামান্তর।

একটা বিল্ডিং বানাতে গেলে কেউ ইট এর সাপ্লাই দেয়, কেউ রড-সিমেন্ট-বালু, কেউ দরজা জানালা। এখন কেউ যদি দরোজার কাঠ আর জানালার কাঁচ সাপ্লাই দিয়েই বলে বেড়ায় যে আমি এই বিল্ডিং বানিয়ে দিচ্ছি তাহলে সেটা যেমন হাস্যকর দাবি হবে, তেমনি কেউ দ্বীনের একটা অংশবিশেষ এর কাজ করেই যদি দাবি করে বসে যে সে দ্বীন কায়েম করছে সে দাবিও হাস্যকর বিবেচিত হবে। পুরো বিল্ডিং বানানোর দাবি কেবল সেই করতে পারে যে পুরো বিল্ডিং এর কনসেপ্ট এর সাথে জড়িত- যেমন বিল্ডিং এর মালিক বা আর্কিটেক্ট বা মূল ইঞ্জিনিয়ার, অথবা এমন শ্রমিক সমষ্টি যারা পরিকল্পিতভাবে ভিন্নভিন্ন অংশ নির্মাণের কাজে জড়িত। তার মানে এই নয় যে তাকে নিজ হাতে একলাই পুরো বিল্ডিং এর সমস্ত কাজ করতে হবে। তেমনি ইক্বামাতে দ্বীনের দাবি যথার্থ হওয়ার জন্য দ্বীনের সমস্ত কাজ নিজ হাতে করা শর্ত নয়- তবে অবশ্যই এটা শর্ত যে সে “দ্বীনের পূর্ণাঙ্গ রূপ কায়েম” এর কনসেপ্ট স্বীকার করবে এবং পরিকল্পিতভাবে ভিন্নজন ভিন্নভিন্ন অংশে সাধ্যমত জড়িত থাকবে বা সমর্থন করবে । মূল কথা- পুরো বিল্ডিং এর কনসেপ্ট স্বীকার করতে হবে।

যারা দ্বীনের অংশবিশেষ নিয়ে কাজ করছেন তারা ইচ্ছে করলে সেই অংশবিশেষ কায়েমের দাবি করতে পারেন। তবে ঐতিহাসিকভাবে তারা নিজেদেরকে অন্যান্য পরিভাষায় পরিচিত করে এসেছেন- কেউ নিজেকে দ্বীনের দ্বায়ী, কেউ দ্বীনের খাদেম ইত্যাদি। যারা ঈমান-আক্বিদা-তাওহীদের প্রতি মানুষকে ডাকছেন তাদের কাজকে যেমন দাওয়াতী বা ইসলাহী কাজ বলা ঐতিহাসিকভাবেই প্রমাণিত, তেমনি যারা মসজিদ-মাদ্রাসা ইত্যাদির কাজ করে আসছেন তাদের কাজকেও দ্বীনের খেদমত বলাও ঐতিহাসিকভাবেই প্রমাণিত। তাহলে “খেদমতে দ্বীন” এই পরিভাষায় আপনি নতুনত্ব বা ভুলের কি দেখলেন? তারা নিজেরাই তো এই ভাবেই নিজেদের পরিচয় দিয়ে আসছেন! ইসলামের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো মসজিদুল হারাম এবং মসজিদে নববী। এই দুটি মসজিদ এর যাবতীয় কাজকে তো “খেদমত” হিসেবেই অভিহিত করা হয়, এবং যিনি তার জন্য মূল দায়িত্বশীল সে সৌদি বাদশাহ তো নিজেকে “খাদেমুল হারামাইন” হিসেবেই পরিচয় দেন ।”খাদেমুল হারামাইন” টার্ম নিয়ে যদি আপত্তি না থাকে তাহলে “খেদমতে দ্বীন” টার্ম নিয়ে আপত্তি কেন? আর কিভাবে বলেন যে এটি জামায়াত আবিষ্কৃত নতুন পরিভাষা? অথচ দ্বীনের দাওয়াত বা দ্বীনের খেদমত এগুলো হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, অনেক বড় বড় মানুষ নিজেরাই নিজেদের কাজকে এভাবে পরিচিত করে এসেছেন।

