’ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি’ প্রকাশ।। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদের দিকে নজর ইভাঙ্কার।।
ইভাঙ্কার জন্ম হয়েছিল ১৯৮১ সালের ৩০ অক্টোবর নিউইয়র্কে। তাঁর মায়ের নাম মেরি। ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার ৪৫তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার সময় ছিলেন না তাঁর মা। কারণ দশ বছর আগেই ট্রাম্প ও মেরির বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। মেরি পেশায় মডেল ছিলেন। ইভাঙ্কার দুই ভাই। একজনডোনাল্ড জুনিয়র ও অন্যজন এরিক। আর সৎ ভাই-বোন ব্যারন ও টিফানি। ইংরেজি ছাড়াও ফরাসি ভাষায় পারদর্শীতা রয়েছে ইভাঙ্কার। দুটি ভাষাতেই সমান দক্ষতার সঙ্গে কথা বলতে পারেন তিনি। পেনসিলভানিয়া থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক পরীক্ষায় পাশ করেছেন তিনি। পড়াশোনায়ও সবসময়ই কৃতিত্বপূর্ণ অতীত রয়েছে। বাবার সংস্থা দ্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের কার্যকরী সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইভাঙ্কা। ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি হওয়ার পরে সবকিছুই তিনি একা হাতে সামলাচ্ছেন বলে পরিবারের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর। শুধু ব্যবসা সামলানোই নয়, দুটি বইও লিখেছেন ইভাঙ্কা। সেগুলির নাম- ‘দ্য ট্রাম্প কার্ডঃ প্লেয়িং টু উইন ইন ওয়ার্ক’ ও ‘লাইফ অ্যান্ড উইমেন হু ওয়ার্কঃ রিরাইটিং দ্য রুলস ফর সাকসেস’। ২০১৫ সালে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে হাত লাগান ইভাঙ্কা। পরে ডোনাল্ড রাষ্ট্রপতি হয়ে হোয়াইট হাউসে এলে ট্রাম্প অর্গানাইজেশনের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে রাষ্ট্রপতি বাবার পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করছেন ইভাঙ্কা। তবে এ কাজের জন্য কোনও বেতন নেন না তিনি। জেরার্ড কুশনারের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে ইভাঙ্কার। কুশনার একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার। বর্তমানে তিনিও ট্রাম্পের সিনিয়র অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করছেন। কুশনার দম্পতির একটি মেয়ে ও দুই ছেলে রয়েছে।
ছোট থেকে খ্রিস্টান ভাবধারায় মানুষ ইভাঙ্কা বিয়ের আগে ২০০৯ সালে ধর্ম পাল্টে ইহুদী ভাবধারা গ্রহণ করেন। কারণ জেরার্ড কুশনার একজন ইহুদী। ইভাঙ্কার ইহুদী নাম ইয়েল। এ বছরে ফোর্বসের সবচেয়ে শক্তিশালী নারীদের তালিকায় ১৯ নম্বরে রয়েছেন ইভাঙ্কা।
ফ্যাশন দুনিয়া মাতানোর প্রতিভাও ইভাকাঙ্কার কিন্তু কম েনিই।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে ফ্যাশন দুনিয়ায় পা রাখেন ইভাঙ্কা। ১৯৯৭ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ম্যাগাজিনের কভার পাতায় ছবি বেরোয় ইভাঙ্কার। স্যাসন জিনস থেকে শুরু করে টমি হিলফিগার সহ নানা ব্র্যান্ডের প্রচার করেছেন তিনি। হার্পার বাজার, ফোবর্স, গলফ ম্যাগাজিনের কভারেও দেখা গিয়েছে ইভাঙ্কাকে।
