মিরাস বন্টন নিয়ে যত কথা। 

January 7, 2018 9:38 am0 commentsViews: 194

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ড. ওমর ফারুক।। তারিখঃ ৭ জানুয়ারি ২০১৮।

অনেকই ইদানিং কোরআনের বিধান নিয়ে অনেক বিতর্কিত প্রশ্ন তোলে। বিশেষ করে মিরাস বন্টন নিয়ে কোরআনের বিধানের বিপরীতে যুক্তি পেশ করার চেষ্টা করে। তাদের উদ্দেশ্যে আমার এ লেখা।

ধরে নেই, এক  বাবার দুই ছেলেমেয়ে। তারা এক সাথেই বড় হয়ে উঠছিল। একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদের বাবা তাদেরকে লালন-পালন করেছেন, লেখাপড়া শিখিয়েছেন, বড় করে তুলেছেন। এ সময়ের মধ্যে তারা উভয়ই অনেকটা অসহায় ছিল, বা বলতে গেলে পিতার উপর নির্ভরশীল ছিল। কিছুদিন পর তার বোনটির বিয়ে হয়ে যাওয়ার কারণে সে শ্বশুর বাড়িতে চলে গেল। তার বিয়ের সময় সে তার স্বামীর নিকট থেকে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের দেনমোহর পেল, বাবার নিকট থেকে সোনা-রুপা যা পাওয়ার তা পেল, মায়ের নিকট থেকেও কিছু পেল আর আত্মীয়-স্বজনের নিকট থেকে অনেক উপহার-উপঢৌকন তো পেলই। এরপর ছেলের বিয়েতে সে তার স্ত্রীকেও সেই একই নিয়মে নির্দিষ্ট অঙ্কের দেনমোহর দিল। কিন্তু তার বোনের মত কিছুই পেল না। যদি তার বোন বিয়ের সময় পেয়ে থাকে, সব মিলিয়ে রকম ফের কম বেশি অনেক টাকা, সেখানে ছেলেটিকে উল্টো খরচ করতে হল তার বিয়েতে বিপুল অংকের টাকা। এক্ষেত্রে ছেলেটি তার বোনের চেয়ে ন্যূনতম বিপুল অংকের  অর্থের হেরফেরে পড়ল, প্রাপ্ত অর্থ ও সম্পদের ব্যবধান হল।

এবার বোন চলে গেল তার শ্বশুর বাড়িতে। আর ছেলেটি তার স্ত্রীসহ থেকে গেল তার পৈত্রিক নিজের বাড়িতে। বোন তার শ্বশুর বাড়িতে চলে যাওয়ার কারণে সে কিন্তু পিতামাতার সকল দায়ভার থেকে মুক্ত হয়ে গেল। আর ছেলের ওপর সকল দায়ভার চেপে বসল। এখন পিতার অবকাশকালীন সময়ের কারণে বা পরকালে যাত্রার কারণে পুরো সংসারটা পুত্কেই দেখতে হবে। ছেলেটি যেহেতু তার পৈত্রিক বাড়িতে থাকে, সেহেতু বাবা ম ‘র সকল প্রকার দেখাশোনা তাকেই করতে হচ্ছে। কিন্তু বিনিময়ে সে তার বাবার নিকট থেকে  বোনের চেয়ে তেমন কিছুই বেশি পাব না। যা বেশি পাওয়ার তা হল, ঐ এক টুকরা জমি। আর বাবার যদি জমি না থেকে থাকে, তাহলে তো আরও কঠিন অবস্থা। এ অবস্থার কারণে বা কোন অজুহাতেই সে বা তার আরও ভাই থাকলে, তারা/সে তাদের/তার বাবা-মায়ের সেবা করা থেকে দূরে থাকতে পারবে না। আর এ অবস্থায় যদি তার বোন পৈত্রিক  বাড়িতে বেড়াতে আসেন, তাহলে তার ও তার স্বামী এবং তাদের নির্ভরশীল সন্তানসহ সকলেরই উপযুক্ত সেবা তো ছেলেদেরকেই করতেই হবে। অথচ এর বিনিময়ে ছেলেদের কিছুই দেওয়া হবে না। অর্থাৎ কোন বিনিময় ছাড়াই তাদের সেবা করে যেতে হবে।

