মালদ্বীপে সঙ্কটে ভারত মহাসাগরে ঢুকল এবার চীনা নৌবহর।
নিউইয়র্ক থেকে ড. ওমর ফারুকঃ মালদ্বীপে চলছে সাংবিধানিক সঙ্কট। এ রকম অবস্থাতেই ভারত মহাসাগরের পূর্বাঞ্চলে বড়সড় নৌবহর পাঠিয়ে দিয়ে চীন ভারতকে কী বুঝাতে চাইল, স্পষ্টতই ভারতকে জানিয়ে দিল, আর বেশি বাড়বে না । বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, অন্ততঃ ১১টি চীনা যুদ্ধজাহাজ ভারত মহাসাগরের পূর্বাংশে প্রবেশ করেছে। চীনা সংবাদমাধ্যম জিনহুয়ার বরাত দিয়ে অধিকাংশ গণমাধ্যমে এমন খবরই প্রাশিত হয়েছে। অবশ্য চীন একবারের জন্যও উচ্চারণ করেনি যে, এর সঙ্গে মালদ্বীপ সঙ্কটের কোন সংযোগ রয়েছে। এমন কোন কথা চীনা সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয় নি। কিন্তু কোন পূর্ব ঘোষণা ছাড়া হঠাৎ ভারত মহাসাগরের ওই অঞ্চলে ১১টি চীনা যুদ্ধজাহাজের ঢুকে পড়াকে কোন সাধারণ বিষয় হিসেবে দেখছেন না ভারতীয় ভূ ও রাজনীতিক বিশেষজ্ঞরা।যে চীনা নৌবহর ভারত মহাসাগরে ঢুকেছে, তাতে ডেস্ট্রয়ার, ফ্রিগেট, অ্যাম্ফিবিয়াস (উভচর) ট্রান্সপোর্ট ডক এবং সাপোর্ট ট্যাঙ্কার রয়েছে বলে চীনা নিউজ পোর্টাল ‘সিনা ডট কম ডট সিএন’ জানিয়েছে।
মালদ্বীপের কাছাকাছি অঞ্চলে চীনা নৌবহর বেশ কয়েক দিন আগেই পৌঁছেছে বলে খবরে প্রকাশিত হয়েছিল। চীনের সশস্ত্র বাহিনী পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) গত শুক্রবার ভারত মহাসাগরে নিজেদের নৌবহরের উপস্থিতির কিছু ছবি পোস্ট করে। চীনের নিজস্ব সোশ্যাল মিডিয়া ‘ওয়েইবো’ (http://us.weibo.com/gb) – র সেই পোস্টে পিএলএ জানায়, ভারত মহাসাগরের ওই অঞ্চলে প্রশিক্ষণ এবং উদ্ধারকাজের মহড়া দিচ্ছে তাদের নৌসেনা। ঠিক কতদিনের জন্য এই মহড়ার আয়োজন করা হয়েছে, চীনা নৌবহর ভারত মহাসাগরের ওই অঞ্চলে আর কতদিন থাকবে, সে বিষয় পিএলএ-র পোস্ট থেকে সবিস্তারে কোন তথ্যই জানা যায় নি। চীনের যে নিউজ পোর্টালটি নৌবহর পাঠানোর খবর প্রকাশ করেছে, তারাও এ বিষয়ে কিছু লেখে নি। এ সময় হঠাৎ ভারত মহাসাগরের পূর্বাঞ্চলে নৌবহর পাঠানো হল কেন, সে সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেয় নি চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও।
মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লা ইয়ামিনের একাধিক স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সম্প্রতি রায় দিয়েছিল সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট। ইয়ামিন রায় মানেন নি। তিনি দেশে জরুরী অবস্থা জারী করেছেন। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে জেলে পাঠিয়ে দিয়েছেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গায়ুমকেও জেলে ভরেছেন ইয়ামিন। ভারতীয় সীমা থেকে মাত্র ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মলদ্বীপের সঙ্গে দিল্লীর সম্পর্ক বরাবরই নিবিড় বলে দাবী করে নয়াদিল্লা কর্তৃপক্ষ। এরকম দাবী ভারত আর প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথেও করে থাকে। আসলে কারও সাথে ভারতের নিবিড় সম্পর্ক নেই। থাকলেও আছে যে সকব দেশে জনস,র্থনহীন সরকার আছে, সে সব সরকারের সাথে নিবিড় সম্পর্ক আছে। কিন্তু জনগণের সাথে নয়, বললেন নাম না প্রকাশের শর্তে এক ভারতীয় রাজনীতিক বিশ্লেষক। প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের স্বৈরাচারী পদেক্ষেপে সে দেশে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে, তার নিরসনে ভারতীয় হস্তক্ষেপ চেয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা বিরোধী নেতা নাশিদ। মলদ্বীপে সেনা পাঠানোর জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছেন তিনি। সরেজমিনে মালদ্বীপের নাগরিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলতঃ নাশিদের অতিরিক্ত ভারতমুখীতা সে দেশের বেশির ভাগ জনগণ ও সামরিক বাহিনী ভাল ভাবে মেনে নিতেদ পারে নি। আর সেজন্য তাকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে জনগণের পছন্দের শাসন কায়েম করার লক্ষ্যে এ পরিবর্তন।
এদিকে ভারতীয় আশ্রয় প্রশ্রয় লাভ ও আশীর্বাদে সিক্ত ধন্য নাশিদের অনুরোধ মেনে ভারত যদি সেনা পাঠায় মালদ্বীপে, তা হলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে বলেও চীন ইতোমধ্যে সতর্কবার্তা দিয়েছিল। ভারত মালদ্বীপে নৌবহর পাঠানোর সকল আয়োজন সমাপ্ত করতে না করতে সেই বেজিং এবার নিজেই মালদ্বীপের খুব কাছাকাছি নৌবহর পাঠিয়ে দিল।