বিনোদন জগতে এত ডিভোর্স কোন বছরেই হয় নি
চলতি বছরের মত এত বেশি ডিভোর্স শোবিজ জগতে কোন বছরেই দেখা যায় নি। কিন্তু এসব তারকার বেশির ভাগ ভালবেসেই জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছিলেন। তবুও তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে বেশ কয়েকজন তারকা দম্পতির সংসার। সমস্যাটা আসলে কোথায়? প্রশ্ন উঠেছে বারংবার। মিডিয়ার এ সমস্ত ডিভোর্সের খবর অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ মানুষের মনে খারাপ প্রভাব ফেলছে। অনেক তারকাই তাদের ভক্তদের কাছে পূজনীয় ও আদর্শের। তারকারা সাধারণ মানুষের ভালবাসার মানুষ। তাইতো সম্পর্কের ক্ষেত্রে তারা হয়তো আরো একটু দায়িত্বশীল হতে পারেন। কারণ তাদের দেখেই মানুষ অনেক কিছু অনুসরণ করেন।
দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেল বলেছেন, সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভেতর ডুব দেওয়া। যে যত বেশি ভুবন সৃষ্টি করতে পারে, যন্ত্রণা এড়াবার ক্ষমতা তার ততই বেশি হয়।
একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও বিশ্বাসী হলে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষ তার জীবনকে সহজ করে তুলতে পারেন। আগামী বছর আর কোনো ডিভোর্সের সংবাদ লিখতে হবে না সেই কামনায় চলুন পাঠক দেখে নেয়া যাক চলতি বছরের আলোচিত সব ডিভোর্সের সংবাদ।
সত্য হল শাকিব-অপুর ডিভোর্সের গুঞ্জনঃ তারকা দম্পতি শাকিব-অপুকে নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। কারণ চলতি বছরে তাদের নিয়ে সংবাদমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে পরিমাণ চর্চা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সবাই অবগত। গত ২২ নভেম্বর চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে তালাকের কাগজ পাঠান তার স্বামী চিত্রনায়ক শাকিব খান। কিন্তু এই সংবাদ চাউর হয় ডিসেম্বরে এসে। নোটিশে শাকিব ডিভোর্সের দু’টি কারণ দেখিয়েছেন। শাকিব অভিযোগ করেছেন, অপু তাদের সন্তানকে কাজের লোকের কাছে রেখে ‘কথিত’ বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় অভিযোগে শাকিব জানিয়েছেনে, অপু তার কোনো নির্দেশ মেনে চলেন না। তাই তিনি বিবাহবিচ্ছেদ চান।
উল্লেখ্য, শাকিব-অপুর বিয়ে হয় ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিল। কিন্তু ৯ বছর বিয়ের খবর গোপন রাখেন এই তারকা জুটি। চলতি বছরের ১০ এপ্রিল একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ছয় মাস বয়সী ছেলে আব্রামকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হন অপু।
ভেঙে গেল তাহসান-মিথিলার সংসারঃ তরুণ প্রজন্মের কাছে তুমুল জনপ্রিয় তারকা দম্পতি তাহসান-মিথিলা। তাদের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে ২০০৪ সালে। তখন দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রণয় থেকে পরিণয়ে আবদ্ধ হন ২০০৬ সালে। সেসময় তাহসানের বয়স ছিল ২৬ এবং মিথিলার ২৩। চলতি বছর মে মাসে এক ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে তাহসান ডিভোর্সের কথা জানান। ডিভোর্সের পর মিথিলা জানান, আমাদের ক্যারিয়ারও একসঙ্গে গড়ে উঠেছে। ক্যারিয়ারের বিষয়ে আমাদের মধ্যে ঝামেলা ছিল না। কিন্তু একটা সময় এসে মনে হচ্ছিল, ১১ বছর আগের একজন মানুষ আর পরের একজন এক থাকে না। অনেক পরিবর্তন দেখা যায়। তাই বিচ্ছেদের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে হয়েছে। তাহসান-মিথিলার ঘরে রয়েছে একমাত্র কন্যাসন্তান আইরা তাহরিম খান। মেয়েটি এখন মিথিলার কাছেই আছে।