ইভাঙ্কার আসল নামও তাঁর মায়ের মতই ইভানা। তবে পরে তা পাল্টে সরকারি কাজে ব্যবহারের সুবিধার জন্য ইভাঙ্কা করা হয়েছে। তাঁর তৈরি ব্র্যান্ডের নাম ‘উইমেন হু ওয়ার্ক’।নিজের ফ্যাশন ব্র্যান্ড রয়েছে ইভাঙ্কার। যেদিন থেকে তিনি নিজের ফ্যাশন ব্র্যান্ড চালু করেছেন, সেদিন থেকেই তিনি অন্য কোনও ব্র্যান্ডের জামাকাপড় এমনকি জুতা পর্যন্ত কিনে পরেন না বলে জানিয়েছেন ইভাঙ্কা ঘনিষ্ঠরা। কারণ জুতারও আলাদা ব্র্যান্ড রয়েছে ইভাঙ্কার সংস্থার।

ছিলেন ফ্যাশন-লাইনের মালকিন। সঙ্গে সামলাতেন বাবার রিয়্যাল এস্টেট সাম্রাজ্য। সেই মেয়ে হঠাৎ প্রশাসনিক স্তরে এত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলেন কী করে? সেই খবর ফাঁস হল সম্প্রতি। জানা গিয়েছে, ইভাঙ্কা ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা হয়েছেন শতর্সাপেক্ষে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে চুক্তি করেছেন— ভবিষ্যতে সুযোগ এলে ইভাঙ্কাকেই প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জন্য এগিয়ে দেওয়া হবে। মাইকেল উল্ফ নামে এক সাংবাদিক তাঁর বই ‘ফায়ার অ্যান্ড ফিউরি: ইনসাইড দ্য ট্রাম্প হোয়াইট হাউস’-এ এই দাবি করেছেন।
উল্ফের দাবি, হোয়াইট হাউসের ভেতর ও বাইরের দু’শরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষের সেখানেই তিনি এ বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। কেন, ট্রাম্প নিজের মেয়েকে আমেরিকার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। বইটিতে বলা হয়েছে, ইভাঙ্কা ও তাঁর স্বামী জ্যারেড কুশনার ‘সাদা বাড়ি’র অন্যতম শক্তি-অক্ষ। ক্ষমতার চুড়োয় থাকা এ দম্পতির সঙ্গে টানাপড়েন শুরু হয় প্রেসিডেন্টের প্রাক্তন প্রধান মন্ত্রণাদাতা স্টিভ ব্যাননের। স্বামী-স্ত্রী জুটিকে ‘জ্যাভাঙ্কা’ নাম দিয়েছিলেন ব্যানন। চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর গত ডিসেম্বরেই জ্যাভাঙ্কা নিয়ে বোমা ফাটিয়েছিলেন ব্যানন। বলেছিলেন, ট্রাম্প আমলের ‘যত ফালতু সিদ্ধান্তের’ জন্য দায়ী এই ‘বেকুব’ স্বামী-স্ত্রী। বুধবারই এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যানন সম্পর্কে বলেছেন, ‘‘ওর চাকরি গিয়েছে। সঙ্গে মাথাটাও গিয়েছে!’’ রাজনৈতিক ক্যারিয়ার বানাতে যে খুবই আগ্রহী ইভাঙ্কা, সে বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত আগেই পাওয়া গিয়েছিল তাঁর মা ইভানা ট্রাম্পের আত্মজীবনীতে। ‘রেজিং ট্রাম্প’ নামে সেই মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রাক্তন স্ত্রী লিখেছিলেন, ‘‘আমার মেয়ের মধ্যে প্রবল রাজনৈতিক চেতনা রয়েছে। সোনার ভবিষ্যৎ অপেক্ষায় রয়েছে ওর।’’
হোয়াইট হাউসের মিডিয়া সচিব সারা স্যান্ডার্স বুধবার দাবি করেছেন, ‘‘উল্ফ-এর বইটি মিথ্যে দিয়ে ঠাসা। কোন অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে লেখা।’’ লেখক যাঁদের উদ্ধৃত করে নানা তথ্য দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে প্রশাসনের কস্মিনকালেও কোন যোগাযোগ ছিল না বলেও জাবি করেছেন সারা।
[গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট অবলম্বনে।]