চীনকে অভিভূত করতে উইঘুর মুজাহিদদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলা।

আফগানিস্তানের যুদ্ধ প্রশ্নে চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসন বেইজিংয়ের প্রতি তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দিয়েছে। গত সপ্তাহে মার্কিন সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটিতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে এশিয়া ও প্যাসিফিকবিষয়ক সহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী র্যান্ডেল স্করিভার আফগানিস্তানে মার্কিন কৌশল বিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে বলেনঃ* আমি মনে করি, সন্ত্রাস দমন ফ্রন্টে চীন অংশীদার হতে পারে। তারা চীনের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে অবশ্যই চিন্তিত। তারা চীনে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক ও অন্যান্য স্থানের সন্ত্রাসগুলোর মধ্যকার যোগাযোগ নিয়েও উদ্বিগ্ন।
* ঐতিহাসিকভাবে আমাদের মধ্যে বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিগত মতপার্থক্য থাকলেও আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতার ব্যাপারে তারা আগ্রহী।
ভিডিও ক্লিপিংসসহ বিমান হামলার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরে রেজুলেট মিশনের প্রধান জেনারেল জেমস হেকার ৭ ফেব্রুয়ারি স্যাটেলাইটে সাংবাদিকদের বলেনঃ ইস্ট তুর্কিস্তান মুভমেন্ট পার্বত্য পাদাখশানে তালেবানের কাছ থেকে সমর্থন পেয়ে থাকে। ফলে তালেবানের ক্যাম্প গুঁড়িয়ে দিতে ও তালেবানের সাপোর্ট নেটওয়ার্ক ধ্বংস করতে এ হামলা চালান হয়েছে।
ইটিআইএমের শেকড় নিশ্চিতভাবেই পশ্চিম চীনের উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোর মধ্যে রয়েছে। রেজুলেট সাপোর্ট মিশনের মতে, আল-কায়েদা, তালেবানের সাথে মিলে এই গ্রুপের বিদ্রোহী মুজাহিদরা চীনের ভেতর ও বাইরে অতর্কিত হামলা চালাচ্ছে। ২০০২ সালের মে মাসে ইটিআইএম সদস্যদের কিরগিস্তানে মার্কিন দূতাবাসে হামলা চালানর ষড়যন্ত্র করার জন্য কিরগিজস্তান থেকে চীনে বহিষ্কার করা হয়।
এখন ওই হামলা চালানোর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বেশ জোরালোভাবেই চীনকে বার্তা দিল যে, আফগানিস্তানের যুদ্ধটি পারস্পরিক লাভের জন্য হতে পারে। সম্প্রতি এক রুশ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বি-৫২ বিমান যেখানে হামলা চালিয়েছে, সেখানেই একটি সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করতে আফগানিস্তানকে সহায়তা করতে পারে চীন। মজার ব্যাপার হল, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গত ৯ ফেব্রুয়ারি, শুক্রবার, যখন বাদাখশানে মার্কিন বিমান হামলা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন মুখপাত্র গেঙ শুয়াঙ একেবারে বাজে ধরনের একটি জবাব দেন। চীনা গোয়েন্দা তথ্যের আলোকে ওই হামলাটি হয়েছে কিনা জানতে চাইলে গেঙ বলেন, ‘বিচক্ষণ সহযোগিতায়’ চীন উন্মুক্ত।
তিনি জানান, এ ব্যাপারে তার হাতে এখন কোন তথ্য নেই। সন্ত্রাসবাদ মানবজাতির অভিন্ন সমস্যা, এর বিরুদ্ধে লড়াই করা সব দেশের দায়িত্ব। গত কয়েক বছরে ইটিআইএম ও অন্যরা চীন ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ায় সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। চীন সব সময়ই সন্ত্রাস বিরোধী ধারণা সমুন্নত রাখে। আমরা বিচক্ষণ সহযোগিতাকে স্বাগত জানাই।
কিন্তু কাকতালীয় ঘটনা হল, এ সব কিছু ঘটেছে চীনের স্টেট কাউন্সিলর ইয়াং জিয়েছির দু’দিনের ওয়াশিংটন সফরের পর। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাত করেন। মজার ব্যাপার হল, এই বৈঠকের আগে আফগানিস্তানসহ কয়েকটি বিষয় নিয়ে ফোনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে কথা বলেন। বার্তা সংস্থা শিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, হোয়াইট হাউসের সভায় আন্তর্জাতিক ইস্যুতে আরও বেশি সমন্বয়ের বিষয়টি আলোচিত হয়। ইয়াং মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টারের সাথেও আলাচনা করেন। তারা দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে, আফগানিস্তানে মার্কিন যুদ্ধ বিরোধিতা করে রাশিয়া ও ইরানের সাথে হাত মেলাতে পারে চীন। একই সাথে এমন আশাও করা হচ্ছে, আফগানিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-চীন যে কোন ধরনের অংশীদারিত্ব পাকিস্তান-চীন সম্পর্কেও প্রভাব ফেলবে। ওয়াশিংটন মনে করে, ট্রাম্পের আফগান কৌশলটি মধ্য এশিয়া অঞ্চলের স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট। যুদ্ধের পক্ষে জোরালো অবস্থান গ্রহণের জন্য ট্রাম্প প্রশাসন সাম্প্রতিক সময়ে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মার্কিন বিমান হামলার সাথে শুক্রবার আফগানিস্তান বিষয়ক রুশ প্রেসিডেন্টের বিশেষ দূত জমির কাবুলভের বিবৃতির মিল রয়েছে। জমির ওই বিবৃতিতে বলেছিলেন, আফগানিস্তান থেকে সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গ্যানাইজেশনকে সতর্ক অবস্থায় রেখেছে। গত ডিসেম্বরে জমির বলেছিলেন, তাদের হিসাব অনুযায়ী আফগানিস্তানে আইএসের মোট সদস্য ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। রাশিয়া অভিযোগ করেছে, যুক্তরাষ্ট্র গোপনে সিরিয়া ও ইরাক থেকে আইএস যোদ্ধাদের আফগানিস্তানে পাঠাচ্ছে।
আফগানিস্তানের ক্লসবিটজিন যুদ্ধের নানা মাত্রা রয়েছে। চলতি সপ্তাহে ইটিআইএমের ওপর মার্কিন বিমান হামলাটি আসলে হয়েছে তালেবান-পরিচালিত প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলোতে। উত্তর আফগানিস্তানে যদি তালেবানকে দুর্বল করা যায়, তবে ইসলামিক স্টেট (আইএস) শক্তিশালী হবে। ফলে মার্কিন বিমান হামলাটি পেন্টাগনের একটি স্মার্ট পদক্ষেপের তাৎপর্য বহন করছে। [বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অবল্বনে।]