ভবিষ্যতে খালেদা সরকারের মোকাবিলার জন্য ভারতকে প্রস্তুত হতে হবেঃ পিনাক
সাবেক এই কূটনীতিক এও বলেন, ‘খালেদা-তারেক শাসনামলের কথা মাথায় রেখেই শেখ হাসিনা সরকারকে সমর্থন চালিয়ে যেতে হবে। যদিও বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অপশাসন নিয়ে একটি দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে। তাই ভবিষ্যতে বিএনপি-জামায়াত সরকারের মোকাবিলা করার জন্য ভারতকে অবশ্যই প্রস্তুত হতে হবে।’
ভারতীয় প্রভাবশালী দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসে লেখা এক বিশ্লেষণধর্মী নিবন্ধে তিনি এ কথা বলেছেন।
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মঙ্গলবার অনলাইন সংস্করণে নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয়েছে।
সাবেক কূটনীতিক পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘৮ ফেব্রুয়ারি দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির মামলায় একটি বিশেষ আদালত কারাদণ্ড দিয়েছেন। এ মামলায় তার ছেলে তারেক রহমানসহ আরো চারজনকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তারেক এখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আছেন। বিএনপির অভিযোগ, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির মামলা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।’
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমল নিয়ে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী লিখেছেন, ‘বিএনপির সমর্থকেরা হয়তো এ দৃষ্টিভঙ্গি সমর্থন করবেন যে ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান একটি দুর্নীতিপরায়ণ ও চাঁদাবাজ সরকারের প্রধান ছিলেন। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ে তারেক রহমান ও তার ছোট ভাই আরাফাত রহমান কোকো চাঁদাবাজির একটি সংঘবদ্ধ জোট এবং একটি সমান্তরাল সরকারব্যবস্থা চালিয়েছেন। চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে তারেক রহমানের ব্যবসায়িক অংশীদার সাজা পেয়েছিলেন এবং এখন কারাগারে আছেন। উলফার জন্য পাকিস্তান থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আসার ব্যবস্থা করার অভিযোগে খালেদা জিয়ার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (লুৎফুজ্জামান বাবর) এখন কারাগারে রয়েছেন। এমনকি সৌদি আরবও বলেছে, খালেদা ও তার ছেলেরা সেই দেশের আবাসন খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছেন।’
২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় হাইকমিশনার হিসেবে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন পিনাক রঞ্জন। নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়, ভারতের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ধ্বংস করার জন্য বাংলাদেশ ও পাকিস্তান হাত মিলিয়ে ছিল। পাকিস্তান ও তারেক চক্রের সমর্থনে বেশ কিছু ইসলামি মৌলবাদী দল বিখ্যাত হয়ে ওঠে এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোকেও সমর্থন দেওয়া হয়। তারেক রহমান এসব মৌলবাদীকে ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। আর পাকিস্তান এদের ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চেয়েছিল।’
২০০৪ সালের ২১ আগস্টে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার কথা উল্লেখ করে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী লিখেছেন, ওই হামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতির (মো. জিল্লুর রহমান) স্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী নিহত হন। এ হামলার মামলায় কয়েকজন বিএনপি নেতা অভিযুক্ত হয়েছেন। এই মামলায় অভিযুক্তের তালিকায় তারেক রহমানও রয়েছেন। অভিযোগ আছে, গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল তারেক রহমানের বাড়িতে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এ মামলায় তারেকের মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছেন।
বর্তমানে ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একজন ফেলো হিসেবে কর্মরত পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। ১৯৯০ সালে এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। তিনি মনে করেন, নির্বাচন বর্জনের মতো কোনো পদক্ষেপ বিএনপি হয়তো নেবে না। নিবন্ধে তিনি বলেন, গত নির্বাচন বর্জন করেছিল বিএনপি। কিন্তু এবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বাধা দেওয়া হলেও বিএনপি সেই ভুল আর করবে না। একদিকে বিদেশ থেকে ফিরে দলের নেতৃত্ব দিতে পারবেন না তারেক রহমান। অন্যদিকে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিএনপির নির্বাচনী মিত্র জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। ফলে দুর্বল শক্তির বিএনপি হয়তো আগামী নির্বাচনে খুব বেশি লড়াই করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এই কূটনীতিক।
নিবন্ধের শেষের দিকে বর্তমান সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকারের করণীয় কী, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। সাবেক এই কূটনীতিক লিখেছেন, ‘শেখ হাসিনা সরকারকে ভারত সমর্থন দিয়ে আসছে। খালেদা-তারেক শাসনামলের কথা মাথায় রেখেই এটি চালিয়ে যেতে হবে। যদিও হাসিনা সরকার দেশটিতে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন করেছেন, কিন্তু বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের অপশাসন নিয়ে একটি দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে। তাই ভবিষ্যতে বিএনপি-জামায়াত সরকারের মোকাবিলা করার জন্য ভারতকে অবশ্যই প্রস্তুত হতে হবে। আশা করা যায়, ভারতের সঙ্গে একই ভুল তারা (বিএনপি-জামায়াত) আর করবে না।’