ফেরাউন ও মুসাঃ এ যুগের ফেরাউনরাও হয়ত গ্লিাসারিন মেখেও কাঁদার সুুযোগ পাবে না। 

May 3, 2018 8:53 pm0 commentsViews: 116

এখন ফেরাউন আছে। কিছু মুসা সদৃশ কোন মনিষী নেই। মহাপ্লাবনের পর বহুকাল অতিবাহিত হয়েছে। নূহের বংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বংশে একজন পরম ধার্মিক লোক জন্মগ্রহণ করলেন, তাঁর নাম ইসরাইল। তিনি যে দেশে বাস করতেন, তার নাম কেনান। মিশরের বাদশাহ ফেরাউন তাঁকে মিশরে এসে বাস করার আমন্ত্রণ করেন। ক

তিনি ইসরাইলকে যথেষ্ঠ প্রীতির চক্ষে দেখতেন। ফেরাউন কালক্রমে পরলোক গমন করলে অপর একজন ফেরাউন সিংহাসনে উপবেশন করলেন। মূলতঃ ফেরাউন কোন লোকের নাম নয়। মিশরের বাদশাহদিগকে ফেরাউন বলা হত। পরের এই ফেরাউন অত্যাচারী ছিলেন। তিনি পূর্ববর্তী ফেরাউনের একজন উজীর ছিলেন। প্রথমে তিনি খুব সৎ স্বভাবের লোক ছিলেন। নানা রকমে প্রজাদের উপকার করতেন।

কোন বৎসর অজন্মা হলে তিনি নানা রকম কৌশল করে প্রজাদের খাজনা মওকুফ করবার বা শোধ করবার ব্যবস্থা করতেন। যদি রাজ্যে কখনও দুর্ভিক্ষ দেখা দিত, তাহলে তিনি বাদশাহের ধনাগার থেকে কৌশলে অর্থ বের করে গরীব প্রজাদিগকে অনাহারের কবল থেকে রক্ষা করতেন। এজন্য প্রজারা তাঁকে খুব বেশি সম্মান ও ভক্তি করত। ফেরাউন গত হলে মিশর দেশের লোকেরা তাঁকেই তাদের বাদশাহ নিযুক্ত করলেন।

কিন্তু বাদশাহ হবার পর তার মনের অবস্থা যেন আমূল পরিবর্তিত হয়ে গেল। তিনি ইসরাইল ও তার বংশধরগণের ওপর অত্যাচার আরম্ভ করলেন। তিনি অনেক দেশ জয় করে তাঁর রাজ্য আরও বৃদ্ধি করলেন। চারদিক থেকে রাজস্ব ও উপঢৌকন এসে তার ধনাগার পূর্ণ হতে লাগল। সাধারণ ব্যক্তি সহসা বিত্তশালী হলে তার মনে অহঙ্কার জন্মে এবং তার নানা কু-পরামর্শতাদাও জোটে। সুতরাং ফেরাউনেরও এমন হিতৈষী বন্ধুর অভাব ঘটল না। হামান নামক একজন কূটবুদ্ধি উজীর তাঁকে দুনিয়ার বাদশাহ হবার স্বপ্ন দেখাতে লাগল। প্রজারা যাতে নীরেট মূর্খ হয়ে থাকে এবং তাকে খোদা বলে মান্য করে তার জন্য নানা যুক্তি-পরামর্শ দিতে লাগল।

মন্ত্রী হামানের পরামর্শ মত ফেরাউন সমগ্র রাজ্যের মাতব্বর প্রজাদের ডেকে একটা বড় সভা করলেন। সেই সভাতে তিনি তাদের বুঝিয়ে দিলেন যে, লেখাপড়া শিখে মিছামিছি সময় নষ্ট করবার আর প্রয়োজন নেই। কারণ, লোকের পরমায়ু অতি অল্পকাল। এই সঙ্কীর্ণ সময়ের মধ্যে জীবনের বেশির ভাগ দিনই যদি মক্তবে এবং পাঠশালায় গমনাগমন করে এবং পড়ার ভাবনা ভেবে ভেবে কাটিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে আমোদ আহলাদ এবং ফূর্তি করবার অবসর পাওয়া যাবে না। সুতরাং সারাজীবন ভরে আমোদ কর –মজা কর। তাহলে মরবার সময় মনে বিন্দুমাত্র অনুতাপ আসবে না।  এটা আজকালকার নাস্তিক ও সেকুলার ধর্মাবলম্বীদের সাথে মিলে যায়।