এখানে তো অসম্মানের কিছু নেই, কাউকে ছোট বা খাটো দৃষ্টিতে দেখারও কিছু নেই। শুধুমাত্র একেকজনের কাজকে সুনির্দিষ্টভাবে বা সঠিকভাবে সংজ্ঞায়িত করার ব্যাপার। সচিবকে সচিব, প্রফেসরকে প্রফেসর বা ডাক্তারকে ডাক্তার বলার মধ্যে দোষ কি? কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমানে এমপি হওয়া যেহেতু একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে- তাই অনেক জাঁদরেল সচিব, ডাক্তার আর প্রফেসর এমপি হবার বাসনা রাখেন। তাই তারা নিজেদের সারাজীবনের প্রফেশনাল এবং গৌরবজনক পরিচয় বাদ দিয়ে নামের সাথে এমপি পরিচয় লাগাতে হাস্যকরভাবে চেষ্টা তদবির করতে থাকেন। কেউ সত্যিকার অর্থে জনসেবার উদ্দেশ্যে এমপি হতে চাইলেতো ভালোই, কিন্তু অধিকাংশ সময়ে দেখা যায় যে এই সাবেক ডাক্তার সচিব আর প্রফেসরদের আসল টার্গেট শুধুমাত্র এমপি পদবি আর লাল পাসপোর্ট। সেটাই সমস্যা। আমার মনে হয় আমাদের সালাফি ভাইদেরকেও সেই রোগে ধরেছে। হাজার বছর ধরে তাদের কাজকর্ম কে দাওয়াত আর খেদমত ইত্যাদি হিসেবে আখ্যা দেওয়া হতো, সেগুলো অনেক সম্মানজনক কাজ এবং গৌরবান্বিত পরিচয়। কিন্তু সম্ভবত এখন যেহেতু ইক্বামাতে দ্বীনের ফ্যাশন চলছে তাই তারা হঠাৎ করে নিজেদেরকেকে ইক্বামাতে দ্বীনের সৈনিক হিসেবে পরিচয় দিতে উদগ্রীব হয়ে গেছেন।

সত্যিকার অর্থেই যদি তারা ইক্বামাতে দ্বীন এর কাজে জড়িত হতেন তাহলে তো ভালোই হতো- কিন্ত তাদের আচরণে প্রতীয়মান হচ্ছে যে আসলে তাদের মূল টার্গেট শুধুমাত্র ইক্বামাতের দ্বীনের ব্যাজ বা সার্টিফিকেট। তাদের আচরণ সামগ্রিকভাবে স্ববিরোধী কথাবার্তায় পূর্ন এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তিকর। একই সময় বলছেন যে ইক্বামাতে দ্বীনের গুরুত্ব নাই, আবার কিছুক্ষন পরেই বলছেন যে আমরাই আসল ইক্বামাতে দ্বীনের কাজ করি! এদের উদ্দেশ্য আসলে ইক্বামাত দ্বীনের গঠনমূলক কাজ করা নয়, বরং ইক্বামাতে দ্বীনের যে একটা স্পেইস সমাজে তৈরী হয়েছে সে স্পেইস দখল করা এবং সেই বেইস এবং ব্যাজ টা ব্যবহার করা।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে আমাদের আহলে হাদিস বিশেষকরে সৌদি আরব থেকে ফারেগ কয়েকজন শ্রদ্বেয় ভাই যা শুরু করেছেন তা উদ্দেশ্যমূলক বিতর্ক এবং অত্যন্ত পরিকল্পিত ভাবে নিজেদের মাঝে যোগসাজশ করেই এই বিতর্ক গুলো সৃষ্টি করছেন। তারা কিছু মৌলিক ইস্যু নিয়ে বিতর্ক তুলেছেন এবং যুক্তির ধরণ দেখে প্রমাণিত হচ্ছে যে এগুলো উনাদের নিজস্ব চিন্তা গবেষণার ফল নয়- বরং তাদের বিদেশী মাশায়েখদের শেখানো পুরোনো গৎবাঁধা বুলি মাত্র। কারণ এধরণের কথাবার্তা আমরা আগে অন্যত্র শুনেছি- সবক্ষেত্রেই স্পষ্ট যে এগুলো পরিকল্পিতভাবে সৌদি আরব থেকে আমদানি করা। সম্ভবত এই ভাইগণ ভেবেছেন যে বর্তমানে জামায়াতে ইসলামী দুর্বল অবস্থায় আছে, তাই জামায়াতে ইসলামীর যে ন্যাচারাল বেইজ বা ফিল্ড আছে তা তাদের গোষ্ঠীগত স্বার্থে দখল করতে সহজ হবে। সারা বিশ্বেই ইসলামী আন্দোলন বর্তমানে বাহ্যিকভাবে চাপের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে; আর সৌদিআরব+রাজতান্ত্রিক সরকার+স্বৈরশাসক+পাশ্চাত্য শক্তি এক হয়ে ইসলামী আন্দোলনগুলোর জায়গায় লিবারেল অরাজনৈতিক মুসলিম গোষ্ঠীগুলোকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। কোথাও এজন্য সেক্যুলারিস্ট মুসলমানদেরকে ব্যবহার করছে, কোথাও সূফীবাদীদের তুলে আনছে, আর কোথাও অরাজনৈতিক সালাফিদের ব্যবহার করছে।

