সেকেন্ড হোমে পৌনে চার হাজার বাংলাদেশী

April 7, 2018 8:43 pm0 commentsViews: 28

মনির হোসেন, ০৭ এপ্রিল ২০১৮,শনিবার, ১৪:৫৭ |

মালয়েশিয়ামালয়েশিয়া

মালয়েশিয়া ‘মাই সেকেন্ড হোম’ (এম এম ২ এইচ) কর্মসূচির আওতায় পৌনে চার হাজার বাংলাদেশী নাগরিক নাম লিখিয়েছেন। এই অস্থায়ী নাগরিকত্বের জন্য যে পরিমাণ টাকা দেশটির ব্যাংকে রাখতে হয় কিংবা বিনিয়োগ করতে হয় তার বেশির ভাগ টাকা পাচার হয়েছে হুন্ডিতে। মালয়েশিয়া সরকারের রাষ্ট্রীয় এই প্রকল্পে চীন, জাপানের নাগরিকদের পরই তৃতীয় অবস্থানে আছেন বাংলাদেশীরা। এর মধ্যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সরকারি আমলা, রিক্রুটিং-ট্রাভেল এজেন্সির মালিক, পেশাদার ব্যবসায়ী ও সাবেক কূটনীতিকেরা আছেন। এসব ব্যক্তি কিভাবে সেকেন্ড হোম প্রকল্পে বিপুল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছেন তা খুঁজে বের করতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান শুরু করলেও মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যই পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানা গেছে।

সেকেন্ড হোম প্রকল্পে দেয়া তথ্য অনুযায়ী ২০০২ সালে চালু হওয়া এম এম ২ এইচ হচ্ছে এমন একটি কর্মসূচি, যেখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়ে অন্য দেশের একজন নাগরিক মালয়েশিয়ায় দীর্ঘমেয়াদি বাস করাসহ অন্যান্য সুবিধা পান। বিভিন্ন দেশ থেকে এ কর্মসূচিতে গত বছরের জুন মাস পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩৪ হাজার ৫৯১ জন অংশ নিয়েছেন। এই সুবিধা নিতে হলে একজন ব্যক্তিকে মালয়েশীয় রিঙ্গিতে সাত হাজার, স্বামী-স্ত্রীর জন্য সাড়ে সাত হাজার এবং দু’জন সন্তানসহ একটি পরিবারের জন্য আট হাজার রিঙ্গিত ফি জমা দিতে হয়। পরিবারের সদস্য এর চেয়ে বেশি হলে প্রতিটি সন্তানের জন্য বাড়তি আড়াই শ’ মালয়েশীয় রিঙ্গিত ফি জমা দিতে হয়। টাকার হিসাবে একটি পরিবারের জন্য এক লাখ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা ফি জমা দেয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন, বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় নিবাস গড়তে বৈধভাবে অর্থ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ফলে সেকেন্ড হোম কর্মসূচিতে যারা অংশ নিয়েছেন তারা মূলত টাকা পাচার করেছেন।

দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোম কর্মসূচিকে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচারের একটি বড় মাধ্যম বলে চিহ্নিত করেছেন। শুধু সেকেন্ড হোম কর্মসূচি নয়, সেখানে বাড়ি-গাড়ি কেনা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্যও বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআইবি) বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়া সেকেন্ড হোম প্রজেক্টে যারা অংশগ্রহণ করছেন বা সুবিধাটা নিচ্ছেন তাদের কারোরই বৈধভাবে টাকা নেয়ার সুযোগ নেই। কাজেই বাংলাদেশ থেকে সেটা হুন্ডির মাধ্যমে হোক কিংবা অন্য মাধ্যমে হোক, ব্যাগ ভর্তি করে হোক বা যেভাবেই হোক এই টাকাটা মালয়েশিয়ায় পাচার হচ্ছে। এটা রোধ করা সরকারের তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব। দুর্নীতি দমন কমিশনের তো বটেই। আর যারা টাকা পাচার করেন তাদের চিহ্নিত করা এবং পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার জন্য আন্তর্জাতিক আইন আছে। জাতিসঙ্ঘের আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের আন্ডারে প্রক্রিয়া অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে চালু হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে বাংলাদেশে এ সুযোগও নিয়েছি।

সিঙ্গাপুরে পাচারকৃত অর্থ একবার ফিরে এসেছে। কাজেই যেহেতু একবার এসেছে তাই এটা অসম্ভব কিছুই না। তবে বিষয়টি খুব সহজ নয়। এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার গভর্মেন্টের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সহযোগিতা চুক্তি করতে হবে। সেটির আন্ডারে এটা করা সম্ভব।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে দুদকের ভূমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুদকের যে শিডিউল সেই শিডিউলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মানিলন্ডারিং সরাসরি তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। এর দায় পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ডিপার্টমেন্টের ওপর। তবে তার মানে এই নয় দুদকের কিছু করার নেই। দুদকের জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে সমন্বয় করে কাজ করার সুযোগ আছে। তৃতীয় পয়েন্ট হলো, যদি এমন হয়, ৪ হাজার সেকেন্ড হোমের মধ্যে ৫-১০ জনকে চিহ্নিত করা গেছে। তখন তাদের সম্পদ ফিরিয়ে আনতে যে প্রক্রিয়া হবে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই দুদক ভূমিকা রাখতে পারে।

মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রকল্পে যাদের নাম রয়েছে এমন কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের দফতরে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও অর্থ পাচার করার অভিযোগ জমা পড়েছে। দুদক এসব অভিযোগের তদন্ত করতে অনুসন্ধান শুরু করেছে। তবে এখনো প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য-উপাত্ত হাতে পাচ্ছে না। যাদের নামে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ জমা পড়েছে দুদক থেকে মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করে তথ্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু মালয়েশিয়া সরকার সেকেন্ড হোম প্রকল্পের ব্যাপারে এ সংক্রান্ত কোনো ধরনের তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করছে।

মালয়েশিয়া : মাই সেকেন্ড হোম প্রকল্প নিয়ে শুরু হওয়া দুদকের অনুসন্ধানকারী একটি দায়িত্বশীল সূত্র গত সপ্তাহে নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাচ্ছি তাদের মধ্য থেকে যেগুলোর সত্যতা পাচ্ছি সেগুলো আমলে নিচ্ছি। পরে সংশ্লিষ্টদের দুদকে ডাকা হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই সূত্রটি আক্ষেপ করে বলেন, আমরা সেকেন্ড হোমবিষয়ে মালয়েশিয়া সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে তথ্য চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা এ সংক্রান্ত তথ্য দেবে না বলে জানিয়েছে। তবে আমরা যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে বা পাচ্ছি তাদের এ দেশে থাকা অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছি।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com