দাজ্জালের আবির্ভাব ও পানি নিয়ে যুদ্ধ।

May 7, 2018 10:43 pm0 commentsViews: 159

নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।

তারিখঃ ৭ মে ২০১৮।

আগে মানুষ বুঝতে সক্ষম না হলেও এখন বর্তমান বিশ্বের মানুষ নিশ্চয়ই বুঝতে সক্ষম যে, দাজ্জাল পানি নিয়ে যুদ্ধ কেন করবে। এর পূর্বে  মনে করা হত, পানি তো সব জায়গায় পাওয়া যায়। এ নিয়ে যুদ্ধ প্রয়োজন পড়বে কেন।   বর্তমান পৃথিবীতে পানির বাস্তবতা বুঝতে হলে যে বিষয়টি আলোচনায় আনতে হয়, তা হল, পৃথিবীতে সুপেয় পানির দুটি বড় ভাণ্ডার আছে। একটি হল তুষারময় পর্বত। এ ভাণ্ডারের পানির পরিমাণ ২৮ মিলিয়ন কিউবেক কিলোলিটার। দ্বিতীয়টি পাতাল। এ ভাণ্ডারটির পানির পরিমাণ ৮ মিলিয়ন কিউবেক কিলোলিটার।
এভাবে পৃথিবীতে বিদ্যমান পানযোগ্য পানির বড় পরিমাণটি হল বরফ, যা গলে পৃথিবীর বিভিন্ন নদীর মাধ্যমে মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। পক্ষান্তরে ভূগর্ভস্থ পানি তার তুলনায় কম। বরফের এই মজুদ এন্টার্কটিকা ও গ্রিনল্যান্ডে বেশি। আর এই দুই স্থানের উপর কোন মুসলিম রাষ্ট্রের কোন অধিকার নেই। বাকি থাকল ভূগর্ভস্থ পানির মজুদ। এক্ষেত্রেও দু’ধরনের অঞ্চল থাকে। একটি সমতল অঞ্চল, আরেকটি পার্বত্যাঞ্চল। সমতল এলাকায় শহরাঞ্চলের পানির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত করা কঠিন কিছু নয়। কেননা, শহরাঞ্চলের পানির সমুদয় স্টক কোন না কোন জলাধার বা সরকারি পাম্প থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে আগত পানির উপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। সেজন্য শহুরে মানুষ পানির জন্য পুরোপুরিভাবে সেখানকার প্রশাসনের দায়ভার ও অনুগ্রহের উপর নির্ভরশীল।
দাজ্জালের ফেতনা গ্রামের তুলনায় শহর এলাকায় বেশি কঠোর হবে এবং শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ নাগরিক উক্ত ফেতনার শিকার হয়ে যাবে। তবে পল্লী অঞ্চলের পানির উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্যও দাজ্জালি শক্তিগুলো তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করবে।
ভবিষ্যতে পৃথিবীতে পানি নিয়ে যুদ্ধ হবে এমন গুজব আপনি শুনে থাকবেন। জর্ডান, ফিলিস্তিন, লেবানন ও সিরিয়ার সঙ্গে ইসরাইলের, ইরাকের সঙ্গে তুরস্কের, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পানি নিয়ে বিরোধ-বিবাদ জীবন-মৃত্যুর সমান মর্যাদা রাখে। ফারাক্কা ব্যারেজ তৈরি করে ভারত বাংলাদেশকে একটি মরণ ফাঁদে ফেলে রেখেছে। ‘৭০ পূর্ব সময় ভারত এ ব্যারেজটি উদ্বোধনের সাহস না পেলেও এখন শুধু এ দিয়েই নয়, তিস্তাসহ আরও বিভিন্ন নদনদীর পানিকে নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদশেকে মরুভূমিতে রুপান্তরে পরিণত করার অব্যাহত প্রয়াসে রয়েছে। সে অন্য কথা। যে কোন লেখা লিখতে গেলে নিজ দেশের কথা তো একটু এসেই যায়।
