বিএনপিও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে চায়’

বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের সাম্প্রতিক ভারত সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে গিয়ে এভাবেই প্রতিবেদন শুরু করেছেন ভারতীয় সাংবাদিক চন্দন নন্দী।

তিনি বলছেন, এটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশে কোণঠাসা রাজনৈতিক দল বিএনপিও, যার নেত্রী খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ, অবশেষে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে ভারতের কাছ থেকে একটি সুযোগ নিতে চাচ্ছে। অথচ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের নৈকট্য রয়েছে বলে মনে করা হয়।

নন্দী বলছেন, ‘যদি নির্বাচন হয়’ বলতেই চৌধুরী কথার মাঝে বলেন, নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ ভেঙে দিবেন সে ব্যাপারে তারা পুরোপুরি আশাবাদী নন।

সাউথ এশিয়া মনিটর ডটকম নামক ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির প্রতিনিধি দলের প্রাথমিক কাজ ছিল দলটির অবস্থান পরিষ্কার করা যে, তারা দেশটির ইসলামপন্থী ও মৌলবাদী দল থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবে। অন্যভাবে বললে বলা যায়, এর মাধ্যমে ভারতবিরোধী জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গ সংগঠন খেলাফত আন্দোলনকে বোঝাতে চেয়েছেন তারা। প্রতিনিধি দলের অপর দুই সদস্য হলেন, দলের ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক সচিব হুমায়ুন কবির।

নন্দী বলছেন, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বিতর্কিত ইস্যুটি নিয়ে আলোচনায় আগ্রহ প্রকাশ করেননি। তবে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর ইঙ্গিত করে যে, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের সমর্থনে এই সফর এবং এর উদ্দেশ্য হলো, আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ করতে নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমর্থন আদায়।

ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা ব্যুরোর সূত্র সাউথ এশিয়া মনিটরকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতীয় নেতাদের বোঝাপড়া যদিও ভালো তবুও সব ধরনের অপশন উন্মুক্ত আছে।

ভারতীয় থিঙ্ক ট্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠান অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের বিশ্লেষকরা জানান, প্রতিনিধি দলটি এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, নির্বাচনে তারা ভারতকে ইস্যু বানাবেন না।

প্রতিষ্ঠানটির বিশিষ্ট ফেলো মনোজ যশি সাউথ এশিয়া মনিটরকে বলেছেন, ‘প্রকৃত অর্থেই বিএনপির পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। কারণ তাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতারা যখন বুঝছেন যে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিপদের মুখে, বিশেষ করে আওয়ামী লীগ যখন বিএনপিকে হিসাবের বাইরে রাখছে তখন এ ধরনের অবস্থান পরিবর্তনের উদ্যোগ নিচ্ছে।’

যশি বলছেন, ‘বিএনপি নেতারা স্বীকার করেছেন যে, জামায়াত আর কোনো নির্বাচনী ইস্যু নয়।’

তিনি বলেন, প্রতিনিধি দলটির প্রচেষ্টা ছিল বিএনপির রাজনীতি সম্পর্কে ভারতের যে সন্দেহ আছে সেটা দূর করা। কিন্তু বাংলাদেশের জন্য বিকল্প অর্থনৈতিক এজেন্ডা শেয়ার করে সেটার সামান্যই করেছেন তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় গোয়েন্দা বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন, বিএনপি যে ভারতবিরোধী অবস্থান থেকে সরে যাচ্ছে সেটার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণও দেবে দলটি।

অন্যদিকে, ভারতও বিএনপির জন্য দরজা খোলা রেখেছে। এমন খবরও রয়েছে যে, বিএনপি নেতৃত্বের একটি অংশ গত কয়েক মাসে ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগও করেছেন। যার মাধ্যমে এটা স্পষ্ট যে, ভারত একক কোনো দলের জন্য বসে থাকবে না, বিশেষ করে যখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে ভারতের প্রভাব ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে আরো বৈঠক হবে- এমন নিশ্চয়তা দিয়েই বিএনপি নেতারা ঢাকায় গেছেন।

নন্দী বলেন, ‘আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাকে ফোনে বলেন, নির্বাচন একদিন হবে সেটা ঠিক আছে।’ কিন্তু নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি (খসরু) উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং    এটাকে ‘আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রজেক্ট’ হিসেবেও মন্তব্য করেন। সেইসঙ্গে চৌধুরী সতর্কতা উচ্চারণ করে বলেন, ভারতের অবশ্যই এটা উচিত হবে না যে, ‘একই ঝুড়িতে সব ডিম রাখা’, বিশেষ করে যখন শেখ হাসিনার সরকার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের ‘জোরপূর্বক অন্তর্ধান’ এবং নিয়মিত ভিত্তিতে মামলা দেওয়া ও গ্রেফতারের আশ্রয় নিচ্ছে।