দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলন নিষিদ্ধ; আমরা যে কোন মুহূর্তে অপহৃত হতে পারিঃ ইকোনমিস্টকে রাশেদ।

April 27, 2018 9:57 pm0 commentsViews: 34

দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলন নিষিদ্ধ; আমরা যে কোন মুহূর্তে অপহৃত হতে পারি, এ ভাবেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ইকোনমিস্টকে বলল ক্ষুব্দ রাশেদ।

বিশেষ কিছু বর্ণের মানুষের জন্য ভারতের সরকারি চাকরিতে কোটা রয়েছে। বাংলাদেশের বিভেদ রেখা হল ইতিহাস। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান থেকে পৃথক হওয়ার ওই যুদ্ধে যারা লড়েছিলেন, তাদের বংশধদের জন্য সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ কোটা রেখেছে দলটি। অন্যান্য আরও কিছু গোষ্ঠীর জন্য রয়েছে ২৬ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি থেকে এই পদ্ধতির সংস্কার দাবিতে আন্দোলন করছে ছাত্ররা।

তাদের দাবি, সরকারি চাকরির ৯০ শতাংশ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে হতে হবে। ১১ই এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদ টানা আন্দোলন ও অবস্থান ধর্মঘটের সম্মুখীন হয়ে দৃশ্যত ওই দাবি মেনে নিতে রাজি হন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, সব কোটাই বাতিল করার। তবে এখন পর্যন্ত সরকারি ভাবে কোন উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। এছাড়া কোটার পক্ষের লোকজন পালটা বিক্ষোভ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে।

ব্রিটিশ সাময়িকী ’দ্যা ইকোনমিস্ট’ বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে এক প্রতিবেদনে এসব লিখেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আপাতত স্থগিত থাকা কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রথম গর্জে উঠে ৮ই এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে। এই প্রতিবাদ দ্রুতই ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকায় প্রতিবাদকারী ছাত্র ও হতাশ চাকরিপ্রার্থীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস, লাঠি ও জলকামান ব্যবহার করে। ফলে আহত হয় শ’ শ’ প্রতিবাদকারী।

কর্তৃপক্ষের কঠোর প্রতিক্রিয়া ও আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের উপস্থিতি বিক্ষোভকে আরও জোরদার করেছে। একই কাজ করেছেন ষাটের দশকের তুখোড় ছাত্রনেত্রী ও বর্তমানের মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যারা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল তাদের ছেলেমেয়েরাই হলো এই প্রতিবাদকারীরা। তার বক্তব্যেও আন্দোলন তেঁতে উঠে।

শিক্ষার্থীরা এমনকি সরকারি ওয়েবসাইট হ্যাক করে তাতে কোটা সংস্কারের বার্তা আপলোড করে দেয়। প্রতিবাদকারীদের নেতা রাশেদ খান বলেন, সরকার যদি ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার না করে, তাহলে আন্দোলন ফের শুরু হবে। তিনি দাবি করেন, কিছুদিন আগে সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে সহ আন্দোলনের তিনি নেতাকে জোর করে গাড়িতে ওঠায়। এরপর তাদের হ্যান্ডকাফ পরিয়ে চোখ বেঁধে দেয়। পরে অবশ্য কোনো অভিযোগ দায়ের না করেই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। রাশেদ অভিযোগ করেন, ‘দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক আন্দোলন নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। আমরা যেকোনো মুহূর্তে অপহৃত হতে পারি।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ অনেকবার ‘কোটা আন্দোলন’ দেখেছে। সরকারি চাকরির মাত্র ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে পূরণ করা হয়। অনেক শিক্ষার্থী কিছু কিছু কোটা রাখার পক্ষে।

এ পর্যন্ত আড়াই লাখ লোককে মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট দিয়েছেন আমলারা। অনেকে ঘুষের মাধ্যমে এই সার্টিফিকেট আদায় করেছেন। কেউ কেউ পেয়েছেন জালিয়াতির মাধ্যমে।

বাংলাদেশের ক্যাম্পাসগুলো আপাতত শান্ত। তবে এই বিরুদ্ধবাদিতা আওয়ামী লীগ সরকারের রাজনৈতিক অবস্থানের প্রতি বৃহত্তর সমালোচনা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি ১৯৭১ সালের ঘটনাপ্রবাহের ভিত্তিতে সমাজে বিভেদের বীজ বোনা অব্যাহত রেখেছে।

শাসক পরিবারের প্রতি অনুগত বয়স্কদের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের চেয়ে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা নিজেদের বেশি তৎপর বলে প্রমাণ করছে। তাদের একটি প্ল্যাকার্ডে শেখ হাসিনার সাধারণভাবে শ্রদ্ধেয় পিতা ও দেশের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্টকে টেনে এনে লেখা হয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে, বৈষম্য সহ্য করা হবে না।’

ঢাকা-ভিত্তিক অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান বলছেন, এই আন্দোলন জোরদার হওয়ার পেছনে কাজ করছে কর্মসংস্থান সংকট। জন্মহার কমে এলেও, দেশটির জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশের বয়স ৩৫ বছরের নিচে। সরকার প্রতি বছর ২০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু যত কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, তার চেয়ে দ্রুতগতিতে বাড়ছে শ্রমশক্তি। তরুণ বেকারদের সংখ্যা এখন ১০ শতাংশেরও বেশি।

এই উত্তপ্ত বিক্ষোভ এমন সময় এলো, যখন গত নয় বছর ধরে দেশ শাসন করা আওয়ামী লীগ ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাকি দলগুলো এখন বিশৃঙ্খল অবস্থায়।

শেখ হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী ও বিরোধী দল বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়া এখন কারাগারে। বিএনপি এমনকি নিশ্চিতই নয়, আদৌ তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কি না। দলটির নির্বাচনী মিত্র জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, আমরা কি আদৌ এমন কোন নির্বাচন পাব, যেটার ফলাফল আমরা আগাম অনুমান করতে পারব না? সর্বশেষ ২০০৮ সালের যথাযথ নির্বাচনের পর নতুন যেই ২ কোটি ৩০ লাখ তরুণ ভোটার হয়েছেন, তারা নিশ্চিতভাবেই শাসক দলের মাথা ব্যথার কারণ।

উৎস নিউজ আর্গান

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com