কূটনীতিতে ভারতকে আবার বিভ্রান্ত করলেন টিলারসন!
অক্টোবর ২৯, ২০১৭ঃ
[টিলারসন যখন বলেছিলেন, পাকিস্তানেই রয়েছে বেশির ভাগ সন্ত্রাসী আস্তানা এবং এগুলো গুঁড়িয়ে দিতে হবে, তখন নয়া দিল্লি খুশি হয়েছিল। কিন্তু টিলারসনের সর্বশেষ এ ব্রিফিং দিল্লিকে আবার বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে। ভারত চায়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিক ওয়াশিংটন। কিন্তু ওয়াশিংটন তেমন কিছু করতে চাচ্ছে না, তেমন কিছু করার মত অবস্থাতেও নেই। টিলারসন বলেছেন, তিনি ইসলামাবাদকে বোঝাতে চাইছেন, আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করব।]
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে তার সাত দিনের সফর পর্যালোচনা করে বৃহস্পতিবার বলেছেন, তিনি পাকিস্তানকে বাধ্য করবেন না, তবে জোর দিয়ে বলেন, দেশটির সমর্থন নিয়ে বা সমর্থন ছাড়াই সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করবেন। গত মঙ্গলবার টিলারসন, ৬৪, পাকিস্তানের বেসামরিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দের সাথে কয়েক দফা আলোচনা করেন।
তিনি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রয়াস জোরদার করার জন্য ইসলামাবাদের প্রতি আহ্বান জানান। পাকিস্তান সহযোগিতা করতে সম্মত হলেও চাপের কাছে নতি স্বীকার করতে অস্বীকার করে, মার্কিন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে। মৃদ্যু কূটনৈতিক দক্ষতার জন্য পরিচিত টিলারসন বলেন, ইসলামাবাদের কাছে বার্তা হলঃ ‘আমরা চাই পাকিস্তান এ কাজ করুক। আমরা তাদেরকে এসব কাজ করতে বলেছি। আমরা কোন কিছু দাবি করছি না। তোমরা একটি সার্বভৌম দেশ। কী করতে চাও, সে সিদ্ধান্ত তোমরা নেবে।’
তিনি নতুন দক্ষিণ এশিয়া নীতির কৌশলগত প্রকৃতির কথা স্বীকার করে বলেন, সন্ত্রাসবাদ যাতে হুমকি হয়ে না থাকতে পারে, সেজন্য এটাকে নির্মূল করতে হবে। আমাদেরকে পরিস্থিতির আলোকে কাজ করতে হবে। আর পুরো দক্ষিণ এশিয়া কৌশলই পরিস্থিতিভিত্তিক কৌশল।
বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে বলছেন, ওয়াশিংটনের নতুন দক্ষিণ এশিয়া কৌশল আসলে স্পষ্ট কোন কৌশল খোঁজার নীতি। এর ফলে বিমূর্ত ও অর্জন-অসাধ্য লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেশ কিছু কৌশলগত পদক্ষেপের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে এটা। পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক সামান্য কিছু সময়ের জন্য ভাল হওয়ার পর টিলারসনের সফরের ফলে তাতে আবার তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টিলারসন যখন বলেছিলেন, পাকিস্তানেই রয়েছে বেশির ভাগ সন্ত্রাসী আস্তানা এবং এগুলো গুঁড়িয়ে দিতে হবে, তখন নয়া দিল্লি খুশি হয়েছিল। কিন্তু টিলারসনের সর্বশেষ এ ব্রিফিং দিল্লিকে আবার বিভ্রান্তিতে ফেলে দিয়েছে। ভারত চায়, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিক ওয়াশিংটন। কিন্তু ওয়াশিংটন তেমন কিছু করতে চাচ্ছে না, তেমন কিছু করার মত অবস্থাতেও নেই। টিলারসন বলেছেন, তিনি ইসলামাবাদকে বোঝাতে চাইছেন, আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসবাদকে পরাজিত করব।
টিলারসন বলেন, ‘আমরা এটাকে প্রয়োজনীয় মনে করি। যদি তোমরা তা করতে না চাও, তবে মনে করবে না যে তোমরা তা করতে পার। আমরা আমাদের কৌশলে পরিবর্তন আনব, আমরা একই লক্ষ্য ভিন্নভাবে হাসিল করব।’
যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যকার মর্যাদার কথা স্বীকার করে টিলারসন পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের তাদের দেশের উদ্বেগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি, ‘তোমরা এটা করতে পার, কিংবা তোমরা এটা না করার সিদ্ধান্ত নিতে পার।’
তিনি বলেন, তোমরা যদি তা না করতে চাও, তবে আমাদের তা জানাও। আমরা নতুন করে কিছু ভাবব।
সমস্যা দিল্লী’র
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা এবং পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেলেও ওয়াশিংটনের সর্বশেষ বক্তব্যে মনে হচ্ছে, ইসলামাবাদকে পরিত্যাগ করার মধ্যে কিছু বিপদও আছে বলে তারা মনে করছে।
পাকিস্তানি নীতিনির্ধারকদের মনে দিল্লী কতটা স্থান জুড়ে আছে, সে ব্যাপারে অবগত থেকেই কাশ্মীর বিরোধে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্র সরকারিভাবে এ বিরোধে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের দাবি করলেও কাশ্মীর সমস্যার মূলে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার নয়, বরং সন্ত্রাসবাদই আসল কথা- ভারতের এ যুক্তির পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। পাকিস্তান মনে করে, ভারতের সাথে এ নিয়ে বৈরিতা অবসানে যুক্তরাষ্ট্র ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু চীনকে প্রতিরোধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতকে খুশি করার নীতি গ্রহণ করেছে।
ইসলামাবাদের জন্য দিল্লী থেকে নির্দেশনা নিয়ে গেছেন বলে যে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে, টিলারসন তাও বাতিল করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি ইসলামাবাদে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। পাকিস্তানের জনগণ স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তান থেকে এবং সন্ত্রাসমুক্ত অ ল থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শহিদ খাকান আব্বাসি, সেনাপ্রধান জেনারেল কমর বাজওয়া এবং পাকিস্তানি নেতৃত্বের কাছে এটা ছিল আমার মূল বক্তব্য। যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত এমন একটি ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে, যার ফলে ভারতের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হলেও ইসলামাবাদকে পুরোপুরি পরিত্যাগ করা হবে না।
পর্যবেক্ষকদের মতে এটা একটি কঠিন কাজ। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো আমলে নিলে বলা যেতে পারে, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র সুনির্দিষ্ট কৌশলগত বিষয়াদিতে পারস্পরিক সহযোগিতা করতে পারে। বিচ্ছিন্নভাবে ঘটা সমঝোতামূলক পদক্ষেপও আস্থার ঘাটতি কমিয়ে আনতে পারে। আর তা নতুন কৌশলগত সম্পর্কের সূচনায় ব্যবহৃত হতে পারে।
সূত্রঃ সাউথএশিয়ান মনিটর