প্রজারা ফেরাউনের ও হামানের এ উপদেশ সানন্দে গ্রহণ করল এবং বংশধরদের কাউকে আর বিদ্যালয়ে প্রেরণ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিল। বাংলাদেশে আগমাী দিনগুলোতে আর বিদ্যালয়ে যাওয়া দরকার হবে না। বাড়িতে বসে থাকলেই শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র দিয়ে দেওয়া হবে। সেটির প্রক্রিয়া এখন চলছে।

অতঃপর হামান পাঠশালা ও মক্তব রাজ্য থেকে উঠিয়ে ঢাক পিটিয়ে দেশময় প্রচার করে দিল যে, কেউ আর লেখাপড়া শিখতে পারবে না। রাজার আদেশ অমান্য করলে সবংশে তার গর্দান যাবে।

প্রজারা ফেরাউনের আদেশ মত চলতে লাগল। লেখাপড়া আর কেউ শিখতে চেষ্টা করল না। সারাদেশে কিছুকালের মধ্যে একেবারে গণ্ডমুর্খতে পূর্ণ হয়ে গেল। মূর্খের অশেষ দোষ। কোন ধর্মাধর্ম, হিতাহিত জ্ঞান তার থাকে না। তারা হয় কাণ্ডজ্ঞানবিবর্জিত এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন। দুনিয়ার এমন কোন অসৎ কাজ নেই যা মূর্খে না করতে পারে! যখন তার রাজ্যের প্রজাদের এই অবস্থা ফেরাউন মনে মনে হাসতে লাগল। তার উদ্দেশ্য এতদিনে সিদ্ধ হয়েছে। তিনি প্রত্যেককে একটা করে নিজের প্রতিমূর্তি দিয়ে তাকে সৃষ্টিকর্তা এবং উপাস্য বলে পূজা করতে হুকুম দিলেন।

নিজের ঘরে বসে যদি খোদার উপাসনা করা যায় তবে কেউ কি মসজিদে দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াতে চায়? ফেরাউনের আদেশে সকলে সন্তুষ্ট হলো। এমন করে অনেক দিন কেটে যাওয়ার পর একদিন তিনি প্রজাদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তারা কাকে খোদা বলে মানে?

তারা বললঃ ফেরাউনের প্রতিমূর্তিকেই খোদা বলে মান্য করে। এখনও সে রকম একজনকে পূজা করার যত সব আয়োজন চলছে।

ফেরাউনের মিথ্যাচার ও ধাপ্পাবাজিঃ

কিছুদিন যায়। একবার অনাবৃষ্টির জন্য দেশে দারুণ অজন্মা হয়েছিলো। এমন কি নীল নদের পানি পর্যন্ত শুকিয়ে গিয়েছিল। প্রজারা সুযোগ মত বাদশাহকে বললঃ জাঁহাপনা, আপনি যদি খোদা হন, তবে আপনি খোদার মত ক্ষমতা আমাদের একবার দেখান। এবার বৃষ্টির অভাবে নীলনদ পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে এবং মাঠের সমস্ত ফসল পুড়ে গেছে। আপনি নীলনদ পানিতে পূর্ণ করে আমাদের ফসল রক্ষা করে দেবার ব্যবস্থা করে দিন।

এবার ফেরাউন বড় বিপদে পড়লেন! কিন্তু চতুরতার সঙ্গে তাদের আশ্বাস দিয়ে বললেনঃ এর আর এমন বেশি কথা কি! আগে এ সংবাদ আমায় জানাও নি কেন? আজ আমার অনেক কাজ-আজ সময় হবে না। আগামীকাল তোমাদের নীলনদ পানিতে ভর্তি করে দেব। তোমরা সেই পানি দিয়ে ফসল রক্ষা কর।