মূলত পলিটিক্যাল ইসলাম বা ইসলামী গণজাগরণই এখন রাজতান্ত্রিক, স্বৈরতান্ত্রিক আর পাশ্চাত্য শক্তির মূল মাথা ব্যাথা এবং কমন টার্গেট। তাই বিশ্বব্যাপী পলিটিক্যাল ইসলাম ঠেকানোর জন্য যেখানে যা করার দরকার তা করছে এবং যাদেরকে পাচ্ছে তাদেরকেই ব্যবহার করছে। সৌদী সরকার এবং আরব আমিরাত সরাসরি এবং খোলাখুলি এসব নিয়ন্ত্রণ করছে। সেসব সরকারগুলোর পলিসিই তাদের অফিসিয়াল মুফতি-মাশায়েখগণ প্রমোট করছেন এবং বিভিন্ন দেশে তাদের শাগরেদদেরকে এই প্রজেক্টে নামিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশে এখন যা হচ্ছে তা পরিকল্পিতভাবে সৌদি থেকে আমদানি করা- এতে কোন সন্দেহ নেই। অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে একধরণের সাঁড়াশি আক্রমণের মতোই একের পর এক মৌলিক ইস্যু নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করছেন, অনেকটা গায়ে পড়েই ঝগড়া শুরু করছেন। তারা মূলত বুঝে হোক বা না বুঝে হোক ইসলামী জাগরণ ঠেকানোর লক্ষ্যে স্বৈরাচার এবং ইসলামবিরোধী শক্তির গুটিতে পরিণত হয়েছেন (অধিকাংশ না বুঝেই করছেন, কারণ বিশ্ব রাজনীতির মতো কমপ্লেক্স, কমপ্লিকেটেড এবং সফিস্টিকেটেড বিষয় বুঝার মতো ট্রেইনিং এসব সিম্পল মাইন্ডেড সালাফিরা পান নি)। কিন্তু তারা নিজেরাও নিস্তার পাবেন না- এখন ব্যবহৃত হবেন, কয়দিন পরে তাদেরকেও ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। সর্বোপরি এবারের এই মতবিরোধ বা বিতর্কটি অন্যান্য মতবিরোধের চাইতে আলাদা। তাই পূর্বের অন্যান্য মতবিরোধ সহিঞ্চুতার দৃষ্টিতে দেখলেও এখানে তা করার সুযোগ নাই, বরং বলিষ্ঠভাবেই এদেরকে মোকাবেলা করতে হবে।

সৌদিআরব এর ইলম, গবেষণা, একাডেমিক এবং ইন্টেলেকচুয়াল পরিবেশ; আলে-শাইখ, ইফতা বিভাগ সহ যাবতীয় ইন্সটিটুইশন, এবং ফ্রিডম অফ এক্সপ্রেশন ইত্যাদি এর অবস্থা সম্পর্কে যারা জানেন তারা সবাই বোঝেন যে সেখানে রাষ্ট্র, ক্ষমতা, রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়ে স্বাধীন ভাবে চিন্তা ভাবনা করা এবং স্বাধীন মতামত দেয়া সম্ভব নয়। এসব বিষয়ে আলে-সউদ বা রাজপরিবারের পলিসি বা সিদ্বান্তই সেখানকার মুফতি-ওলামা-মাশায়েখগণ প্রতিধ্বনিত করেন মাত্র। আলে-সউদ তার বংশীয় রাজতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য যখন যা প্রয়োজন তাই করবে, যখন যাদেরকে দরকার তাদেরকে ব্যবহার করবে, যে স্ট্রাটেজি নেয়া দরকার তাই নেবে, যখন জামাল নাসের-সাদ্দাম ইত্যাদির আরব জাতিওয়াতাবাদের হুমকি থেকে বাঁচার জন্য পলিটিকাল ইসলাম বা ব্রাথারহুড কে দরকার ছিল তখন ব্রাদারহুডকে ব্যবহার করেছে, এখন আবার পলিটিকাল ইসলাম বা গণতন্ত্রের হুমকি থেকে বাঁচার জন্য সুফিদের দরকার তাই তাদেরকেও কাছে টেনে নিচ্ছে (সৌদি আরবে সাম্প্রতিক কালে সূফিজমের বেশ প্রসার ঘটছে), আবার ওয়েস্টকে তুষ্ট রাখার জন্য প্রচন্ড বেগে লিবারেলিজম এর প্রসার ঘটাচ্ছে। ইরানের সাথে যে দ্বন্দ্ব তাতে সৌদিআরব আসলে জিততে পারবে না- কিছুদিন পরে শিয়াদেরকেও ভাই ভাই বলে কাছে টানবে (অলরেডি ইরাকের শিয়াদের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে)। আলে-সউদ কে টিকিয়ে রাখাই সেখানে একমাত্র বিবেচ্য বিষয়- তার জন্য যা যা করা দরকার তাই করবে। সহীহ আক্বিদা আর হারামের খেদমত এসব কেবল তাদের গদি রক্ষার হাতিয়ার- নিকট ইতিহাসে অস্রবাজি করে গায়ের জোরে ক্ষমতা দখল করা এবং গদিতে টিকে থাকার জন্য ইসলামের ব্যবহার আসলে আলে-সউদরাই সবচেয়ে বেশি করেছে।