দাজ্জালি শক্তিগুলো যদি মুসলিম বিশ্বের উপর প্রবাহমান নদী সাগরগুলোর উপর ড্যাম তৈরি করে এবং সেই ড্যামগুলোর উপর তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তা হলে তারা নদীগুলোর প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে এ জগতটিকে মরুভূমিতে পরিণত করে দিতে পারবে। নদী যখন বন্ধ হয়ে যাবে, তখন ভূগর্ভস্থ পানি অনেক নিচে চলে যাবে। তারপর এমন একটি সময় আসবে, যখন মানুষের কাছে পানযোগ্য কোন পানি থাকবে না। ফলে মানুষ ফোঁটা ফোঁটা পানির মুখাপেক্ষী হয়ে পড়বে। এখন আমি সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিন এর পানির অবস্থা, ইরাক, মিসর, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পানি নিয়ে আরও একটু বিশদ আলোচনা করতে চাই।
সিরিয়া, জর্ডান ও ফিলিস্তিনঃ তাবরিয়া উপসাগর বর্তমান পূর্ব ইসরাইলে জর্ডান সীমান্তের সন্নিকটে অবস্থিত। এ সময়ও তাতে মিষ্টি পানি প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে তার দৈর্ঘ্য উত্তর থেকে দক্ষিণে ২৩ কিলোমিটার। উত্তর দিকে দৈর্ঘ্য-এর পরিমাণ বেশি, যার পরিমাণ ১৩ কিলোমিটার। এ উপসাগরের সর্বোচ্চ গভীরতা ১৫৭ ফুট। মোট ভূখণ্ডের পরিমাণ ১৫৬ কিলোমিটার। বর্তমানে তাতে নানা প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়।
বর্তমানে তাবরিয়া উপসাগর ইসরাইলের মিষ্টি পানির সবচেয়ে বড় মাধ্যম। আর এ সাগরের পানির প্রধান মাধ্যম হল জর্ডান নদী, যেটি গোলান পর্বতমালার (Golan Heights) ধারা জাবাল আশ শায়খ থেকে এসেছে। ইসরাইল এখন যে কাজটি করেছে, তা হল তারা আগে ভাগেই তাবরিয়া উপসাগরের গতি ঘুরিয়ে ইসরাইলের দিকে নিয়ে গেছে। এর দ্বারা তারা নিজেদের প্রয়োজন পূরণ করছে। অবশিষ্ট পানিগুলো তারা মরুভূমিতে নিয়ে ফেলছে, যাতে মুসলমানদেরকে পানি থেকে বঞ্চিত করা যায়। এর ফলে জর্ডানের ভূমি বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শুধু কী তাই, তাবরিয়া উপসাগরও শুকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দিয়েছে।
১৯৬৭ সালের যুদ্ধে ইসরাইল সিরিয়া থেকে গোলানের পর্বতমালাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল। জাবাল আশ শায়খ গোলানের পাহাড়ি ধারার সবচেয়ে উঁচু চূড়া, যেখান থেকে একদিকে বাইতুল মুকাদ্দাস এবং অপরদিকে দামেস্ক একেবারে তার নিচে পরিদৃশ্য হয়। তার উচ্চতা ৯২৩২ ফুট। বর্তমানে জাবাল আশ শায়খের উপর লেবানন, সিরিয়া ও ইসরাইলের