প্রজারা খুশি হয়ে বাড়ি চলে গেল।

প্রজারা বিদায় হলে ফেরাউন চিন্তা করতে লাগলেন, কি করা যায়! সারাদিন কেটে গেল –তারপর সন্ধ্যা হয়ে এল। গভীর রাত্রে একাকী ঘোড়ায় চড়ে রাজধানী থেকে বেরিয়ে পড়লেন। শহর থেকে ময়দান পার হয়ে গ্রাম, গ্রাম পার হয়ে এক ভীষণ জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করলেন। সেখানে ছিল এক মস্ত বড় কূপ। সে কূপের ধারে এসে ফেরাউন ঘোড়া থেকে নামলেন। তারপর এক গাছি দড়ি আপনার পায়ে বাঁধলেন, সে দড়ি একটা গাছের গোড়ায় শক্ত করে বেঁধে সেই কূপের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে পড়লেন। দোদুল্যমান অবস্থায় তিনি উচ্চঃস্বরে কেঁদে কেঁদে খোদার কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেনঃ হে দয়াময় প্রভু, তুমি অনেক পাপীর ইচ্ছা পূরণ করছ। এক্ষণে আমি বিপদগ্রস্ত। আমাকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করে মালিক। এবারের মত তুমি আমার মান বাঁচাও। তা’না হলে আমি রাত্রি প্রভাতে আর কারও কাছে মুখ দেখাতে পারব না। পরকালে তুমি আমাকে যে শাস্তি হয় দিও।

এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন, ওপর থেকে যেন বলছেনঃ ফেরাউন তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হবে। নীলনদ তোমার আদেশ মত চলবে।

এই দৈববাণী শুনে ফেরাউন আনন্দে অধীর হয়ে কূপ থেকে উঠে রাজধানীর দিকে ঘোড়া ছুটিয়ে দিলেন। রাত্রি প্রভাত হতে না হতেই প্রজারা প্রসাদের সমুখে এসে সমবেত হতে লাগল। ফেরাউন তাদের সঙ্গে নিয়ে নীলনদের কাছে এসে হাজির হলেনঃ চিৎকার করে বললেনঃ নীলনদ পানিতে পূর্ণ হয়ে থাক।

কথা শেষ হতে না হতে শুষ্ক নদীর তটভূমি জোয়ারের পানিতে ভরে উঠল। দিগন্ত বিস্তৃত শস্যক্ষেত্র পানিতে প্লাবিত হয়ে গেল।

প্রজারা ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ করলঃ জাঁহাপনা জমি জমা ডুবে গিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে যাবার মত হল। হুজুর, আমাদের জমির পানি একটু কমিয়ে দেবার ব্যবস্থা করুন।

ফেরাউন তাদের প্রার্থনা মত নীলনদকে আদেশ করলেন। পানি সরে গেল। প্রজারা খুশি হয়ে তাকে খোদা বলে বিশ্বাস করে নিল। এরা কিপতি শ্রেণীর লোক। কিন্তু বনি ইসরাইল নামে অপর এক শ্রেণির লোক ছিল, তারা তাকে কোনক্রমেই খোদা বলে স্বীকার করল না। কিন্তু ফেরাউন নানা অসম্ভব ও আশ্চর্য কাজ করে প্রজাদের মনে দিনে দিনে বিশ্বাস জন্মিয়ে দিতে লাগলেন যে, তিনিই প্রকৃত খোদা।

ফেরাউনের এক পোষ্যপুত্র ছিলেন, নাম মুসা। তিনি কখনও তাকে খোদা বলে স্বীকার করতেন না। মুসার জন্ম সম্বন্ধে একটা কাহিনী আছে। মিশরে ইসরাইলদের বংশ খুব বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছিল। ইসরাইলগণ ফেরাউনকে অবিশ্বাস এবং উপহাস করতেন এজন্য ফেরাউন এদের মোটেই পছন্দ করতেন না। তিনি নিয়ম করলেন যে, ইসরাইলদের পুত্র সন্তান হলেই তাকে নীল নদের পানিতে ফেলে দিতে হবে। এমনি ভাবে কত সন্তান যে বধ করা হল, তার সীমা সংখ্যা নেই।

একদিন ফেরাউনের স্ত্রী গোসল করতে এসে হঠাৎ দেখতে পেলেন নীল নদের ধারে নলবনের মধ্যে একটা সিন্ধুক ভেসে এসে আটকে রয়েছে। তিনি বুঝতে পারলেন, ছেলেটি ইসরাইলদের। শিশুটি দেখে তার অতিশয় মমতা হল। তিনি তাকে পালন করবেন ঠিক করলেন। একজ ধাত্রীও পাওয়া গেল। তার হাতে ছেলের ভার দেওয়া হল। ছেলেটির নাম রাখা হল মুসা।

