কিভাবে এল বঙ্গাব্দ সন।
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুক।
তারিখঃ পয়লা বৈশাখ ১৪২৫ বঙ্গাব্দ বা ফসল সন।
সম্রাট আকবর সম্বন্ধে প্রশংসা ও উদারতার উদাহরণ ইতিহাসে এত বেশি স্থান পেয়েছে, যা অন্য কোন মুঘল বাদশাহদের কারও ভাগ্যে সম্ভব হয় নি ।শুধু তাই নয়, এ অশুদ্ধ বাদশাহকে নিজেদের প্রয়োজনে মহামতি আকবর হিসেবেও অভিহিত করতে পেরেছে।
কিন্তু ইতিহাসের ইতিহাস হল এসবই রাজপুতদের উত্তরসূরীদের বানানো একটি বিকৃত ইতিহাস । হুমায়ুন যখন মৃত্যুবরণ করেন, তখন আকবরের বয়স ছিল মাত্র তের বছর । মৃত্যুকালে হুমায়ুনের অকৃত্রিম বন্ধু বৈরাম খানকে নাবালক আকবরের অভিবাবক করে যান তিনি । আকবর প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগ পর্যন্ত বৈরাম খানই রাজকার্য পরিচালনা করতেন । হুমায়ুনের শিখানো মতে বৈরাম খানকে খান-ই-বাবা বলে সম্বোধন করতেন আকবর । রাজকার্য ও যুদ্ধ পরিচালনা, কূটনীতি, অর্থনীতি সবই বৈরাম খানের কাছ থেকেই শিক্ষা পান আকবর । কিন্তু এই বৈরাম খানকে অবশেষে আকবর তার প্রতিদানের ফলস্বরুপ খুন করলেন ও তাঁর কাছ থেকে রাজদরবারের কর্তৃত্ব ছিনিয়ে নেন ।
আকবরও রাজপুতদের মতই ছলা,কলা ও প্রতারণা এসবই আয়ত্ব করতে সক্ষম হলেন। তিনি শৌর্য-বীর্য দিয়ে আশেপাশের রাজ্যগুলো দখল করেন নি, বরং তা করেছেন ছলে-বলে, কলে-কৌশলে, হত্যা, মিথ্যা ও প্রতারণার মাধ্যমই। আকবরের সাথে বর্তমান কোন কোন রাষ্ট্রপ্রধানের নৃশংস কর্মকাণ্ডের সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যেতেই পারে। এমন অনেক সরকার প্রধান আছেন, যারা ক্ষমতায় আসতে যাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন, মসনদ লাভের পর তাদের পরিকল্পিতভাবে ফাঁসী বা খুন করেন। এভাবেই তারা খুন করে উপকারীর প্রতি প্রতিদান দেন। আকবরের মত প্রতারক বাদশাহর পক্ষেই সম্ভব হয়েছে, বৈরাম খানের মত অভিভাবককে খুন করে রাজ্য কেড়ে নেওয়া। তাছাড়া হিন্দের রাজা হিমু, নিজ সেনাপতি আদম খান ও পীর মোহাম্মদের মত নির্দোষ ব্যক্তিদের আকবর খুন করেন ।
আকবর হিন্দু বা রাজপুতদের সাথে বৈবাহিক সম্বন্ধ পাতিয়ে নিয়েছিলেন বা আয়ত্তে এনে বন্ধু জাতি পরিনত করেছিলেন যাতে হিন্দু বা হিন্দু রাজপুতরা তার বিপক্ষে না যায় । তখন থেকে হিন্দু প্রজারা তাকে খুব আপনজন ভাবতেন । তার হিন্দুপ্রীতিতে খুশী হয়ে হিন্দু প্রজারা তাকে ‘দিল্লীশ্বর’ উপাধীতে ভুষিত করেন । তার কয়েকদিন পর আবার তাকে ‘জগদীশ্বর’ উপাধীতে ভুষিত করেন ।
আকবর অনেক হিন্দু নারীকে বিয়ে করেছিলেন । ইসলাম ধর্ম মতে কোন মুসলিম যদি কোন অমুসলিমকে বিয়ে করে তাহলে বিয়ের আগে অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। কিন্তু আকবর তা তো করেন নি বরং তার পত্নীদের জন্য আলাদা আলাদা ঠাকুরঘর/পুজার ঘরের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন । তাছাড়া তার উপপত্নী সংখ্যা ছিল অগণিত, বর্ণণা মতে প্রায় পাঁচ শত এর অধিক ! রাজপ্রাসাদ হয়ে পড়েছিল, মধ্যপান, ব্যভিচার আর গীতবাদ্যের স্বর্গরাজ্য ।
