এটাই ছিল বুঝি কপালে!

May 1, 2018 11:23 pm0 commentsViews: 47
 শেষাবধি থালাটিও চুরি গেল।  যৌবন চলে গেল, সে নিয়ে আগেই বিভিন্ন লেখায় তসলিমার হা পিত্তেস কম যায় নি। যৌবন গিয়ে মধ্য বয়স পুরিয়ে এখন আস্তে আস্তে পড়ন্ত বেলায়। এতদিন যে সব পুরানো বন্ধুরা মছির মত ভনভন করে কি এক মোহ নিয়ে কাছে আসত, তারা এখন আর আসে না।  দেশ ছেড়ে ভিনদেশে বসবাস। বড্ড দুঃসময় এখন তসলিমার। যাযাবরের জীবনটি আর কোন মতেই ভাল লাগে না।

তসলিমা নাসরিনের জন্য সময়টা বেশ খারাপই যাচ্ছে। একের পর এক বিতর্কিত ঘটনার জন্য মামলা খাচ্ছেন। আবার এবার চুরি হল আনন্দ পুরষ্কার হিসেবে পাওয়া তসলিমার রুপার থালাটি।

একবার একটি অনলাইনে দেয়া সাক্ষাৎকারে  তসলিমা নাসরিন বলেছেন, ‘এক সময় আমি দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ি। বুড়ো, মাঝবয়সী ও প্রবীণ বন্ধুদের নিয়ে দেহজ খেলায় মেতে উঠি। ভোগ করি যৌনতা। কিন্তু এখন দেহজ খেলায় মত্ত থাকার বয়স নেই। সুখের পায়রারা আজ কেউ আমার পাশে নেই।’

মানুষ দেশের স্বাধীনতা চায়, মতামত স্বাধীন ভাবে উপস্থাপনের সুযোগ চায়। কিন্তু তসলিমা তা চেয়ে চাইল নারীর জরায়ুর স্বাধীনতা। আর সেই একই সাক্ষাতকারে তসলিমা স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বলেনঃ আমি প্রথমত নারীর জরায়ুর স্বাধীনতার দাবি তুলি। একজন পুরুষ যখন চাইবে, তখনই তার মনস্কামনা পূর্ণ করতে ছুটে যেতে হবে। এটা তো হতে পারে না। অথচ তখন ছুটে না গেলে জীবনের সব পূণ্য নাকি শেষ হয়ে যাবে। চিন্তার স্বাধীনতা না থাকলে ভাল লেখক হওয়া যায় না।
দেহের স্বাধীনতার বিষয়টা গৌণ। তবে একেবারে ফেলনা নয়। পুরুষই এক চেটিয়া মজা লুটবে, নারী শুধু ভোগবাদীদের কাছে পুতুলের মত হয়ে থাকবে, এটা মেনে নিতে পারি নি। এ ভাবেই বললেন তসলিমা।

আরও এক প্রশ্নের জবাবে জরায়ুর স্বাধীনতা পিয়াসী তসলিমা নাসরিন বলেন এভাবেঃ ’আমি একটা আলোড়ন সৃষ্টি করেছি। সত্য কথা সাহিত্যে অনেকের জন্য কষ্টদায়ক হয়। আমি আমার বহু স্বামী ও ভোগ্য পুরুষদের নামধাম প্রকাশ করে দেয়ায় অনেক বন্ধু আমাকে এড়িয়ে চলেন।
বাংলা সাহিত্যের অনেক দামি দামি পুরুষও চান না যে, আমি দেশে ফিরি। এক সময় আমার বিপক্ষে ছিল কট্টর মৌলবাদীরা। এখন প্রগতিশীল অনেক সাহিত্যিকও বিপক্ষে। কারণ এদের নষ্ট মুখোশ আমি খুলে দিয়েছি ‘

তসলিমা আরেক প্রশ্নের জবাবে বললেন, ’আমি নারীর অধিকার নিয়ে ভেবেছি। কিন্তু এখন মনে হয়, আমিই মানবিকভাবে আশ্রয়হীন। আর এ কারণেই আমি অন্য স্রোতে সুখ খুঁজেছি। পরিবার হারালাম, স্বামী-সন্তান হল না, ঘর-সংসার হল না। তখন দৈহিক সম্পর্কে নেশাগ্রস্ত না থেকে আর কোন পথ খোলা ছিল না।

