সৌদি-কাতার বিরোধ ঃ এক দাজ্জালের বংশ এবং দাজ্জালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকারী আরেক বংশ
আবু সামিহাহ সিরাজুল ইসলাম
রসূলুল্লাহ (ﷺ) যখন দীনে হক্বের দা‘ওআত দিচ্ছিলেন তখন নজদের এক গোষ্ঠি বনু হানীফার এক দজ্জাল তাঁর (ﷺ) নবুয়্যতে অংশীদারীত্ব দাবী করে। রসূলুল্লাহ (ﷺ) মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করে তাকে তাড়িয়ে দেন। তার গোষ্ঠি বনু হানীফার লোকজন তাকে মিথ্যাবাদী জেনেও তার অনুসরণ করে ক্বুরাইশী নবী মুহাম্মদ (ﷺ) এর বিরোধিতার স্বার্থে। সায়্যিদুনা আবূ বকরের (রাদিয়াল্লাহু আনহু) খিলাফতকালে এরা ইসলামের প্রদীপ নিভিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তাদের মধ্যকার দাজ্জাল মিথ্যাবাদীর নেতৃত্বে। যাই হোক সাহাবা আজমা‘ঈন (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) এই ভণ্ড দাজ্জালের ক্ববর রচনা করেন ইয়ামামার যুদ্ধে, অনেক ত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়ে। এ ছিল বনু হানীফার কুলাঙ্গার মুসাইলিমা আল-কাজ্জাব। আর বনু হানীফা তাদের মধ্যেকার এই কুলাঙ্গারের অনুসরণ করে নিজেদেরকে ধ্বংসের পথ রচনা করে। ইসলামের ইতিহাসে পরবর্তীকালে এই গোত্রের লোকদের কোন উল্লেখযোগ্য অবদানের কথা জানা যায় না।
অন্যদিকে নজদের আরেক গোত্র বনু তামীম। এরা হল সায়্যিদুনা ইসমাঈলের (আলায়হিস-সালাম) এর বংশধর আদনানের মাধ্যমে। এদের মধ্যকার কিছু লোকেরা বেদুইনসুলভ ঘাড় ত্যাড়ামী করলেও তাদের মধ্যকার বেশিরভাগ লোকই রিদ্দার সময়ে ইসলামের উপর অটল থাকে। পরবর্তী কালে রোম ও পারস্য বিজয় অভিযানে এরা বিরাট ভূমিকা পালন করে। এদের মধ্যকার বিজয়ী বীর আল-ক্বা‘কা‘ ইবন ‘আমর আত-তামিমী ও তাঁর ভাই ‘আসিম ইবন ‘আমর আত-তামিমী (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) ইসলামের বিজয় ইতিহাসে নিজেদের নাম সোনার হরফে খোদাই করে নিয়েছেন। রসূলুল্লাহ (ﷺ) তাদের ব্যাপারে খুশি ছিলেন। তিনি (ﷺ) বলেছেন, “বনু তামীম হবে দাজ্জালের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্ত প্রতিরোধকারী।” ইমাম বুখারী ও মুসলিম আবূ-হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, “আমি তখন থেকে বনূ তামীমকে ভালবাসতে শুরু করি যখন আমি রসূলুল্লাহর (ﷺ) কাছ থেকে তাদের ব্যাপারে তিনটা বিষয় শুনতে পাইঃ (১) আমার উম্মতের মধ্যে তারা হবে দাজ্জালের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কঠোর; (২) সায়্যিদাতুনা আ’ইশার (রাদিয়াল্লাহ আনহা) ছিল বনু তামীম বংশীয়া এক ক্রীতদাসী; রসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘তাকে মুক্ত করে দাও কারণ সে ইসমাঈলের (আলায়হিস-সালাম) বংশধর’; (৩) যখন বনূ তামীমের জ়াকাতের মাল মদীনায় আসল তখন রসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, “আমার নিজের লোকদের জ়াকাত এসেছে।”
আমাদের সময়ের দুইটা গোত্র দুইটা দেশ শাসন করে। একটা হল আলে-সঊদ آل سعود; এরা হিজাজ় ও নজদ পুরোটা, ইয়ামনের কিছু অংশ এবং বাহরাইনের অধিকাংশ দখল করে নিজেদের গোষ্ঠির নামে দেশটার নাম দিয়েছে সঊদী আরব রাজ্য [Kingdom of Saudi Arabia]। এরা হচ্ছে বনু হানীফার অধঃস্তন একটা শাখা। ইসলামের জন্য এদের খুব গৌরবজনক কোন ভূমিকা নাই। তবে ফয়সল বিন আব্দুল-আজ়ীজ় আল-সঊদ [রহিমাহুল্লাহ] ছিলেন ব্যতিক্রম। ১৯৭০ এর দশকে ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষে শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে উম্মতে ইসলামিয়াকে মোটামুটি একটা মর্যাদাপূর্ণ আসনে অধিষ্ঠিত করেন এবং ফিলিস্তিনের জন্য অকৃত্রিম দরদের বহিঃপ্রকাশ ঘটান। স্বাভাবিকভাবেই উম্মতের শত্রুরা তাঁকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেবার ব্যবস্থা করে। তাঁর পরবর্তীতে খালিদ বিন আব্দুল আজ়ীজ়ও মোটামুটি ফয়সলের নীতি ধরে রাখার চেষ্টা করেন। তবে ফাহদের রাজত্বের শেষ দিকে এবং আব্দুল্লাহর পুরোটা সময় এরা উন্মতের শত্রুদের সাথে সখ্যতা বজায় রাখে এবং ফিলিস্তিনকে বিট্রে করে। আর এখনকার অবস্থাতো আমাদের জানা। ইমাম মাহদীর আগমনকালে এরা হবে তাঁর শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। কারণ তাদের কাছ থেকেই তিনি হিজাজ় [মক্কা ও মদীনা] উদ্ধার করবেন। আর এ কথাতো জানা যে ইমাম মাহদী হবেন ক্বুরাইশী ও হাশিমী এবং হাসান ইবন আলীর (রাদিয়াল্লাহু আনহুমা) বংশধর। সুতরাং বনু হানীফার এই বংশধররা তাঁর শক্ত প্রতিপক্ষ হবে খুব স্বাভাবিকভাবেই।
আরেকটা গোত্র হল ক্বাতারের শাসক পরিবার আল সানী [آل ثاني]। এরা হল বনু তামীমের একটা অধঃস্তন শাখা। এরা সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রো-মুসলিম, প্রো-প্যালেস্টিনিয়ান পলিসি ব্যবহার করছে। এবং শাসন পদ্ধতিতে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিচ্ছে। তাই এদের ব্যাপারে কিছুটা হলেও আশা জাগে। আর আবূ-হুরায়রার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) মত রসূলুল্লাহর (ﷺ) কথামত বনু তামীমকে ভালবাসার অংশ হিসেবে হয়ত আমাদের তাদেরও ভালবাসা দরকার। আর রসূলের (ﷺ) কথামত দাজ্জালের বিরুদ্ধে উম্মতের সবচেয়ে কঠোর ভূমিকা পালনকারী তামিমীরা নিশ্চয়ই আমাদের অহংকার গণ্য হবে। আমরা আশা করবো আল সানীরা তাদের তামিমী ঐতিহ্য ধরে রাখবে এবং উম্মতের গর্বে পরিণত হবে।
https://www.youtube.com/watch?v=CCZgA86uA3k