সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর কবরস্থান বলে বিবেচিত আফগানিস্তানে সব শেষে চীনের পদক্ষেপ।।

February 14, 2018 7:53 pm0 commentsViews: 104
পেপে এসকোবার।।

সাম্রাজ্যগুলোর কবরস্থান বিবেচিত আফগানিস্তানের অনন্ত ঐতিহাসিক কাহিনীতে নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা ঘটেছে। গত দুই মাস ধরে চীন সীমান্ত সংলগ্ন আফগানিস্তানে একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সম্ভাব্যতা নিয়ে বেইজিং ও কাবুল আলোচনা চালাচ্ছে।

আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রাদমানেশ এএফপির কাছে স্বীকার করেছেন, আমরা একটি ঘাঁটি নির্মাণ করতে যাচ্ছি, চীন সরকার এতে আর্থিক ও সৈন্যদের সরঞ্জাম দিতে রাজি হয়েছে।

চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেবল এটুকু স্বীকার করেছে, তারা আফগানিস্তানের ‘সামর্থ্য বৃদ্ধিতে’ সম্পৃক্ত রয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন ন্যাটোর রেসুলিউট সাপোর্ট মিশন যা বলেছে তা হলো ‘কোনো মন্তব্য নয়।’

সামরিক ঘাঁটিটি নির্মিত হতে পারে পার্বত্যময় ওয়াখান করিডোরে। এই সংকীর্ণ করিডোরটি উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান থেকে চীন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়ে তাজিকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে আলাদা করেছে।

এটি মধ্য এশিয়ার অন্যতম প্রত্যন্ত বিরান ভূমি। এখানে আরো আগে থেকেই আফগান-চীনা টহল চলছে। এটি আসলে চীনের নিজস্ব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ।

কৌশলগত অগ্রাধিকারঃ

বেইজিংয়ের কৌশলগত অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টের (ইটিআইএম) উইঘুর যোদ্ধাদের প্রতিরোধ করা। এসব যোদ্ধা আফগানিস্তানে প্রবাস জীবনযাপন করছে, মাঝে মাঝে ওয়াখান করিডোর অতিক্রম করে স্বায়াত্তশাসিত উত্তর-পশ্চিম জিনজিয়াঙে প্রবেশ করে। এমন আশঙ্কাও রয়েছে, সিরিয়া ও ইরাকি আইএসআইএস জিহাদিরা আফগানিস্তানকে তাদের সাময়িক অবস্থানস্থল হিসেবে ব্যবহার করে পরে চীনের ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারে।

জিহাদি দুনিয়ায় বিভক্তি সত্ত্বেও ইটিআইএম নিয়ে বেইজিং উদ্বিগ্ন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে আল-কায়েদার আয়মান-আল-জাওয়াহিরি জিনজিয়াঙে চীনের বিরুদ্ধে জিহাদকে সমর্থন করেছিলেন।

আইএস নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি ২০১৪ সালের জুলাই মাসে বলেছিলেন, চীন, ভারত ও ফিলিস্তিন বলপূর্বক দখল করার অধিকার রয়েছে মুসলিমদের। ২০১৭ সালের ১ মার্চ আইএস এক ভিডিওবার্তায় আফগানিস্তানে তার উপস্থিতির কথা ঘোষণা করে। তারা জিনজিয়াঙে রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার সংকল্প ব্যক্ত করে।

বিষয়টির কেন্দ্রে রয়েছে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগ বা নিউ সিল্ক রোড, যা এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের সাথে চীনকে সংযুক্ত করবে।

সন্ত্রাসীরা মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় হুমকি সৃষ্টি করলে ৫৭ বিলিয়ন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) সমস্যায় পড়বে।

চীন ও রাশিয়ার কৌশল একই রকমের। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) প্রতিটি বৈঠকে তারা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। আফগানিস্তানও এই সংস্থার পর্যবেক্ষক, তারা ভবিষ্যতে পূর্ণ সদস্যও হতে পারে। রাশিয়া-চীন অংশীদারিত্ব মনে করে, শান্তিপূর্ণ আফগানিস্তানের ভবিষ্যত নির্ধারিত হবে অবশ্যই এশিয়া, এশিয়ার মাধ্যমে ও এসসিওতে।

ডিসেম্বরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই ল্যাভরভ ব্রিকসের (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা) কূটনীতিকদের বলেন, তালেবানের সাথে আলোচনাকে অগ্রাধিকার দেয় মস্কো।

কিন্তু প্রশ্ন হলো তালেবানের কাদের সাথে কথা বলা হবে। তাদের প্রধান দুটি গ্রুপ আছে। মধ্যপন্থীরা শান্তি-প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে, তারা জিহাদবাদের বিরুদ্ধে। আর চরমপন্থীরা যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো-সমর্থিত কাবুল সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখতে চায়।

অন্যদিকে চীন চায় আফগানিস্তানকে সিপিইসিতে অন্তর্ভুক্ত করতে। সে পাকিস্তানের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ককে ব্যবহার করে তালেবানকে স্থায়ী শান্তি-প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে আশাবাদী।

ছয় প্রকল্প

লিউ জিনসঙকে কাবুলে রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করাটা চীনের একটি বিশেষ পরিকল্পনা অংশবিশেষ। অবশ্য তার নিযুক্তির আগেই চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াঙ ইয়ি সিপিইসির ছয়টি প্রকল্প আফগানিস্তান পর্যন্ত সম্প্রসারণ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এসবের মধ্যে রয়েছে পেশোয়ার-কাবুল মহাসড়ক সম্প্রসারণ, ট্রান্স-আফগান মহাসড়কের মাধ্যমে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়াকে সংযুক্ত করা।

এখন রুশ-চীন দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ওয়াশিংটনের কৌশলের তুলনা করা যাক। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতি হলো তালেবানকে পরাজিত করে তাদেরকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করা। তালেবান এখন বিশাল এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের হারাতে ট্রাম্প প্রশাসন শক্তি বৃদ্ধি করছে।

কিন্তু তাতে কি কাজ হবে? ২০১৪ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ইরান ও আফগানিস্তান অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র ১.৬ ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। কিন্তু তারপরও তারা শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।

এত অর্থ ব্যয়ের পরও সাফল্য না পাওয়ার প্রেক্ষাপটে সবার নজর এখন চীনের দিকে। তারা দেখতে আগ্রহী বেইজিং সত্যিই ‘উইন-উইন’ অবস্থা সৃষ্টি করতে পারে কিনা। সূত্রঃ সাউথএশিয়ান মনিটর।

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com