জোট রাজনীতি ঃ পর্দার আড়ালে নানা তৎপরতা
ওদিকে, নানা অনিশ্চয়তার পরও বিএনপি নির্বাচনের এক ধরনের প্রস্তুতি শুরু করেছে। দলটি এখন সবচেয়ে বেশি চেষ্টা করছে অপেক্ষাকৃত প্রগতিশীল মনোভাবাপন্ন দলগুলোর সমন্বয়ে একটি বৃহৎ জোট গঠনের জন্য। বিএনপির পক্ষ থেকে একে জাতীয় ঐক্য নামে অভিহিত করা হচ্ছে। এ জাতীয় ঐক্যের জন্য বিএনপি সর্বোচ্চ ছাড় দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় ঐক্যের প্রচেষ্টায় বিএনপির পক্ষ থেকে গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জাসদ (রব), কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ, বিকল্প ধারা, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। এখনও দলগুলোর মধ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। বেশিরভাগ দলই অভিন্ন স্বার্থে এ জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে একমত হয়েছে। শুরুর দিকে ভিন্ন মঞ্চ থেকে অভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হতে পারে। তবে, বেশ কিছু জটিলতাও এখন পর্যন্ত রয়ে গেছে। ২০ দলীয় জোটের ভেতরও কিছু টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।
বিশেষ করে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে। সিলেট সিটি করপোরেশনে জোটের বাইরে গিয়ে জামায়াতের পক্ষ থেকে মেয়র পদে প্রার্থী দেয়া হয়েছে। অন্য সিটিগুলোতে জামায়াতের প্রার্থী না থাকলেও বিএনপির পক্ষে সেভাবে সরব নেই জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে আগামী সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের অবস্থান কোন দিকে যায় সেদিকে দৃষ্টি থাকবে পর্যবেক্ষক মহলের। জামায়াতের আমির মকবুল আহমাদ সম্প্রতি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এ নিয়েও রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
তবে, বিএনপির বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব, প্রলোভন আর চাপ এ তিনটি বিষয়ই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে। একজন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক বলেন, একটি সিটি নির্বাচনে একজন বিদ্রোহী প্রার্থীকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই প্রার্থী হতে হয়েছে। এরআগে নানা চাপ এবং প্রলোভনে ২০ দলের শরিক বেশ কয়েকটি দলের মধ্যে ভাঙন দেখা দেয়। সামনের দিনগুলোতে এমন পরিস্থিতি আরো প্রবল হতে পারে। তবে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় সম্ভাব্য জোটের নেতৃত্ব কে দেবেন তা নিয়ে জটিলতা রয়েছে। যদিও পরিস্থিতির পরিবর্তনে এ নিয়ে ছাড় দিতেও বেশিরভাগ দল প্রস্তুত রয়েছে বলে একটি সূত্র জানাচ্ছে। এক্ষেত্রে জোটের নেতৃত্বে বড় ধরনের চমকও থাকতে পারে। সরকারের অংশীদার জাতীয় পার্টির আগামী দিনে কী ভূমিকা হতে পারে তা নিয়েও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে আলোচনা রয়েছে।
অতীতে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নানা নাটকীয়তা তৈরি করেছিলেন। যদিও বিএনপির সঙ্গে কখনও তার নির্বাচনী ঐক্য হয়নি। চার দলীয় জোট গঠনের সময় এরশাদ ঐক্যের কাবিননামায় স্বাক্ষর করলেও পরে জোট ত্যাগ করেন। এখন জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদও একটি শক্তিশালী প্রভাব বলয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন। তবে, আগামীদিনে মহাজোটে জাতীয় পার্টির স্থান অন্য একটি দল নিতে পারে এমন গুঞ্জনও রয়েছে। যে দলটি এখন বিএনপির ঐক্য প্রচেষ্টার আলোচনাতেও আছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, আগামী অক্টোবরের শেষ দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে। এর আগে পরে রাজনীতিতে নানা নাটকীয় ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও সর্বত্রই ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণ বজায় রয়েছে। এবং এ নিয়ন্ত্রণ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে এমন কোনো ঘটনাও ঘটেনি। কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতেও কঠোর অবস্থান নিয়ে ক্ষমতাসীনরা সর্বত্র একটি বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। সামনের দিনগুলোতেও যে সরকারের কঠোর অবস্থান অব্যাহত থাকবে তা বলাই বাহুল্য।
নানা ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলো কিছু নড়াচড়ার চেষ্টা করলেও সরকারের যে তা পছন্দ হয়নি তা তাদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে নিয়ে চীন-ভারতের এক ধরনের ঠান্ডা লড়াইয়ের খবর মাঝে মধ্যেই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বেরোয়। তবে ঢাকার পক্ষ থেকে দিল্লিকে এটা বুঝানোর চেষ্টা হয়েছে যে, চীনের অবস্থান শুধুই বাণিজ্যিক। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্টে খালেদা জিয়ার আপিলের শুনানি এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। তার জামিনে মুক্তির ব্যাপারে এখন বিএনপির হেভিওয়েট আইনজীবীরাও কোনো আশার কথা বলছেন না। দলটি শেষ পর্যন্ত এ ইস্যুতে কী কৌশল অবলম্বন করে, আদৌ কোনো কৌশল অবলম্বন করতে পারে কি-না সেদিকেও খেয়াল রাখছেন পর্যবেক্ষকরা।
প্রকাশ্যে রাজনীতি এখন স্থির। সর্বত্র নিয়ন্ত্রণ। পর্দার আড়ালে জোট রাজনীতিতে নড়াচড়া চলছে। সামনের দিনগুলোতে তা আরো তীব্র হবে। যদিও তীব্র প্রতিযোগিতার কোনো আভাস নেই।