কব্জা প্রতিষ্ঠিত। কিছু এলাকা জাতিসংঘের অসামরিক অঞ্চল। পানির দিক থেকে জাবাল আশ শায়খ মুক্ত অঞ্চল। এভাবে ভৌগলিক দিক থেকে এবং পানির বিবেচনায়ও এ পাহাড়ি ধারা উক্ত অঞ্চলের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তাছাড়া সেই হাদিসগুলোকেও সামনে রাখতে হবে, যেগুলোতে তাবরিয়া উপসাগর, বাইতুল মুকাদ্দাস ও আফীক ঘাঁটির উল্লেখ রয়েছে। সর্বোপরি একথাটিও মনে রাখতে হবে যে, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা যে মহাযুদ্ধের ধারণা লালন করে যে, মহাযুদ্ধ মেগড এর মাঠে অনুষ্ঠিত হবে, এই মাঠের অবস্থানও তাবরিয়া উপসাগরের কাছাকাছি পশ্চিমে। আফীক এর যে ঘাঁটিতে দাজ্জাল মুসলমানদের যে অবরোধটি করবে, তার অবস্থানও তাবরিয়া উপসাগরের দক্ষিণে।
ইরাকঃ ইরাকে দজলা ও ফোরাত নামে বড় দুটি নদী প্রবাহমান।  উভয়টি এসেছে তুরস্ক থেকে। তুরস্ক ফোরাত নদীর উপর ‘আতাতুর্ক ড্যাম’ তৈরি করেছে, যেটি পৃথিবীর বড় ড্যামগুলোর একটি, যার পানি ধারনণের স্থান ৮১৬ বর্গ কিলোমিটার। এ ভাণ্ডারটি  পূর্ণ হতে হলে ফোরাত নদীকে বর্ষা মৌসুমে এক মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণরূপে তাতেই ভরতে হবে। তার অর্থ হল, তুরস্ক তার প্রয়োজন মেটানোর জন্য ফোরাত নদীর পানি এক মাস পর্যন্ত ইরাক যেতে দেবে না। আর ইসলাম প্রশ্নে তুরস্কের আগের সরকারগুলোর অবস্থান সবারই জানা। শুধুমাত্র ব্যতিক্রম বর্তমান এরগোদান সরকার। আর তাকে সরানোর জন্য একটি বড় অভ্যূত্থানসহ ছোটবড় সব ধরনের চেষ্টা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে।
হযরত আবু জায়িরার এক বর্ণনায় ফোরাত নদীর তীরে দাজ্জালের যুদ্ধের কথা এসেছে। তিনি বলেনঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) এর নিকট দাজ্জালের আলোচনা উত্থাপিত হলে তিনি বললেন,“তার আবির্ভাবের সময় মানুষ তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়বে। একদল তার অনুগামী হয়ে যাবে। একদল অভিভাবকের ভূমিকা নিয়ে পরিজনের সাথে ঘরে বসে থাকবে। একদল এই ফোরাতের তীরে এসে শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে যাবে। দাজ্জাল তাদের সাথে যুদ্ধ করবে, আর তারা দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি তারা শামের (সিরিয়া,জর্ডান,লেবানন,প্যালেস্টাইন ও দখলকৃত প্যালেস্টাইন নিয়ে গঠিত বিস্তীর্ণ অঞ্চল) পশ্চিমাঞ্চলে লড়াই করবে। তারা একটি সেনা ইউনিট প্রেরণ করবে,যাদের মাঝে চিত্রা বা ডোরা বর্ণের ঘোড়া থাকবে। এরা ওখানে যুদ্ধ করবে। ফল এই দাঁড়াবে যে, এদের একজনও ফিরে আসবে না।” (মুসতাদরাকে হাকেম,খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ৬৪১)
.
