নেকাব নারীর সুরক্ষা ও সৌন্দর্যের প্রতীক: কানাডীয় ধর্মান্তরিত নারী

February 11, 2018 10:29 pm0 commentsViews: 15

০৩ নভেম্বর,২০১৭

 হিজাব নারীর সুরক্ষা ও সৌন্দর্যের প্রতীকআলিয়া হগবেন: কানাডীয় মুসলিম নারীদের মধ্য অনেকেই ‘নেকাব’ পরিধান করে থাকেন। মুসলিম নারীদের ‘নেকাব’ পরিধান নিয়ে ইতোমধ্য কানাডাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে নারীদেরকে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করা হচ্ছে।

নেকাব মুসলিম নারীদের দৈনন্দিন জীবনে কী প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে ‘কানাডিয়ান কাউন্সিল অফ মুসলিম উইমেন’ (সিসিএমডব্লিউ) এর মুখোমুখি হয়েছেন কিংস্টন রাজ্যের এক ধর্মান্তরিত নারী।

সাধারণভাবে নেকাব পরিহিত নারীরা জনসাধারণের আগ্রহকে খুব একটা পছন্দ করেন না। তারপরেও তারা প্রায়ই মিডিয়া বা জনসাধারণের আগ্রহের বিষয়ে পরিনত হয়। সিসিএমডব্লিউ’তে আমাদের অনেকে হিজাব পরলেও কেউই নেকাব পরিধান করে না। তবে, আমি অল্প বয়স্ক এক নারীকে খুঁজে পেয়েছি যিনি নেকাব পরিধান করে থাকেন। তিনি তার নেকাব পরিহিত জীবনের ভবনাগুলো আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন।

১৯ বছর বয়সী অ্যান (ছদ্মনাম) স্থানীয় একটি কলেজের একজন ছাত্রী। প্রায় এক বছর হল তার বিবাহ হয়েছে। তিনি তার মুসলিম বন্ধুদের মাধ্যমে ইসলাম ধর্মের প্রতি প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং তাদের মতো তিনিও একই শান্তি লাভ করতে চেয়েছেন।

তিনি একটি স্টুডেন্ট গ্রুপের মাধ্যমে ইসলাম সম্পর্কে শিখেছেন এবং তিন বছর আগে ধর্মান্তরিত হন। তিনি টরন্টোর ‘আই৩’ ইনস্টিটিউটের একজন শিক্ষকের কাছ থেকে ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন কোর্স করেছেন।

তার পিতা-মাতা তার ধর্মান্তর এবং তার নতুন জীবনধারার বিরুদ্ধে। কিন্তু সে তার মুসলিম স্বামীকে পেয়ে সুখী। তার স্বামীর পরিবারের অনেকেই নেকাব না পরলেও স্বামীর পরিবার তার নেকাবকে গ্রহণ করেছে।

ধর্মান্তরে আগে তিনি হিজাব (মাথা আচ্ছাদন) এবং নেকাবকে (মুখ আচ্ছাদন) অত্যাচার হিসেবে দেখত। কিন্তু খুব শিগগিরই তিনি এটিকে ‘সৌন্দর্যের প্রতীক’ হিসেবে খুঁজে পান এবং ইসলামের একটি অংশ হিসাবে এটি দেখতে পান।

অ্যান ব্যাখ্যা করেন যে তিনি বিশ্বাস করেন যে হিজাব বাধ্যতামূলক হলেও নেকাব বাধ্যতামূলক নয়। তারপরেও তিনি নেকাব পরিধান করার সিদ্ধান্ত নেন, কারণ তিনি সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাস করেন যে, হযরত মুহম্মদ (সা.) এর স্ত্রীরা তাদের পুরো মুখ ঢেকে রেখেছেন এবং আইনশাস্ত্রের বিভিন্ন স্কুলগুলো শিক্ষা দেয় যে নেকাব একটি ভাল অভ্যাস।

তিনি মনে করেন যে নেকাব তার ধর্মকে উন্নত করেছে এবং তিনি চান যে লোকেরা তাকে ও তার নেকাবকে গ্রহণ করুক।

নেকাবের কারণে মানুষ তার সঙ্গে কিভাবে আচরণ করে-এমন প্রশ্নের প্রতিক্রিয়ায় তিনি জানান যে ক্লাসে তার সহকর্মী ছাত্র-ছাত্রীদের বেশিরভাগই তাকে ও তার নেকাবকে গ্রহণ করেছে। তবে, শ্রেণিকক্ষের বাইরে তাকে হয়রানির শিকার হতে হয় বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, অনেক সময় মানুষ তাকে দেখে অশালীন মন্তব্য করেন এবং একবার তাকে একটি স্টোরহাউজ থেকে থেকে বের করে দেয়ার জন্য বলা হয়। কারণ স্টোরকিপার তার কাছে পণ্য বিক্রি করতে অসম্মত ছিলেন।

