দুই পড়শী দেশের মদদেই উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশঃ মন্তব্য ভারতীয় সেনাপ্রধানের।
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুকঃ ভারতের উত্তর সীমান্তের পড়শি দেশের সাহায্যে পরিকল্পিত ভাবে দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে পশ্চিম দিকের পড়শী দেশ। ভারতের ওই প্রান্তে উত্তেজনা বজায় রাখতেই এ পরিকল্পনা। সরাসরি চীন বা পাকিস্তানের নাম উল্লেখ না করলেও ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়তের অভিযোগের তীর যে চিরশত্রু পাকিস্তান ও চীনের দিকে তাক করা, তা যে কোন সুস্থ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই অনুধাবন করতে পারে। ভারত যখনই কোন উদ্দেশ্য সাধনে নিবিষ্ট হয়, তখন এমন করেই প্রপাগান্ডা মেশিন সচল করে। এভাবেই ভারত কর্তৃক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের সাথে খেলে আসছে সেই ১৯৪৮ সাল থেকেই। বাংলাদেশের সাথে তো খেলে হরহামেশাই। এখন নিজেদের আশীর্বাদপুষ্ট একটি সরকার বাংলাদেশের বসিয়ে এ দেশের সাথে খেলে যাচ্ছে বিয়ে করা অত্যাচারিত বৌ এর সাথে নিষ্ঠুর স্বামী যেভাবে খেলে, সেভাবে খেলে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য যে একটা খারাপ কিছু আছে, তা কিছুদিনের মধ্যেই টের হয়ত পাওয়া যাবে। সিকিমের সাথে খেলে সেটি এখন ভারতের একটি রাজ্য। ভুটান, নেপাল এবং শ্রীলংকা এসব দেশের সাথে খেলতে খেলতে এখন সে খেলা বড্ড বিরক্তির আর েএকগুঁয়েমির হয়ে সেরেছে। চীন ও পাকিস্তান তো তার চিরপ্রতিদ্বন্ধী এখন। কে কাকে টেক্কা মারবে, সে চিন্তা থাকে এ তিনটি দেশের। জুয়ার টেবিলে যেমন হয় সমানে সমান প্রতিদ্বন্ধী জুয়াড়ির। পাকিস্তানকে কবেই নাস্তার মত গোল করে ভারত খেয়ে সারত, যদি পারমানবিক অস্ত্রে সমানে সমানর সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র না হত। বাংলাদেশকে গিলতে চায়। সিকিমের মতই গিলতে চায়। কিন্তু চানক্যবাদীরা জানে, সিকিমের জনগোষ্ঠী আর বাংলাদেশের সাধারণ জনগোষ্ঠী কিন্তু এক কথা নয়। এটা অত সহজে গেলা যাবে না। এটা গিলতে হলে দেশপ্রেমিক শক্তিকে শেষ করতে হবে। সেটি করতে হবে ধীরে ধীরে। আর সে মহাপরিকল্পনা নিয়েই এগুচ্ছে। এখন দেখা যাক, মানুষ ভাবে এক, হয় আরেকটা। জেনারেল রাওয়তের দাবিঃ “আমার মনে হয়, ছায়াযুদ্ধের অঙ্গ হিসেবেই সুপরিকল্পিত ভাবে এমন করছে ভারতের পশ্চিম দিকের পড়শি দেশ। এবং তাতে সমর্থন জোগাচ্ছে উত্তর সীমান্তের দেশটি, যাতে ওই অঞ্চলে গোলযোগ বজায় রাখা যায়।” ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়তের আরও দাবি, উত্তর-পূর্বের ওই এলাকা দখলের চেষ্টাও তারা সর্বদাই চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মীদের একটি সংগঠন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে ভাষণ দিতে গিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বন্ধুত্বের সম্পর্ক এর দেশ, বাংলাদেশকে জড়িয়ে অন্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ওপর এমন বিতর্কিত মন্তব্য করেন জেনারেল রাওয়ত। অাসামের বেশ কয়েকটি জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে একাধিক রিপোর্ট সামনে এসেছে বলে জানালেন তিনি। পাশাপাশি, অাসামে বদরুদ্দিন আজমলের নেতৃত্বাধীন এআইইউডিএফ (অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট)-এর বাড়বাড়ন্ত নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জেনারেল রাওয়ত। ২০০৫-এ জন্মলগ্নের পর থেকে এআইইউডিএফ থেকে এখনও পর্যন্ত লোকসভায় গিয়েছেন ৩ জন। অন্য দিকে, অাসাম বিধানসভায় তাদের বিধায়ক রয়েছে ১৩ জন।
অাসাম সরকার ইতোমধ্যেই বেআইনি অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার জন্য জাতীয় নাগরিক পঞ্জি বা এনআরসি-র প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জেনারেল রাওয়তের মতে, উন্নয়নের মাধ্যমেই এলাকার সমস্যার সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি, অশান্তি সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা শুরু করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে এর আগেও পাকিস্তানকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন সেনাপ্রধান। গত ১৫ জানুয়ারি সেনা দিবসের একটি অনুষ্ঠানে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, অনুপ্রবেশে মদত বন্ধ না করলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেনারেল বিপিন রাওয়ত যে নিজের এখতিয়ার ছাড়িয়ে গিয়েছেন, তা নিয়ে কোন সংশয় নেই। তিনি না বুঝে সীমাটা লঙ্ঘন করলেন, নাকি বুঝেশুনেই এমন মন্তব্য করলেন, প্রশ্ন তা নিয়েই, এ বিষয়ের উত্তর খুঁজছে বাংলাদেশ ও স্বয়ং ভারতের রাজনীতিক বিশ্লেষকরাও। বাংলাদেশে কী তাহলে ভারতের কোন নতুন খেলার একটি ফ্রন্ট বানাতে চান নাকি, প্রশ্ন এদেশের দেশপ্রেমিক প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীদের। হিন্দুস্তান টাইমস লিখেছে, সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যে বিজেপি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে, যদিও কংগ্রেস তার বিরোধিতা করেছে। আমাদের বাংলাদেশীদের জন্য এ বক্তব্য হাল্কা ভাবে নেবার কোন যৌক্তিকতা নেই। তারা কি আসামের মুসলমানদেরকে বিতাড়ন করে বাংলাদেশে পাঠাতে চায়? অথবা বাংলাদেশে যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘটাতে চায়? তারা কি বাংলাদেশে সামরিক অভিযান চালাতে চায়? আমাদেরকে অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে। এ বিষয়ে সচেতন দেশপ্রেমিক ও দেশের অখন্ড রক্ষার শপথে বলীয়ান সামরিক বাহিনীকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
যদি না বুঝে এই মন্তব্য করে থাকেন জেনারেল রাওয়ত, তাহলে উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। অত্যন্ত দায়িত্বশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি পদের অধিকারী এখন তিনি। এত গুরুত্বপূর্ণ পদে বসেও কেউ যদি বুঝতে না পারেন যে, কোন মন্তব্য উচিত এবং কোনটা অনুচিত, তাহলে পদাসীন হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়।