মিশরঃ মিশরের সবচেয়ে বড় নদীটি হল নীলনদ। কিন্তু এটিরও উৎপত্তি আফ্রিকার উগান্ডা সেন্ট্রালের ভিক্টোরিয়া ঝিল। নীল নদের পানির সবচেয়ে বড় মাধ্যম হল রুয়ান্ডা নদী। ২০১১ সালে ইথিউপিয়া সরকার ৪.৮ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে “গ্র্যান্ড ইথিওপিয়ান রেজিস্টেন্স ড্যাম” নামে ইথিওপিয়ার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান নীল নদের উপর ড্যাম নির্মাণ শুরু করে, যার নির্মাণ কাজ শেষ হবার কথা ২০১৭ সালে।
শুরু থেকেই মিসরের সরকার অতি নির্ভরশীল নীল নদের উপর এই ড্যাম নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। সর্বশেষ ৩রা জুন ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট মুরসি প্রয়োজনে এই ড্যাম ধ্বংস করার জন্য যুদ্ধ করার ঘোষণা দেন এবং এর কয়েক সপ্তাহ পরেই ক্ষমতাচ্যুত হন।

এখন আমি মহাযুদ্ধের পূর্বে ক্ষয়ক্ষতি বা ধ্বংসের ব্যাপারে কিছু হাদিসকে খুব সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করব। শহর-নগরীর ধ্বংস বা ক্ষয়ক্ষতি যে সব হাদিস বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতে ‘খারাবুন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এই শব্দটি পুরোপুরি হোক বা আংশিক সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা ধবংসের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়।
হযরত মাছজুর ইবনে গায়লান হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সামিত (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, “সবার আগে ধ্বংস হওয়া ভূখণ্ড হল বসরা (বর্তমান ইরাকে) ও মিশর”। বর্ণনাকারী জিজ্ঞেস করলেন, ‘কি কারণে তাদের ধ্বংস নেমে আসবে; ওখানে তো অনেক বড় সম্মানিত ও বিত্তবান ব্যক্তিরা আছেন?’ উত্তরে আবদুল্লাহ ইবনে সামিত (রাঃ) বললেন, “রক্তপাত, গণহত্যা ও অত্যাধিক ক্ষুধা। আর মিসরের সমস্যা হল নীলনদ শুকিয়ে যাবে আর এটিই মিসরের ধবংসের কারণ হবে”। (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৯০৭)
যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক দখলের পর থেকে আজ পর্যন্ত সেখানকার রক্তপাত, গণহত্যা ও অত্যাধিক ক্ষুধা সম্পর্কে প্রায় সব চৌকস ঈমানদারগণই ওয়াকিবহাল। আর জুলাই ২০১৩ তে মুরসির ক্ষমতাচ্যুতির পর মিসরের রক্তপাত ও গণহত্যা সম্পর্কেও প্রায় সব চৌকস ঈমানদারগণই ওয়াকিবহাল। এখন অপেক্ষা নীলনদের করুন দশার।
হযরত ওহব ইবনে মুনব্বিহ সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি বলেছেন, “মিশর ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত জাজিরাতুল আরব (বর্তমান সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও ইয়েমেন) নিরাপদ থাকবে। কুফা (বর্তমান ইরাকে) ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত মহাযুদ্ধ সংঘটিত হবে না। মহাযুদ্ধ সংগঠিত হয়ে গেলে বনু হাশিমের এক ব্যক্তির হাতে কুস্তুন্তুনিয়া (বর্তমান ইস্তাম্বুল) জয় হবে।” (আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ৮৮৫)
এখানেও মহাযুদ্ধের পূর্বে সর্বপ্রথম মিশর ও ইরাকের ধ্বংস বা ক্ষতির কথা বলা হয়েছে এবং এই ভূখণ্ডগুলোর (ইরাক ও মিশর) ধ্বংস বা ক্ষতির আগ পর্যন্ত জাজিরাতুল আরব (বর্তমান সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান ও ইয়েমেন) এর নিরাপদে থাকার কথা বলা হয়েছে। আর এই জাজিরাতুল আরবেই মুসলিম বিশ্বের দুই প্রাণ প্রিয় নগরী মক্কা ও মদিনা অবস্থিত।
হযরত মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত,আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “বাইতুল মাকদিসের আবাদ হওয়া মদিনার ক্ষতির কারণ হবে। মদিনার ক্ষতি মহাযুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে। মহাযুদ্ধ কুস্তুন্তুনিয়ার (ইস্তাম্বুলের) বিজয়ের কারণ হবে। কুন্তুনিয়ার বিজয় দাজ্জালের আবির্ভাবের কারণ হবে।” মদিনার গুরুত্ব কমে যেতে সে লক্ষণ ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে। জেরুজালেম ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক  স্বীকৃতি এবং এ নিয়ে সৌদি আরবসহ কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্রের নমনীয় মনোভাব এবং সর্বোপরি সৌদি ও ইসরাইলের সম্পর্ক সে রকম ইঙ্গিতই দিচ্ছে।