টিকলো না স্পর্শিয়া-রাফসানের দাম্পত্যঃ মডেল-অভিনেত্রী স্পর্শিয়া ও তরুণ নির্মাতা রাফসান বিয়ে করেছিলেন ২০১৫ সালের ১ অক্টোবর। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দাম্পত্য কলহের জের ধরে ২১ আগস্ট তাদের ডিভোর্স হয়।
নাটকীয় ডিভোর্স মিলারঃ টানা ১০ বছর প্রেমের পর এ বছর ১২ মে আনুষ্ঠানিকভাবেই বিয়ে হয় সঙ্গীতশিল্পী মিলা ও বৈমানিক পারভেজ সানজারির। সেপ্টেম্বর মাসে তাদের ডিভোর্স নিয়ে খবর বের হলেও তা গুজব বলে উড়িয়ে দেন মিলা। অবশেষে ফেসবুক স্ট্যাটাসে স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের বিষয়টি নিশ্চিত করেন মিলা। শুধু এখানেই শেষ না সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলাও করেছেন তিনি। এ মামলায় পারভেজকে কারাগারের থাকতে হয়েছে। এখন তিনি জামিনে আছেন।
রায়হান-নোভার ডিভোর্সঃ দেড় বছর প্রেম করে ২০১১ সালের ১১ নভেম্বর বিয়ে করেছিলেন জনপ্রিয় নাট্য নির্মাতা রায়হান খান ও অভিনেত্রী নোভা। ছয় বছর সংসার করার পর গত ২৬ আগস্ট ঢাকা জজকোর্ট কাজী অফিসে তারা পরস্পরকে ডিভোর্স দেন। এরই মধ্যে একটি করপোরেট কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছেন নোভা। নতুন অঙ্গনে ভালোভাবে কাজের জন্য সকলের দোয়া চেয়েছেন তিনি।
ডিভোর্স নিয়ে নোভা জানান, আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্তে এই বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। আমরা খুব ভাল বন্ধু। আমাদের পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা আর সম্মান অটুট আছে। তিনি আরো জানান, কিছু সমস্যা তো ছিলই। আমাদের ছেলে সান্নিধ্য বড় হচ্ছে। আমি চাইনি এ সমস্যাগুলো সান্নিধ্যকে স্পর্শ করুক। বাবার প্রতি ওর শ্রদ্ধা যেন এতটুকু নষ্ট না হয়। তাই সময় থাকতেই আমরা আলোচনা করে দূরে সরে গেছি।
উল্লেখ্য, রায়হান খান ও নোভার সংসারে রয়েছে এক সন্তান। ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই তাদের ঘরে জন্ম নেয় রাফাজ রায়হান।
প্রকাশ্যে বাঁধনের ডিভোর্সঃ ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ব্যবসায়ী মাশরুর সিদ্দিকীর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জনপ্রিয় অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। প্রথম দু’বছর ভালোই চলছিল দাম্পত্যজীবন। তাদের ঘরে জন্ম নেয় কন্যাসন্তান সায়রা। কিন্তু ৩ বছরের মাথায় মাশরুর-বাঁধনের সংসারে লাগে ভাঙনের ঢেউ। ২০১৪ সালের আগস্টে তারা কোর্টে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। গত ৫ বছর ধরে মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়িতে রয়েছেন বাঁধন। সম্প্রতি তাঁর স্বামী মাশরুর সিদ্দিকী ফের বিয়ে করেছেন। চলতি বছর বাঁধন-মাশরুরের ডিভোর্সের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
এদিকে সন্তান কার সঙ্গে থাকবে এ নিয়ে শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। বাবা মাশরুর সিদ্দিকী চান সন্তান তার সঙ্গে থাকুক। এদিকে মা বাঁধনও চান মেয়েকে নিজের মতো বড় করতে। এ নিয়ে চলতি বছরের ৩ আগস্ট পারিবারিক আদালতে মামলা করেছেন অভিনেত্রী বাঁধন।
আলাদা থাকছেন শখ-নিলয়ঃ এক সঙ্গে বিজ্ঞাপনের কাজ করতে গিয়ে পরিচয় আনিকা কবির শখ ও নিলয় আলমগীরের। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব ও প্রেম। মাঝে অবশ্য ব্রেকআপও হয়েছিল দুজনের। তবে শেষ পর্যন্ত ২০১৫ সালের ৭ জানুয়ারি শখ ও নিলয় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। জানা গেছে, এই দুই তারকা দম্পতি এক ছাদের তলায় থাকছেন না। ডিভোর্সেরও প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এ নিয়ে কম জল্পনা-কল্পনা হয়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নারাজ শখ-নিলয় দুজনেই।