তিনি ‘ইয়ুথ জাস্টিস’ বিষয়ক কানাডা স্টুডেন্টস কমিশনের একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি বেশিরভাগ ইন্টারনেটে কাজ করেন এবং অন্যান্য ছাত্রদের সঙ্গে ফিজিক্যালি তাকে সাক্ষাৎ করতে হয় না।

শারীর চর্চা সম্পর্কে: নেকাব পরা শুরু করার পর থেকে তিনি ‘গুড লাইফ ফিটনেস’ সেন্টারে গিয়ে শরীর চর্চা করেন। শরীর চর্চা ক্লাবটি কেবল মহিলাদের জন্য বলে তিনি জানান।

তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে নেকাব তার ধর্মীয় বিশ্বাস পালনের একটি অংশ। জোর করে নেকাব পরিধানের বিষয়ে তাকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু তারা অন্যদের মুখ দেখাতে পছন্দ করে, সুতরাং এব্যাপারে কেন তাদেরকে জোর করা হবে?

তিনি বলেন, ‘আমি আমার মুখ অন্যদের দেখাতে অস্বস্তিবোধ করি। তাই আমাকে অস্বস্তিকর অবস্থায় ফেলতে মানুষ কেন আমাকে জোর করবে? কেন আমাকে নেকাব খুলতে বাধ্য করব?’

তিনি জানেন যে নেকাব সম্পর্কে তার যুক্তির সঙ্গে অন্যান্য মুসলিমরা সম্মত নাও হতে পারেন।

ইসলাম কেন নারীদের মুখ ডেকে রাখতে বলেছে- জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান যে, তিনি মনে করেন যে এটি ‘নারীর সুরক্ষার’ সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এটি মুসলিম হিসাবে তার পরিচয়ের একটি অংশ।

তিনি বলেন যে ইসলামের অনুশীলন করা তার নিজের দায়িত্ব এবং এর মধ্যে রয়েছে সে কি তিনি পোশাক পরবেন এবং কিভাবে আচরণ করবেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে কানাডীয় সংবিধান তাকে ইচ্ছেমত পোশাক পরার অধিকার দিয়েছে।

তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি ইসলামের একটি নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা উপস্থাপন করছেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে অস্বীকার করেন যে তিনি নেকাবের মাধ্যমে পুরুষের যৌনতা রক্ষা করার দায়িত্ব গ্রহণ করেননি, বরং পুরুষ যাতে তার প্রতি ‘প্রলুব্ধ’ না হয় সেজন্য তিনি নেকাব পরিধান করেন।

ইন্টিগ্রেশন বা একত্রীকরণের গুরুত্ব সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বৈচিত্র্য, স্বাধীনতা এবং স্বীকৃতির বাইরে কানাডিয়ান সমাজ কি সংজ্ঞা রয়েছে তা বর্ণনা করতে আমি যে কাউকে চ্যালেঞ্জ করছি। কানাডা একটি গলিত পাত্র নয় যেখানে আমরা সবাই এক হয়ে যাব। কানাডা একটি বৈচিত্র্যবহুল রাষ্ট্র যেখানে আমরা সবাই বিকশিত হচ্ছি এবং সবারই অনন্য পরিচয় রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অন্যদের কাছে উপযুক্ত বলে বিবেচিত হওয়ার জন্য কোনো অভিবাসীকে তাদের পরিচয়, সংস্কৃতি বা ধর্মকে পরিত্যাগ করার প্রয়োজন নেই। কানাডীয় ভূখণ্ডে প্রথম যারা অভিবাসী হয়েছে তারা আদিবাসীদের সঙ্গে নিজেদেরকে একত্রিত করেনি; বরং তারা আদিবাসী জনগণের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক গণহত্যা সংগঠিত করেছে।’

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা যায় যে ৬০ শতাংশের বেশি কানাডিয়ান নেকাব নিষিদ্ধের বিষয়ে একমত পোষণ করেন। এ বিষয়ে তার মতামত জিজ্ঞেস করলে তিনি পাল্পা জবাব দেন যে, প্রায় ৪০ শতাংশই তার সঙ্গে একমত হবেন।

সাম্প্রতিককালে কুইবেকে নিকাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, তিনি যদি কুইবেকে থাকতেন, তবে তিনি সেখানে থেকে চলে যাওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করতেন। কারণ রাজ্যের আইনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে তিনি তার ধর্মীয় বিশ্বাস পরিবর্তন করতে ইচ্ছুক নন।

দ্য ওয়িং ডটকম অবলম্বনে

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com