যেভাবে বাড়ছে কাশ্মীরের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ।।

June 15, 2018 9:18 pm0 commentsViews: 9
যেভাবে বাড়ছে কাশ্মীরের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব

স্থলপথে সরাসরি মধ্য এশিয়ায় প্রবেশ করতে পারলে ভারতের ‘স্বপ্ন সত্যি’ হবে। তবে এই রুটটি অবশ্যই কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, যে অংশ পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং বর্তমানে চীনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন তথা আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরে সরাসরি প্রবেশের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। কাশ্মীরের অবস্থান চীন ও ভারত উভয়ের জন্য ভৌগোলিকভাবে হট কেকে পরিণত হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

মধ্য এশিয়ায় প্রবেশের ভৌগোলিক সেতু কাশ্মীর 

কাশ্মীরের- যা বর্তমানে পরমাণু অস্ত্র সমৃদ্ধ তিন প্রতিবেশী তথা চীন, পাকিস্তান ও ভারতের নিয়ন্ত্রণে- গুরুত্ব তার ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই, বিশেষ করে যখন এর সাথে রয়েছে আফগানিস্তানের সীমান্ত, যে দেশটিতে (আফগানিস্তান) মিলিত হয়েছে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া। ইউরোপ ও এশিয়ার অন্যান্য অংশের মধ্যে একটি ভৌগোলিক সেতু হলো মধ্য এশিয়া। এ ছাড়া বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) এবং চায়না-পাকিস্তান ইকনোমিক করিডোরের (সিপিইসি) ক্ষেত্রেও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

ইউরোপ ও অন্যত্র সংযোগ স্থাপন ছাড়াও কাশ্মীরের বড় সুবিধা হল- এর মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশ। আর মধ্য এশিয়া হল জ্বালানির আধার। যেখানে রয়েছে তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, অ-লৌহঘটিত ধাতু, স্বর্ণ, ইউরেনিয়াম এবং জলবিদ্যুতের পর্যাপ্ত উৎস, যার জন্য ব্যাকুল চীন ও ভারত।

তাছাড়াও ভূমিবেষ্টিত এই অঞ্চলের বৃহৎ ভোক্তা বাজার সবার জন্য উন্মুক্ত। যেখানে প্রায় সাত কোটি লোকের বাস। এ ছাড়া আফগানিস্তান হয়ে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশে কাশ্মীরের যে সহজতা- সে কারণেও এর গুরুত্ব অধিক।

সিপিইসির ক্ষেত্রে কাশ্মীরের গুরুত্ব

স্থলপথে সরাসরি চীন ও মধ্য এশিয়ায় প্রবেশে সিপিইসির অধীনে অবকাঠামো নির্মাণ করতে চায় পাকিস্তান। তাছাড়া পাকিস্তান তার ভৌগোলিক অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে আফগানিস্তানের প্রবেশ পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এবং তারপর সিপিইসি করিডোরের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশের সুবিধা নিতে চায়। আর এই সিপিইসি করিডোরের অংশ রয়েছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মধ্যে।

অন্যদিকে, এই করিডোর ব্যবহার করে আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরে নিজের প্রবেশ সুরক্ষিত করতে চায় চীন। অর্থাৎ বেইজিং তার বাণিজ্য, জ্বালানি ও সামরিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় এই করিডোরের মাধ্যমে, যেটা এখন করতে গেলে প্রতিপক্ষ নৌবাহিনীর বাধার সম্মুখীন হতে হয়। অধিকন্তু আরব সাগর ও ভারত মহাসাগরে বেইজিংয়ের প্রবেশের অর্থ হলো-ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিম জলরাশিতে অবস্থান করবে চীনা নৌবাহিনী।

ভারত ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময়ে সিপিইসি প্রজেক্টের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীনে ভারতীয় দূত গৌতম বাম্বালে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সিপিইসি করিডোর ‘আঞ্চলিক অখণ্ডতার লঙ্ঘন’। ভারত মনে করে, সিপিইসি প্রজেক্ট ভারতের সার্বভৌমত্বকে উপেক্ষা করে। কারণ এই প্রজেক্ট গেছে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে। অথচ পুরো কাশ্মীরের মালিকানা দাবি করে ভারত। এ ছাড়া উপরে উল্লিখিত চীনা নৌবাহিনীর উপস্থিতি এবং পাকিস্তানের গোয়াদর সমুদ্রবন্দরে চীনা নৌঘাঁটি নিয়েও ভারতের ভয় রয়েছে। আর এসবই হচ্ছে সিপিইসি করিডোরের সৌজন্যে।

ভারতের সম্ভাব্য প্রবেশপথ কাশ্মীর

ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর (আইএনএসটিসি) শীর্ষক প্রজেক্টের মাধ্যমে ভারত আঞ্চলিক করিডোর নির্মাণে কয়েকটি দেশের সঙ্গে কাজ করছে। এর উদ্দেশ্য হলো- আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া, রাশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে বাণিজ্যিক রুট তৈরি করা। তবে এই প্রজেক্টের কিছু সমস্যাও আছে।

কারণ চীন ও পাকিস্তানের মত ভারত তার আইএনএসটিসির মাধ্যমে সরাসরি স্থলপথ দিয়ে কাঙ্খিত অঞ্চলে পৌঁছতে পারছে না। বরং এর পরিবর্তে ভারতের মালবাহী যানকে আরব সাগর পাড়ি দিয়ে ইরানের বন্দরে পৌঁছতে হবে এবং সেখান থেকে স্থলপথে কাঙ্খিত গন্তব্যে যেতে হবে।

ইরানের বন্দরে (বিশেষত চাবাহার বন্দর) ভারতীয় জাহাজ পৌঁছার পর পার্বত্য প্রতিকূল স্থলপথ দিয়ে মালামাল ট্রাক বা লরিতে করে নির্ধারিত গন্তব্যে নিয়ে যেতে হবে। যা খুবই সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। আর এ কারণে অবশ্যই ভারতকে বিকল্প বিবেচনা করতে হবে।

অন্যকোনো বাধা না থাকলে ভারত সরাসরি স্থলপথে আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া, রাশিয়া ও ইউরোপে প্রবেশ করতে পারে, তবে সে রুটটি হতে হবে কাশ্মীরের ভেতর দিয়ে, আর কাশ্মীরের সেই অংশের নিয়ন্ত্রণ নেই ভারতের।

পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর আফগানিস্তান ও ভারত শাসিত কাশ্মীরের মধ্যে অবস্থিত। সুতরাং ভারতকে  প্রথমে আফগানিস্তান এবং তারপর মধ্য এশিয়া, রাশিয়া ও ইউরোপে সরাসরি স্থলপথে প্রবেশ করতে হলে অবশ্যই পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সূত্রঃ পরিবর্তন

[জিওপলিটিক্যাল মনিটর ডটকম থেকে ভাষান্তর]

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com