একদিকে ছেলেদেরকে তাদের পিতামাতার সার্বিক দিক দেখতে হচ্ছে, দেখতে হচ্ছে তাদের স্ত্রী, সন্তানদেরও। আরও দেখতে হচ্ছে, ছেলেদের ও তাদের বোন বা বোনদের শ্বশুর বাড়ি থেকে আসা সকল আত্মীয় স্বজনদেরও। লক্ষ্য রাখতে হচ্ছে, তাদের উত্তম সেবার ব্যাপারেও। আর  বোনকে এগুলোর তেমন কিছুই দেখতে হচ্ছে না। যতটুকু দেখার তাও মূলতঃ দেখছে তার স্বামী। অর্থাৎ বোনের বিয়ের পর সে সকল দায়-দায়িত্ব থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত। আর ছেলেদের বিষয়টা তার সম্পূর্ণভাবে উল্টো। ছেলেটি/ ছেলেরা সকল দায়ভারে যুক্ত। এরপরও কথা থেকে যায়। আল্লাহ না করুন, কোন কারণে যদি বোন তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবা হয়ে যায়, আর সে  পৈত্রিক বাড়িতে চলে আসে, তাহলে তার সকল ব্যয়-ভার তো ছেলেদেরকেই বহন করতে হবে। আর তার যদি কোন ছেলেমেয়ে থেকে থাকে, তাহলে তাদেরও দেখাশোনার ভার ছেলের ওপরই এসে পড়বে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মজার বিষয় হল, এর জন্য ছেলে তাদের নিকট থেকে বিনিময়ে কিছুই পাবে না।
এখন আসি পিতার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার সূত্রে  সকল ভাই বোন সম্পত্তির সমান অধিকার পেলে কী হতে পারে!  ছেলে তার বোনের বিয়ের পর সে তার শ্বশুর বাড়িতে যেতে পারবে না। কারণ ছেলে একাই বাবা-মায়ের সেবা করবে কেন! সম্পত্তির ভাগ  ছেলে যা পেয়েছে, মেয়েও তাই পেয়েছে। অতএব বাবা-মায়ের সেবা সে যতটুকু করবে, ছেলেও তাই করব। সমানাধিকার তো মানে সমান দায় দায়িত্বও। বেশি করার তো কোন প্রশ্নই ওঠে না। ছেলে যেভাবে কাজ-কর্ম করে  পিতামাতার দেখ-ভাল করবে, তেমনি  বোনেরও সেই একই ভাবে কাজ-কর্ম করে পিতামাতার দেখ-ভাল করতে হবে। আর সে যদি তার শ্বশুর বাড়িতে চলে যায়, তাহলে কখনই আর সে আমার বাড়িতে আসতে পারবে না। আর আসলেও সাথে খাবার-দাবার নিয়ে আসতে হবে। আর সে যদি কখনও তালকপ্রাপ্তা বা বিধবা হয়ে যায়, তাহলে পিতার নিকট থেকে পাওয়া সম্পত্তি ব্যবহার করার মাধ্যমেই সে তার সংসার পরিচালনা করবে। ছেলের বাড়িতে এসে উঠতে পারার সুযোগ সেভাবে আর থাকছে না। তার ছেলেমেয়েদের দেখাশোনার দায়িত্বও ভাই নেবে না। সে  দায়িত্বও তাকে সে অবস্থাতে পালন করতে হবে।

এক কথায় পিতার সম্পত্তিতে সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা হলে ভাইবোনের মধ্যে সুসম্পর্ক সেভাবে  থাকছে না। বিশেষ করে পিতামাতার ইন্তেকালের পর ভাই-বোনের সম্পর্কটা সম্পূর্ণরুপে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।  এছাড়া পিতার সম্পত্তিতে সমানাধিকার কায়েম হতে গেলে বোন আরও বেশি ঠকে যাবার সম্ভাবনা থাকবে। ু পিতা স্বাভাবিকভাবেই তখন তাঁর সম্পত্তি ছেলেকেই বেশি দেওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ পিতামাতা যখন বৃদ্ধ হয়ে যাবেন, তখন তাদের দেখাশোনার জন্য ছেলেকেই বেশি কাছে পাচ্ছে এবং ছেলেকেই মূলতঃ এগিয়ে আসতে হচ্ছে। আর যেহেতু পুত্র তাঁদের সেবা করবে, আর মেয়ে তো শ্বশুর বাড়ি চলে যাবে।  মেয়েটি তাঁদের কোন কাজেই আসতে পারবে না এবং পিতামাতা বুঝবেন যে, মেয়েকে তো বিয়ে দিয়ে তার শ্বশুর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি, তাকে দেখাশোনার দায়িত্ব তার স্বামীর। কিন্তু ছেলেকে তো দেখা-শোনার কেউ নাই, তখন স্বাভাবিকভাবেই  পিতা তার সম্পত্তিটা ছেলেকে লিখে দেওয়ার চেষ্টাই করবে। এছাড়া ছেলেও চেষ্টা করবে, কিভাবে তার পিতার নিকট থেকে সম্পত্তিটা লিখে নেওয়া যায়। বুঝাই যাচ্ছে যে, কোরআন বিরোধী এ আইন বাস্তবায়ন হলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়ে যাবে।

