চীন মায়া সর্পরাজের ৬০ হাজার স্থাপনা খুঁজে পেল প্রত্নতাত্ত্বিকরা
প্রাচীন মায়া সভ্যতার ‘সর্পরাজ বা স্নেক কিং’ বলে পরিচিত শাসকদের সময়ের হাজার হাজার স্থাপনা খুঁজে পেয়েছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় গুয়াতেমালার জঙ্গলের গভীরে এসব স্থাপনা আবিষ্কার করেন গবেষকরা।
ওই অঞ্চল স্ক্যান করে তারা ইতিপূর্বে অজ্ঞাত ছিল এমন ৬০ হাজার স্থাপনার অস্তিত্ব খুঁজে পান। এর মধ্যে সাত তলা একটি পিরামিডও রয়েছে।
এই আবিষ্কারের ফলে মধ্য আমেরিকার ওই দেশটিতে প্রাচীন একটি উন্নত সমাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেল। প্রায় ১২শ’ বছর আগে উন্নতির শিখরে পৌঁছনো মায়া সভ্যতার অন্তর্ভুক্ত ওই সমাজের রহস্যময় শাসকদেরকে ‘সর্পরাজ’ বলে অভিহিত করে আসছেন প্রত্নতাত্ত্বিকরা।
‘লিডার’ নামের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আকাশ থেকে তোলা ছবিতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা ঘন জঙ্গলের গাছের আচ্ছাদন সরিয়ে ফেলতে সক্ষম হন। ‘লিডার’-এ লেজার রশ্মি ব্যবহার করে লক্ষ্যবস্তুর ত্রিমাত্রিক প্রতিচ্ছবি তৈরি করা যায়। এর ফলে তারা ঘন গাছ ও লতাগুল্মের আড়ালে ঢাকা পড়া সভ্যতার বিভিন্ন নিদর্শন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।
ঐতিহাসিকভাবে প্রত্নতাত্ত্বিকরা মনে করতেন, মায়া সভ্যতার শহরগুলো বিছিন্নভাবে গড়ে উঠেছিল এবং সেগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল। কিন্তু, এই নতুন আবিষ্কারের ফলে জঙ্গলের গভীরে পরস্পর সংযুক্ত সমৃদ্ধ সমাজের প্রমাণ পেলেন তারা।
আগে মনে করা হতো, মায়া সভ্যতার অধিবাসীদের সংখ্যা কখনোই ২০ লাখের বেশি ছিল না। কিন্তু এখন গবেষকরা ধারণা করছেন এই সভ্যতার জনসংখ্যা ছিল প্রায় দুই কোটি।
এর মানে হচ্ছে, ওই সময়ে ইউরোপের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক সংখ্যক মানুষ ইতালির আয়তনের সমান একটি জায়গায় বাস করতেন।
টুলান ইউনিভার্সিটির প্রত্নতাত্ত্বিক ডক্টর মারসেলো ক্যানুটো বলেন, ‘আমরা পশ্চিমারা দম্ভ করতাম গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে জটিল সভ্যতার বিকাশ সম্ভব নয়। ধারণা ছিল, সেখানে সভ্যতা ধ্বংসের মুখে পতিত হয়। কিন্তু মধ্য আমেরিকা মহাদেশ ও ক্যাম্বোডিয়ার অ্যাংকর ওয়াটে নতুন আবিষ্কারের ফলে এখন মনে হচ্ছে সমৃদ্ধ সমাজ ব্যবস্থার যাত্রা শুরুই হয়েছিল ওই গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল থেকে।’
দক্ষিণ গুয়াতেমালার প্রাচীন টিকাল শহরের আশেপাশের ২,১০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা লেজার দিয়ে স্ক্যান করে এসব স্থাপনা সনাক্ত করেন গবেষকদের দলটি।
তারা শহরাঞ্চলের কেন্দ্রগুলো ও বিভিন্ন খনির মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী উঁচু মহাসড়কের নেটওয়ার্ক খুঁজে পেয়েছেন।
ওই অঞ্চলে যে চাষাবাদ ব্যবস্থা, ভবনশ্রেণি ও চত্বরগুলো খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা, তা থেকে ধারণা করা হচ্ছে ওই সমাজে উন্নত কৃষি, খাল, পানি সংরক্ষণ, বাঁধ ও সেচব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছিল।
এলাকাটির প্রান্তে প্রতিরক্ষা ও দুর্গভিত্তিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা দেখে মনে করা হচ্ছে, মায়া জনগোষ্ঠী দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধেও লিপ্ত ছিল।
এখন পর্যন্ত ওই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটির সামান্য একটু জায়গা স্ক্যান করতে পেরেছেন গবেষক দল।
বস্টন ইউনিভার্সিটির প্রত্নতাত্ত্বিক ফ্রান্সিস্কো এস্ট্রাডা-বেলি বলেন, ‘নতুন তথ্যে এমন সব শহরের কথা জানা যাচ্ছে, যেগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা কিছুই জানতাম না। আরও ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটারজুড়ে অনুসন্ধান চালানো বাকি আছে। আমি আপনাকে গ্যারান্টি দিচ্ছি, সেখানে আরও শত শত শহর রয়েছে যেগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না।’