তাই এসব রাজনীতি সংক্রান্ত বিষয়ে সেখানকার মুফতি-মাশায়েখগণের স্বাধীন নিজস্ব মতামত বা ফতোয়া বলে আসলে কিছু নেই, আলে-সউদের গদিতে টিকে থাকার পলিসিই তাদের ফতোয়া। স্বাধীনভাবে সাধারণ একটা খুৎবা যেখানে দেওয়া যায়না, সেখানে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-রাজনৈতিক-রাষ্ট্রীয় বিষয়ে এসব ওলামা-মাশায়েখদের নিজস্ব ফতোয়া জানতে চাওয়া অর্থহীন। বাইরের সাগরেদ যারা সেদেশের ওলামাদেরদেরকে ফলো করেন তারা সত্যিকার অর্থে আলে-সউদ কেই ফলো করছেন। তাই এসমস্ত সাগরেদদের উচিত তাদের আল্টিমেট রেফারেন্স হিসেবে “আমাদের সৌদিআরবের মাশায়েখগণ” না বলে “আমাদের আলে-সউদের মাস্টারগণ” বলা- সেটাই বরং বেশি সঠিক এবং উপযুক্ত হবে!

যে সমস্ত সালাফি ভাইগণ সৌদি মাশায়েখগণ তথা আল্টিমেটলি আলে-সউদ কে তাদের রেফারেন্স হিসেবে মানছেন তাদের অচিরেই হতাশ হতে হবে। আলে-সউদের এর সাথে সালাফিজম বা ওহাবিজম এর গভীর সম্পর্ক বেশিদিন থাকবে না। ওহাবিজম সম্পর্কে পশ্চিমাদের প্রচন্ড বিরূপ ধারণার কারণে আলে-সউদ বুঝতে পারছে যে ওহাবিজম এর সাথে বেশিদিন গভীর সম্পর্ক রাখা যাবে না, তাই ওহাবিজম এর সাথে সম্পর্ক আস্তে আস্তে শিথিল করতে চাচ্ছে।

পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন পজিশনে সালাফি-ওহাবিজমের মূল ধারক আলে-শায়খদের পরিবর্তে অন্যদের বসানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে- গত হজ্বের খুৎবা থেকে আলে-শায়খ কে বাদ দিয়েছে। আগামীতে গ্রান্ড মুফতি হিসেবেও আর আলে-শায়খ কাউকে দেখা যাবার সম্ভাবনা কম। স্কুল কলেজের সিলেবাসে সালাফি-ওহাবী মতবাদ এবং ধ্যান ধারণা বাদ দেয়া শুরু করেছে। কট্রর সালাফি হিসেবে পরিচিত রিলিজিয়াস পুলিশ এর পুরোটাকেই বাদ দিয়ে দেয়া হয়েছে। এভাবে সালাফি-ওহাবী প্রভাব থেকে পুরোপুরি বের হতে চাইতেছে আলে-সউদ। তার স্থলে পর্যায়ক্রমে সুফীজম-সেক্যুলারিজম এর মিশ্র একটা ধর্মীয়-সামাজিক পরিবেশ গড়ে তুলতে চাচ্ছে।

