নতুন বইয়ে ট্রাম্পকে নিয়ে ১১ অজানা তথ্য
‘ফায়ার এন্ড ফিউরি: ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউজ’ নামের এ বইটি লিখেছেন মার্কিন সাংবাদিক মাইকেল ওলফ। আর এতেই ওইসব তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের পর ট্রাম্পের দ্বিধায় পড়া, অভিষেকের দিন অস্বস্তি, হোয়াইট হাউজ নিয়ে তার ভয় পাওয়া এমনকি তার পরনারী আসক্তির কথাও আছে বইটিতে।
এছাড়াও আছে, ইভাঙ্কা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাষ আর ট্রাম্পের প্রতি মিডিয়া মোগল রুপার্ট মার্ডকের অবজ্ঞার কথা।
দুইশ’র বেশি জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে বইটি লেখা হয়েছে। তবে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র সারাহ স্যান্ডার্স বলছেন, বইটি ‘মিথ্যা আর বিভ্রান্তিকর তথ্যে’ ভরা।
কিন্তু বইটির লেখক অভিষেকের দিন থেকে শুরু করে ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন বলেই দাবি করেছেন।
বইয়ের ১১ বিস্ফোরক তথ্য:
১. ট্রাম্প জুনিয়র-রুশ বৈঠক ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ বলে ব্যাননের অভিযোগ:
বইয়ের তথ্যানুসারে, নির্বাচনী প্রচারের সময় রাশিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাম্পপুত্র ডোনাল্ড জুনিয়রের বৈঠককে ‘রাষ্ট্রদ্রোহমূলক’ বলে অভিযোগ করেছিলেন হোয়াইট হাউজের সাবেক চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যানন।
২০১৬ সালের জুনে রুশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে ট্রাম্প টাওয়ারে ওই বৈঠক করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। বৈঠকে রাশিয়ানরা হিলারি ক্লিনটন সম্পর্কে বিধ্বংসী তথ্য দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল।
বৈঠকটি সম্পর্কে ব্যাননের বক্তব্য তুলে ধরে মাইকেল ওলফ তার বইয়ে লিখেছেন, প্রচার শিবিরের তিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার কোনও আইনজীবী ছাড়া ট্রাম্প টাওয়ারে বিদেশি সরকারের সঙ্গে বৈঠক করাকে ব্যানন ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ এবং ‘দেশপ্রেমহীনতা’ বলেই মনে করেছিলেন এবং অবিলম্বে এফবিআই’কে ডাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছিলেন।
২. নির্বাচনে জিতে দ্বিধায় পড়েছিলেন ট্রাম্প
নির্বাচনের রাতে ট্রাম্প যখন অপ্রত্যাশিত জয় পেলেন, তার প্রচার শিবিরে তখন কোনো আনন্দই ছিল না।
জয়ের কিছুক্ষণ পরই ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র তার এক বন্ধুকে বলেন, তার বাবাকে দেখে মনে হচ্ছিল যেন তিনি ভুত দেখেছেন।
ওদিকে, মেলানিয়ার চোখে পানি থাকলেও তা আনন্দাশ্রু ছিল না। ব্যাননের বর্ণনায়, ট্রাম্প ছিলেন পুরোপুরি দ্বিধাগ্রস্ত আর ভীত।
তারপর যেন হঠাৎই সম্বিত ফিরে পান ট্রাম্প। তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার যোগ্য, এমন বিশ্বাস জেগে ওঠে তার।
৩. অভিষেকে নিরানন্দ, রাগাম্বিত ছিলেন ট্রাম্প
অভিষেকের দিনটি উপভোগ করতে পারেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথম সারির বেশিরভাগ তারকা অনুষ্ঠানে না যাওয়ায় তিনি ছিলেন ক্ষুব্ধ।
