খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রভুর পরিকল্পনা কি দত্ত বাবুরা জেনে গেছেন ?
02 May, 2018
এদেশের দত্ত বাবুরা আকাশের প্রভু কিংবা মাটির প্রভুদের পরিকল্পনা কি জেনে গেছেন ? এই প্রশ্নটি অনেকের মনে উদয় হয়েছে ।
দেশের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রী ও দুটি বড় দলের একটির প্রধানকে গায়ের জোরে জেল খানায় আটকে রাখা হয়েছে । তাঁর চিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে । এর মাধ্যমে তাঁকে যে তিলে তিলে হত্যার দিকে নেয়া হচ্ছে – এই বাস্তবতা দিকে দৃষ্টি সরাতে সরকার ও সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট সুশীলকূল সক্রিয় হয়ে পড়েছেন ।
একটি পরিত্যক্ত ও নির্জন জেলখানায় আটক বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে তাঁর পরিবার , দল ও দেশবাসী যখন উদ্বেগ প্রকাশ করছে , তখন সরকার ও সরকার পন্থী বুদ্ধিজীবী কূল অন্য সুর তুলেছেন । শিষ্টের শিরোমনি ওবায়দুল কাদের বলেছেন ,
” বেগম খালেদা জিয়ার বয়স হয়েছে / যে কোনো সময় যে কোনো কিছু ঘটে যেতে পারে / হায়াত মওত আল্লাহর হাতে / আমি এই ঘর থেকে অন্য ঘরে প্রবেশের আগেই আমার মৃত্যু হতে পারে ।
৭১ টিভির একটি অনুষ্ঠানে ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্তও সেই একই সুর তুলেছেন । এই সুশীল মহোদয় সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবি না তুলে তেয়াত্তর বছরের নেত্রীর বয়েস পঁচাত্তর বছর বানিয়ে ফেলেছেন । মতলব সহজেই অনুমেয় । নানা রোগে ভোগা জেলখানায় আটক পঁচাত্তর (?) বছরের একজন মহিলা সহজেই মরতে পারেন । এটা নিয়ে মন খারাপ করার কিছু নেই ।
মনে হচ্ছে , ৭১ টিভি ও দত্ত বাবুরা সম্ভাব্য কিছুর জন্যে জাতিকে প্রস্তুত করছেন । খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারের যাতে কিছু না হয় , সেই মহৎ কাজটিই বোধহয় এরা শুরু করেছেন । একই সঙ্গে সরকারকে এই কাজে উৎসাহ প্রদান বা অনুপ্রেরণার ম্যাসেজটিও রয়েছে । দেশের সকল মানুষ ঘাষ খেয়ে বড় হয়েছে । ভাত খেয়ে বড় হয়েছে শুধু শ্যামল দত্ত ও মোজা বাবুরা । ইনারা এমনই মনে করেন ।
এই ওবায়দুল কাদের এবং শ্যামল দত্তদের মিহি বুদ্ধির কাছে পুরো জাতি জিম্মি বা অসহায় হয়ে পড়েছে । স্বাধীনতা অর্জনের এক দশকের মাঝেই এদেশের দু দুজন রাষ্ট্র প্রধান হত্যার শিকার হয়েছেন । বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কিংবা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া সব কিছু সঠিক করতেন কিংবা দেশের সব মানুষ তাদের পছন্দ করতেন – এটা বাস্তব সম্মত চিন্তা ছিল না । কিন্তু তাদেরকে হত্যা করে সমস্যা সমাধান করতে হবে – এটা ছিল সবচেয়ে বড় হঠকারী চিন্তাভাবনা ।এর পেছনে বিদেশী শক্তি থাকলেও তারা ভর করেছিল হঠকারী মগজের এমাটির কিছু মানুষের উপর ।হতাশার কথা হলো সেই হঠকারী ভাবনা থেকে এখনও মুক্ত হতে পারছি না ।
জাতির এই দুই মহান নেতাকে হত্যা , ২১ শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলা এবং বর্তমানে বেগম জিয়াকে তিলে তিলে হত্যার মূল মন্ত্রণা বা নির্দেশটি এসেছে বা আসছে একই জায়গা থেকে । শুধু এদেশের হঠকারী মগজগুলির চেহারা বা অবয়বের পরিবর্তন হয়েছে বা সামনে হবে ।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে হত্যা – তা আচমকা হত্যা হোক বা তিলে তিলে হত্যা হোক – কোনো সমস্যার সমাধান দেয় না – বরং জাতিকে নতুন সমস্যায় বা আরো তিক্ত বিভক্তিতে জড়িয়ে ফেলে । মুজিব ও জিয়া হত্যা আমাদেরকে গত ৫০ বছর সামনে এগোতে দেয় নি । সামনের কোনো হঠকারী কাজের ফলাফলও ভিন্ন হবে না ।
এই দত্ত বাবুরা তিলে তিলে একটি হত্যাকে স্বাভাবিক মৃত্যু হিসাবে তুলে ধরতে আগে ভাগেই কাজে নেমে পড়েছেন । ২০০৪ সালে ২১ শে আগষ্ট শেখ হাসিনার মৃত্যু হলে তখনকার সরকারের সাথে সাথেই পতন হতো – এতে কোনো সন্দেহ ছিল না । তেমনি আজ প্রহসনের বিচারে বেগম জিয়ার কিছু হলে পরিণাম ভিন্ন হবে না । সরকারের মন থেকে এই ভয়টি সরাতে সরকারের বুকে কি সাহস জোগাচ্ছেন বা তজ্জন্যে থু-থু ছিটাচ্ছেন ৭১ টিভির মোজা বাবু ও শ্যামল দত্তরা ?
৭১ টিভির মত কিছু দালালের বাক্স ও শ্যামল দত্তরা যে কৌশলে বুদ্ধিবৃত্তিক ইন্ধন বা সমর্থন জোগাচ্ছেন – তার ফলাফলও শুভ হবে না । এর রেশ জাতিকে হয়তো আরো কয়েক শ বছর ধরে টানতে হবে ।
এখন প্রশ্ন জাগে , এই শ্যামল দত্ত , মোজা বাবু বা ওকারা আসলে কার হয়ে কাজ করছেন ? এই দেশ , এই জাতি , এই মাটির প্রতি এদের টান বা দায়বদ্ধতা আসলে কতটুকু ?
গত একুশে ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে কনুই দিয়ে গুতা মেরে ওবায়দুল কাদেরকে সরিয়ে তোফায়েল আহমেদ সেখানে দাঁড়িয়ে পড়েন । দৃশ্যটি / ভিডিওটি পুরো জাতিকে বিনোদিত করেছে ।শুধু নিজের প্রয়োজনে না – দল ও জাতির প্রয়োজনে এই কিছিমের আরো কিছু কনুইয়ের গুতা প্রয়োজন । বড্ড প্রয়োজন ।