আইএসের পরাজয়ঃ এরপর …..? গন্তব্য কোথায়?
স্থানীয় সময়ঃ ৪ নভেম্বর ২০১৭ বিকেল ৫টা।
সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেট এবং তাদের ঘোষিত খেলাফতের দিন প্রায় শেষ অবস্থাতে আছে। খুব অল্প এলাকা এখন তাদের দখলে।
রাজধানী রাক্কার পতন হয়েছে আগেই, এখন তাদের দখলে থাকা শেষ বড় শহর দেইর-আল-জুরেরও পতন হয়েছে। এখন আলবু কামাল নামে আরেকটি ছোট শহরে রুশ বিমানগুলো আইএস অবস্থানগুলোর ওপর হামলা চালাচ্ছে। এখানে ইরাক থেকে পালিয়ে আসা আইএস যোদ্ধারা অবস্থান নিয়েছে।
বিবিসির বিশ্লেষক জোনাথন মার্কাস বলছেন, আইএস একটি বিদ্রোহী বাহিনী এবং আদর্শিক অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কোন না কোনভাবে টিকে থাকবে হয়ত, কিন্তু একটি বাস্তব ভুখণ্ডের অধিকারী শক্তি হিসেবে আইএস শেষ হয়ে গেছে।
কিন্তু সিরিয়ায় বাশার আসাদের শাসনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যে যুদ্ধ চলছিল, তার কি হবে? সেটিই তো নিয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য থেকে আসা মুসলিম বিরোধী শক্তির দেশগুলো ভাগ হয়ে কেউ পক্ষে কেউ বিপক্ষে অবস্থাসন করেছিল, সেটির কি হবে।তাদের আসল কথা তো হল, মুসলিমদের দুর্দশা বাড়াও। নতুন পরিস্থিতি’র সূত্রপাতঃ
সিরিয়ার দৃশ্যপট থেকে ইসলামিক স্টেট নেই হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতিতে এখন নতুন জটিলতা সৃষ্টি হবে। সিরিয়া কার্যতর তিন ভাগে ভাগ হয়ে যাবে। একটি ভাগ রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতায় নিয়ন্ত্রণ করবে নিজ দেশের নাগরিক খেকো কসাই বাশার আসাদের সরকারি বাহিনী। আরেকটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করবে সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স, যাদেরকে বলি সেকুলার ফোর্স, যাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন দিচ্ছে।
আরেকটি অংশ থাকবে সিরিয়ার অন্য বিরোধী গোষ্ঠীগুলো হাতে যাদের পেছনে আছে তুরস্ক ও জর্ডন।
এর মানে হচ্ছে ইসলামিক স্টেট-পরবর্তী সিরিয়ায় যে চারটি দেশ মূল নিয়ন্তা হতে যাচ্ছে – তারা হল যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ইরান, এবং তুরস্ক।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্র এখন কি করবে তা স্পষ্ট নয়। ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং সিরিয়া বিশেষজ্ঞ জশুয়া ল্যান্ডিস বলেন, তাদের একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
তারা কি এসডিএফকে সমর্থন দিয়ে যাবে? সমস্যা হলো : ইসলামিক স্টেটকে পরাজিত করা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়ার ব্যাপারে আর কোন নীতি আছে কিনা তা বলা খুবই কঠিন।
চার্লস লিস্টার হচ্ছেন মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের ফেলো। তিনি বলছেন, মার্কিন যে নীতি আছে তাও স্ববিরোধিতায় ভরা।
“কারণ তারা যেমন আসাদের পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচন দাবি করছে, অন্যদিকে আবার তারা আসাদের বিরোধীদের সব সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।”
রাশিয়া
সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে রাশিয়া। তাদের সমর্থনে বাশার আসাদ সিরিয়ার অধিকাংশ জায়গায় নিয়ন্ত্রণ কয়েম করেছেন। এ খেলায় সবচেয়ে ভাল তাসগুলো তাদেরই হাতে।
তারা গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলো সুরক্ষিত করেছে, এ অঞ্চলে তাদের ভুমিকাকে আবার গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।
সিরিয়া সমস্যার সমাধানও রাশিয়া এখন চাইবে যেন তার পছন্দমত হয়।
ইরান
আসাদ সরকারকে (এবং ইরাকের শিয়াপ্রধান সরকারকেও) সমর্থন দেবার পেছনে ইরানের একটাই স্পষ্ট লক্ষ্য ছিলঃ তা হল মধ্যপ্রাচ্যে উত্তরাংশে – ইরাক থেকে সিরিয়া হয়ে লেবানন পর্যন্ত – তাদের প্রাধান্য নিশ্চিত করা।
মি. ল্যান্ডিসের মতে, “এর ফলে ইরান ইসরাইলের সাথে নিরাপত্তার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করতে পারছে, ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত তেলের পাইপলাইন বাণিজ্য রুট, হাইওয়ে তীর্থযাত্রীদের যাবার পথ – এগুলো প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তার আর মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিচ্ছিন্ন থাকবে না।”
তুরস্ক
তুরস্কের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে কুর্দি প্রশ্ন – কারণ সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ তুরস্ককেও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। তারা হয়ত সিরিয়ার সাথে সম্পর্ক ভাল করার চেষ্টা করবে, যাতে সিরিয়ায় কুর্দিদের স্বাধীনতা চেষ্টা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
এ যুদ্ধে একদিকে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তুরস্কের সমর্থন পাওয়া বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী, অন্যদিকে ইরান ও রাশিয়ার সমর্থন পাওয়া বাশার আসাদের বাহিনী।
মি. ল্যান্ডিস বলছেন, “এক কথায় বলতে গেলে সামরিক অর্থে বাশার আসাদ এ যুদ্ধে জিতে গেছেন। তার বিরুদ্ধে মূল যে অভ্যুত্থানটি হয়েছিল, তাকে তিনি পরাজিত করেছেন। যেসব বিদ্রোহী গ্রুপ এখনো টিকে আছে এগুলো সিরিয়ার একেবারে প্রান্তে হটে গেছে।”
তার কথা – বিদ্রোহীরা হয়ত তাদের অবস্থানগুলো রক্ষা করতে পারে, কিন্তু বাশার আসাদের সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে বড় কোন আক্রমণ চালানোর ক্ষমতা এখন আর তাদের নেই।
চার্লস লিস্টার বলছেন, ইসলামিক স্টেটের পরাজয়ের পর হয়ত সিরিয়া এক নতুন ধরনের সংঘাতের দিকে যাচ্ছে। এখানে কি হবে এখনও বলা কঠিন।
[বিবিসি অবলম্বনে]