স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়াও করেছিলেন ট্রাম্প। আর সে ঝগড়াতেই ফার্স্ট লেডি মেলানিয়ার চোখ ছিল অশ্রুসিক্ত। তবে এমন কথা নাকচ করেছে মেলানিয়ার কার্যালয়।
৪. হোয়াইট হাউজ নিয়ে ভীত ছিলেন ট্রাম্প
হোয়াইট হাউজ নিয়ে ভীত আর উদ্বিগ্ন ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একারণে তিনি নিজের শয়নকক্ষ বাদ দিয়ে আলাদা একটি কক্ষ নিয়েছিলেন।
প্রেসিডেন্ট কেনেডির পর থেকে হোয়াইট হাউজে এমন নজির এটিই প্রথম। প্রথমদিনেই ট্রাম্প তার ঘরে টিভি থাকার পরও আরও দুটি টিভি রাখা এবং দরজায় তালা লাগানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কিন্তু সিক্রেট সার্ভিস এজেন্টরা এতে আপত্তি জানিয়েছিলেন, নিরাপত্তার জন্য সেখানেও তাদের প্রবেশাধিকার থাকা দরকার বলে যুক্তি দিয়েছিলেন তারা।
৫. ইভাঙ্কা ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাষ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও তার স্বামী জ্যারেড কুশনার অনেকের পরামর্শে হোয়াইট হাউজের ওয়েস্ট উইংয়ে একসঙ্গে কাজ নিয়েছিলেন।
সেইসঙ্গে তারা নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে এও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, ভবিষ্যতে সুযোগ আসলে ইভাঙ্কা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচনে দাঁড়াবেন। তাহলে হিলারি ক্লিনটন নয়, ইভাঙ্কাই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।
৬. ট্রাম্পের চুলের নেপথ্যের গুমর ফাঁক করেছেন ইভাঙ্কা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের চুলের নেপথ্যের রহস্য ফাঁস করে দিয়েছেন মেয়ে ইভাঙ্কা।
ট্রাম্পের মাথার চুল আসল কিনা, তার ভিন্ন ধরনের চুল বিন্যাস, রঙ আসল না নকল? এসব প্রশ্নেরই উত্তর ইভাঙ্কা দিয়ে দিয়েছেন বলে বইতে উল্লেখ করেছেন লেখক ওলফ।
বলেছেন, ট্রাম্প যে মাথার চামড়ায় সার্জারি করেছেন সেকথা জানিয়ে দিয়েছেন তার মেয়ে। বন্ধুদের কাছে বাবার চুল নিয়ে মশকরা করেই গুমর ফাঁক করেন ইভাঙ্কা।
ওই সার্জারিতে মাথার ওপরকার টেকো একটি অংশের আকৃতি কমিয়ে তারপর চুল দিয়ে সে জায়গাটি ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের চুলের বর্তমান স্টাইলটি হয়েছে এভাবেই।
আর ট্রাম্পের চুলের রঙের ব্যাপারে ইভাঙ্কার বক্তব্য, তার বাবা চুল রঙ করতে ‘জাস্ট ফর মেন’ ব্যবহার করেন। আর রঙটি লাগানোর পর সেটির কাজ পুরো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করার কারণেই তিনি হয়েছেন কমলা-স্বর্ণকেশী।
৭. হোয়াইট হাউজ কোন কাজগুলোকে অগ্রধিকার দেবে জানতেন না কুশনার
ট্রাম্প প্রশাসন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কোন কাজগুলো করতে চায় তা জানতেন না প্রেসিডেন্টের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা জ্যারেড কুশনার।
হোয়াইট হাউজের ডেপুটি চীফ অব স্টাফ কেটি ওয়ালশ অগ্রাধিকারের তালিকায় কোন তিনটি বিষয় প্রেসিডেন্ট রেখেছেন তা কুশনারের কাছে জানতে চাইলে কোনও উত্তর পাননি। যে প্রশ্নের উত্তর সাধারণত যে কোনো যোগ্য প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীও অনেক আগেই দিতে পারেন।
ওলফ লিখেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে তো নয়ই, এমনকি পরের ছয় সপ্তাহেও কুশনারের কাছ থেকে অগ্রাধিকারের প্রশ্নে কোন জবাব মেলেনি। তিনি কেবল বলেছিলেন, “হ্যাঁ, বিষয়টি নিয়ে মনে হয় আমাদের আলোচনা করা দরকার।”