বর্ণনাকারী বলেন,তারপর আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদিসের বর্ণনাকারীর (অর্থাৎ – স্বয়ং তাঁর) উরুতে কিংবা কাঁধের উপর চাপড় মেরে বললেন, “তোমার এই মুহূর্তে এখানে উপবিষ্ট থাকার বিষয়টি যেমন সত্য, আমার এই বিবরণও তেমনই বাস্তব।” (সুনানে আবী দাউদ,খণ্ড ৪,পৃষ্ঠা ১১০; মুসনাদে আহমাদ,খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৪৫;
মুসনাদে আহমাদ,খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা ২৪৫;মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা)
‘বাইতুল মুকাদ্দাসের আবাদ হওয়া’ দ্বারা উদ্দেশ্য ওখানে ইহুদীদের শক্তি প্রতিষ্ঠা হওয়া (ইসরাইল রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সেই ঘটনাটি ঘটে গেছে)। এখন ইহুদীদের নাপাক দৃষ্টি পবিত্র মদিনার উপর নিবদ্ধ। প্রকৃত ঈমানদারগণ ইহুদীদের এই ষড়যন্ত্র বুঝে ফেলেছে। এভাবে তখন থেকে শুরু হওয়া কুফর ও ইসলামের লড়াই এখন দ্রুতগতিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তমূলক পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানঃ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বেশির ভাগ নদী এসেছে ভারত থেকে। ভারত সেগুলোর উপর ড্যাম তৈরি করছে। ভারতে নির্মিত ফারাক্কা ড্যাম এর কারণে বাংলাদেশের উপর প্রভাব সম্পর্কে আর নতুন করে লিখার কিছু নেই। আর বাংলাদেশের সাথে তিস্তার পানি চুক্তি নিয়ে দাদা ও দিদি’র চলমান নাটক সম্পর্কেও সবাই ওয়াকিবহাল।
চন্নাব নদীর উপর বাগলিহার ড্যাম নির্মাণ এবং নিলাম নদীর উপর কাসনগঙ্গা ড্যাম নির্মাণের মাধ্যমে ভারত পাকিস্তানের পানির গতিরোধ করে ভূখণ্ডটির পানির উপর নিয়ন্ত্রণের প্রয়াস সম্পন্ন করেছে।
২৯ শে ডিসেম্বর ২০১৩ সালে বাংলাদেশের ‘আমাদের সময়’ নামে একটি দৈনিকে “পানি নিয়ে সংঘাতে জড়াবে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশ” নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে প্রতিবেদনটি নিম্নরূপঃ
“সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ কিংবা ভিন্ন কোন সমস্যা নয়, পানির সংকটই দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সমস্যায় পরিণত হতে যাচ্ছে। এই অঞ্চলের বাংলাদেশ ও পাকিস্তান প্রায় সমানভাবেই পানির সংকটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে পানির অধিকার থেকে একইভাবে বঞ্চিত করে আসছে ভারত।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৫ সালের মধ্যেই পাকিস্তান পানির সংকটে পড়বে। এছাড়া ২০৫০ সালের মধ্যে দেশটি পানির অভাবগ্রস্ত দেশে পরিণত হবে। একইভাবে, বাংলাদেশেও ভূ-নিম্নস্থ পানির মজুদ কমছে। ভারত-বাংলাদেশের অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন সুষম না হওয়া, বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোর স্বাভাবিক প্রবাহ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে অনেক আগেই। ফলে, বাংলাদেশও পানির তীব্র সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের পানির সহজলভ্যতা প্রায় ৩০ ভাগ কমে যাবে। আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানি অবৈধভাবে দখলে রাখা ভারতেও পানির সংকট সৃষ্টি হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটিতে বর্তমান সময়ের তুলনায় পানির সহজলভ্যতা ২৮ ভাগ কমে যাবে। এ কারণে, পানির অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত ও ভারত-পাকিস্তান সংকট আরও ঘনীভূত হবে।