সেই ধাত্রী অপর কেউ নন, তিনি মুসার গর্ভধারিনী। কালক্রমে ছেলেটি বড় হয়ে উঠলে তাকে ফেরাউনের স্ত্রীর নিকটে ফিরিয়ে দেওয়া হল। মুসা মিশরীদের সঙ্গে রইলেন বটে, কিন্তু সব সময় তাঁর মনে হত, তিনি যেন ইসরাইলী। একদিন মুসা দেখলেন, একজন মিশরীয় একজন ইসরাইলীকে বেদম প্রহার করছে। তিনি মিশরীয় লোকটিকে হত্যা করে বালিতে পুঁতে ফেললেন।

ফেরাউনের কাছে খবর গেল। তিনি মুসাকে হত্যা করার হুকুম দিলেন। মুসা তখন পালিয়ে মিদিয়ান দেশে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে এক কৃষকের কন্যাকে বিবাহ করলেন। তারপর মাঠে মেষ চড়িয়ে কাল কাটাতে লাগলেন।

অনেকদিন চলে যাবার পর একদিন মুসা তার জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা হারুণকে সঙ্গে নিয়ে ফেরাউনের দরবারে এসে হাজির হলেন। বললেনঃ আপনি যে নিজেকে খোদা বলে প্রচার করছেন, এ অত্যন্ত অন্যায়। সর্বশক্তিমান খোদা ছাড়া আর কেউ মানবের উপাস্য নেই। আমি খোদার প্রেরিত পয়গম্বর।

ফেরাউন তাঁকে তাচ্ছিল্য করে হেসে উড়িয়ে দিলেন। বললেন, কেমন করে বুঝবো যে, খোদা তোমাকে পাঠিয়েছেন? তুমি তার কোন প্রমাণ দিতে পার?

মুসা হাতের লাঠি মাটিতে ফেলে দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে সেই লাঠি ভয়ানক অজগর সাপে পরিণত হয়ে গেল। ফোঁস ফোঁস শব্দে সে যখন এগিয়ে যেতে লাগলো তখন তার মুখ হতে আগুনের হল্কা বের হতে লাগল। সেই আগুনে গাছপালা মানুষ পশু-পাখি পুড়ে ছাই হয়ে যেতে লাগল। ফেরাউন ছুটে গিয়ে মুসার হাত ধরে মিনতি করে বললেনঃ মুসা, খোদা নাকি তোমাকে লোকের মঙ্গল করবার জন্য পাঠিয়েছেন, আর তুমি তাদের ধ্বংস করবার চেষ্টা করছ একে নিবৃত্ত কর।

মুসা অজগরের গায়ে হাত দিতেই পুনরায় লাঠিতে পরিণত হল। তিনি তখন ফেরাউনকে বললেনঃ আশা করি আপনি এখন অহঙ্কার ত্যাগ করে ধর্মপথে আসবেন।

ফেরাউন বিবেচনা করে পরের দিন জবাব দেবেন বলে সেদিন মুসাকে যেতে বললেন।

মুসা চলে গেলেন।

ফেরাউন রঙমহলে ফিরে এসে কেমন করে মুসাকে জব্দ করা যায়, সে বিষয়ে উজীর-নাজীরদের সঙ্গে পরামর্শ করতে লাগলেন। উজীর হামান অতিশয় কুচক্রী এবং কুটবুদ্ধি সম্পন্ন ছিলেন। তিনি ফেরাউনকে বুঝিয়ে দিলেন, মুসা একজন প্রথম শ্রেণীর যাদুকর এবং অতিশয় ধাপ্পাবাজ ব্যক্তি। তাকে জব্দ করার একমাত্র কৌশল রাজ্যের যত বড়বড় যাদুকর আছে সকলকে তলব করে আনতে হবে। তাদের বিদ্যাবুদ্ধির কাছে হার মেনে মুসা এখান থেকে পালিয়ে গেলেই আমাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে।

সুতরাং হামানের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ আরম্ভ হল। রাজ্যের মধ্যে যেখানে যত ছোট-বড় যাদুকর ছিল, তাদের আনবার জন্য লোক পাঠানো হল। তারা যথাসময়ে রাজধানীতে এসে হাজির হল।

কার কত ক্ষমতা তা দেখবার দিন স্থির হল। ফেরাউনের আহবানে মুসাও এলেন। একজন যাদুকর মন্ত্র উচ্চারণ করতে লাগল, অমনি চারিদিক থেকে হাজার হাজার সাপ, বিছা, ভীমরুল সৃষ্টি হয়ে নানা রকম শব্দ করতে করতে মুসার দিকে ছুটে যেতে লাগল। অপর একজন মন্ত্র উচ্চারণ করতে আরম্ভ করল, অমনি শত শত সিংহ, ব্যাঘ্র চারিদিক থেকে ভীষণ গর্জন করে মুসার দিকে এগিয়ে গেল।