৮. রুপার্ট মারডককে ভক্তিশ্রদ্ধা করতেন ট্রাম্প
মিডিয়া মোগল রুপার্ট মার্ডকের এক জীবনীতে লেখক ওলফ তার প্রতি ট্রাম্পের ভক্তিশ্রদ্ধার কথা লিখেছিলেন।
নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পরের একটি ছোট্ট ঘটনা উল্লেখ করে তিনি মারডকের প্রতি ট্রাম্পের অনুরাগের বর্ণনা দিয়েছেন।
তিনি লেখেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরপরই এক অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা ছিল মার্ডকের। কিন্তু তার দেরি হচ্ছিল। ততক্ষণে অতিথিরা চলে যাওয়ার তোড়জোড় করছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প তাদেরকে মার্ডকের সঙ্গে দেখা না করে চলে যেতে বারণ করেন।
‘মারডক আসার পথে রয়েছেন’ জানিয়ে অতিথিদেরকে ট্রাম্প বলেছিলেন, তার সঙ্গে দেখা করে যাওয়া উচিত।
৯. সেই মারডকই ‘নির্বোধ’ বলেছিলেন ট্রাম্পকে
মিডিয়া মোগল রুপার্ট মারডকের জন্য ট্রাম্পের যত ভক্তি শ্রদ্ধাই থাকুক তাকে ‘নির্বোধ’ বলেই মন্তব্য করেছিলেন মার্ডক।
অভিবাসন নীতি নিয়ে ট্রাম্পের পরষ্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই মার্ডক তাকে নিয়ে এমন মন্তব্য করেন।
সিলিকন ভ্যালির নির্বাহীদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের একটি বৈঠক নিয়ে মারডকের সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপেই ঘটেছিল এ ঘটনা।
ওলফ লিখেছেন, ট্রাম্পের কাছে এইচ-ওয়ান ভিসার ব্যাপারে আরও উদার নীতি নেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন মার্ডক। যা অভিবাসন ইস্যুতে ট্রাম্পের কট্টর অবস্থানের একেবারেই বিপরীত।
কিন্তু ট্রাম্প ‘আমরা বিষয়টি ভেবে দেখব’ বলে জবাব দিলে মার্ডক তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এবং ফোন রাখতে রাখতে ট্রাম্পকে নির্বোধ আখ্যা দেন।
১০. ট্রাম্পের ছিল পরনারী আসক্তি
বইয়ের লেখনী অনুসারে, পরনারী বিশেষত, বন্ধুদের বউদের সঙ্গে মেলামেশায় দুর্দান্ত আগ্রহী ছিলেন ট্রাম্প।
‘বন্ধুদের বউদের সঙ্গে রাতযাপন জীবনটাকে আরো অর্থবহ করে তোলে’ এমন কথা বেশ দর্পের সঙ্গেই বলতে তিনি।
বন্ধুপত্নীদের পটাতে ট্রাম্প যা করতেন সে সম্পর্কে তার এক বন্ধুর উদ্ধৃতি বইয়ে তুলে ধরেছেন ওলফ। তাতে বলা হয়েছে, “তুমি যেমনটি ভাবছ তোমার স্বামী মনে হয় ঠিক সেরকম নন”- এমন কথা বলেই বন্ধুপত্নীকে হাত করার চেষ্টা করতেন ট্রাম্প।
এর আগে ১৯ নারীর সঙ্গে ট্রাম্পের যৌন অসদাচরণের অভিযোগের পর এবার ওলফের বইতে তার সম্পর্কে বেরিয়ে এসেছে এ নতুন তথ্য।
১১. ফ্লিন জানতেন রাশিয়া সংযোগ কাল হয়ে দাঁড়াবে
রাশিয়ার কাছ থেকে বক্তৃতার জন্য তহবিল নেওয়া কাল হয়ে দাঁড়াবে বলে জানতেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিন।
ওলফ লিখেছেন, নির্বাচনের আগেই ফ্লিনকে তার বন্ধুরা বলেছিল, কোনো বক্তৃতার জন্য রাশিয়ানদের কাছ থেকে ৪৫ হাজার ডলার নেওয়া ভালো হবে না।
কিন্তু ‘কেবল নির্বাচনে জিতলেই এটি সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে’ বলে ফ্লিন তাদের আশ্বস্ত করেছিলেন।
সূত্রঃ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর