নাস্তার পরই মেকআপ বক্স 

March 15, 2018 10:43 pm0 commentsViews: 99
পডেট : ৭ মার্চ, ২০১৮ ০৮:০৪
নাস্তার পরই মেকআপ বক্স নিয়ে বসেন বেগম জিয়া

সকালের নরম, কোমল সূর্যটা যখন খোলস ছেড়ে আগ্রাসী রূপে বেরিয়ে আসতে থাকে, ঠিক তখনই কারাগারে ঘুম ভাঙ্গে বেগম জিয়ার। কটা বাজে তখন? সাড়ে ৯ টা, ১০টা, কিংবা তারও কিছুটা পর। বেগম জিয়ার ঘুম ভাঙ্গে, দরজার কড়া নাড়ানোর শব্দে। উঠে বাইরের কক্ষটিতে আসেন গৃহ পরিচারিকা ফাতেমার হাত ধরে। জেলখানার কর্মকর্তা যেন বিনয়ের অবতার। যতটা পারেন তাঁর কণ্ঠে মধু মিশিয়ে স্বাগত: জানান বিএনপি চেয়ারপারসনকে। ‘গুড মর্নিং ম্যাডাম।’ প্রায় কখনোই এর জবাব দেন না বেগম জিয়া। বরং একটু বিরক্তি আর ক্ষোভই ফুটে ওঠে তাঁর চেহারায়। কিন্তু জেল কর্মকর্তা তাঁর মনের বা মুখের অভিব্যক্তির থোরাই কেয়ার করে। ছোটখাট সাক্ষাৎকার পর্ব চলে। কী খাবেন দুপুরে, সন্ধ্যায় চায়ের সঙ্গে কী দেবে, রাতের খাবার। বেগম জিয়া আগে তাও দু-চারটা কথা বলতেন, ম্লান হেসে বলতেন, ‘যা পারো করো।’ এখন নির্বিকার থাকেন।

জেল কর্মকর্তা চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় নার্সের কর্মকাণ্ড। প্রেশার মাপা, জ্বর মাপা, ব্লাড সুগার পরীক্ষা। এভাবে ১৫ মিনিট বিরক্তিকর সময় কাটিয়ে বেগম জিয়া যান বাথরুমে। ঘণ্টা খানেক পর প্রায় সাড়ে এগারোটা নাগাদ খাবার টেবিলে বসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। বেগম জিয়ার সকালের নাস্তায় যাই থাকুক, তিনি খান কিছু ফলমূল, একটু জুস, একটা ডিম আর কিছু বিস্কিট বা কোয়েকার। তাঁর জন্য আটার রুটি থাকে, সবজীও থাকে। কিন্তু এগুলো তিনি ছুঁয়েও দেখেন না। সকালের নাস্তার পর সময়টা বেগম জিয়ার ভালোই কাটে। এ সময় নিজেই তিনি মেক আপে বসেন। টুকটাক রূপচর্চা করেন। দীর্ঘদিনের অভ্যাস তাই জেলে নিজের প্রিয় মেকআপ বক্স আনতে ভোলেননি। ভোলেননি একটু সাজগোজ করতেও। মেকআপ শেষ হতে হতেই দুপুর গড়িয়ে যায়। তারপর বেগম জিয়া একটু পত্রিকায় চোখ বোলান। এর মধ্যেই ফাতেমা বেগম জিয়ার ঘর গুছিয়ে ফেলে। নতুন চাদর শোভিত হয়, কারাগারে বেগম জিয়ার সিঙ্গেল চৌকি।

নতুন বিছানায় গা এলান বেগম জিয়া। ফাতেমা এ সময় তার পা টিপে দেয় আলতোভাবে। দুপুর গড়িয়ে যখন অপরাহ্ন আসে তখন বেগম জিয়া মধ্যাহ্ন আহারে বসেন। বেগম জিয়া ভাত খান সামান্যই। সবজী খান কিছুটা। তারপর দু চারটা স্ট্রবেরিতে কামড় বসান।

মধ্যাহ্ন ভোজের পর তাঁর রুটিন একরকম নয়। বিটিভিতে যদি বাংলা ছায়াছবি থাকে, তাহলে ঘুম হারাম করেন। ফাতেমাকে চেয়ারের পাশে মেঝেতে বসিয়ে সিনেমা দেখা তাঁর প্রিয় অভ্যাস। অন্যান্য নামাজ না পড়লেও, মাগরিবের নামাজ পড়েন চেয়ারে বসেন। তারপর এক কাপ গ্রিন টির সঙ্গে নেন ওয়েস্টিন হোটেল থেকে আনা নোনতা বিস্কুট। রাত আটটার খবর দেখতে দেখতে রানিং কমেন্ট্রি করেন। এই একটা সময়ই কথা বলেন বেগম জিয়া। তাও নিজের সঙ্গে। তবে বিড়বিড় করে বলা এই ‘খালেদা বচন’ দারুণ উপভোগ করেন, দুই কারারক্ষী। টেলিভিশন দর্শন চলে আরও কিছুক্ষণ। তারপর বিছানায় আবারও গা এলিয়ে দেন খানিক্ষণ। এ সময় ফাতেমার সাঙ্গে টুকটাক কিছু আলাপচারিতা হয়। ইদানিং গরমে অস্থির থাকা বেগম জিয়াকে মাঝেমধ্যে বাতাসও করেন ফাতেমা। রাতে খেতে বসেন রাত ১০টার পর। তখন কারাগারে সুনসান নীরবতা। মাঝেমধ্যে কিছু শিয়ালের ডাক। বেগম জিয়া বিছানায় যান রাত ১২ টা নাগাদ। তার আগে একটু হাঁটাচলা করেন। মশার অত্যাচারে কয়েকদিন ধরে মশারি টাঙ্গাতে হয়। ওই কাজটাও ফাতেমাই করে দেন। এরপর বিছানায় গেলেও কি তার ঘুম হয়, নাকি চিন্তা করেন, এমন জীবন আর কি এসেছিল কখনো? কিংবা এভাবে থাকতে হবে কতদিন? এসবে কি তাঁর ঘুম হয়, নাকি ভোরের অপেক্ষা করেন বেগম জিয়া? এভাবেই কেটে গেল কারাগারে বেগম জিয়ার একটা মাস।

সূত্রঃ বিডিটাইমস

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com