মুসা বিসমিল্লাহ বলে তার লাঠি মাটিতে রেখে দিতেই অমনি এক ভয়ানক অজগর ভয়ঙ্কর গর্জন করে উঠলো। চক্ষের পলকে সে যাদুকরদের সেই সিংহ, বাঘ, সাপ, বিছা, টপাটপ গিলে ফেলল। তারপর ধরল যাদুকরদের। তাদেরও গলাধকরণ করে ফেরাউনের দিকে এগিয়ে গেল। ফেরাউন সেখান থেকে ছুটে রঙমহলে পালিয়ে প্রাসাদের সদর দরজা বন্ধ করে দিলেন।

এই ঘটনার পর কিছুদিন কেটে গেল। হঠাৎ একদিন মুসা ফেরাউনের দরবারে এসে পুনরায় তাকে ধর্মকথা শোনাতে লাগলেন এবং ধর্মপথে চলবার জন্য উপদেশ দিতে লাগলেন। কিন্তু ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী’।

আল্লাহতা’লা একদা স্বপ্নে মুসাকে বনি-ইসরাইলদিগকে পাপের ভূমি, অধর্মের রাজত্ব মিশর থেকে তাদের পিতৃভূমি কেনান দেশে ফিরে যাবার জন্য আদেশ দিলেন। সেই হুকুম অনুসারে মুসা ফেরাউনের কাছে ইসরা্লদের কেনান দেশে যাবার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু ফেরাউন কিছুতেই এ প্রস্তাবে সম্মত হয়ে তাদের মিশর ত্যাগ করতে দিলেন না, বরং তাদের প্রতি অত্যাচার করতে লাগলেন।

ইসরাইলদিগকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে উদ্ধার করাবর কোন উপায় না পেয়ে মুসা খোদার নিকটে প্রার্থনা করতে লাগলেন। খোদা তখন তাকে মিশরীয়দের উপর অত্যাচার করবার হুকুম দিলেন। মূসা ও তার ভ্রাতা হারুন মিশরীয়দের উপর নতুন নতুন উৎপাত আরম্ভ করলেন। মুসা নদীতে লাঠির আঘাত করলেন। দেখতে দেখতে পানি রক্ত হয়ে গেলো। নদীর সমস্ত মাছ মরে গেল, তারপর পঁচে দুর্গন্ধ বের হতে লাগল। এতটুকু পানি পান করাবর কিছুমাত্র উপায় রইল না। ইসরাইলদের মিশর ত্যাগের অনুমতি প্রদানের জন্য মুসা পুনরায় ফেরাউনকে অনুরোধ করলেন। ফেরাউন বললেনঃ নদীর পানি শুধরে দাও, আমি সে বিষয়ে বিবেচনা করব।

মুসা তাঁর অনুরোধ রক্ষা করলেন। কিন্তু মুসাকে কয়েকদিন ঘুরিয়ে ফেরাউন তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন না। মুসা ক্ষুব্দ হয়ে পানির দিকে লাঠি ছুঁড়ে দিলেন। অমনি দলে দলে ব্যাঙ মিশর ভূমি ছেয়ে ফেলল। ফেরাউন মুসাকে ব্যাঙের হাত থেকে রক্ষার করবার জন্য অনুরোধ জানালেন, মুসা এবারও রক্ষা করলেন।

ব্যাঙের কবল থেকে উদ্ধার পেয়ে ফেরাউন প্রতিশ্রুতি ভুলে গেলেন। মুসাও পুনরায় তাদের প্রতি অত্যাচার আরম্ভ করলেন। উঁকুনের উৎপাত শুরু হল; তারপর মাছির উৎপাত, পমুর মড়ক-একের পর এক আসতে লাগল। এমন কি সকলের ভীষণ ফোঁড়া হল। দেশে শিলাবৃষ্টি হয়ে গেল। পঙ্গপাল এসে সব ফসল নষ্ট করে দিল।

তারপর একবার তিনদিন-চারদিন এমন অন্ধকার হয়ে থাকল যে, কোনদিকে কারও নজর করবার উপায় রইল না।