সালাফি-ওহাবিজম কে পুরো নিউট্রোলাইজ করার উদ্দেশ্যেই সরকারের প্রশ্রয়েই আস্তে আস্তে সুফিজমের প্রবেশ করানো হচ্ছে, এবং অনেক সৌদি এখন প্রকাশ্যেই নিজেদেরকে সুফী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। আর রাষ্ট্রীয় প্রশাসন প্রায় পুরোপুরি সেক্যুলারিস্ট ব্যক্তিদের দখলে। তার উপরে ভিশন ২০৩০ সহ যে সমস্ত উন্নয়ন বা সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তাতে অর্থনৈতিক সংস্কার যতটুকু হবে না হবে তার চাইতে বরং সামাজিক-ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে একটা ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে এবং কুনজ্যুমারিস্ট-সেক্যুলার-লিবারেল রূপ ধারণ করবে তা সবাই অনুমান করছেন, আলে-সউদ নিজেরাও খোলাখুলি বলছেন। আগামী এক জেনারেশনেই সৌদি সমাজ দুবাই এর মতোই একটা হেডোনিস্টিক খাও-দাও-নাচো-ঘুমাও সমাজে পরিণত হতে যাচ্ছে। অবশ্য যারা সৌদি সমাজ সম্পর্কে গভীরভাবে খবর রাখেন তারা জানেন যে অলরেডি ভিতরে ভিতরে কতটা ঘুঁনে ধরেছে। রিয়াদ সহ অনেক শহরেই ব্যাভিচার, মদ-জুয়া সহ সমকামিতা পর্যন্ত ওপেন সিক্রেট। এখন শুধু এগুলো ওপেনলি একসেপ্টেবল, নর্মালাইজেশন এবং টলারেটেড হওয়া বাকি।

আলে-সউদ সেরকম একটি সেকুলারাইজড রাষ্ট্রের দিকেই এগুচ্ছে। এতদিন বংশীয় রাজতন্ত্রই ছিল শাসন পদ্বতি তাই ট্রাডিশনাল ট্রাইবাল সামাজিক মূল্যবোধ এবং ধর্মীয় দিকটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল, এজন্য ধর্মীয় গোষ্ঠীকে প্রয়োজন ছিল এবং সে অনুযায়ী তাদেরকে ব্যবহার করেছে। কিন্তু এখন তাতে যোগ হয়েছে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ- যা এর আগে এতো প্রবলভাবে কোন সৌদি শাসকই পোষণ করেন নি বা প্রকাশ করেন নি। মাত্র অল্প সময়েই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু সহ সমাজে বংশীয় রীতিনীতির চাইতে ব্যাক্তিগত চাওয়াপাওয়াই সবকিছু প্রভাবিত করছে। এভাবে শাসন পদ্বতিতে বংশীয় রাজতন্ত্র এর সাথে এখন ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্রও যুক্ত হতে যাচ্ছে। বরং বলা চলে যে অদূর ভবিষ্যতে সৌদি শাসন কে বংশীয় রাজতন্ত্র না বলে ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্র বলাই অধিক যৌক্তিক হবে। যার ফলে এখন ক্ষমতায় যাওয়া এবং টিকে থাকার জন্য সামাজিক- ট্রাইবাল-ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর চাইতে বরং বেশি দরকার হবে পাশ্চাত্যের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং নেটওয়ার্ক। এজন্য পাশ্চাত্যের প্রভাব সৌদি সমাজে অনেকগুন বেড়ে যাবে এবং শাসকগোষ্ঠীর একমাত্র লক্ষ্য থাকবে পাশ্চাত্যকে সন্তুষ্ট রাখা। আলে-শায়খ সহ ধর্মীয় বা ট্রাডিশনাল-ট্রাইবাল গোষ্ঠীগুলোর কোন প্রভাব বা মূল্যই আর সৌদি রাষ্ট্রে এবং সমাজে থাকবে না।

বাইরের যে সমস্ত ওলামা-মাশায়েখ-ইসলামী ব্যক্তিগণ আলে-সউদ এর সৌদি মাশায়েখদের সাথে নিজেদের রুজ্জু বাঁধছেন তারা একটা আনপ্রেডিক্টেবল এবং আনস্টেইবল খুঁটির সাথেই নিজেদের বাঁধছেন। পরগাছা তাদের এসমস্ত ধার করা তত্ব এবং বিতর্ক বেশিদিন বাঁচবে না, এবং সমাজের বেশি গভীরে প্রবেশ করবে না।
প্রতি মুহুর্তের খবর পেতে এখানে ক্লিক করে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিন

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com