এই আইন না করে যদি এমন আইন করত যে, কুরআনে উত্তরাধিকার সম্পত্তি বন্টনের যে পদ্ধতি আল্লাহ বাতলে দিয়েছেন ঠিক সেভাবে সম্পদের বন্টন করতে হবে আর পিতা যদি ছেলেকে গোপনে বা ছেলে যদি পিতার নিকট থেকে জোর করে সম্পত্তি লিখে নেয় আর এটা যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে কোন অবস্থাতেই তা ঠিক থাকবে না বরং সেটা অটোমেটিক বাতিল হয়ে গিয়ে কুরআনের আইন অনুয়ায়ী আবারও বন্টন করতে হবে। তাহলে আর কেউই তার বোনকে ঠকানোর সাহস করবে না। কিন্তু আমাদের সরকার করতে যাচ্ছেন সম্পূর্ণ উল্টোটা!

আল্লাহ যেহেতু আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন সেহেতু তিনিই জানেন যে কিভাবে কি করলে আমাদের চলার পথ সহজ হবে। সম্পত্তি কিভাবে বন্টন করলে কেউই ঠকবে না বরং সবাই সন্তুষ্ট থাকতে পারবে। এখন আমরা যদি সেই বন্টন নীতি বাদ দিয়ে আমাদের মনগড়া নীতি বাস্তবায়ন করতে যাই তাহলে তো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবেই। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, যে বা যারাই আল্লাহর কথামত চলবেন তারাই শান্তিতে থাকতে পারবেন। আর যারা আল্লাহর কথামত চলবেন না তারা অশান্তিতেই থাকবেন। আল্লাহর কথামত চলার কারনে সাগর-নদীতে বা বনে-জঙ্গলে অথবা আসমানের কোটি কোটি নত্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় নি। তারা সকলেই আল্লাহর কথামত নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সু-শৃঙ্খল ভাবেই দিনাতিপাত করছে। আমরাও যদি আমাদের আল্লাহর দেওয়া বিধান কুরআনুল কারীম অনুযায়ী চলি তাহলে আমরাও সুখে-শান্তিতে যে থাকতে পারব, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। অতএব সরকারের উচিত এমন আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে কুরআনের বিধানকেই বাস্তবায়ন করা।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ (হে নবী!) আপনি বলে দিন, আমার নিজের ভাল-মন্দের মালিকও তো আমি নই, তবে আল্লাহ তায়ালা যা চান, তাই হয়। যদি আমি অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতাম, তাহলে আমি (নিজের জন্য সে জ্ঞানের জোরে) অনেক ফায়দাই হাসিল করে নিতে পারতাম এবং কোন অকল্যাণই আমাকে স্পর্শ করতে পারত না, আমি তো শুধু (একজন নবী, জাহান্নামের) সতর্ককারী ও (জান্নাতের) সুসংবাদবাহী মাত্র, শুধু সে জাতির জন্যে যারা আমার উপর ঈমান আনে।  -সূরা আল আ’রাফঃ আয়াত ১৮৮।

 

Leave a Reply

You must be logged in to post a comment.

Editor in Chief: Dr. Omar Faruque

Editor: Dr. Morjina Akhter

All contact: 400E Mosholu Parkway South Apt # A23,The Bronx, New York 10458, USA

Mob. 001.347.459.8516
E-mail: dhakapost91@gmail.com