যেভাবে মৃত্যু দূতকে কাছে ডাকলো মুনা

February 4, 2018 10:40 am0 commentsViews: 15

যেভাবে মৃত্যু দূতকে কাছে ডাকলো মুনা

যেভাবে মৃত্যু দূতকে কাছে- মোনলিসা ওরফে মুনা। বয়স বার। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। পড়ত ফতুল্লার দেওভোগ উজির আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। অনেকটা চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে। একভাই-একবোনের মধ্যে সে বড়। বাবা-মায়ের অনেক আদরের সন্তান।

স্কুলে যাওয়া-আসার পথে পরিচয় একই এলাকার সাইদের সঙ্গে। বয়সে সাইদ অনেক বড় হলেও বন্ধুত্বের একটা সম্পর্ক গড়ে উঠে তাদের মধ্যে। কিন্তু একটা সময় বন্ধুত্বটা বন্ধুত্বে সীমাবদ্ধ থাকে নি। আর এ সুযোগটি কাজে লাগানোর পরিকল্পনা নেয় ধূর্ত সাইদ। তারা কখনও মোবাইলে কখনো লুকিয়ে দেখা করতো। কিন্তু মোনালিসা ও সাইদের সম্পর্ক নিয়ে দুই পরিবারের ঝামেলার মধ্যে সাইদ দুবাই চলে যায়। তবে মোনালিসার সঙ্গে তার যোগাযোগ বন্ধ হয় নি। এক পর্যায়ে দেশে এসে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর সাইদ বিয়ে করে।

বিয়ের দাওয়াতনামা মোনলিসাদের বাসায় পাঠানো হয়। কিন্তু কেউ যায় নি। এদিকে বিয়ের পরও সাইদ গোপনে মোনালিসার সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে। মোবাইলে নিয়মিত কথা বলে। এনিয়ে সাইদের স্ত্রীর সঙ্গে সাইদের বাকবিতন্ডাও হয়। এক পর্যায়ে সাইদের স্ত্রী ও শাশুড়ী মোনালিসাদের বাসায় গিয়ে তাকে শাসিয়ে আসে। যেন সাইদের সঙ্গে কোন যোগাযোগ না রাখে। এতকিছুর পরও মোনালিসার কাছ থেকে পিছু হটেনি সাইদ।

ডেটলাইন ২ ফেব্রুয়ারিঃ

ফতুল্লার বাংলাবাজার আমবাগান এলাকায় শাহিন মিয়া। তার এক ছেলে শায়েদ (১০) ও এক মেয়ে মোনালিসা রওফে মুনা (১২। শুক্রবার সকাল। শাহিন মিয়া ও মা মরিয়ম বেগম বেড়াতে যাবেন নরসিংদীর মাধবদীতে মোনালিসার নানাবাড়িতে। যাওয়ার সময় ছেলেমেয়েকে ঘরের ভেতর তালাবন্দি করে চাবি ভাড়াটিয়া রবতন বেগমের কাছে দিয়ে যান।

রবতন নেছা মতে, সকাল বেলা তাকে চাবি দিয়ে যান মোনালিসার মা। কিছুক্ষণ পর পাশের বাসার আরেকজন ফ্রিজে মাছ রাখবে এ জন্য তার কাছ থেকে চাবি চায় মোনালিসা। তখন রবতন চাবি দিয়ে দেন। মাছ ফ্রিজে রাখার পর মোনালিসার কাছে চাবি চাইলে মোনালিসা বলে, ‘আমার চাবি আমি রাখব, আপনার দরকার কী? আপনি ভাড়াটিয়া, ভাড়াটিয়ার মত থাকেন।’ অনেকবার চাইলেও মোনালিসা চাবি ফেরত দেয় না। তখন তিনি আর কিছু বলেন না। তারপর জুম্মার নামাজের পর রবতন নেছা নারায়ণগঞ্জ শহরের ডিআইটি যান। তারপর সন্ধ্যার পূর্বে যখন বাসায় আসেন, তখন সাইদকে ঘরে দেখেন তিনি। তখন তিনি সাইদকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এখানে কি করেন আপনি?’ সাইদ তখন বলে, আমার আত্মীয়ের বাসায় আমি আসছি, এটাই তো স্বাভাবিক। তখন রবতন বলেন, আপনি আত্মীয় হলে আত্মীয়ের ব্যাপার, কিন্তু এখন মেয়ের বাবা-মা কেউ ঘরে নেই। এ সময় বাসায় কেন আসবেন? একথা বললে সাইদ তখন রবতন নেছাকে শাসিয়ে যান, আর বলেন, ‘বেশ বাড়াবাড়ি করবেন না। আপনারে আমি দেইখা নিমু।’

একথা বলে সাইদ চলে যায়। তারপর মোনালিসা তার ভাইকে ডাকতে বাসা থেকে বের হয় । তখন মোনালিসাকে স্বাভাবিকই দেখেছেন তিনি। কিছুক্ষণ পর ভাইকে খুঁজে না পেয়ে ঘরে চলে আসে মোনালিসা। এরপর রবতন নেছা তার ঘরে চলে যান।

মোনালিসার ছোট ভাই শাহেদ (১০) বলেন, সকালে মায় আর আব্বু বাসায় রাইখা বইলা গেছে দুজনে সুন্দর করে থাকবা। আমরা আইসা পড়ব। আমি দুপুরে ভাত খাইয়া টিভি দেখতে দেখতে ঘুমাইছি একটুখানি। তারপর তিনটা বাইজা গেছে। তারপর মুনাপু (মোনালিসা) কয়, যা তুই খেইল্লা আয় গিয়া।

আমি কই যামুনা। তারপর কয়, না গেলে বাপেরতে বিচার দিমু। তারপর আমি যাই খেলতে। কিন্তু তখন সাইদ ঘরের ভেতর ছিল। খেইল্লা আইসা দেখি আপু ফাঁসি দিয়া আছে। আমি তখন চিল্লান দেই। তখন এক আঙ্কেল আইছে। তারপর হেয় আর আমি মিল্লা আপুরে নামাইছি।’

কিন্তু এতকিছুর পর সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সাইদকে বাসায় এনেছে মোনালিসা। সে কি জানত, আজকের সাইদ তার আগের সাইদ নয়। সে যমদূত হয়ে এসেছে আজ। এই যমদূত অল্প সময়ের মধ্যে তার প্রাণ নেবে। সাইদ ফাঁকা ঘরে মোনলিসাকে একা পেয়ে যা কিছু করার সবই করেছে। দুজনের ইচ্ছেতেই হয়েছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাই বলে। সাইদ সব কিছু লুটেপুটে নিয়ে মোনালিসাকে নির্মমভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। তারপর লাশের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে নিরাপদে সটকে পড়ে। যেন সবাই মনে করে মোনালিসা আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু মোনালিসাকে খুন করল কেন সাইদ? এমন প্রশ্নের উত্তর নেই এলাকাবাসীর কাছে। তবে উত্তর পেতে সাইদ গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com