বাংলাদেশে বিএনপি ও জিয়া পরিবারের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কী?
বাংলাদেশে দুর্নীতি মামলায় জেলে আছেন খালেদা জিয়া। এখন দলের দায়িত্ব নিয়েছেন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। যিনি নিজেও দু’টি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ও বহু মামলায় অভিযুক্ত। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধেও আরও বেশ কটি মামলা বিচারাধীন। প্রশ্ন উঠছে বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং নেতৃত্ব নিয়ে। ‘বিএনপি সময় অসময়’ গ্রন্থের লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি জিয়াউর রহমান মারা যাবার পর এবং এরশাদের সময়েও সংকটে পড়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সময়েও একটা বড় সংকট তাদের গেছে। কিন্তু এবার পরিস্থিতি জটিল। “দলতো আছে, কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, দলের মধ্যে সংহতিটা থাকবে কিনা। কারণ এই দলের অনেক নেতা অতীতে দল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন আবার এসেছেন, আবার চলেও যেতে পারেন। সরকার থেকে নানান টোপ তাদের দেয়া হতে পারে। সুতরাং এই সময়টা বিএনপি’র জন্য খুবই নাজুক।”
কিন্তু বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দাবি করছেন, তাদের নেতা জেলে যাওয়ায় দলীয় নেতাকর্মীরা আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ। “মামলা বিএনপিকে বেশি ক্ষতি করতে পারবে না। কারাগারেও তাকে বেশিদিন রাখতে পারবে না। দল অটুট আছে ও অটুট থাকবে। মামলা একটা বড় হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে আওয়ামী লীগের সরকার। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস আমাদের কর্মীবাহিনী, জনগণ এগুলো উপেক্ষা করে মোকাবেলা করে তারা আমাদের যে রাজনৈতিক লক্ষ্য, সে লক্ষ্যে তারা পৌঁছুতে পারবে।” রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির চূড়ান্ত রাজনৈতিক লক্ষ্য নির্বাচনে জয়ী হয়ে দলকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা। প্রায় এগার বছর ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। কারাগারে দলীয় প্রধান খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রায়ের অপেক্ষায় আরও মামলা আছে। তারেক রহমানেরও দেশে ফেরার পরিস্থিতি নেই।
মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, “যেহেতু এই দলগুলো এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক। বিএনপির মত দলে সেকেন্ড ম্যান বলে কিছু নাই। যাকে তারা সেকেন্ড ম্যান বলছেন, তিনিও তো দৃশ্যমান না। সুতরাং এটা আরেক ধরনের সংকট। এবং এই সংকটটা আরও বড় মনে হবে, যেহেতু নির্বাচনটা কাছে। সুতরাং নির্বাচনে এবার যদি বিএনপি খুব প্রস্তুতি নিয়ে মোকাবেলা করতে না পারে, তাহলে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে হবে।” এদিকে এ বছরই বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। গত নির্বাচন বয়কট করা দল বিএনপি এবার যখন নির্বাচন করতে চাইছে, তখন দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়া কারাগারে গেলেন।
মি. আহমদ মনে করেন, “যে কোন কিছু ঘটে যেতে পারে। এটা সামাল দেবার জন্য যে ব্যক্তিত্ব, ক্যারিশমা এবং নেতৃত্ব দরকার, সেটা কিন্তু দলের মধ্যে বেগম জিয়া ছাড়া আর কারও নেই। দলে যদি নেতৃত্ব না থাকে, দলের পাঁচজন নেতা যদি পাঁচ রকমের কথা বলে, যেটা ইতোমধ্যে আমরা আলামত দেখছি, তাহলে তো এই দলটা নির্বাচন করার মত সামর্থ্য অর্জন করবে না।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার এবং তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে আদালতের রায়ের ওপর। বিরোধী দল ও মতের প্রতি সরকারের কঠোর অবস্থানও স্পষ্ট। এ অবস্থায় বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে কী কোন ভাবনা আছে বিএনপিতে?এ প্রশ্নে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নেতৃত্বের কোন সংকট বিএনপিতে নেই। নতুন কিছু ভাবার কিছু নেই। “আমরা এগুলো নিয়ে এতটুকু চিন্তিত নই, শঙ্কিত নই। এটা পার্ট অব পলিটিক্স। যতই ষড়যন্ত্র করা হোক, তাদেরকে রাজনীতি থেকে সরানো যাবে না। এটা সম্ভব না।”
তবে বাংলাদেশের বাস্তবতা এবং বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করে মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, বিএনপি একটি পরিবার কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল। “পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতির সমস্যাটা হচ্ছে এখানে যদি পরিবার থেকে ঐ ধরনের ক্যারিশম্যাটিক লিডার বেরিয়ে না আসেন আরেকজন তখন ঐ রাজনীতি আর টেকে না বেশিদিন।
অতীতে আমরা দেখেছি, মুসলিম লীগের একই পরিণতি হয়েছে। এছাড়া কৃষক শ্রমিক পার্টি ও ন্যাপের একই পরিণতি হয়েছে।” তাঁর মতে, আমাদের দেশে সামন্ত ধাঁচের মানসিকতা। আমরা পরিবারগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। জিয়া পরিবার থেকে একটা বিকল্প কাউকে বের করতে হবে। কারণ পরিবারের বাইরে নেতৃত্ব তো যাবে না। স্ট্যান্ডিং কমিটির যে অবস্থা কেউ কাউকে মানে না। পরিবার থেকেই কাউকে না কাউকে আসতে হবে। আমরা অনেক গসিপ শুনেছিলাম যে, তারেকের স্ত্রী তাকে স্ট্যান্ডিং কমিটির মেম্বার করা হল না কেন, এটা নিয়ে কয়েকজন কথা বলেছেন। এর বাইরে তো আমি দেখি না আসলে। সূত্রঃ