নিজের একাকীত্ব ও হতাশার কথা বলতে গিয়ে তসলিমা বলেন, ‘অনেক কিছু আমি হারিয়েছি। আমার হারিয়ে যাওয়া জীবন, যৌবন, ভোগ-উপভোগ, স্বামী-সন্তান, পরিবার-পরিজন।  আজ আমি নিজ দেশের কাউকে দেখলে কুণ্ঠিত ও লজ্জিত হই। খ্যাতি, অর্থ, পুরস্কার সবই আছে, তবুও মনে হয় আমি ভীষণ পরাজিত। দিনে হইচই করে কাটাই, রাত হলে একাকীত্ব পেয়ে বসে। আগের মত পুরুষদের নিয়ে রাতকে উপভোগ করার মত শরীর-মন কোনটাই এখন আর নেই।

বর্তমান পুরুষ বন্ধু সংখ্যা সম্পর্কে তসলিমা বলেন, ‘এক সময় অনেক ব্যক্তিত্ববানদের পেছনে আমি ঘুরেছি। ব্যক্তিত্বহীনরা আমার পেছনে পেছনে ঘুরেছে। আজকাল আর সুখের পায়রাদের দেখি না। মনে হয় নিজেই নিজেকে নষ্ট করেছি। পরিচিত হয়েছি নষ্ট নারী, নষ্টা চরিত্রের মেয়ে হিসেবে। লেখালেখি করে তাই এসব পুরুষদের ওপর আমার রাগ, ঘৃণা ও অবহেলাকে প্রকাশ করেছি। যৌনতার রাণী হিসেবে প্রকাশিত হলাম, অথচ এই রাণীর কোন রাজাও নেই, প্রজাও নেই। এ জন্য আজ ভীষণ ভাবে হতাশায় নিমজ্জিত আমি।

‘এখন বিয়ে করে কী করব? পুরুষটিই বা আমার মধ্যে কী পাবে? সবই পড়ন্ত বেলায়। যে বিয়ে করবে, সে যদি আমার মধ্যে যৌন সুখ না চায়, সন্তান না চায়, এমন মানব পেলে হয়ত একজনকে সঙ্গী করার কথা ভাবতেও পারি। বিয়ে করার কোন স্বাদ জাগে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এমনই বললেন তসলিমা।

তসলিমা বললেন, ”আমি এখনও ফুরিয়ে গিয়েছি, তা বলাও ঠিক নয়। তবে পুরুষ তো শত বছরেও নারীকে সন্তান দেয়। মেয়েরা তো পারে না। আমার এখনও ঋতুস্রাব বন্ধ হয় নি। মেশিনারি ঠিক আছে। তবে নতুন বা আনকোরা তো নয়, লক্কড়ঝক্কড় মেশিনারির মত আরকি? পুরুষদেরও বয়স বাড়লে খাই খাই বেড়ে যায়। এতটা মেটানো তো আর এই বয়সে সম্ভব হবে না। কত বুড়ো, মাঝবয়সী ও প্রবীণ বন্ধুদের নিয়ে দেহজ খেলায় মেতেছি, এটা আমার জীবনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি ‍।”

রাত যখন বিশ্বকে গ্রাস করে, তখন আমার ঘুম আসে না। তখন বেশি করে কী মনে পড়ে আমার প্রথম প্রেম, প্রথম স্বামী, প্রয়াত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহকে। অনেক কাঁদি তার জন্য। পেয়েও হারালাম তাকে। রাগ হয়েছিল বিয়ের রাতেই। আমি তো ডাক্তার। তার পুরুষদদণ্ডে ক্ষত দেখি। বুঝতে পেরেছিলাম, যাকে জীবন দিয়ে ভালবাসি, সে বেশ্যাবাড়ি যায়। সিফিলিস-গনোরিয়ায় রোগে আক্রান্ত সে। তবু তাকে বলি, আজ বাসর রাতে যৌনকেলি হবে না। তোমার শরীরে রোগ। এখন আমার শরীরে তুমি ঢুকলে আমিও এ রোগে আক্রান্ত হব। তোমাকে সুস্থ করে তুলব, তারপর হবে আমাদের আনন্দ বাসর। কিন্তু পুরুষ তো জোর করতে চাইল, ব্যর্থ হয়ে চলে গেল পতিতার বুকেই।