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের কোটি কোটি মানুষের পানির অধিকার পদদলিত করে ভারত আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানি নিয়ন্ত্রণে একাধিপত্য বজায় রাখছে। পাকিস্তানের সাথে অভিন্ন নদীগুলো থেকে অধিক পরিমাণ পানি ব্যবহার ছাড়াও পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণেও চালকের ভূমিকা পালন করছে ভারত। একই দৃশ্য বিদ্যমান বাংলাদেশের সাথে ভারতের অভিন্ন নদীগুলোর প্রবাহের ক্ষেত্রেও। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষর হওয়া চুক্তির মাধ্যমে ভারত বিয়াস, রাভী ও সুলেজ নদীর ওপর কর্তৃত্ব পায়। অপরদিকে পাকিস্তান সিন্ধু, চেনাব ও ঝেলুম নদীর কর্তৃত্ব পায়। কিন্তু সবগুলো নদীর উৎপত্তিস্থল ভারতে হওয়ায় তারা পানি প্রবাহের প্রায় পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করে। এ কারণে, পাকিস্তান সব সময়ই পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাকিস্তান বারবার আন্তর্জাতিক সংস্থা ও কূটনীতিক সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করলেও তারা নিজেদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।
একইভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪ টি অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন নিয়েও রয়েছে সমস্যা। পাকিস্তানের মতোই বাংলাদেশের নদীগুলোতেও পানি প্রবাহে ভারতের অবৈধ নিয়ন্ত্রণের কারণে পানির সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অনেকগুলো অভিন্ন নদী মৃত বা অর্ধ মৃত অবস্থায় আছে।
পানির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ উভয় দেশের অর্থনীতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উভয় দেশেরই কৃষি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে প্রতি নিয়ত। ফলে, সামাজিক স্থিতিশীলতা চরম হুমকির মুখোমুখি হচ্ছে। এ কারণেই আশংকা করা হচ্ছে, পানির সংকট ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক লড়াই ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার সবচেয়ে বড় কারণে পরিণত হবে।”

এছাড়া দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের মুজাহিদদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
হযরত নাহীক ইবনে সারীম (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তি পূজারীদের) সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে। ” (আল ইসাবা,খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা ৪৭৬)
এখানে মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী জাতি। তার মানে এটি সেই যুদ্ধ – “গাজওয়াতুল হিন্দ”, যেখানে মুজাহিদরা এই উপমহাদেশে আক্রমণ চালাবে,আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন,ক্ষমা করে দেবেন, বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা জেরুজালেমে ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা (আঃ) সাক্ষাত পাবে এবং ঈসা (আঃ) নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে। (সুনানে নাসায়ী-খণ্ড ৬,পৃষ্ঠা ৪২; আল ফিতান-খণ্ড ১,পৃষ্ঠা ৪০৯ ও ৪১০)

স্বল্প পরিসরে এরকম বিষয়ের ওপর আলোচনা পাঠকদের পুরো পরিতৃপ্তি দেবে না, আমি জানি। তবে কেয়ামতের আলামত এবং  ইমাম আল মাহদী, ইসা (আ) ও দাজ্জালের আবির্ভাব সম্পর্কিত ইসলামিক স্কলারদের বয়ানগুলো শুনলে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন।  বিশেষ করে মুফতী কাজী ইব্রাহিম এ বিষয়ের ওপর অনেক স্টাডি ও গবেষণা করেন। তাঁর বয়ানগুলো ইউটিউব থেকে শুনুন।

[লেখকঃ ড. ওমর ফারুক, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সামাজিক গবেষক, লেখক, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, নিহাল পাবলিকেশনের স্বত্বাধিকারী, ডেইলি ঢাকা পোস্ট ডট কম এর চিফ এডিটর ও ইংরেজি সাপ্তাহিক ঢাকা পোস্ট সম্পাদক। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর লেখা গ্রন্থ সংখ্যাঃ ত্রিশটির বেশি।]

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com