মুসা আবার ফেরাউনকে অনুরোধ করলেন যে, এখনও ইসরাইলিদিগকে মিশর ছেড়ে যেতে অনুমতি দেওয়া হোক। যদি তাদের ছেড়ে যেতে দেওয়া না হয়, তাহলে মিশরীয়দের ওপর যে ভীষণ অত্যাচার হবে তার তুলনায় বর্তমানের অত্যাচার অতি নগণ্য। ফেরাউনকে বারবার সতর্ক করে দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর কথায় ফেরাউন একেবারে কর্ণপাত করলেন না।

ইসরাইলদিগকে উদ্ধার করবার জন্য খোদা অসন্তুষ্ট হয় মিশরীয়দের প্রত্যেক বাড়ির বড় ছেলে ও বড় পশুকে মেরে ফেললেন। এবার ফেরাউনের বড় ভয় হল। তিনি ইসরাইলদের চলে যাবার হুকুম দিলেন।

ইসরাইলরা অনুমতি পেয়ে দল বেঁধে রওয়ানা হলেন। মুসা ও হারুন আগে চললেন। ইসরাইলদের চলে যেতে দেখে হামান প্রভৃতি উজীরগণ ফেরাউনকে কুপরামর্শ দিতে লাগল, রাস্তাঘাট পরিস্কার, নালা-নর্দমা প্রভৃতি সাফ করা, রাজ্যের অনেক ছোটবড় কাজ যা তাদের দিয়ে জোর-জবরদস্তি করে করিয়ে নেওয়া হচ্ছিল, তারা যদি চলে যায়, তাহলে এসব কাজ কারা করবে? সুতরাং তারা যাতে মিশর ছেড়ে যেতে না পারে তার ব্যবস্থা করবার জন্য ফেরাউনকে অনুরোধ করতে লাগল। ফেরাউন চিন্তা করে দেখলেন, ইসরাইলরা চলে গেলে সত্যই কাজকর্মের যথেষ্ট অসুবিধা হবে। তখন তিনি নিজে ও মিশরীয়রা তাদের ফিরিয়ে আনবার জন্য সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাদের পিছনে ধাওয়া করলেন।

ইসরাইলরা ততক্ষণে লোহিত সাগরের তীরে এসে পৌঁছে গেছেন। এমন সময় তাঁরা পেছনে চেয়ে দেখতে পেলেন, ফেরাউনের অগণিত সৈন্য তাঁদের ধরতে আসছে। পেছনে এ বিপদ-সম্মুখে বিশাল সাগর। ইসরাইলগণ কোথায় যাবেন, ঠিক করতে পারছিল না, ভয়ে তাঁরা কাঁপতে লাগল। এমন সময় আল্লাহতা’লা মুসাকে দৈববাণীতে আদেশ করলেনঃ মুসা, তোমার লাঠি দিয়ে সমুদ্রের ওপর আঘাত কর।

মুসা তাই করলেনঃ বিশাল সাগর দুই ভাগে দেয়ালের মত খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। সেই পথে দিয়ে হারুণ আগে চললেন, ইসরাইলরা নিরাপদে পিছু পিছু ওপারে চলে গেলেন। সমস্ত লোক পার হয়ে গেল, মুসা নিজেও।

তখনও সাগরের সেই রাস্তা তেমনি রয়ে গেল। ফেরাউন তাঁহার লোকজন এবং সৈন্যসামন্ত নিয়ে ওপারে এসে থামলেন। তিনি দেখলেন, সাগরের মধ্যে এক আশ্চর্য রাস্তা। আরও দেখলেন, সেই রাস্তা ধরে মুসা ও তাঁর লোকজনরা নিরাপদে পার হয়ে গেলেন। যখন তারা সাগরের মাঝামাঝি এসেছে, এমন সময় খোদার দৈববাণীতে মুসাকে বললেনঃ তাড়াতাড়ি সাগরের ওপরে তোমার লাঠি দিয়ে আবার আঘাত কর।

খোদার হুকুম মত যেই তিনি সাগরের পানিতে আগাত করলেন, অমনি দুই দিন থেকে পান খাড়া উঁচু দেয়াল ফেরাউন ও তার সৈন্যদের ওপর পড়ে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেল। মরবার সময় তারা কাঁদবার অবসরটুকু পর্যন্ত পেল না।

আজকালকার যুগের ফেরাউনরাও হয়ত গ্লিাসরিন মেখেও কাঁদার সুুযোগ পাবে না।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com