অন্য স্বামীদের কথা তসলিমার মনে পড়ে না। তারা এমন উল্লেখযোগ্য কেউ নন বলে জানালেন তসলিমা। বলল-তাদের মুরোদ আমি দেখেছি। তার চেয়ে বহু বন্ধুর মধ্যে আমি দেখেছি, কেমন উন্মত্ত তেজ। ওদের  যৌনকেলির স্মৃতি মনে পড়ে মাঝে মধ্যে।
দেশে ফেরা নিয়ে তসলিমা বলল, আমি চাইলেও দেশই আমাকে ফিরতে দেবে না। আর কোথায় যাব? বাবা-মা-ভাইবোন সবাইকে আমি লেখাতে জবাই করে দিয়েছি। আসলে নেশাগ্রস্তই ছিলাম, অনেক কিছু বুঝি নি। আজ আত্মীয়স্বজনও আমাকে ঘৃণা করে। মরার পর লাশ নিয়ে চিন্তা থাকে।  ভাবছি, মরার পর লাশটি কোন পরীক্ষাগারে হয়ত ঝুলবে। শিক্ষার্থীদের কাজে লাগবে।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন এভাবেইঃ ”আনন্দ পুরস্কার দু’বার পেয়েছিলাম। ১৯৯২ সালে নির্বাচিত কলাম আর ২০০০ সালে আমার মেয়েবেলা বইয়ের জন্য। দু’বারের টাকা আর যে লোকই করুক, আমার ভোগ করা হয়নি। আর সোনার লেখাসহ দুটো রুপার থালা? চুরি হয়ে গেছে। আর ওই রুপার দুটো দণ্ডতে পেঁচানো তসরের কাপড়ে লেখা অসাধারণ সেই আনন্দ অভিনন্দন বার্তা? ওটির একটি আছে শুধু, আরেকটি নেই। কোথায়? চুরি হয়ে গেছে। কলকাতার আর দিল্লির বাসভবন থেকেই। ঘরের কাজে সাহায্য করার জন্য যত মেয়েকে রেখেছি, পোষা বেড়ালকে খাওয়াবে বলে যাকেই রেখে দেশের বাইরে গেছি, তারাই আমার টাকা-পয়সা হীরে, সোনা, রুপা বা দামি যা কিছু ছিল সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে।

ইউরোপে যে বাড়িতে ছিলাম, ২৪ বছর আগে যেভাবে রেখেছিলাম জিনিসপত্র, সেভাবেই পড়ে আছে সব, কিছুই খোয়া যায়নি। কিন্তু ভারতবর্ষে সব শখের জিনিস, স্মৃতির জিনিস দিয়ে ঘর সাজিয়ে এখন দেখি সব হারিয়ে ফুরিয়ে বসে আছি। ঢাকার বাড়িরও একই অবস্থা। নেই কিছু। পুরনো কত ছোট ছোট জিনিস কত কিছু মনে করিয়ে দেয়। এখন তো সিন্দুক খুলে বসার বয়স। একটি একটি করে হাতে নেব নেপথলিনের গন্ধমাখা সেই সব পুরনো চিঠিপত্র, পুরনো ফটো…।

দু’দিন আগে আনন্দ পুরস্কার অনুষ্ঠান হল। ভাবছিলাম এখনও কি সোনায় লেখা রুপার থালা দেয় ওরা? থালার ওপর জুঁই ফুলের মালা?

থালার জন্য দীর্ঘশ্বাস ফেলে কী লাভ! সব ফেলে চলেই তো যেতে হবে একদিন। এইসব বস্তুর কী মূল্য! যত দিন বাঁচি, কেবল যা দেখিনি তা দেখব। পেছনে তো পড়েই থাকে অর্থকড়ি, স্বীকৃতি।লুটপাট কারা করেছে, অনুমান করেছি। কিন্তু কাউকে কোনও প্রশ্ন করি নি। কারও কাছ থেকে কিছু ফেরত আনতে যাই নি। ওগুলো বিক্রি করে দিয়েছে নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই খুব টাকার দরকার ওদের। এই দুনিয়ায় কারও বেশি থাকবে, কারও কম থাকবে, তা কেন ওরা হতে দেবে! হয়ত ঠিকই করেছে।  [তাসলিমা নাসরিনের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে সংগৃহিত]

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com