বড় বড় আলেম, উলামা, মুফতি বাদ দিয়ে আকবর একজন কপট বিভ্রান্ত মুসলমান মোবারক নাগুবী এবং তার সন্তানদ্বয় আবুল ফজল ও ফৈজিকে তার রাজ উপদেষ্টা নিয়োগ করেন । এরপর তিনি তার স্বধর্ম ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য নতুন ধর্ম সৃষ্টি করেন, যার নাম দেন ‘দীন-ই-ইলাহী’ ! তারপর তার নিজের ধর্মকে নিজের মত করে সাজাতে থাকেন ।
কালেমা পরিবর্তন করে নিজের মত করে কালেমা চালু করলেন “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবর খলিফাতুল্লাহ” ! (নাউজুবিল্লাহ) । সুর্য পুজা জায়েজ করলেন, মদ, সুদ, জুয়াকে বৈধ বলে নির্দেষ দিয়েছেন, দাড়ি কাঠা তার নতুন ধর্মে হালাল করেছেন । অস্থায়ী বিবাহ প্রচলন, পর্দা প্রথা বিলুপ, বার বছরের কম বয়সী শিশুদের খৎনা দেওয়া নিষিদ্ধ, কোরআন বিশ্বাস করতে নিষেধ করতেন, প্রজাদেরকে নিজেকে সিজদা করার জন্য আইন প্রণয়ন করেন, কবর দেওয়া নিষিদ্ধসহ আরও অনেক অনেক জঘন্য শিরকি কাজ করেছেন, যা আগে-পরে কোন অমুসলিম শাসকও করার সাহস পায় নি।
মুসলমানদের একে অপরে সাথে সাক্ষাত হলে ‘আসসালামু আলাইকুম’ অর্থাৎ ’আল্লাহ আপনার উপর শান্তি বর্ষণ করুণ’ বলতে হয়। প্রত্যুত্তরে “ওয়ালাইকুম আসসালাম” (আপনার উপরও শান্তি বর্ষিত হোক ) বলা হয় । কিন্তু আকবর সালাম দেওয়ার প্রথা বিলোপ করে করে তার পরিবর্তে ‘আল্লাহু আকবর’ বলার নিয়ম চালু করেছিলেন । তা উত্তরে ‘জাল্লা জালালাহু’ বলা হত । তখন হিন্দু প্রজারা তার কাছে আবেদন করলেন- ”সম্রাট ! আপনার কাজকর্ম দেখে সমস্ত হিন্দুই আপনার উপর সন্তুষ্ট । তাই হিন্দুরা আপনাকে দিল্লিশ্বর ও জগদীশ্বর বলে। কিন্তু আপনি সালাম তুলে দিয়ে আবার আল্লাহ শব্দ ব্যবহার করলেন কেন? অতএব এটাও তুলে দিন । তখন আকবর হিন্দু প্রজাদের নিশ্চিন্ত করতে বললেন- মুসলমানদের জন্য স্বয়ং আল্লাহ হিসেবে প্রকাশিত হয়েছি । ‘অর্থাৎ আল্লাহু আকবর মানে আকবরই আল্লাহ (নাউজুবিল্লাহ) । অতঃপর তার অনুগত হিন্দু প্রজারা আবার অভিযোগ করলেন- আল্লাহ শব্দটা হিন্দুবিরোধী । অতএব ওটাকেও তুলে দিন । আকবর তাই করলেন । সারাদেশে ঘোষণা করে দিলেন, আজ থেকে ‘সালাম’ বা ‘আল্লাহুর’ পরিবর্তে ‘আদাব’ শব্দ ব্যবহার করতে হবে । এটাই হল মহামতি সম্রাটের মহাসিদ্ধান্ত । আর আমাদের বাংলা সন ইসলাম ও হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর স্মৃতি বিজড়িত হিজরি সনকে ভারত থেকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রের ফসল ।
যদি তখনকার ভারতীয় হিন্দু রাজপুত্র বা হিন্দুদের কেউ দিল্লীর রাজা হয়ে ঐ রকম ইসলাম ধর্মের উৎপাটন করতে সাহসী হতেন, তাহলে এতটা মারাত্মক ফল দেখা দিত না, যতটা হয়েছে মুসলমান নামধারী মুঘল সম্রাট আকবরের দ্বারা । এখনও ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে চক্রান্তের গিনিপিগ হিসেবে মুসলমান নামের কিছু কীট ও এক জাতীয় হিংস্র প্রাণি সমূহকেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে।